Search

Wednesday, August 12, 2020

তাঁদের মামা

—  ওয়াসিম ইফতেখার

ওয়াসিম ইফতেখার
ব্লগার 

হিস্ট্রি ইঞ্জিনিয়ারিং এর দশকে বলতে অস্বস্তি ই লাগে, তবুও বলি। এসব বলার মানুষ বেশী আর নেই। ইতিহাস বিকৃতি'র উৎসবে কিছু সত্য প্রকাশ মন্দ তো না।

...মামী এখনো বেঁচে আছেন। বেশ অসুস্থ। উনার জন্য দোয়া রাখবেন। যে ছবিটা দিলাম, চার জনের সামনে যিনি, এই মামী'র স্বামী। মানে মামা হন। হুম মামা বেঁটে ছিলেন, বেশ ভালোই খাঁটো। যে সময়ের কথা বলছি, মামা তখন ডাক্তার। মেজর ডাঃ নাইমুল ইসলাম, ডাক নাম বাচ্চু।  

কমলের ইচ্ছা ছিল মেডিকেলে পড়বে, বড় ডাক্তার হবে। কিন্তু বাচ্চু মামা'র পরামর্শে কমল শেষ অবধি আর্মিতে চলে আসে।

মার্চ মাসে ভাগ্নে কমল চট্টগ্রামে বিদ্রোহ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসে। সে এক হুলস্থুলকাণ্ড বৈকি।

ভাগ্নে যখন চট্টগ্রামে বিদ্রোহ করে যুদ্ধ শুরু করেছে তখন মামা বাচ্চু অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্ট্রিতে বিদ্রোহ করে বাঙালী অফিসারদের ফ্যামিলি গুলো রেস্কিউ করে ঢাকা'র দিকে কোথাও নিয়ে আসছেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।

তার স্ত্রী'র ভাষ্য ৩ এপ্রিল সকালের দিকে উনি বললেন — 

‘একটা সুটকেসে তোমাদের কিছু কাপড় নিয়ে নাও।’ 

জানতে চাইলাম, ‘তোমার-টা নেবে না?’ 

বললেন, ‘দরকার নেই।’ 

কথাটা তখন ঠিক বুঝতে পারি নি, আজ উপলব্ধি করি। তিনি হয়তো সবকিছুই বুঝেছিলেন, সব জানতেন। যা হোক ঐদিন তিনি বললেন যে আমাদের ঢাকা শহরের ফার্মগেটে নামিয়ে দেবে।


উল্লেখ্য ২৫ মার্চের পর থেকে চেনাজানা কাছের মানুষরা সবাই জড়ো হয়েছিল ডাক্তার নাইমুলের বাড়িতে। 

একটা বাস ভর্তি হলো আর নাইমুলের একটা ফিয়েট গাড়ি। ফিয়েট টা নাইমুল নিজেই চালাচ্ছিল। 

আজ যেটা উত্তরা এই উত্তরা হয়ে নিকুঞ্জ পার হবার পথে ডাঃ নাইমুল ইসলাম বাচ্চু চালিত ফিয়েট ও অন্যান্য ফ্যামিলি গুলোকে বহন করা বাসকে ব্যারিকেড দিয়ে আঁটকে দেয় এক পাকিস্তানী কর্নেল। অন্যরা স্কেপ করতে পারলেও আঁটকে যান নাইমুল। তাঁকে ধরে নিয়ে আসা হয় সংসদ ভবন এলাকার আর্মি ক্যাম্পে। এরপর নাইমুলের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি, বহু যুগ। 



যে দিন যারা নাইমুলের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছিলেন তাদের একজন মাহাবুবুর রহমান। দেশ স্বাধীন হবার পর ২৬ মার্চ উপলক্ষে 'হাতিয়ারে' নামে একটা স্মরণিকা প্রকাশ হয়। ৩ এপ্রিলের বাস ছাড়ার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত সব কিছুর বিস্তারিত বর্ণনা মাহাবুবুর রহমান লিপিবদ্ধ করেছেন ঐ স্মরণিকাতে।

এতগুলো জীবন বাঁচাতে শহীদ হওয়া নাইমুল হয়তো এই দেশে মুক্তির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ কেউকেটা কেউ নন। 

শুধু ধরা পরা না, দেশের জন্য কিভাবে মরতে হয়, তার একটা ভালো উদাহরণ হয়ে থাকবেন নাইমুল। জানতে চান কিভাবে হত্যা করা হয় কমলের মামা ডাক্তার নাইমুল কে?

