Search

Saturday, June 27, 2020

করোনায় এত চিকিৎসকের মৃত্যু কেন

সায়ন্থ সাখাওয়াৎ


সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে দেড় হাজারের বেশি। তার মধ্যে অর্ধশতাধিক চিকিৎসক! সঠিক পরিসংখ্যান জানা না থাকলেও প্রায় সবাই একমত, কভিড আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর বিপরীতে চিকিৎসক মৃত্যুর হার বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের মতো প্রতি দেড় হাজার মৃত্যুতে ৫০ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হলে আমেরিকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে সোয়া লাখ মৃত্যুর বিপরীতে চিকিৎসক মারা যাওয়ার কথা চার হাজারের বেশি। ব্রাজিল বা যুক্তরাজ্যে প্রায় দুই হাজার করে চিকিৎসকের মৃত্যু হওয়ার কথা করোনায়। এমনকি পাশের দেশ ভারতে ইতিমধ্যে প্রায় পাঁচশ চিকিৎসকের মৃত্যু হওয়ার কথা। কিন্তু ওইসব দেশে চিকিৎসক মৃত্যুর হার তেমন নয়। ৩১ মে পর্যন্ত ভারতে ৩১ চিকিৎসকের মৃত্যুর খবর দিয়েছে সে দেশের সংবাদমাধ্যম। করোনা রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে ইতালিতে সবচেয়ে বেশি চিকিৎসক ও নার্স মারা গেছেন বলে আলোচনায় আসে। কিন্তু সেই ইতালিতেও ৯ এপ্রিল পর্যন্ত যখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় সাড়ে সতেরো হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তখন চিকিৎসক মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০০ জন। ওই সময়ের মধ্যে দেশটিতে নার্স মারা গেছেন ৩০ জন (এনডিটিভি, ৯ এপ্রিল ২০২০)।

১৫ এপ্রিল সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন আহমেদ কভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সেটিই বাংলাদেশে কভিড আক্রান্ত হয়ে প্রথম কোনো চিকিৎসকের মৃত্যু। এর ১৮ দিন পর ৩ মে করোনা কেড়ে নেয় অধ্যাপক ডা. অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মনিরুজ্জামানকে। তারও আট দিন পর এ তালিকায় যুক্ত হয় অত্যন্ত পরিচিত মুখ রেডিওলোজিস্ট অধ্যাপক ডা. অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবুল মুকারিম। তারপর থেকে দ্রুত বাড়তে থাকে চিকিৎসক মৃত্যুর সংখ্যা। প্রতিদিনই এ তালিকায় যোগ হচ্ছে কোনো না কোনো চিকিৎসকের নাম। তাদের প্রায় সবাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র চিকিৎসক থেকে শুরু করে তরুণ চিকিৎসক, কেউ বাদ যাননি করোনার হাত থেকে। তাদের সবারই যে অন্য কোনো রোগ ছিল এমনও নয়। একেবারেই নীরোগ সুঠামদেহী তরতাজা চিকিৎসকও হেরে গেছেন করোনার কাছে।


                        সায়ন্থ সাখাওয়াৎ

কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে অস্বাভাবিকভাবে এত ব্যাপকসংখ্যক চিকিৎসক প্রাণ হারাচ্ছেন কেন? এর আংশিক উত্তর পাওয়া যাবে বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ নামে একটি সংগঠনের জরিপের ফলাফল থেকে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত সম্মুখসারির স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের ২৬ শতাংশ মে মাস পর্যন্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী বা পিপিই পাননি। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীরা পিপিইর মান এবং ব্যবহারের প্রশিক্ষণ না থাকায় উদ্বিগ্ন। নাগরিক সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ করোনাভাইরাস মহামারীতে সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর করা গবেষণায় এ তথ্য প্রকাশ করেছে। হেলথ ওয়াচের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ (প্রথম আলো, ২০ জুন ২০২০)।

রিপোর্টে আরও লেখা হয়, মে মাসে সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় ২৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা তখন পর্যন্ত পিপিই পাননি। তাদের মধ্যে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ এমবিবিএস চিকিৎসক, ৫০ শতাংশ নার্স ও মিডওয়াইফ এবং ১২ দশমিক ৫ শতাংশ প্যারামেডিকস।

স্বাস্থ্যকর্মীদের মনের ওপর চাপ বাড়ার বিষয়টি উল্লেখ করে গবেষণায় বলা হয়, বিশেষ করে চিকিৎসকদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বাড়তে থাকা চাপ কমাতে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য এখন জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বর্তমানের পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সেজন্য গবেষণায় পিপিইর পরিমাণ ও গুণগতমান নিয়ন্ত্রণ, প্রশিক্ষণ প্রদান, সম্মুখসারির স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণে কর্র্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এই সুরক্ষাসামগ্রী না দেওয়া বা এর মান নিয়ে যারাই প্রশ্ন তুলেছেন, তারা ভোগ করেছেন শাস্তি। যেখানে শিষ্টের দমন আর দুষ্টের পালনের দিকে সরকার বেশি মনোযোগী সেখানে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন, সেটাই তো স্বাভাবিক।

আমরা জানি, সরকারি মাস্ক সরবরাহ না থাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক নিজ উদ্যোগে চিকিৎসক-নার্সদের মাস্ক কিনে ব্যবহার করতে বলায় তাকে পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক নিম্নমানের মাস্ক গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোয় তাকেও বদলি করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে পাবনার হেমায়েতপুরের মানসিক হাসপাতালে। এন৯৫ মাস্কের প্যাকেটে নকল মাস্ক সরবরাহ করা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে করা হয়েছে ওএসডি! নিম্নমানের পিপিই নিয়ে প্রশ্ন তোলায় নোয়াখালীতে শোকজ করা হয়েছে চিকিৎসককে। এমন বহু উদাহরণ আছে আমাদের সামনে।

বহু জায়গায় এমন নিম্নমানের বা নকল পিপিই সরবরাহের অভিযোগ আছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজেও ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা মহানগর হাসপাতালে মাস্ক নিয়ে নয়ছয় হওয়ার বিষয়ে অবহিত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন দেশবাসীকে। এসব নিয়ে তিনি তার ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অবহিত হওয়ার পরও যেসব চিকিৎসক অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ তুলেছেন, তাদের শাস্তি পেতে দেখেছি আমরা। আর যারা অভিযুক্ত, তাদের কী শাস্তি হয়েছে, তা আজও জানা গেল না!

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য মতে, জুনের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দেশে অর্ধশতাধিক চিকিৎসকের মৃত্যু ছাড়াও চার হাজারের বেশি চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রকৃত সংখ্যা যে আরও বেশি, তা বলাই বাহুল্য। কারণ অনেক প্রাইভেট প্র্যাকটিশনারই আক্রান্ত হওয়ার পর বাড়িতে অবস্থান করেন এবং খুব সিরিয়াস অবস্থা না হলে কাউকে জানান না।

সুরক্ষাসামগ্রীর অপ্রতুলতা ও নিম্নমানের কারণে চিকিৎসকদের মৃত্যুর হার বাংলাদেশে এত বেশি বলে অনেকেই মনে করেন। সেই সঙ্গে আছে পর্যাপ্ত ট্রেনিংয়ের অভাব। এসব সুরক্ষাসামগ্রী কীভাবে ব্যবহার করবেন এবং তার ডিসপোজাল কীভাবে করতে হবে, তার জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ। সারা দেশের চিকিৎসকদের এ বিষয়ে যথাযথ ট্রেনিং দেওয়া হয়নি বলে অনেক চিকিৎসক যথাযথ নিয়মে এসব সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করছেন না বলেও অনেকে ধারণা করেন। চিকিৎসকদের এ ট্রেনিংয়ের ঘাটতির কথাটা উঠে এসেছে বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের জরিপেও।

আমরা জানি, কভিড আক্রান্ত হলে তার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। উপসর্গ ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতা বিবেচনায় নিয়ে কভিড রোগীদের চিকিৎসা চালাতে হয়। এ ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মনোবল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাইরে থেকে যে শত্রু আক্রমণ করবে, তার শক্তি-সামর্থ্য ও তার বিরুদ্ধে শরীরের ভেতরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারার সক্ষমতার ওপর অনেকখানি নির্ভর করে একজন রোগীর কী পরিস্থিতি হবে। এই দুয়ের যোগফল কখনো হবে শূন্য। অর্থাৎ কভিড হলেও কোনো উপসর্গ থাকবে না। কখনো দেখা দিতে পারে মৃদু উপসর্গ। আবার কারও বেলায় ভয়াবহ জটিলতা, এমনকি হতে পারে মৃত্যুও!

অন্যান্য দেশে উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রী থাকার পরও বহুসংখ্যক চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনা বাংলাদেশের চিকিৎসকদের মনোবল দুর্বল করে দিয়েছে শুরুতেই। আর চিকিৎসকদের চাকরি ও প্র্যাকটিসের ধরন পৃথিবীর খুব কম দেশেই বাংলাদেশের মতো পাওয়া যাবে। এখানে একজন চিকিৎসক সকালে হাসপাতালে যান। বিকেলে যান প্রাইভেট প্র্যাকটিসে। কখন বাসায় ফিরতে পারবেন তা নির্ভর করে কার রোগীর সংখ্যা কত, তার ওপর। সার্জনরা আবার এই দুয়ের মধ্যে দুপুরে বা রাতে করেন প্রাইভেট ওটি। ফলে তাদের শারীরিক ব্যায়াম ও বিনোদন বলতে তেমন কিছু নেই। অথচ ফিজিক্যাল ফিটনেস ও বিনোদন একজন মানুষের ইমিউনিটি তৈরিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে চিকিৎসকরা জাতির স্বাস্থ্যরক্ষার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন, তারাই করেন অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। শুধু অর্থ উপার্জন আর ভালো খাবার খেয়েই যে শরীর-মন ফিট রাখা যায় না, সেটা কে না জানেন। বাংলাদেশের চিকিৎসকদের জীবনযাপন পদ্ধতিও তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা বাড়িয়ে তুলেছে, সেটাও ভেবে দেখা উচিত।

দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা জীবনযাপনের ধরন হয়তো সহসাই পরিবর্তন করা যাবে না। শরীর-মনে যে জঞ্জাল বাসা বেঁধেছে, সেটাও হয়তো এখনই দূর হবে না। তাই চিকিৎসকদের বাঁচাতে আমাদের হাতে আছে মূলত দুটি জিনিস। এক. মানসম্পন্ন করোনাপ্রতিরোধী সুরক্ষাসামগ্রী নিশ্চিতকরণ ও দুই. যথাযথ প্রশিক্ষণ। এই দুটি বিষয় নিশ্চিত করা গেলে নিঃসন্দেহে চিকিৎসকদের মনোবল বাড়বে, কমবে আক্রান্ত ও মৃত্যুঝুঁকি।।

মনে রাখতে হবে, কভিড মূলত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের বাঁচাতে না পারলে আমরা কেউ বাঁচব না।


  • সায়ন্থ সাখাওয়াৎ- লেখক, চিকিৎসক ও কলামনিস্ট
  • কার্টসি - দেশরূপান্তর

Monday, June 22, 2020

অন্ধকারে ঢিল ছোড়া ও ভিন্নমত দমন

কামাল আহমেদ


করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় বাংলাদেশে যা হচ্ছে, তাকে অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো বলে বর্ণনা করেছেন চীনা বিশেষজ্ঞ দলের নেতা ডা. লি ওয়েন ঝিও। বাংলাদেশে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেওয়ার জন্য এই বিশেষজ্ঞ দল সপ্তাহ দুয়েক ধরে অবস্থান করছে এবং বিভিন্ন হাসপাতালের পরিস্থিতি, রোগ শনাক্তকরণ পদ্ধতি পরিদর্শন করেছে। তারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছে। এই সপ্তাহেই তারা দেশে ফিরে যাবে। ডা. লির কাছে যুগান্তর পত্রিকা জানতে চেয়েছিল, বর্তমানে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কোন মাত্রায় আছে এবং ভবিষ্যতে এর চেয়েও ভয়াবহ হবে কি না। যাতে না হয়, সে ক্ষেত্রে চীনের পরামর্শ কী হবে। এ ছাড়া যদি হয়, তাহলে চীন কীভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে।

প্রশ্নগুলো আমাদের সবার। তবে এ রকম নিষ্ঠুর সত্য উচ্চারণ করা এখন যে ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে, তার আলামত মেলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তারের হিড়িক দেখে। ফেসবুকে সমালোচনামূলক মন্তব্যের কারণে আওয়ামী লীগে সক্রিয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের পরিণতির কথা মোটামুটিভাবে বেশ আলোচিত হয়েছে। প্রতিদিনই এ রকম অনেকে গ্রেপ্তার হচ্ছেন, যাঁদের কথা আলোচনায় নেই এবং আমরা অনেকেই তাঁদের কথা জানি না। তবে সে প্রসঙ্গ থাক। চীনা বিশেষজ্ঞ লির বক্তব্য কী ছিল, সেটা আগে জেনে নেওয়া যাক। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রায় ১৫ সপ্তাহ পর একটা নির্মোহ ও বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন পাওয়া যায় এই সাক্ষাৎকারে (বাংলাদেশে অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো কাজ হচ্ছে। যুগান্তর, ২০ জুন ২০২০।)

ডা. লি বলেছেন, ‘চীন ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। চীনে যেটা হয়েছে যে শত্রু কোথায়, অর্থাৎ করোনাভাইরাস কোথায় আছে, সেটা আমরা জানি। ফলে শত্রু দমনে আমরা সুরক্ষা মেনে যথাযথভাবে কাজ করতে পেরেছি। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি আলাদা। এখানে সমস্যা হলো করোনাভাইরাস কোথায় আছে, সেটাই জানা দুষ্কর। বলা যায়, জানা যাচ্ছে না। এখানে কাজ হচ্ছে অনেকটা অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো। এভাবে ভাইরাস মোকাবিলা করা সত্যি দুষ্কর। আমরা মনে করি, যদি কার্যকর লকডাউন, দ্রুত পরীক্ষা, কন্টাক্ট ট্রেসিং ও চিকিৎসার পরিধি বাড়ানো যায়, তবে উত্তরণ সম্ভব। তা ছাড়া চীনের আর্থসামাজিক কাঠামো বাংলাদেশের চেয়ে ভিন্ন। চীনে লকডাউন মানে শতভাগ লকডাউন। করোনা উপদ্রুত এলাকাগুলোকে উচ্চ ঝুঁকি, মাঝারি ঝুঁকি ও স্বল্প ঝুঁকি এলাকায় ভাগ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চীন কন্টাক্ট ট্রেসিং প্রযুক্তি ব্যবহার করেও ভালো ফল পেয়েছে। যাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করা হয়, তাদের সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি মনিটর করা হয়। ফলে উপসর্গ অনুযায়ী তাদের দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনা সহজ হয়েছে।’

করোনা প্রতিরোধে বাংলাদেশের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা সম্পর্কে অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে ডা. লি ভাইরাস মোকাবিলায় যেসব ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন, সেগুলো অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শের মতোই। তিনি পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়ানোর বিষয়ে, তা ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। আর বলেছেন দক্ষতা বাড়ানোর কথা। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য পিপিই পরা থেকে শুরু করে সুরক্ষার জন্য যত বিষয় আছে, সব বিষয়ে আরও প্রশিক্ষণের কথা বলেছেন।

বাংলাদেশে ভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত হওয়ার প্রায় চার মাস বা পনেরো সপ্তাহ পর পরিস্থিতি অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো। এ রকম দুরবস্থা অন্য দু-চারটি দেশে যে হয়নি, তা নয়। তবে সে জন্য সেসব দেশে অনেককে জবাবদিহি করতে হচ্ছে। জিম্বাবুয়েতে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) কেনায় দুর্নীতির জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেপ্তার হয়েছেন। মহামারির গোড়ার দিকে গত মার্চেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে না পারার দায়ে কসোভোয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংসদে আস্থা ভোটে হেরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগও করতে হয়েছে। আমাদের কথা অবশ্য আলাদা। মহামারি শুরুর পর থেকে রাজনীতিকেরা কার্যত নিষ্ক্রিয়—মন্ত্রিসভার চার ভাগের এক ভাগ মন্ত্রীও গণছুটির সময়ে সক্রিয় ছিলেন কি না, তা বোঝা যায়নি। সংকটমুক্তির জাতীয় উদ্ধার কার্যক্রমে চালকের আসনে আছেন আমলারা। কিন্তু পরিকল্পনাহীনতা, প্রস্তুতিশূন্য বাগাড়ম্বর ও নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগের পরিণতি হয়েছে পদোন্নতি আর বদলি।

করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা কিংবা যেকোনো ধরনের চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষের হয়রানি ও দুর্ভোগের যেসব ছবি গণমাধ্যমে উঠে আসছে, তাতে অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার লক্ষণগুলো অবশ্য বুঝতে কষ্ট হয় না। সমালোচক আর ভিন্নমত প্রকাশকারীদের দমনের বাড়াবাড়ি পুলিশি ব্যবস্থাও তার অন্যতম লক্ষণ। বাস্তবতা যে ছবির চেয়েও কঠিন, তা কেবল তাঁরাই বুঝতে পারছেন, যাঁরা করোনা অথবা করোনা নয়, কিন্তু গুরুতর অসুস্থতার শিকার হচ্ছেন। ভিআইপিদের সিএমএইচে স্থান সংকুলান হবে এমন ধারণাও যখন ভুল প্রমাণিত হয়েছে, তখন তিন মাস বসিয়ে রাখা শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল তাঁদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। বিত্তবানদের চিকিৎসার প্রয়োজন মেটাতে এখন পালাক্রমে শহরের তারকাওয়ালা হাসপাতালগুলোয় করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা হচ্ছে। প্রভাবশালী পেশাগুলোর সদস্যদের জন্যও আলাদা আলাদা কিছু করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু সীমিতসংখ্যক সরকারি হাসপাতালগুলোয় সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড় সামলানোর প্রশ্ন এলে, সব তৎপরতা যেন থমকে যাচ্ছে।

নতুন স্থায়ী বা অস্থায়ী হাসপাতাল বানানো, আইসিইউ প্রতিষ্ঠা, ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করার প্রকল্প হচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো বিদেশি দাতাদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতির দিকে তাকিয়ে। অথচ এসব কাজ ছয় মাস আগে জানুয়ারিতে শুরু করার কথা না ভাবতে পারলেও, মার্চ-এপ্রিলে উদ্যোগ নেওয়া হলে এত দিনে সেগুলো সচল হয়ে যেত। ‘আগে খরচ, পরে আয়ের চিন্তা’ এমন অঙ্গীকার প্রবৃদ্ধির স্বপ্ন পূরণের জন্য ঘোষিত হতে পারলে মহামারি থেকে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য কেন উচ্চারিত হয়নি, সেই প্রশ্ন নিশ্চয়ই উপেক্ষণীয় নয়।

সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে গেছে বলে একটি ভাষ্য প্রতিষ্ঠারও চেষ্টা চলছে। কিন্তু যাঁরা এ কথা বলছেন, তাঁরা এই সত্য আড়াল করছেন যে বিভ্রান্তিকর ও পরস্পরবিরোধী তথ্য ও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার কারণেই সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছিল। সবচেয়ে বড় যে সত্য আড়ালে পড়ে যাচ্ছে, তা হলো দায়িত্বশীলদের অযোগ্যতা ও ব্যর্থতা। নিজেদের সামর্থ্যের ঘাটতি কাটানোর জন্য প্রশাসন এবং দলের বাইরে আরও যাঁদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা রয়েছে, তাঁদের সংগঠিত করার কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। গত তিন থেকে পাঁচ বছরে যেসব সরকারি ডাক্তার ও নার্স অবসরে গেছেন, তাঁদের জাতীয় প্রয়োজনে কাজে ফিরিয়ে আনার মতো ন্যূনতম উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।

দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারলে যে মানবিক দায়িত্ব পালন কতটা অর্থবহ হতে পারে, তার নজির দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির একজন কাউন্সিলর এবং অন্য একজন নেতার স্বেচ্ছায় করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন-সৎকারের কাজে। স্বেচ্ছাসেবায় সারা দেশে এগিয়ে এসেছেন অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও মানুষ। সংকট মোকাবিলায় একটা জাতীয় ঐক্যের একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে আরও অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত। অথচ সেই দাবি উপেক্ষিত হয়েছে। উপরন্তু সরকারের ভুলভ্রান্তি তুলে ধরার পরিণতি হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ আর বিরোধীদের নিন্দা।

সমালোচনা ও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ সারা বিশ্বেই রাজনীতিচর্চার একটি স্বীকৃত বিষয়। এমনকি রাজনীতিকেরা মৃত্যুর পরও সমালোচনার শিকার হয়ে থাকেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্যাসিস্ট হিটলারের বিরুদ্ধে বিজয়ী নেতাদের মধ্যে উইনস্টন চার্চিলকে ঘিরে এখন কী ধরনের বিতর্ক হচ্ছে, তা নিশ্চয়ই কারও দৃষ্টি এড়ায়নি। আরেক নেতা জোসেফ স্তালিনকে এখন রাশিয়াতেও অনেকে নিষ্ঠুর কসাইয়ের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। সুতরাং মহামারির কালে সমালোচক কিংবা সাংবাদিকদের জেলে ভরে সংক্রমণ ও মৃত্যুঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

  • কামাল আহমেদ - সাংবাদিক
  • কার্টসি - প্রথম আলো/ জুন ২২, ২০২০ 

Sunday, June 14, 2020

করোনা মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতার 'ষোলকলা' পূর্ণ!

মির্জা আব্বাস

এবার সবিনয়ে জানতে চাই, 'কাফনের কাপড়ের ডিলারশিপ কে পাবে' ?