করাচী আর্মি হাসপাতালে বাঙ্গালী রুগী আসতো রক্ত শূন্যতা আর জখমজনিত ক্ষরণ নিয়ে। তখন, রক্ত প্রয়োজন হলে মেজর ডাঃ নাইমুল পাঞ্জাবী সৈন্যদের কাছে রক্ত চাইতেন রোগী বাঁচাতে। 

মামা তখন বুঝেন নি পাঞ্জাবীরা রক্তদানকে ভালো চোখে দেখছে না। যখন বুঝলেন তখন ৭১' সালের এপ্রিল মাস। 

গ্রুপ মিলে গেলেই মামার শরীরের রক্ত নিয়ে নিয়ে পাক সেনাদের শক্ত শূন্যতা পূরণ করা হতো! অনবরত নেয়া হতে শুরু হল রক্ত… বুঝতেই পারছেন।

এর বেশী কিছু বলতে চাই না। সত্য বলতে বলার ক্ষমতা আমার নেই। বিভৎসতার বর্ণনা নাই বা জানালাম! যতদূর জানা গিয়েছে, মামার প্রায় রক্তশূণ্য দেহটি সংসদ ভবনের পিছনে কোথাও পুঁতে দেয়া হয়। এখন যেটা লেক হয়েছে আর কি। এই ঘটনা জানতে অপেক্ষা করতে হয়েছে কয়েক যুগ। স্বাধীন দেশের অজস্র বেওয়ারিস লাশের মত হারিয়ে গিয়েছেন মামা।

বাংলাদেশের ডাকটিকিটে প্রথমবারের মতো আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পাই ১৪ ডিসেম্বর ১৯৯১-এ প্রকাশিত তিনটি শিটলেটে, বেগম জিয়ার প্রধানমন্ত্রী হবার পর। সেই সুবাদে প্রথমবারের মত হ্যাঁ, ৯৩'এ ডাক্তার নাইমুলের ছবি সম্বলিত সম্মান সূচক ডাক টিকিট প্রকাশ করেছিল বেগম জিয়ার সরকার। শহীদ ডাক্তার হিসাবে মামা নাইমুলের নাম তখন স্মরণ হয়েছে PG ও CMH- এর শ্বেতপাথরে। 

অনেক চেষ্টার পর Bangladesh Ordnance Factory থেকে যে রাস্তা বামে সালনার দিকে বাঁক নিয়েছে, সেই রাস্তার নাম রাখা হয়েছে এই শহীদ ডাক্তারের নামে। তার আগে ঐ প্রধান সড়কের নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার নাইমুলের নামে করার দাবী উঠলে বাঁধা দেয় এলাকার লীগ নেতারা।

আর হ্যাঁ, ঐ মামী কিন্তু কমলের একার মামী না। পুতুলেরও মামী। না, স্বামী কমলের সূত্রে না। নিজ মায়ের সূত্রে।

অনুগ্রহ করে কোন প্রশ্ন করবেন না। স্রেফ জেনে রাখেন, এই দেশের জন্য এমন অনেক মানুষ ও পরিবার প্রাণ দিয়েছে, যাদের কথা জাতিকে জানতে দিতে প্রবল আপত্তি একটা গোষ্ঠীর।।


তথ্য সুত্র —  

  • ইত্তেফাক 
  • নবিউল করিম 
  • শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারক ডাকটিকিট
  • মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক তালিকা


গণতন্ত্রই জনগণের রক্ষাকবচ

  সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া 

সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া 
গবেষক 

গাড়ির মালিক-চালকদের স্বার্থহানি হলে মালিক-চালক-শ্রমিকদের সংগঠন সরকারের সাথে দরকষাকষি করে — সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করে।

আইনজীবিদের স্বার্থহানি হলে আইনজীবী সমিতি আদালত অচল করে দেয় — সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করে।

পুলিশের স্বার্থহানি হলে পুলিশ এসোসিয়েশন সরকারকে ধমক দেয়, পরের বার রাতে ভোট নিয়ে দিবে না বলে হুমকি দেয় — সরকার মেনে নিতে বাধ্য হয়।