  • মৃত্যুর হার কমাতে এখনি সর্বসাধারণের জন্য হাসপাতাল, আইসিইউ বেড ও অক্সিজেন এর ব্যাবস্থা করুন 
  • করোনা উপসর্গে অসুস্থদের দ্রুত পরীক্ষা নিশ্চিত করুন




করোনা মোকাবেলায় সরকার ব্যর্থতার 'ষোলকলা' পূর্ণ করে ফেলেছে, সারাদেশে শুরু হয়ে গেছে লাশের মিছিল। এখন হাসপাতালগুলোতে রোগীদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না, তার উপর এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গুলো নির্দিষ্ট কিছু ব্যাক্তি গোষ্ঠী কিংবা সংস্থার জন্য একপ্রকার দখলে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পত্রিকার পাতায় প্রায় প্রতিদিনই ছাপা হচ্ছে কোন না কোন হাসপাতালে অক্সিজেনের জন্য হাহাকারের খবর।  অসুস্থ অবস্থায় এসে ভর্তি হতে না পেরে অ্যাম্বুলেন্সে ঘুরে ঘুরেই জীবন দিতে হচ্ছে অনেক মানুষকে। করোনা উপসর্গে অসুস্থরা দিনরাত ঘুরেও পরীক্ষাটি পর্যন্ত করাতে পারছে না, এদিকে মর্গের লাশের হিসেবের সংখ্যার সাথে মিলছেনা সরকারি হিসেব। কবরস্থানে সারিবদ্ধ ভাবে খোঁড়া হচ্ছে গণকবর। সত্যিই এক ভয়ংকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে চারিপাশে।

এসবের মধ্যে গত ক'দিন ধরে কাছের কয়েকজন মুমূর্ষু স্বজনের জন্য প্রয়োজন পড়ে আইসিইউর বেড। পরিচিত-অপরিচিত সমস্ত হাসপাতালগুলোতে অনেক চেষ্টা তদবির করেও মিলাতে পারিনি একটি আইসিইউ বেড। মনোকষ্টে নির্ঘুম যাচ্ছে রাত। অনেক চেষ্টা তদবির করে একটি হাসপাতালে ভর্তি করানোর সুযোগ হয়, আইসিইউ খালি হওয়া মাত্রই আমার একজন রোগীকে তারা উঠাবে এই শর্তে।

এখানে কি বা করার আছে আমাদের, যেখানে প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের আশেপাশে গেলেই এখন শোনা যায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) জন্য স্বজনদের হাহাকার। দেখা যায় হাতে পায়ে ধরে মিনতির চিত্র। সাধারণ মানুষের এই আর্তিতে বিব্রত হন চিকিৎসকরা। কেবল চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না তাদেরও। আইসিইউ বেডের অভাবে চোখের সামনে রোগীকে মরতে দেখার চিত্র এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে গেছে।

খোদ চিকিৎসকরাই পাচ্ছেন না আইসিইউ বেড। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন নিজের কর্মস্থলেই আইসিইউ পাননি। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হলে গত ১৫ এপ্রিল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান তিনি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন একই কারণে মারা গেছেন। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) হেড অব অ্যাকাউন্ট মো. মনিরুজ্জামান। শ্বাসকষ্টের কারণে তাকে ভর্তি হতে হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। নমুনা পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। গত ২ জুন সন্ধ্যায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু হাসপাতালে কোনও আইসিইউ বেড না থাকায় বেসরকারি একটি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তোলার পরই তিনি মারা যান।

এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা আরও আছে, কিডনির জটিলতায় অসুস্থ অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকারকে নিয়ে একের পর এক (মোট আটটি) হাসপাতাল ঘুরে মৃত্যুর কাছে পরাজয় বরণ করতে হলো। অপরদিকে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের যিনি হর্তাকর্তা, স্বয়ং তিনি এবং তার পরিবারই পেলেন না যথাযথ চিকিৎসা! করোনা আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসা করাতে না পেরে চট্টগ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির।


বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতাল ঘুরেও সময় মতো চিকিৎসা না পেয়ে গাড়িতেই মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম ছগীরকে। বিভিন্ন হাসপাতালে ছোটাছুটি করেও চিকিৎসা না পেয়ে অবশেষে মারা গেছেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার আলমদী গ্রামের মেধাবী ছাত্রী ইসরাত জাহান উষ্ণ।

প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে শুক্রবার বিকালে তিনি বিনা চিকিৎসায় মারা যান।

সাধারণত প্রতিনিয়ত অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদেরও আইসিইউ প্রয়োজন হয়, কিন্তু হাসপাতালগুলো ঘুরে এলেই বোঝা যায় আসলেই কতজন সেবা পায়। প্রত্যেকটি কোভিড হাসপাতালে একটি আইসিইউ শয্যা পেতে দির্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয় একাধিক রোগীকে।

অন্যদিকে  হাসপাতালগুলোতেও চলছে একপ্রকার দখলে রাখার প্রতিযোগিতা, কোন কোন হাসপাতাল ব্যবহার হচ্ছে শুধুমাত্র বিশেষ মানুষের জন্য, আবার কোন কোন হাসপাতাল ব্যবহার হচ্ছে বিশেষ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য। এভাবে যদি এক এক করে হাসপাতালগুলো বিভিন্ন বেড়াজালে আটকে ফেলেন তবে চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষগুলো কোথায় যাবে ?

অপরদিকে, করোনা পরীক্ষার নামে আমরা দেখছি নাটক। যে করোনা পরীক্ষা আমরা করাতে পারতাম মাত্র ৩০০ টাকায়, সেখানে এখন ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকায় করাতে হচ্ছে।

যদি চিকিৎসকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে এই করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেত তবে সাধারণ জনগণের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হতো। কিন্তু সেটাও আজ আপনারা একটি গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন। আমরা দেখলাম রাজধানীতে শুধুমাত্র পাঁচটি জায়গায় এই করোনা পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। তবে কেন আরো বেশি জায়গায় এ পরীক্ষা ব্যবস্থা করা গেল না ? অতএব এখানে ধরেই নেয়া যায় এই মহামারীতেও কমিশন বাণিজ্যের কথা !

তাই অনেক কষ্ট নিয়েই আমাকে আজ বলতে হচ্ছে, যদি সবকিছুতেই ব্যবসা আর মুনাফা খুঁজেন, তবে এবার দয়া করে জানিয়ে দিবেন, কাফনের কাপড়ের ডিলারশিপটা কাকে দিবেন। যাতে সেই প্রতিষ্ঠানের কাফনের কাপড় ছাড়া অন্য কোন কাপড়ে দাফন করতে মানুষ না পারে ! তাহলে এখান থেকেও একটা ভালো ব্যবসা হবে!

সম্প্রতি একটি সচিত্র প্রতিবেদনে দেখলাম রায়েরবাজার বধ্যভূমি কবরস্থানে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তিদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে, প্রতিবেদনটিতে দেখা যায় একদিকে করোনার রোগীদের দাফন হচ্ছে অন্যদিকে ভেকু দিয়ে সারিবদ্ধভাবে নতুন নতুন কবর তৈরি হচ্ছে। আমার এলাকা খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানেরও একই চিত্র দেখা গেছে ।

পরিশেষে দাবি জানাচ্ছি,  আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে জনগণকে এভাবে আর আঁধারে না রেখে, মৃত্যু কমাতে দয়া করে এখনি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডসহ অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করুন এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা সকল অসুস্থ রোগীর পরীক্ষা দ্রুত নিশ্চিত করুন, প্লিজ একটু গুরুত্ব দিন, একটু ভাবুন।

Monday, June 1, 2020

Post COVID19 world politics: Implications for Bangladesh-India relations


A new world order?

The world is certain to be a different place post COVID19. It will take some time for the world political economy to overcome the shock of the devastating impact that COVID19 will have on the world system. People across the world will face challenges with a sharp break from the recent past of day to day life. Thus, it is no surprise to conclude the politics of international affairs will be different or more so conducted and balanced in a different paradigm. One of the key questions will be, would a post Covid19 world move backwards or forwards in visioning a global future? Another will be, whether the future will be a globally connected one or a draw back to the old Realpolitik narrative of States? Unquestionably, the US as the leading superpower will see its designation challenged in the balance of international politics or amongst equals with a powerful and influential China as a leading political and economic counter balance. 

I believe, Post COVID19 will provide further opportunity for countries to integrate and engage rather than disintegrate and disengage from global connectivity. The US and the Western democracies albeit incapacitated by economic pressures must not move away from the sponsorship of the democratic project.

The more the US integrates and embraces itself with democracies around the globe, the more likely it is to remain an influential and impactful force in great power politics. It will need to adjust its foreign policy to collectively leading on the universal values of democracy and human rights rather than attempting to do anything in isolation. Simply speculating that China’s post COVID19 dominance is as an ill intended project will not get the global traction it may desire. Rather the US should reach out on the values of freedom, democracy and rights with more priority globally. China with its economic resources on the other hand, has already started on a goodwill programme following the outbreak of the pandemic by offering support to countries across the region and beyond by placing the importance of people before regime, as part of its outreach to connect globally.

The recent example of Beijing distributing masks across political parties in Bangladesh regardless of ideological considerations further qualifies this approach to building diplomatic goodwill and empathy. Post-COVID provides for different kinds of opportunities to integrate, connect and maintain 34 relevance for powerful state actors rather than choosing the path of disconnection.

Therefore, I foresee big powers in world politics moving more toward projecting a collective approach to leadership rather than a simplified state centric approach to foreign and economic policy in balancing their influence across the globe.

Where do Bangladesh-India relations sit post-COVID19?


Neither Bangladesh nor India or any other country in the world had any idea that such a devastating pandemic was on the way.

Therefore, to plan to deal with such a crisis in advance of that magnitude was not possible. This pandemic has shown how important it is for countries to establish trust and legitimacy with its citizens in re-assuring the security and future of its people and territory. India in this regard to an extent has been able to establish some of the governance infrastructure to deal with such problems by turning to its own scientific community of experts, on the other hand we have seen a contradictory approach in Bangladesh, where the government has lacked co-ordination and failed to work in a joined up way with scientific experts to establish transparency and trust with its people and instead opting for malign influence which may arouse internal and external security concerns. Without dwelling further on internal politics, I would like to stress on the opportunities and challenges post-COVID presents to strengthen relations between our respective countries.

Bangladesh in some way is fortunate to share geographical proximity with two big powers like India and China providing its sovereign space does not become the battleground of power struggles between these regional powers. The people of Bangladesh in my view would welcome connectivity and integration providing it does not infringe on their right to development and advancement. India like the US was founded on the principles of liberty and freedom and right to self-determination.

Post COVID19 provides an opportunity for South Asian countries to give leadership on formulating and promoting an ‘ethical foreign policy’. Should India integrate its founding principles within its foreign policy and push for an outward looking ethical foreign policy to reach out to nations across the neighbourhood and its people, then it can become an influential leader in the region and beyond, given its size, capacity and resources to connect and lead widely across the globe as well. Political parties in Bangladesh and India will come and go from office, the people and the State will always remain.

Therefore, it is important that both India and Bangladesh exercise an ethical dimension within their foreign policy that is based on national security interests and international values of human rights at the heart of it. Such a policy position will ensure that people to people relations remain intact regardless of internal political scenarios.

Therefore, Post-COVID19 provides India with an opportunity to become a regional leader in striking an embracing foreign policy entrenched by the values in her formation putting emphasis on people to people outreach to strengthen and sustain relations with Bangladesh and the world. Bangladesh on the other hand, cannot hedge between regional powers. It must look to its own interests for the development of its people by encouraging trade, development and cooperation with important development partners to ensure its national interest and regional security.

Therefore, the exercise of ‘soft power influence’ at all levels of the Bangladesh-India relationship might be a more sustainable option for strengthening sustainable relations between both countries in a Post-COVID world.

  • — Humaiun Kobir, Secretary for International Affairs, National Executive Committee, Bangladesh Nationalist Party (BNP) and Special Adviser to Tarique Rahman, Acting Chairperson - BNP.
  • — Policy Watch. 

Friday, May 29, 2020

রাষ্ট্র অসুখে, সরকারের ভেতরে অস্থিরতা

মতিউর রহমান চৌধুরী


জীবন আর জীবিকা। এ দু’টার মধ্যে লড়াই আদিকাল থেকেই। আখেরে জীবন জিতেছে। জীবিকা হেরে গেছে। কারণ জীবন না থাকলে জীবিকা অর্থহীন। কিন্তু আমরা বাংলাদেশে কি দেখতে পাচ্ছি? ভয়ঙ্কর ভাইরাসের থাবা যখন তুঙ্গে তখনই আমরা সব দরজা, জানালা খুলে দিচ্ছি। কারণ নাকি একটাই। মানুষ জীবনকে তুচ্ছ করে জীবিকার লড়াই চালিয়ে যেতে চায়।

          মতিউর রহমান চৌধুরী

এটা ঠিক মানুষ আর কতদিন পেটে গামছা বেঁধে থাকবে। সে ঘরে বসে ছটফট করছে। বাঁচার তাগিদে সে দরজা, জানালা খুলে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটা একটা নতুন মুসিবত। অর্থনীতির চাকা ঘুরছে না। চারদিকে শুধু আফসোস আর আফসোস। কি হবে, কি হবে রব। মন খারাপের অসুখে পেয়ে গেছে অনেককে। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন দীর্ঘদিন বন্দি থাকলে এমনটাই হবে। এর একমাত্র দাওয়াই কি দরজা ভেঙে বের হয়ে যাওয়া! তাই যদি হয় তাহলে রেখে ঢেকে কেন? এক ঘোষণায় বলে দিলেই হয়। বাংলাদেশ চলবে তার মতো করে। এই যুক্তি মন্দ নয়। কিন্তু আমরা যখন সকাল বিকাল সিদ্ধান্তের পরিবর্তন দেখি তখনই মনে হয় রাষ্ট্রকে অসুখে পেয়ে বসেছে। অস্থিরতাও দেখছি সরকারে। ২৪ ঘণ্টায় কতগুলো সিদ্ধান্ত দেখলাম! শিরোনাম এলো আর ছুটি বাড়বে না। বলা হলো সবকিছু স্বাভাবিক হলেও গণপরিবহন চলবে না। দু’ঘণ্টা পর আরেক ফরমান। সীমিত আকারে গণপরিবহনও চলবে। গণপরিবহন চলছে সীমিতভাবে এটা নিশ্চিত করবে কে? এই শক্তি কি আমাদের আছে? হুড়মুড় করে সব পরিবহন রাস্তায় নেমে পড়বে। তখন নিয়ন্ত্রণ করবে কে? বাস্তবে এর বিপরীতটাই ঘটবে। অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে। ক’দিন আগেই তো আমরা দেখলাম নতুন অ্যাপের জন্ম হচ্ছে। আপনি কোথায় যাবেন, কেন যাবেন তা জানাতে হবে অ্যাপের মাধ্যমে। সে সিদ্ধান্তও নিমিষেই হারিয়ে গেল। ২৪ ঘণ্টায় আরেকটা সিদ্ধান্ত হলো। এখন থেকে সব হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা হবে। আচ্ছা বলুনতো কয়টা হাসপাতালে এই সুবিধা রয়েছে? যেখানে শয্যাই নেই সেখানে কোভিড রোগীর চিকিৎসা হবে কীভাবে? করোনা রোগীদের বেশিরভাগের জন্য ভেন্টিলেশন অপরিহার্য। হাসপাতালগুলোর চেহারা আমাদের সামনে ভাসছে। পাঁচ তারকা হাসপাতাল ছেড়ে কেন সিএমএইচ-এ যাওয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা? স্বীকার করতেই হবে স্বাস্থ্যসেবা একদম নুইয়ে পড়েছে। পড়ারই কথা। কারণ স্বাস্থ্যসেবা বছরের পর বছর ধরে উপেক্ষিত। দুর্নীতি আর লুটপাটে একদম কাহিল। এক সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পরিবার যেভাবে দুর্নীতি করেছে তাতো দেশি বিদেশি মিডিয়ায় এসেছে। কোনো তদন্ত হয়নি। কারণ অজ্ঞাত। কেউ জানার চেষ্টাও করে না। মিডিয়াও ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। অন্য দেশ খুলে দিয়েছে তাই আমি ঘরে বসে থাকব কেন? এমন যুক্তিও দেখানো হচ্ছে। অন্য দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাতো আমাদের মতো নয়। সবাই জানে করোনা ভাইরাস যখন পিকে তখন আমেরিকা কিংবা ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মতো অতি উন্নত ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছিল। আমাদের এখানে স্ববিরোধিতা ভরপুর। একদিকে আমরা সব ওপেন করে দিচ্ছি।

অন্যদিকে সব হাসপাতালকে কোভিড-১৯ হাসপাতালে পরিণত করছি। তার মানে কি? আমরা কি ধরে নিচ্ছি যা হবার হবে দেখা যাক না! অনেক রাষ্ট্রনায়ক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ উপেক্ষা করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে গিয়ে অনেক মূল্য দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। উদাহরণ হিসেবে ব্রাজিলের কথা বলা যায়। দেশটির প্রেসিডেন্টের একগুয়েমি সিদ্ধান্তের কারণে দু’জন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বিদায় নিতে হয়েছে। সংক্রমণের দিক থেকে দেশটির স্থান এখন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই।  প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একজনও বলেননি এই পিকের সময় দরজা খুলে দিতে। বরং তারা প্রতিদিনই মিডিয়ার সামনে এসে বলছেন কোথায় যেন ভুল হচ্ছে। তারা কারফিউ দেয়ার পরামর্শও দিয়ে চলেছেন। কে শুনে কার কথা! শুধু শহরে নয়। গ্রামেও পৌঁছেছে অদৃশ্য এই ভাইরাসটি। দলে দলে গ্রামে যাবার মিছিল না থামাতে পারাই কি এর মূল কারণ? যে যাই বলেন মৃত্যুভয় কার নেই! নিজের মাকে যেখানে বাড়িতে ঢুকতে দেয় না সেখানে আমরা বলছি জীবন তুচ্ছ। জীবিকার লড়াইয়ে শামিল হোন। মানছি আবেগ একটা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো। তাই মানুষের আবেগ কঠিন বাস্তবকেও শুষে নেয়। অনেকে আমার সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন। এই কঠিন সময়ে বলবো করোনার সংক্রমণের গ্রাফ যেখানে ঊর্ধ্বমুখী সেখানে তাড়াহুড়ো করে সব প্রত্যাহার করে নেয়াটা হবে আত্মঘাতী। সবই যখন প্রত্যাহার হয়ে গেল তখন আর স্বাস্থ্য বুলেটিনের প্রয়োজন কি? এটাও প্রত্যাহার হয়ে যাক। মানুষ আর জানবে না। মনও খারাপ করবে না। যদিও এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে শুরু থেকেই বিস্তর কানাঘুষা। অনেকে এখানে প্রয়াত সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদকে স্মরণ করেন। ফয়েজ আহমেদ লিখেছিলেন- সত্যবাবু মারা গেছেন। যাই হোক, সব সত্য যে সত্য নয় এটা আমরা অনেকদিন আগেই রপ্ত করেছি। পবিত্র সুরা আল-বাকারার একটি আয়াত এখানে উদ্ধৃত করে লেখাটা শেষ করতে চাই।

আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশিও না, জেনেশুনে সত্যকে গোপন করো না।’

শেষ কথা: কামনা করছি যেন দ্বিতীয়বারের মতো লকডাউন দিতে না হয়।

  • কার্টসি - মানবজমিন/ মে ২৮, ২০২০

Thursday, May 21, 2020

হতদরিদ্রদের ঈদ উপহারেও কালোথাবা

সায়ন্থ সাখাওয়াৎ

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় এ দেশের ৫০ লাখ অসচ্ছল মানুষ একটা আশার আলো দেখা শুরু করেছিল। তারা ভেবেছিল, যাক ঈদের আগে আমরা হয়তো আড়াই হাজার টাকা পেতে যাচ্ছি। এই করোনাকালে যখন খেয়ে বেঁচে থাকা দায়, সন্তানের মুখে দুবেলা ভাত তুলে দেওয়া অনেকের জন্যই অসম্ভব, তখন একসঙ্গে আড়াই হাজার টাকা হাতে পাওয়া তাদের জন্য চাট্টিখানি কথা নয়!