সামরিক বাহিনীর স্বার্থহানি হলে সামরিক বাহিনী গদি নড়বড়ে করে দিবে বলে হুমকি দেয় — সরকার ভয়ে সব দাবি মেনে নেয়।

সরকারি কর্মকর্তাদের স্বার্থহানি হলে (যেমন — ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা চলে গেলে) সরকারি কর্মকর্তাদের এসোসিয়েশন অবৈধ নির্বাচনে অবৈধ সুবিধা দিবে না বলে হুমকি দেয় — সরকার তাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়।

এই যে সংগঠিত গোষ্ঠীগুলো, এর বাইরেও বিপুল সংখ্যক মানুষ রয়েছে যাদের কোন সংগঠন নেই, কোন ছায়া নেই, কোন দল নেই, বল নেই। এরা ‘সাধারণ’ মানুষ, ;আমজনতা’, ‘ম্যাংগো পিপল’। আপনি ও আমি। তো এই আমজনতার কোন স্বার্থহানি হলে তার প্রতিকার কী? তাদের পক্ষে কে দরকষাকষি করবে?


কিছুদিন আগে সরকার পরিবহন ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়েছে। কেন জানেন? কারণ পরিবহন মালিকদের সংগঠন ও তাদের নেতা শাহাজাহান খান সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে, তারা নাকি করোনাকালীন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সুতরাং ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে হবে। খুবই যৌক্তিক কথা। তাদের ক্ষতি হয়েছে সুতরাং ক্ষতি পোষাতে হবে। কিন্তু কার কাছ থেকে পোষাবে? কার পকেট কেটে? কাটো জনগণের পকেটই কাটো! কোন প্রতিবাদ হবে না। যদিও করোনায় আমজনতা, যারা গণপরিবহণে চড়ে, তারা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারো চাকুরি গেছে, কারো বেতন কমেছে। তো জোর করে তাদের পকেট কাটার বন্দোবস্ত করা হলো, তারা বাড়তি ভাড়া দিতে হবে — কিন্তু তাদের যে আয়-রোজগার কমলো, তাদের ক্ষতিপূরণ কে দিবে? তাদের ক্ষতি কে পোষাবে? আর আম-জনগণই যেহেতু ক্ষতিগ্রস্ত তারাই কেন অন্যের ক্ষতি পোষাতে নিজেদের পকেট থেকে ৬০ শতাংশ বেশি বাস ভাড়া দিবে? দেখুন, আপনাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করা সরকার এখানে জনগণের পক্ষ না নিয়ে পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ নিয়েছে। কেন? কারণ মালিকদের সংগঠন আছে। জনগণের কোন সংগঠন নেই। জনগণের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই। সেজন্য জনগণের পকেট কাটা জায়েজ। জনগণের স্বার্থের বিপক্ষে রাজনীতি করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?


আরেকটা উদাহরণ দেখুন, গত কয়েক মাস সরকার যাচ্ছেতাইভাবে জনগণের ঘাড়ে দ্বিগুণ, তিনগুণ বিদ্যুতের বিল চাপিয়ে দিয়েছে। কেন? কারণ তাদের পকেট কাটা সহজ। কোন আওয়াজ হবে না, প্রতিবাদ হবে না। প্রতিবাদ করলে মামলা, হামলা, গুম! জনগণের স্বার্থ দেখার কেউ নেই। কোথাও কেউ নেই জনগণের পক্ষে দাড়াবার। জনগণেরও করার কিছু নেই এই অন্যায় সিদ্ধান্ত মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া।


...হ্যাঁ থাকতো, যদি পাঁচ বছর পরপর হলেও তাদের হাতে ভোট দেওয়ার ক্ষমতাটা থাকতো। প্রতি পাঁচ বছর পরপর ওই নাঙাভূখা, গরিব, মেহনতী, গণপরিবহনে চড়া মানুষগুলো হাতের টিপসই দিয়ে অত্যাচারি শাসককে শায়েস্তা করতে পারতো। ওই একদিন তাদের হাতে রাষ্ট্রের ক্ষমতাটা ফিরে যেতো। আর তাদের কাছে পাঁচ বছর পর হলেও ফিরে যেতে হবে এ চিন্তা থাকলে যত অত্যাচারি শাসকই হোক-না-কেন, তারা জনগণকে শাস্তি দেওয়ার আগে দু’বার চিন্তা করতো।

 

আমজনতার, ম্যাংগো পিপলের, স্বার্থহানি হলে তারা এই যে প্রতি পাঁচ বছর পরপর হলেও ভোট দিয়ে সরকারকে শায়েস্তা করতে পারে, রাষ্ট্রের মালিক বনে যায়, এর ফলেই অত্যাচারি শাসক বা সরকারও তাদের অন্যায় কার্যকলাপের, বেপরোয়াভাবে মানুষকে হয়রানি করার কিছু লাগাম টেনে ধরে। এটিই গণতন্ত্রের সর্বনিম্ন সুবিধা।


আর ভোট, গণতন্ত্র না থাকলে? জনগণের উপর অত্যাচার-নিপীড়ন বাড়বে, কমবে না। কারণ ১৬ কোটি জনগণের তো কোন এজেন্সি নেই, সংগঠন নেই। থাকা সম্ভবও না, থাকবেও না। তাদের একমাত্র সংগঠিত শক্তি তাদের ভোটাধিকার। সেই জনগণের ভোটকে ভয় পেয়ে সরকারগুলো কিছুটা সোজা থাকতো। কিন্তু জনগণের সেই অধিকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই ডাকাত, দুর্বৃত্তরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে ছিনিয়ে নিয়েছে। মানুষকে জোরজবরদস্তি করে শাসন করছে। তাহলে এখন জনগণের স্বার্থ রক্ষা হবে কিভাবে? হবে না যদিনা জনগণ অবৈধ শাসকদের গদি পুড়িয়ে দেয়। ততদিন পর্যন্ত ওসি প্রদীপরা প্রতিবছর শয়ে শয়ে সাধারণ মানুষ মারবে এবং পার পেয়ে যাবে। কারণ জনগণের, মানুষের স্বার্থ রক্ষা করার আর কোনো সংগঠন নেই, ব্যবস্থা নেই, তাদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই, তাদের রাগ-ক্ষোভ-ক্রোধ এসবের কোনো মূল্য নেই কারণ এগুলো প্রকাশের, উদ্গিরণের কোন ব্যবস্থা অবশিষ্ট নেই। প্রিয় জনগণ, এই গণতন্ত্রহীনতা মানে আপনাদের নিজেদেরই অধিকারহীনতা, দস্যু, দুর্বৃত্তদের হাতে আপনাদের জীবন-সম্পদ সবকিছু বন্দী থাকা।


যারা জনগণের সংগঠিত শক্তি প্রয়োগের অধিকার, অর্থাৎ ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে তারা জনশত্রু। মুক্তিযুদ্ধ, চেতনা এসব বলে পার পাওয়া যাবে না। এসব জনশত্রুদের রুখে দাঁড়ান। আপনার অধিকার ছিনিয়ে নিন। ভোটের অধিকার সংরক্ষণ করুন। আপনার ভোটে যেই ক্ষমতায় আসুক — তারা ওসি প্রদীপদের রামরাজ্য কায়েমে কিছুটা হলেও লাগাম টেনে ধরবে। আপনার ভোটই পাঁচ বছর পরপর হলেও আপনার একমাত্র রক্ষাকবচ কারণ এটি ছাড়া সরকারের কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করার আপনার হাতে আর কোনো ক্ষমতা অবশিষ্ট নেই। এই সুরক্ষা না থাকলে আপনি ওসি প্রদীপ ও তার আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা শেখদের নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হওয়াই আপনার গন্তব্য।