সায়ন্থ সাখাওয়াৎ
এই দরিদ্র জনগোষ্ঠী লাইন ধরে দশ টাকা সের দরে চাল কিনে কোনো মতে চালিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু সেই সাশ্রয়ী দরে চাল কেনার সুযোগটাও তাদের ভাগ্যে সইল না। সংবাদমাধ্যমে আসতে শুরু করল সারা দেশে চাল চুরির খবর। দরিদ্র মানুষের প্রাপ্য চাল জায়গা করে নিল সরকারদলীয় নেতাদের গুদামে। মণে মণে, টনে টনে চাল। সরকারপ্রধান কত রকম হুঁশিয়ারি দিলেন। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ত্রাণের ‘অনিয়মের’ সঙ্গে যারা যুক্ত হবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। র‌্যাব, পুলিশ হানা দিল অবৈধভাবে সরকারি চাল মজুদ করা গুদামে। কাউকে কাউকে গ্রেপ্তারও করা হলো। কিন্তু যে চোর ধর্মের কথাই শোনে না, সে কি আর হুঁশিয়ারিতে ভয় পায়! জনপ্রতিনিধিদের এই চাল চুরির খবর দেশীয় গণমাধ্যম ছাড়িয়ে জায়গা করে নিল আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট লিখে দিল, ‘বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলার টাকা যাচ্ছে দুর্নীতিবাজদের পকেটে।’ করোনাকালের দুর্যোগে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের দেওয়া ত্রাণ মেরে দিচ্ছে জনপ্রতিনিধিরা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেল যে ১০ টাকা সের চাল বিক্রিই বন্ধ করে দিতে হলো সরকারকে। বলা হলো, ত্রাণ দেওয়ার নতুন পদ্ধতি খুঁজছেন তারা। এতে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়ে গেল যে সরকারের চেয়ে চাল চোরদের জোর বেশি! গরিব মানুষ পড়ল মহাবিপদে। দেশজুড়ে করোনার বিস্তাররোধে চলছে লকডাউন। অনেকেরই কাজ নেই। হাতে টাকা নেই। ত্রাণের দেখা নেই। এমন অনেক নেই-এর সঙ্গে যুক্ত হলো ‘দশ টাকা সের চাল নেই’।

এই দুশ্চিন্তাটা কিছুটা হলেও দূর হলো প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার ঘোষণায়। কিন্তু ঈদের মাত্র এক সপ্তাহ আগে এসে তাদের মাথায় ভর করল আবার দুশ্চিন্তা। তারা জেনে গেলেন, ৫০ লাখের সবাই টাকাটা এখনই পাচ্ছেন না। জানা গেল, তালিকার ৫০ লাখের মধ্যে প্রম দফায় টিকেছে মাত্র সাড়ে সাত লাখ হতদরিদ্রের নাম! নানা অসংগতি থাকায় শুরুতেই ৫০ লাখ থেকে ঝরে পড়েছে ১০ লাখ। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জানিয়েছেন, শুধু এই ১০ লাখই নয়, আরও বাতিল হবে। কারণ তাদের নাম, পেশা, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রে অসংগতি রয়েছে।

কিন্তু ৫০ লাখের মধ্যে ১০ লাখের বেশি মানুষের ক্ষেত্রে এই অসংগতিটা কেন হলো? এর যথাযথ উত্তর সংগত কারণেই দেওয়া কঠিন। তবে এর উত্তর মিলতে পারে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু শিরোনাম থেকেই। দুস্থদের থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে (বাংলা ট্রিবিউন, ১৭ মে ২০২০), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মনিটরিংয়ে নগদ সহায়তার দুর্নীতি ধরা পড়ে (সময় টিভি, ১৭ মে ২০২০), নগদ টাকায় নয়ছয় (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৭ মে ২০২০), দুস্থের টাকায় সচ্ছলের ভাগ (দেশ রূপান্তর, ১৭ মে ২০২০), প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ সহায়তা তালিকায় অনিয়মের তদন্ত শুরু (দি ডেইলি স্টার, ১৭ মে ২০২০), প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ সহায়তা তালিকায় এক মোবাইল নম্বর ২০০ বার (দি ডেইলি স্টার, ১৬ মে ২০২০), দুস্থদের দেওয়া সরকারি টাকার নামের তালিকায় শিক্ষকের স্ত্রী! (বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, ১৭ মে ২০২০), ২৫০০ টাকার সরকারি সহায়তা তালিকায় ৪ মোবাইল নম্বর ৩০৬ বার! (যুগান্তর, ১৬ মে ২০২০), ২৫০০ টাকার তালিকায় নাম গরিবের, নম্বর মেম্বারের (সময় টিভি, ১৬ মে ২০২০), ৯৯ নামের পাশে ১ জনের ফোন নম্বর (কালের কণ্ঠ, ১৬ মে ২০২০), কোটিপতিরাও ওএমএসের তালিকায় (দি ডেইলি স্টার, ১৪ মে ২০২০), ৫৩ দুস্থের নামের পাশে ইউপি চেয়ারম্যানের পিএসের মোবাইল নম্বর ( ইত্তেফাক, ১৬ মে ২০২০), ৪০ জনের নামের পাশে এক মেম্বারের মোবাইল নম্বর (কালের কণ্ঠ, ১৫ মে ২০২০)। শিরোনামের আধিক্য দিয়ে আর পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটানো ঠিক হবে না। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচি, যাকে সরকার বলছে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার, তাতে যে কী কা- ঘটেছে আর কেন ৫০ লাখের তালিকা থেকে ১০ লাখের বেশি বাদ দিতে হয়েছে তা বোঝার জন্য এই কয়টা শিরোনামই কি যথেষ্ট নয়?

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৎপরতা ও তালিকা থেকে ১০ লাখের বেশি অর্থাৎ ২০ শতাংশের বেশি বাতিল করা দেখে অনুমান করা যায় যে, এ নগদ সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সত্যিই আন্তরিক। তিনি হয়তো চেয়েছিলেন, চালচুরির যে অপবাদ দলীয় নেতাদের গায়ে লেগেছে সেই একই সিল যেন এবার আর না পড়ে। তাই প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। এতে নাম, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ম্যাচ না করলে সে নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। ১০ লাখ বাদ যাওয়া দেখে বোঝা যাচ্ছে, যন্ত্র তার কাজটি ঠিক মতোই করেছে। এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আমাদের বুঝ দিচ্ছেন যে এই নগদ সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নেই। কেউ অনিয়ম করলে সেটা এভাবেই বাতিল হয়ে যাবে। সুতরাং যা হচ্ছে তা স্বচ্ছতার সঙ্গেই হচ্ছে।

আসলেই কী বিষয়টা এত সরল? একজন জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনের লোক তার মোবাইল নম্বরের সঙ্গে শত শত নাম জুড়ে দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে চেয়েছিলেন সেটা সম্ভব হয়নি, মানলাম। কিন্তু যে চেয়ারম্যান, মেম্বার বা প্রশাসনের ব্যক্তিরা এমন ভয়াবহ দুর্যোগকালেও এই জালিয়াতি করতে পারেন তারা যে জঘন্য চোর সেটা তো প্রমাণিত। তাহলে সেই চোরদের দেওয়া বাকি তালিকাটি যে সঠিক হয়েছে তার নিশ্চয়তা কী? ধরা যাক, তারা এই তালিকায় তাদের পরিবারের সদস্য, সচ্ছল আত্মীয়-পরিজন ও দলীয় লোকদের নাম ঢোকালেন যারা এ নগদ অর্থ সহায়তার হকদার নয়। তাদের নাম, মোবাইল নম্বর, পেশা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর সবই ঠিক আছে। একশ’তে একশ’ ম্যাচ করেছে। এই দুর্নীতি কি ধরতে পারবে কোনো প্রযুক্তি? সংবাদমাধ্যমে তো এমন রিপোর্ট এসেছে যাতে জানা গেছে সরকারি দলের কোটিপতি নেতারাও ওএমএসের তালিকায় আছেন। নগদ অর্থ সহায়তা পাওয়ার জন্য নাম ঢোকাতে হতদরিদ্রদের থেকে চেয়ারম্যান টাকা নিয়েছেন বলেও রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এই দুর্নীতি কি ধরার সাধ্য আছে কোনো প্রযুক্তির?

এ দুর্নীতি রোধ করতে পারত যে পদ্ধতি তার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাম জোট থেকেও অনুরূপ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এরা সবাই দাবি করেছিলেন, করোনা মোকাবিলার জন্য একটা জাতীয় কমিটি গঠনের। কিন্তু সরকার তা নাকচ করে দেয়। সে প্রস্তাব নাকচ না করে যদি সব প্রধান রাজনৈতিক দলের সদস্য, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি করা হতো, তাহলে হয়তো এমনটি হতো না। সে ক্ষেত্রে একটা ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ তৈরি হতো। বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিরাজমান তাতে কোনো সুবিধা-বণ্টনের তালিকা সরকারি দলের লোকদের করতে দিলে তাতে যে ভিনড়বমতের কোনো মানুষের নাম ঠাঁই পায় না এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। সেটা জেনেও যখন তালিকা করার দায়িত্বটা সরকারি দলের নেতা ও প্রশাসনের লোকদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তখন যা হওয়ার তাই হচ্ছে।

আগেই বলেছি, নগদ অর্থ সহায়তা দলীয় লোকরা পেলেও তা যেন হতদরিদ্ররা পায় সে ইচ্ছে হয়তো সরকারের ছিল। কিন্তু সে নির্দেশ পালনে সততার পরিচয় দেননি সরকারি দলের তৃণমূলের নেতারা। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা ধরে রাখতে গিয়ে তৃণমূল পর্যন্ত যে অনৈতিক নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেছে তার খেসারত দিতে হচ্ছে এখন রাষ্ট্রকে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে সৃষ্ট সেই জনপ্রতিনিধিরা এখন এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন যে সরকার প্রধানের কোনো আদেশ, নির্দেশ, ধমকও কানে তোলার প্রয়োজন বোধ করেন না।

  • কার্টসি - দেশ রূপান্তর/ মে ২১, ২০২০ 

Tuesday, May 19, 2020

করোনাভাইরাস কার জন্য আশীর্বাদ

আলী রীয়াজ


স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্প্রতি জরুরি সেবাদানে নতুন নিয়োগ পাওয়া দুই হাজার চিকিৎসকের উদ্দেশে বলেন, কোভিড-১৯ যদি না আসত, তাহলে আপনাদের হয়তো নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হতো না। কাজেই কোভিড আপনাদের জন্য একটি আশীর্বাদ হিসেবেই এসেছে…কোভিডের কারণেই আপনারা এ নিয়োগ পেয়েছেন (বিবিসি বাংলা, ১৩ মে ২০২০)।

সরকারি চাকরি পাওয়া বাংলাদেশে নিশ্চয়ই ভাগ্যের ব্যাপার। প্রায় দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে তাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু কর্মসংস্থানের হার কমেছে (প্রথম আলো, ৫ মার্চ ২০২০)। ফলে সরকারি চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তরুণদের জন্য উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য হয়ে উঠেছে বিসিএস। এ রকম সময়ে সরকারি চাকরি ‘ভাগ্যের বিষয়’। তদুপরি এই চিকিৎসকেরা অনেক দিন অপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত চাকরি পেয়েছেন। সরকার যেন তাঁদের প্রতি দয়া করেছে, এমন একটা মানসিকতা দেখতে পাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথার মধ্যে। তাঁর কথায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিমুখী বাগাড়ম্বরের অসারতা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। করোনাভাইরাসের মুখে কেন গোটা জনস্বাস্থ্যব্যবস্থা এমনভাবে ভেঙে পড়ল, তার উত্তরের খানিকটা এখানেই পাওয়া যায়।

জাহিদ মালেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে না হোক, গণমাধ্যমের ভোক্তা হিসেবে এটা তো জানতেই পারতেন যে সারা বিশ্বে যে তিন লাখের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে মারা গেছেন, যাঁরা এতে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মরণ লড়াই করছেন, যাঁরা এর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচেছেন, তাঁরা বা তাঁদের নিকটজনদের জন্য এই ভাইরাস আশীর্বাদ নয়। দেশের ভেতরের অবস্থা যদি বিবেচনা করেন, তবে সেখানেও একই কথা। প্রকৃতপক্ষে যেসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই মহামারির সময়ে এই পেশায় যোগ দিলেন, তাঁরাই আসলে ভাইরাস-আক্রান্ত ও সাধারণ মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এলেন।

সরকারের বলা উচিত ছিল, এই দুর্দিনে আপনারা আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এলেন। দেশে দেশে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি এভাবেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হচ্ছে, সম্মান জানানো হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে ভঙ্গুর জনস্বাস্থ্যব্যবস্থার দায় তুলে দেওয়া হয়েছে চিকিৎসকদের কাঁধে। সরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার ত্রুটি, দুর্নীতি, স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের অভাব, সমন্বয়হীনতা—সবকিছুর দায় এখন চিকিৎসকদের কাঁধেই। বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে মালিকেরা কী করবেন, সেদিকে তাকিয়ে থেকেছে সরকার। অথচ আইন আছে, যা ব্যবহার করে সরকার এই হাসপাতালগুলোকে রোগীদের সেবাদানে বাধ্য করতে পারত। এগুলো নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মাথাব্যথা নেই।

করোনাভাইরাস অবশ্যই কারও কারও জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। ত্রাণ বিতরণের শুরু থেকেই তাদের আমরা দেখতে পেয়েছি। ত্রাণ চুরিতে মেতে উঠেছিলেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে একসময় সরকার ওএমএসের কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিল। তা আবার চালু হয়েছে, ত্রাণের সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সচিবদের। কিন্তু অবস্থার কতটা উন্নতি হয়েছে, তা সবার জানা। বলা হয়েছে ভিক্ষুক, ভবঘুরে, রিকশাচালক, চায়ের দোকানিসহ হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ, যাঁরা কোনো সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর অন্তর্ভুক্ত নয়, তাঁদের জন্য হচ্ছে বিশেষ ওএমএস সুবিধা। কিন্তু ওএমএস কার্ডের তালিকায় আওয়ামী লীগের ধনীদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে; কিছু ঘটনা জানা গেছে আর অনেক জানা যায়নি বলাই নিরাপদ।

করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারের জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সরাসরি নগদ অর্থসহায়তা কর্মসূচির কথা বলা হচ্ছিল। অর্থনীতিবিদ, সামাজিক সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তরফে বলা হয়েছে যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন বাঁচানো এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পথ হচ্ছে দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্তদের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেওয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলে তাতে এর অনুপস্থিতি অনেককেই বিস্মিত করে। বারবার এর তাগিদ দেওয়া হয়। অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছিলেন, ‘১ কোটি বিত্তহীনের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ দিন।’ (প্রথম আলো, ১২ এপ্রিল ২০২০)। সরকার দেরিতে হলেও সেই উদ্যোগ নেয় এবং প্রধানমন্ত্রী ১৪ মে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন।

তার পরের দুই দিনের গণমাধ্যমে এ নিয়ে যা খবর বেরিয়েছে, তার কয়েকটি শিরোনামই যথেষ্ট, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার নিতে ৪টি মোবাইল নম্বরে ৩০৬ ব্যক্তির নাম’; (যমুনা টিভি, ১৬ মে ২০২০); ‘সরকারি সহায়তা তালিকায় ২০০ জনের নামের পাশে একটি মোবাইল নম্বর!’ (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৬ মে ২০২০)। ‘এক মোবাইল নম্বরেই ৯৯ জনের নাম’ (সিলেট টুডে ২৪, ১৬ মে ২০২০)। এই তালিকা অল্প কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। এসব ব্যক্তির জন্য করোনাভাইরাস অবশ্যই আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করতে চাই, অর্থনীতির আসন্ন সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে বাজেট সহযোগিতা হিসেবে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ সংগ্রহ করবে। মাথাপিছু আড়াই হাজার টাকার অর্থ বিতরণে এই অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির পরে এই প্রশ্ন কি অবান্তর, সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের স্বচ্ছতা, জবাবদিহির কী ব্যবস্থা হবে?

ত্রাণ বা নগদ অর্থ লুটপাটের এই ঘটনাই শুধু আশীর্বাদের লক্ষণ নয়; বাংলা প্রবাদ ‘কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ’ তো আর এমনি এমনি প্রচলিত হয়নি। ভালো করে তাকালে দেখা যাবে যে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর ক্ষেত্রেও আছে নানা ফাঁকফোকর। একসময় বলা হয়েছিল ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চলতি মূলধন হিসাবে বরাদ্দকৃত ৩০ হাজার কোটি টাকা থেকে ঋণখেলাপি কোনো প্রতিষ্ঠান সুবিধা পাবে না। এ–ও বলা হয়েছিল যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ঋণ মন্দ হিসেবে শ্রেণিবিন্যস্ত হওয়ার পর ইতিমধ্যে যদি তিনবারের বেশি নবায়ন করা হয়ে থাকে, তবে ওই প্রতিষ্ঠানও এ প্যাকেজের আওতায় ঋণ সুবিধা পাবে না (যুগান্তর, ১৩ এপ্রিল ২০২০)। কিন্তু ১১ মে জানা গেছে, ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় শিল্প খাতের জন্য সরকার ৩০ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ করেছে, তাতে খেলাপিদের ঋণ দেওয়ার যে বিধিনিষেধ ছিল, তা তুলে নেওয়া হয়েছে।’ (বিডিনিউজ২৪, ১১ মে ২০২০)। ঋণখেলাপিদের জন্য করোনাভাইরাস কি আশীর্বাদ হয়ে উঠল? এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘ঋণখেলাপিরাই তো প্রণোদনার সব অর্থ খেয়ে ফেলবে। অন্যরা বা ভালো উদ্যোক্তারা কিছুই পাবে না। এতে ব্যাংকগুলো আরও সংকটে পড়বে। তাদের জন্য অশনিসংকেত।’(বিডিনিউজ ২৪, ১১ মে ২০২০)।

এই দুর্দিনে যাঁরা লুণ্ঠন করতে পারছেন শুধু তাঁদের জন্যই নয়, করোনাভাইরাস আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে কিছু কিছু সরকার ও রাষ্ট্রের জন্যও। দেশে দেশে নাগরিক অধিকার সীমিত করা হচ্ছে; এমন আইন তৈরি হচ্ছে যা মানুষের কথা বলার অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছে। কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা চাপিয়ে দিচ্ছেন কঠোর নিয়ন্ত্রণ।

বাংলাদেশে এই ধরনের আইন নতুন করে তৈরি করতে হয়েছে তা নয়, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের খড়্গ আগে থেকেই আছে। তার ব্যবহারে সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা যে সামান্য পিছপা নন তা সহজেই দৃশ্যমান। প্রতিদিনই কেউ না কেউ আটক হচ্ছেন, মামলা হচ্ছে; অভিযোগ ‘গুজব’ ছড়ানোর কিংবা ‘ষড়যন্ত্রের’, নিদেনপক্ষে ফেসবুকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে ‘মানহানিকর মন্তব্য’ করার। বিচারবহির্ভূত ব্যবস্থা তো আছেই। ভিন্নমত দমন ও সমালোচকদের শায়েস্তার এই চর্চা গত কয়েক বছরের, এখন করোনাভাইরাস হয়ে উঠেছে অজুহাত। নাগরিকদের ওপরে সরকারের নজরদারি বেড়েছে; কিন্তু নাগরিকেরা সরকারের ওপর নজরদারি করলে, ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহি চাইলেই নেমে আসছে খড়্গ। করোনাভাইরাস কারও কারও জন্য সত্যিই মনে হয় আশীর্বাদ হিসেবে হাজির হয়েছে।

আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর এবং আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো

  • কার্টসি - প্রথম আলো/ মে ১৯, ২০২০ 

Saturday, May 16, 2020

সরকারের দ্বিমুখী নীতি

শহীদুল্লাহ ফরায়জী


গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার একই ধরনের আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দুই ধরনের নীতি অনুসরণ করছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর মেয়রসহ কাউন্সিলরদের কমপক্ষে ১০০ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য। কারণ বিদ্যমান সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ না হলে পরবর্তী সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণ আইনত নিষিদ্ধ। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ এ বলা হয়েছে, কর্পোরেশনের মেয়াদ উহা ঘটিত হইবার পর উহার প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হইবার তারিখ হইতে পাঁচ বছর হইবে। ফলে নির্বাচন যখনই হোক কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়া ছাড়া দায়িত্ব গ্রহণের কোন আইন নেই।

অনুরুপভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এই ধরনের সাংবিধানিক বিধান রয়েছে। কোন একটি সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পরবর্তী সংসদ দায়িত্ব নিতে পারবে না। কারণ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদের মেয়াদ হ্রাস করার কোন সাংবিধানিক এখতিয়ার সরকারের নেই।

আমাদের সংবিধানে সংসদ ভাঙ্গার দুইটি বিধান রয়েছে

১. রাষ্ট্রপতি সংসদ ভাঙিয়া দিলে, ২. প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসর অতিবাহিত হইলে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবে।
কিন্ত আমাদের নবম সংসদ ও দশম সংসদ কোনটাই রাষ্ট্রপতি ভেঙ্গে দেননি সুতরাং নবম এবং দশম সংসদকে অবশ্যই পাঁচ বছর সম্পন্ন করার কথা। সংসদের মেয়াদ একদিনের জন্যও হ্রাস করা যায়না সাংবিধানিক বিধিনিষেধের কারণে। এটা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৭২(৩) নিশ্চিত করেছে। ৭২(৩)এ বলা হয়েছে, “রাষ্ট্রপতি পূর্বে ভাঙ্গিয়া না দিয়ে থাকিলে প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে পাঁচ বছর অতিবাহিত হইলে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবে:”

আমাদের সংবিধানে সংসদ নির্বাচনের দুটি প্রক্রিয়া অনুসরণের নির্দেশনা আছে। সংবিধানের ১২৩ এর (৩) বলা হয়েছে, সংসদ সদস্যের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে (ক) মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নববই দিনের মধ্যে এবং (খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোন কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে: তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ উক্ত উপ-দফায় উল্লেখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সংসদ সদস্যরুপে কার্যভার ভার গ্রহণ করিবেন না।

নবম এবং দশম সংসদ নির্বাচন ভেঙ্গে যাবার পূর্ববর্তী ৯০দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংবিধান একটি শর্ত যুক্ত করেছে। শর্তটি হচ্ছ কোনক্রমেই মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত পরবর্তী সংসদের সদস্যগণ কার্যভার গ্রহণ করবেন না। অর্থাৎ ৯০ দিন পূর্বে নির্বাচন হতে পারবে সাংবিধানিক শর্তে। সুতরাং শর্ত লঙ্ঘনের এখতিয়ার কারো নেই। কিন্তু নবম এবং দশম সংসদের বেলায় সংসদের মেয়াদ থাকা অবস্থায় পরবর্তী সংসদ শপথ নিয়েছে। সংবিধান যেটাকে শর্ত যুক্ত করেছে সরকার সেটাকে করেছে শর্ত শূন্য। এটা সংবিধানের সুষ্পষ্ট লংঘন।