আওয়ামী লীগের পতন

—  আহাদ আহমেদ


আহাদ আহমেদ
রাজনৈতিক বিশ্লেষক 

আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীন রাজনৈতিক দল। ইহা সত্য তবে অতিপ্রাচীন হইবার কারণে ইহার শেকড় পচিয়া গিয়াছে। মুসলিম লীগের জমিতেই আওয়ামী লীগের জন্ম। ১৯৭১ পূর্ব বামপন্থীদের ভোট বর্জন-বিসর্জনের  রাজনীতির ফলে একটি তৈরি ভোটব্যাংক গড়িয়া উঠিয়াছিল আওয়ামী লীগের জন্য। পাকিস্তান অর্জনের সাথে সাথে যেমন মুসলিম লীগের মৃত্যু ঘটিয়াছে তেমনি বাংলাদেশ স্বাধীন হইবার সাথে সাথেই আওয়ামী লীগেরও মৃত্যু ঘটিয়াছে। তাই শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব ইহাকে কবরস্থ করিয়া বাকশাল নামক এক কিম্ভুতকিমাকার দল সৃষ্টি  করিয়াছিলেন। কিন্তু স্বাধীনদেশে ইহাদের নিজস্ব কোন ভোটব্যাংক তৈরি  হইল না। তাই ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ ও ডাকসু নির্বাচনে তাহারা ব্যালটবাক্স ছিনতাই ও ‘সিলমারার’ সংস্কৃতি চালু করিলেন। বাকশালের এক  বছরের শাসন এমনই চরম হিংসাত্মক হইয়া উঠিল যে এই নামে দল করা তাহাদের জন্য কঠিন হইয়া উঠিল। শেখ হাসিনা দায়িত্ব লইয়া নতুন করিয়া বাকশালকে কবরস্থ করিয়া আওয়ামী লীগকে জিন্দা করিলেন। বাকশাল লইয়া দীর্ঘদিন আব্দুর রাজ্জাক সাহেব ভিন্নপথে হাটিয়া উপায়ন্তর না দেখিয়া আবারো আওয়ামী লীগে ফিরিয়া আসিলেন। ততদিনে আওয়ামী লীগ স্বৈরশাসক এরশাদের প্রচ্ছন্ন মদদ লইয়া একটি ‘অফিসিয়াল বিরোধীদলের’ মর্যাদা লইয়া আসন গাড়িয়াছে। স্বৈরশাসকের সাথে আপস না করার পুরস্কার হিসেবে এরশাদ পতনের পর বাংলাদেশের জনগণ স্বচ্ছ ভোটে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসায়। আওয়ামী লীগের বুঝিতে বাকী রহিলনা যে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফেরা তাহাদের জন্য প্রায় অসম্ভব। ভারতের অন্যতম দীর্ঘ  সময়ের ক্রীড়নক এরশাদের পতনের পর বিএনপির ক্ষমতায়  আরোহন ভারতের জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখাদিল। ঘাতক,দালাল ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি জামায়াত নিয়ে তাহারা বেশ শোরগোল তুলিতে সমর্থ হইল। কিন্তু ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ  জামায়াতের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীর সাথে মিলে যুগপৎভাবে বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়িয়া তুলিল। সংসদ বর্জন করিয়া বিএনপিকে একটি ‘একদলীয়’ সরকারে পরিণত করা হইল। সংসদীয় ধারাবাহিকতার নামে বিএনপিকে ১৯৯৬ সালে একটি বিরোধীদল ছাড়া নির্বাচন করতে বাধ্য করা হইল। কিন্তু সংসদে বেগম খালেদা জিয়া সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এনে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক  সরকারের অধীনে নির্বাচন করেন। তিনি চরম বৈরি পরিবেশেও ১১৭ আসনে বিএনপিকে বিজয়ী করে সংসদীয় বিরোধী দলে অবস্থান নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি অব্যাহত রাখেন।

এখানে উল্লেখ্য যে আওয়ামী লীগই প্রথম  জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনের  পরিসংখ্যান তত্ত্ব ( Psephocracy) চর্চা শুরু করেন। জামায়াতও সেই খেলায় আওয়ামী লীগের পক্ষে খেলে। কিন্তু এই সময়ে ক্রমান্বয়ে  আওয়ামী লীগের মধ্যে বাকশাল ফিরিতে শুরু করিয়াছে। তাহারা বেপরোয়া হইয়া উঠিতে শুরু করিল। সারাদেশে হাজারীদের অত্যাচার আহাজারীতে পরিণত হইতে শুরু করিল।

‘জাতির পিতার পরিবার নিরাপত্তা বিল’ ও ‘গণভবন বরাদ্দ’  বিল সংসদে উত্থাপিত হইল। জাতি আবার ধাক্কা খাইল। আওয়ামী লীগ অজনপ্রিয় দলে পরিণত হইয়া উঠিল। ১৯৯৬-২০০১ সালের জুন অবধি তাহাদের দুই তৃতীয়াংশ আসনহীনতার কারণে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করিতে সক্ষম হয় নাই। ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি দুই তৃতীয়াংশ আসন পাইলেও তাহারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করে নাই। ইহার সুবিধা লইয়া আওয়ামী লীগের  নেতৃত্বাধীন মহাজোট  এক পাতানো ছকের নির্বাচন করিয়া লইল। এইবার এই জোটে খেলাফত মজলিশ  ‘আলেম ওলেমা’ নামধারীরাও আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত হইল। ইহারা ২০০৬ সালের ২২ ডিসেম্বর ৫ দফা চুক্তিবদ্ধ হয় খেলাফত মজলিসের সহিত।


ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীনের সেনাসমর্থিত উদ্ভট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর এক মহা তামাশার নির্বাচন হয়। মুলতঃ তালিবানপন্থীদের নিয়েই আওয়ামীলীগ ‘তালিবান’ বিরোধী  লড়াইয়ের ডাক দিয়ে ভারত-মার্কিন সমর্থন  আদায় করিয়া নেয়। যেহেতু আওয়ামী লীগ  জানে যে দেশে ইহাদের কোন ভোটব্যাংক তৈরি  হয় নাই তাই ভারতীয়দের পরামর্শ ও সমর্থন লইয়া দুই তৃতীয়াংশ আসনের জোরে তাহারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করিয়া দেয়। এমনকি এব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করা হইয়াছিল যাহাদের মতকে উপেক্ষা করিয়া প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক বিধান বাতিল করিয়া রায় প্রদান করা হয়। সংসদে ব্যারিস্টার  শফিক আহমেদ ৩০জুন ২০১১ বিল উত্থাপন করেন এবং একই দিনে সংসদ অনুমোদন প্রদান করেন। রাষ্ট্রপতি ৩ জুলাই ২০১১ অনুমোদন দান করেন। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী গৃহীত হইয়া নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান বিলুপ্ত হয়। শুরু হয় ভারতীয়দের প্রত্যক্ষ মদদে ৫ জানুয়ারি ২০১৪ ও ৩০ ডিসেম্বর  ২০১৮ সালের মহা তামাশার নির্বাচন। এতসব করিয়াও আওয়ামীলীগ নামক প্রাচীন দলটি এখন প্রধান দুইটি ধারায় বিভক্ত হইয়া পড়িয়াছে।

 

এক.পরিবার ভিত্তিক লর্ড সভার ধারা।

দুই.পরিবারের বাহিরের কমন্সসভার ধারা।

এই দুই বিবাদমান ধারাই আওয়ামীলীগের পতনের অন্যতম কারণ হইয়া উঠিবে। এই কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

Tuesday, August 11, 2020

সিঙ্গারার (লীগের) ভেতরে আলু (শাহেদ) ঢুকলো কিভাবে?

—  মিনার রশীদ 

মিনার রশীদ 


অজ পাড়াগাঁওয়ের   জনৈক আব্দুল আলী শহর দেখতে এসেছে। শহরে পা ফেলে যা দেখে তাতেই অবাক  হয়। বাস থেকে নেমে কিছু  খাওয়ার জন্যে একটি  খাবারের হোটেলে ঢুকে। সেখানে প্রথমবারের মত আজব  পিঠার মত দেখতে একটি জিনিস খায়। জিনিসটির  নাম নাকি ‘সিঙ্গারা’!   অবাক করা ব্যাপার!  ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আজব জিনিসটি দেখে। কোনওভাবেই   মাথায় ঢুকছে  না, এই পিঠার  (সিঙ্গারার) ভেতরে আলু  কিভাবে  ঢুকলো?  

এই আব্দুল আলীর মত কিছু আব্দুল আলী আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনীতি জগতেও অবস্থান করছেন। একই সরলতায় এরা প্রশ্ন করছে, আওয়ামী লীগের এত ভেতরে বা গহীনে   শাহেদ, সাবরিনা, পাপিয়া, জিকে শামীম এরা কীভাবে ঢুকলো? ৭১ টিভিসহ আরো কিছু টিভি চ্যানেল ও পত্রিকা নিজ নিজ জায়গা থেকে যথারীতি ড্যামেজ কন্ট্রোলের মিশনে নেমে পড়েছে। এব্যাপারে  কারো কারো পেরেশানি বা বুদ্ধিবৃত্তিক কসরত উপভোগ করার  মত। ইনিয়ে বিনিয়ে এরা সরল এই প্রশ্নটি রাখছেন। কিছুটা দোষ কিভাবে বিএনপি-জামায়াতের ঘাড়ে চাপানো যায়, সেই  চেষ্টাও জারি রেখেছেন। 

দেশবাসীর এখন দায় পড়েছে তাদের এই প্রশ্নটি খোলাসা করার।  এই আব্দুল আলীদের কাছে এখন ব্যাখ্যা করতে হবে, সিঙ্গারার ভেতরে এই আলুটি কিভাবে ঢুকলো? 