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর নির্বাচিত মেয়রগণ যদি ১০০ দিন অপেক্ষা করে কার্যভার গ্রহণ করতে হয়,সেখানে জাতীয়ভাবে অধিকতর গুরুত্ব পূর্ণ সংসদ নির্বাচনের পর কী ভাবে নবনির্বাচিত সদস্যগণ পূর্ববর্তী সংসদের মেয়াদপূর্তির পূর্বেই কার্যভার গ্রহণ করেন।

সরকার ক্ষমতা তৃষ্ণার কারণেই সংবিধান লঙ্ঘন করছে। এই প্রশ্নটি নির্বাচন কমিশন বা অন্য কোন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান উত্থাপনই করছে না।

এখানে দুই ক্ষেত্রেই বিধি দ্বারা আরোপিত বাধ্যবাধকতা থাকায় উভয় ক্ষেত্রে একই ধরনের আচরণ করতে হবে। রাষ্ট্রের আচরণ হবে ন্যায় সঙ্গত, কোনক্রমেই খেয়াল খুশি মতো নয়। একই ধরনের আইনের দুই ধরনের প্রয়োগ করা যায় না। ভুল কখনো বৈধতা সৃষ্টি করতে পারে না।

সংসদ সদস্যদের সংবিধান লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি রোধে আমার প্রস্তাবনা হলো : সংবিধানের ১২৩(৩) সংশোধন করা। মেয়াদ অবসানের কারণে অথবা মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোন কারণে সংসদ ভেঙ্গে যাবার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য সংবিধানের ১৮তম সংশোধনী আনয়ন করা। তাহলে এক সংসদের মেয়াদ থাকা অবস্থায় অন্য সংসদের শপথ নেয়ার কোনো প্রশ্ন থাকবে না, সরকারের ক্ষমতার তৃষ্ণা দ্রুত পূরণ হওয়ার ক্ষেত্রে কোন অন্তরায় থাকবে না।

আমাদের আইনের শাসন, ভোটাধিকার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কতকিছুইতো গেল, অন্তত চক্ষুলজ্জাটুকু থাক।

  • কার্টসি - মানবজমিন/ মে ১৬, ২০২০ 

এই মৃত্যুর দায় কার

সায়ন্থ সাখাওয়াৎ


‘বাবার আইসিইউ সাপোর্টটা খুব দরকার ছিল, কিন্তু তা পাওয়া যায়নি।  বাবার চিকিৎসাই হলো না, তিনি মারা গেলেন। আমি ডাক্তার হয়েও কিছু করতে পারলাম না।’ এই আক্ষেপ একজন সন্তানের। একজন চিকিৎসক সন্তান মুমূর্ষু বাবাকে নিয়ে তার চেনাজানা আটটি হাসপাতালে ঘুরেও ব্যর্থ হয়েছেন ভর্তি করাতে। শেষ পর্যন্ত ‘বিশেষ তদবিরে’ কভিড রোগীদের জন্য নির্ধারিত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারলেও সেখানে পাননি আইসিইউ সাপোর্ট। সেখানেই মৃত্যু হয় কভিড রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ডাক্তার সুস্মিতার বাবা অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকারের। আটটি হাসপাতালই কভিড টেস্ট করতে হবে অথবা আইসিইউ নেই জানিয়ে ফেরত দিয়েছে তাকে। এর মধ্যে এমন হাসপাতালও আছে যেখানে আগে চাকরি করেছেন ডাক্তার সুস্মিতা। সে হাসপাতালের পরিচিতজনরাও সদয় হননি তার প্রতি। এমনকি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পরে দুদিনেও করা হয়নি তার বাবার সেই কাক্সিক্ষত করোনাভাইরাস শনাক্তের টেস্ট, যা ছিল না বলে আটটি হাসপাতাল ফিরিয়ে দিয়েছিল তাকে। এমনকি মৃত্যুর পরে ডাক্তার সুস্মিতার অনুরোধ সত্ত্বেও করা হয়নি কভিড টেস্ট। সেই আক্ষেপ জানিয়ে সুস্মিতা বলেছেন, ‘আমি আমার বাবাকে নিয়ে সাফার করেছি, এটা নিয়ে আমি কথা বলব। বিশেষ করে নরমাল যারা পেশেন্ট, কভিড-১৯ না, আমার বাবার মতো কিডনি পেশেন্ট, তারা কী করবেন, তাদের জন্য কী করছেন? কারণ আমি যে হাসপাতালেই গিয়েছি সবাই বলেছে, টেস্ট (রিপোর্ট) আনেন। আমি টেস্টটা কোথায় করাব?

               সায়ন্থ সাখাওয়াৎ

আমি টেস্টটা কোথায় করাব- এই প্রশ্নের সুরাহা এখনো দিতে পারেনি কর্র্তৃপক্ষ। দেশে করোনা রোগী শনাক্তের পর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও ডাক্তার সুস্মিতার মতো অসংখ্য মানুষের এই প্রশ্নের উত্তর এখনো দিতে পারেনি সরকার। এমনিতেই আমাদের আশপাশের দেশগুলোর তুলনায় সবচেয়ে কম টেস্ট হচ্ছে বাংলাদেশে। ১৩ মে পর্যন্ত প্রতি মিলিয়নে (দশ লাখে) ভারতে ১ হাজার ২৭৫, পাকিস্তানে ১ হাজার ৩৮৫, শ্রীলঙ্কায় ১ হাজার ৭৫৯, নেপালে ২ হাজার ৬২৩, ভুটানে ১৫ হাজার ৭৬৩, মালদ্বীপে ২১ হাজার ৭৮৪টি টেস্ট হয়েছে। আর বাংলাদেশে প্রতি মিলিয়নে টেস্ট হয়েছে মাত্র ৮৩০টি। ওই সব দেশ যদি করোনা টেস্টের কিট পেতে পারে তবে বাংলাদেশ কেন পায় না?

করোনা টেস্ট কম হওয়াতে করোনা বিস্তার রোধ করা যেমন দুরূহ হয়ে পড়ছে, তেমনি এর ফলে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া রোগীরা। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা এর যে কোনো একটি উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে গেলে তাদের পরিণতি যে কী হয় তা স্পষ্ট হয়েছে অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকারের আট হাসপাতালে ঘুরে নবম হাসপাতালে গিয়ে প্রায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনায়। তার মৃত্যুর পরে অনেকেই এই প্রশ্নটি তুলেছেন যে, সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিবের মতো প্রিভিলেজড বা অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তির যদি এই রকম পরিস্থিতিতে পড়ে মারা যেতে হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের ভাগ্যে কী ঘটছে এই দেশে?

অন্যদের কী অবস্থা হয় তার দুয়েকটা রিপোর্টও যে সংবাদমাধ্যমে আসছে না এমন নয়। কিন্তু তারা সাধারণ মানুষ বলে হয়তো আলোচনায় আসেন কম। কারণ আমরা অসাধারণদের নিয়ে আলোচনা করতেই বেশি ভালোবাসি। ১১ মে সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে, ‘তিন ঘণ্টা হাসপাতালে ঘুরে মারা গেল ছেলে, খবর শুনে বাবারও মৃত্যু’। রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ২৪ বছরের যুবক রিমন সাউদ জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাত ৩টায় নিজেদের গাড়িতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন। কয়েকটি হাসপাতালে ঘুরে কেউ ভর্তি না নেওয়ায় পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। ভোর ৬টার দিকে সেখানেই মারা যান রিমন। বাড়ির দোতলা থেকে হেঁটে নেমে গাড়িতে উঠে হাসপাতালে আসা ছেলের মৃত্যুর খবরটা সইতে পারেননি বাবা। তাই ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান বাবাও। এই খবর পড়লে বা শুনলে কার না বুকে ব্যথা হয়! কিন্তু এমন খবর প্রায় প্রতিদিনই শুনতে বা পড়তে হচ্ছে আমাদের।

দৈনিক ভোরের কাগজের ক্রাইম রিপোর্টার আসলাম রহমানও করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন বলে আক্ষেপ করেছেন তার সহকর্মীরা। যদিও তার চূড়ান্ত রিপোর্টে জানা যায় তিনি কভিড আক্রান্ত ছিলেন না। যদিও এই ধরনের রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেন।

এমন সাসপেক্টেড কভিড বা যাদের কভিডের মতো উপসর্গ আছে তারাই বেশি বিপদগ্রস্ত। মৃত্যুর হারও তাদের মধ্যেই বেশি। সংবাদমাধ্যমে আসা রিপোর্ট থেকে জানা যায়, শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটেই ২ মে থেকে ১১ মে পর্যন্ত ১০ দিনে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১১৯ জন। এদের মধ্যে মাত্র ১১ জনকে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। বাকি ১০৮ জনই করোনা সাসপেক্ট! অর্থাৎ তারা করোনা কি না তা নির্ধারণই করা হয়নি। শুধু পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে তৈরি করা ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮ মার্চ থেকে ৯ মে পর্যন্ত সারা দেশে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৯২৯ জন (ঢাকা ট্রিবিউন, ১২ মে ২০২০)।

হাতপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে এই যে মৃত্যু হচ্ছে তাতে অনেকেরই রাগটা গিয়ে পড়ছে চিকিৎসকদের ওপর। তারা হয়তো তলিয়ে দেখেন না যে, এর পেছনে চিকিৎসকদের দায় কতটা আর ব্যবস্থাপনার ঘাটতি কতটা। সরকার যদি ঢাকা মেডিকেলের মতো সব সরকারি হাসপাতালে কভিড রোগীদের ভর্তির সঙ্গে ভিন্ন ফ্লোরে আলাদা করে কভিড সাসপেক্ট রোগীদেরও চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিত আর তা মিডিয়ায় প্রচার চালানো হতো, তাহলে হয়তো কভিড উপসর্গ নিয়ে রোগীরা সব হাসপাতালে ছুটতেন না। তাতে এই সব রোগীর ঝুঁকি কমে যেত অনেক। আর যে টেস্টের জন্য রোগীদের এত বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাও কী করে বাড়ানো যায় সে চেষ্টায়ও ব্যাপক ঘাটতি আছে কর্তৃপক্ষের।

একদিকে স্বাস্থ্য খাতে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম ব্যয় করে বাংলাদেশ।  মোট জিডিপির মাত্র ২ দশমিক ২৭ শতাংশ ব্যয় করা হয় আমাদের স্বাস্থ্য খাতে। তার ওপর চুরি-দুর্নীতি তো আছেই। ফলে সেই কম বরাদ্দেরও কতটুকু যে শেষ পর্যন্ত দেশবাসীর স্বাস্থ্যসেবায় কাজে লাগছে সে এক বড় প্রশ্ন। আমাদের মন্ত্রী, এমপিরা সাধারণ রোগের চিকিৎসা করাতেও জনগণের ট্যাক্সের টাকা খরচ করে বিদেশে চলে যান। যাদের টাকা খরচ করে তারা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেন, সেই সাধারণ জনগণের জন্য তারা ভালো মানের চিকিৎসা ব্যবস্থাটা পর্যন্ত গড়ে তুলেননি এই দেশে। এমনকি এমন মাননীয়রা চিকিৎসা নিতে পারেন এমন মানের একটা হাসপাতালও তারা তৈরি করতে পারেননি। তারা হয়তো ভাবেননি যে, এমন দিনও আসতে পারে যখন অনেক টাকা আর ক্ষমতা থাকার পরেও বিদেশে যেতে পারবেন না। এই দেশেই চিকিৎসা নিতে হবে তাদের।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আজকের এই ভঙ্গুর অবস্থা দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার ফল।  একযুগ ধরে টানা ক্ষমতায় থেকে উন্নয়নের যে গল্প করছিল সরকার, সে গল্পের ফানুস ফুটো করে দিয়েছে করোনা। তবে আগের সেই সব কথা বলে এখন আর লাভ নেই। এখন যা আছে তাই দিয়েই সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে আগে। 

সংবাদমাধ্যম ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম ৬০ দিনে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ বাংলাদেশে, সুস্থতার হার সবচেয়ে কম। করোনাভাইরাসের সূচকে এশিয়ার পরবর্তী ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে বাংলাদেশকে। তার ওপর সরকার পোশাক কারখানা, রেস্তোরাঁ, দোকান, শপিংমল খুলে দিয়ে করোনা বিস্তারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। বাড়ছে আক্রান্তের হার।  সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছেন চিকিৎসক, পুলিশ, সাংবাদিকসহ যারা করোনার বিরুদ্ধে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে লড়ছেন তারা। বাড়ছে মৃত্যু। তাই করোনার বিস্তাররোধে বিশেষজ্ঞ মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যাপ্ত টেস্ট করাসহ যা যা করণীয় তা সবই করতে হবে সরকারকে। সব নিয়মও মেনে চলতে হবে দেশবাসীকে। আর হাসপাতালগুলোকে সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় এনে এমন পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে যাতে আর একজন মানুষও বিনা চিকিৎসায় মারা না যান।

  • লেখক - চিকিৎসক ও কলামনিস্ট
  • কার্টসি - দেশ রুপান্তর / মে ১৪, ২০২০ 

Thursday, May 14, 2020

What is Vietnam doing right? And what is Bangladesh doing wrong?

 — By Shama Obaed


“Pandemic is not a word to use lightly or carelessly. It is a word that, if misused, can cause unreasonable fear, or unjustified acceptance that the fight is over, leading to unnecessary suffering and death,” said Tedros Adhanom, director general of the World Health Organization (WHO), in one of his briefings back in March. 

That is a fact, indeed, but the WHO was compelled to declare the Covid-19 outbreak a pandemic once the virus has been detected in more than 200 countries and territories. What started as an epidemic mainly limited to China has now become a truly global pandemic. Unfortunately, the novel coronavirus has its clutch on Bangladesh as well. 

After March 7, when the first cases were disclosed in Bangladesh, the number grew slowly for a period. But now, the country is experiencing an explosion of cases and a fluctuating number of deaths on a daily basis. Experts maintain that the actual number of infected people could be much higher. 

There are cases where patients are dying with corona-like symptoms and these are not being taken in to account as Covid-19 deaths. Unless many more cases are detected through widespread testing, community transmission will continue and the situation will be out of hand. There is one basic confusion that still remains constant in our minds: Is there an official lockdown in Bangladesh or is the country still on holiday? If the lockdown is enforced, then why are transport workers and labourers on the streets demanding to open up modes of transport? 

It seems, if we had utilized our armed forces fully to enforce health regulations and guidelines, and also to distribute food to the poor and the needy, then the situation might have been a little different. 

We often sense a relief in the statements of the health minister and the other government officials, stating that developed countries like the US, UK, Italy, and Spain are experiencing the most widespread outbreak and large number of deaths, and compared to that, Bangladesh is not doing badly combating the Covid-19. When governments and public health experts around the globe are scrambling to understand, track, and contain this new virus, there are some countries that are able to manage and contain it much better than other developed countries. Vietnam is unquestionably one of them.

The case of Vietnam

Vietnam prepared for the epidemic as early as the very first case in China emerged, around middle of December 2019. Despite its border with China, with a relatively low income majority, and a population of 95 million, Vietnam is a definite success story in this pandemic. 

It has 270 confirmed cases of the virus and no deaths. The country is beginning to lift the strict lockdown measures it began imposing in February, reopening restaurants and barber shops. There are arguments that Vietnam is an authoritarian one-party state, so its numbers can’t be trusted. However, Todd Pollack, a professor at Harvard Medical School, who directs the Partnership for Health Advancement in Vietnam in Hanoi, argued: “I see no reason to mistrust the information coming out of the government at this time. Vietnam’s response was swift and decisive. If the epidemic were much larger than is being officially reported, we would see the evidence in increased emergency room visits and hospital admissions -- and we’re not seeing it.” 

Vietnam is cited by global media as having one of the best-organized epidemic control programs in the world, along with Taiwan, South Korea, and Singapore, all of which have had higher infection rates than the former. Despite relatively lesser economic and technological capacities, the country’s response to the outbreak has received acclaim for its immediacy, effectiveness, and transparency. 

The most well-known case of a coronavirus epidemic was Severe Acute Respiratory Syndrome (Sars), which, after first being detected in southern China in 2002, went on to affect 26 countries and resulted in more than 8,000 cases and 774 deaths. At present, many are praising Vietnam’s response to Covid-19, comparing it to the success in 2003 when Vietnam became the first country to be cleared of the Sars outbreak. 

In the case of Covid-19, Vietnam was also on higher alert than most other countries because of its land border with China and the large amount of travel between the two countries.

So, what are the vital reasons behind Vietnam’s coronavirus success? Experts have identified a few key tactics used widely by the government: Early detection and precautions, temperature screening and testing, targeted lockdowns, and constant communication. On January 11, with the first death in Wuhan, Vietnam tightened its border and airport controls. 

Four days later, when there were still only 27 cases in China’s Hubei Province, Vietnamese officials met with the World Health Organization and counterparts from the Centers for Disease Control, and the WHO praised Vietnam for its rapid risk assessment and issuing of protective guidelines. 

As early as on January 29, the Ministry of Health in Vietnam established 40 mobile emergency response teams, on stand-by to assist affected locations, for quarantine, disinfection, and transporting patients or suspecting patients. In the beginning of February, all educational institutions were suspended to avoid the spread of the virus.

There are around eight doctors to every 10,000 people in Vietnam, and with limited clinical resources at its disposal, Vietnam has seemingly managed to get the outbreak under control. Their Ministry of Health, as early as on January 2, issued an urgent dispatch to hospitals and clinics on prevention and control of the acute pneumonia disease outbreak from China. 

The hospitals were instructed to set up measures for early detection and prevention to the disease, and set up rapid reaction teams to confront the high risk of the disease spreading. Moreover, their Finance Ministry declared that people would not be charged for medical fees when they undergo mandatory quarantine at health care centres and other isolation facilities. They would also be transported to isolation wards for free, and receive free drinking water, towels, face masks, hand sanitizers, mouthwash, and other daily necessities. 

If people were confirmed to have caught the virus and needed extra treatment, their treatment and test fees would be covered by the state budget. These kinds of decisions definitely provided the people of Vietnam with hope to fight the virus with courage.

What is significant is the ratio of tests to confirmed cases, and that ratio in Vietnam is almost five times greater than in any other country. Testing was followed by strict contact tracing (including secondary contacts) for anyone known to be infected, immediate isolation followed by quarantining, and the prompt creation of a real-time database and two mobile apps by which people could record their health status and symptoms. 

All this was backed up by the mass mobilization of the country’s military, public security forces, the health care system, and public employees, and an energetic and creative public education campaign that included TV cartoons, social media, and posters that drew on the traditional iconography of official propaganda and heroic doctors with appropriate protection.

But, what are we experiencing in our homes? If we take a glance back at the events that took place in Bangladesh in the last few months, educational institutes were still open till March 17. In the months of February and March, international flights were still coming to Dhaka in full swing from China, Italy, and other European countries with minimal or no screening at the airport. 

On March 15, 142 passengers returned from Italy, who were also taken to the Ashkona Hajj camp but after they complained about the unsanitary conditions there, many of them were allowed to go home with advice to self-isolate.  

Health experts have expressed serious reservations about the action. One cannot help but wonder if this decision has actually contributed to the spread of the virus rather than controlling it.

The Institute of Epidemiology, Disease Control, and Research (IEDCR) has recently been stripped of its task to coordinate Covid-19 tests and sample collections, and from now on, the Directorate General of Health Services (DGHS) will coordinate the Covid-19 tests and sample collections. 

According to different public health experts, the matter of shifting the task of testing from the IEDCR amidst the ongoing coronavirus menace exemplified the government’s poor planning and mismanagement. Again, opening up shopping malls and businesses at the time when the death toll is going up is another detrimental decision. In this case, maintaining the health regulations and social distancing will be next to impossible. These kinds of decisions only create panic, confusion, and distrust among the people. 

As coronavirus cases mount in Bangladesh, the government struggles to keep its front line health care workers free from getting infected, which has further strained the country’s medical facilities. At least 419 doctors, 243 nurses, and 324 other health workers had tested positive for coronavirus as of Thursday, according to the Bangladesh Doctors Foundation (BDF), as the group blamed a lack of personal protective equipment (PPE) and infections from patients for the outbreak among the doctors.

In addition to that, so far, many members of the police force have tested positive. All this paints a grim picture indeed.

Countries like Vietnam, Hong Kong, Singapore, Germany, New Zealand, and South Korea have been using the process of strict contact tracing aggressively to reduce the outbreak. Contact tracing is used to slow down the spread of infectious outbreaks. When someone gets coronavirus, anyone they have been in prolonged contact with will be tracked down and potentially asked to self-isolate. Phoning or emailing the friends and family of coronavirus patients is one way of contact tracing. 

This can be combined with a location-tracking mobile app, to pick up on others who have been in contact. Why not use this method to save the lives of our countrymen? 

The grim reality is that Covid-19 patients and suspects are facing hurdles and barriers on a regular basis. A good number of people are not being able to do the test because of a lack of planning and strategy on part of the health ministry and the health department. 

There are still not enough testing facilities in the country. We are witnessing, every day, a huge number of people queuing up in front of the BSMMU Hospital with no hope or sign of when they will get their tests done. 

There is also doubt on the quality or authenticity of the test kits being used. A banker passed away recently in spite of his first two test results being negative. 

The only way the government of Bangladesh will be able to gain and maintain public confidence is by being transparent and pro-active in communicating with the public. In a Dalia Research survey of 45 countries asking about public opinion of government responses to the Covid-19 pandemic, 62% of Vietnamese participants said the government was doing the “right amount.” One can’t help but wonder what the response of the Bangladeshi people be if the same question was posed before them. 

Citizens of this country have the right to analyze things and hold the government of the day accountable for all its decisions, so that mistakes can be avoided in the future. 

 — The writer is an organizing secretary of Bangladesh Nationalist Party—BNP and  also a member of the party’s Foreign relations committee.  The opinion was first published on Dhaka Tribune, can be accessed on https://bit.ly/3dGOOm3