এদের সর্বোচ্চ গবেষণা এখন — এই  শাহেদরা  কিভাবে রাষ্ট্রের এত এত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের এত কাছাকাছি চলে গেলেন? তাদের দৃষ্টিতে আওয়ামী লীগ অতি পবিত্র দল!  এই দলের নেত্রীকে বিশ্বের দ্বিতীয় সৎ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখানোর এই জোকারদের  হাস্যকর প্রচেষ্টাটি আরেকটু হাস্যকর হয়ে পড়ছে। এই অতি চালাকেরা দেশের মানুষকে সত্যি সত্যি ‘গরু-ছাগল’  ভেবেছে । এক মন্ত্রীতো এজন্যে দেশবাসীকে কচুরিপানা খাওয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন!


এদের দাবি, এই দলে কোনো খারাপ মানুষ থাকতে পারে না।  কাজেই  বিএনপি জামায়াতের ষড়যন্ত্র আবিস্কারের নিমিত্তে  আগে থেকে প্রস্তুত (well equipped)  ডুবুরির দল নেমে পড়ল। এই ডুবুরির দল ভক্তদের  নিরাশ করে নাই। শাহেদের সাথে হাওয়া ভবনের সম্পৃক্ততাও ইতোমধ্যে আবিস্কার করে ফেলেছে!  হাছান মাহমুদ  তার কাছ থেকে কাঙ্খিত  বোমাটি ঠিক সময়েই ফাটিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন,   তারেক রহমানের সাথে স্কাইপিতে যোগাযোগ করেছে শাহেদ।  এখন শাহেদের যেখানে, ‘ভাই আপনি আমার বাপ লাগেন’ বলে কোনো এক শামীম ওসমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার  কথা, সেখানে নাকি  তিনি কথা বলেছেন বিএনপির টপ নেতার সঙ্গে!! 

মৃত্যুর পর এই ভদ্রলোকের মগজটি  সত্যিই জাদুঘরে সংরক্ষণ করে রাখা  দরকার। এই আজব চীজ শতাব্দিতে দুয়েকটির বেশি জন্ম নেয় না। 

এই ধরণের কোনো মন্তব্য বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কোনো মন্ত্রী বা এই মাপের নেতা করলে এদেশের সাংবাদিকগণ  সত্যি সেই নেতা বা মন্ত্রীকে ফানা ফানা করে ফেলতেন। 

আজকের এই আব্দুল আলীরাই আমাদের মিডিয়া ও বুদ্ধিজগতের একেক দিকপাল সেজে বসেছেন। কেউ কেউ নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবীর তকমাও লাগিয়েছিলেন!  নিরপেক্ষভাবেই এই সুশীলদের এক বড় অংশ এখন চুপ মেরে রয়েছেন। সময় হলে ইনারা জাগবেন। 

২০০৪ থেকে ২০০৬ সালে এদের বিলাপে সারা দেশ ও বিশ্ববাসীর অন্তরাত্মা কেঁপে   ওঠেছিল । কেউ কেউ প্রায় প্রতিদিন নিজ নিজ   পত্রিকার প্রথম পাতায় গুরু গম্ভীর  ‘মন্তব্য কলাম’ প্রকাশ করতেন। তাদের  এক কথা —  রাষ্ট্রটি অকার্যকর বা নন ফাংশনিং হয়ে পড়ছে। ‘বাঘ আসছে’   বলে এরা  বিকট চিৎকার  করে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে তুলতেন। অথচ আজ সেই  জ্যান্ত   বাঘ চোখের সামনে  দেখেও ভাবজগতের এই আব্দুল আলীরা  মুখে কুঁলুপ এঁটে বসেছেন! 

এদের সর্বোচ্চ গবেষণা এখন —    রিজেন্ট হাসপাতালের এই  শাহেদরা  কিভাবে শাসক দলের এত  অন্দরে  ঢুকলো? 

দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতি এদেশে নতুন কিছু নয় । বলতে গেলে এটি আমাদের সম্মিলিত অপরাধ । 

কিন্তু  দুর্নীতিকে এভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার নমুনা এর আগে আর কখনোই দেখা যায় নি। সন্দেহ নাই  এরশাদ এই দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন। আর তারই ঘোষিত বোনের সময় এটি বর্তমান চূড়ায় পৌছেছে  । 

গত বছর জুলাই মাসে দুদক চেয়ারম্যান বলেছিলেন, সরকারী কর্মকর্তারা সরল বিশ্বাসে দুর্নীতিতে জড়ালে তা অপরাধ হবে না। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ সরকারী কর্মকর্তাদের প্রতি উপদেশ রেখেছিলেন, ‘আপনারা ঘুষ খান, একটু রয়ে সয়ে’। রাবিশ নামে পরিচিত অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ক্ষমতায় থাকলে সম্পদ একটু আধটু বাড়বেই’। তিনি আরো স্বীকার করেছিলেন, ‘এখন শুধু পুকুর চুরি না, রীতিমত সাগর চুরি হচ্ছে’। হলমার্কের চার হাজার কোটি টাকার লুটপাটকে তিনি  বলেছিলেন  ‘পিনাট’।  নিশিথরাতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি ইন্ডিয়াকে যা দিয়েছি তা কোনোদিন ভুলতে পারবে না। 

এতকিছুর পরেও এক শ্রেণীর জ্ঞানপাপীরা বুঝতে পারছেন না, শাহেদ সাবরিনার মত বাটপার আওয়ামীলীগে  কিভাবে ঢুকলো ?

আশার কথা, নঈম নিজাম, পীর হাবিব, প্রমুখ সাংবাদিকদেরও বিবেক এখন জাগ্রত হচ্ছে। দুর্নীতির কান ধরে  ইনারাও ইদানিং টানাটানি করছেন তবে টানটি এমন রয়ে সয়ে  দিচ্ছেন যাতে আবার পুরো মাথাটি বের না হয়ে পড়ে। 

জেকেজির টেস্ট নিয়ে যখন সরকার বেকায়দায় পড়ে তখন সরকারকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন বুয়েটের প্রাক্তন  ছাত্রলীগ নেতা ও প্রথম আলোর আনিসুল হক । তিনি তার গদ্য কার্টুনে এক চমৎকার গল্প ফাঁদেন। তাতে মনে হবে সরকার ধোয়া তুলসী পাতা। চরিত্র খারাপ এই জাতির! 

এই আনিসুল হক গং দুরবিন দিয়ে আমেরিকা, ইউরোপ, চায়নাতে মানবতার বিপর্যয় দেখেন এবং কয়েকজন মিষ্টিমুখের তারকাদের নিয়ে কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করেন। এমনকি নিকট প্রতিবেশী ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানের বিপর্যয়ও এই মানবতাবাদি দেখতে পেয়েছেন। শুধু দেখতে পান নি  ঘরের ভেতরে কী ঘটেছে বা এখনও ঘটছে তা!  

জানি না ডাক্তারি  পরিভাষায়  আনিসুল হক এবং পীর হাবিবদের এই বিশেষ রোগের কোনো বিশেষ নাম রয়েছে কি না। এজন্যেই যে কথাটি বার বার বলতে চেয়েছি তাহলো আমাদের পচন ধরেছে মগজে। সেই মগজের চিকিৎসা না করলে এই জাতির ব্যারাম দূর হবে না। আনিসুল হকদের যুক্তি মেনে নিলে সরকারের আর কোনো দায় থাকে না। সব দায় প্রতারক জাতির। সরকার সরল বিশ্বাসেই কোভিড টেস্টের দায়িত্ব জেকেজি নামক প্রতারক কোম্পানিকে দিয়েছে। দোষ সরকারের না। দোষ এই জাতির খাসলতের। 

এরা অনেক কিছু খুঁজে পেলেও ধরা পড়ার আগে শাহেদদের খুঁজে পান  না। চলুন, একটা সহজ হিসাব কষি। ধরুন,  এই শাহেদ  ৫০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এই শাহেদকে যদি  এখন দুর্নীতি পরিমাপের একটা ইউনিট ধরি  তবে   দেশ থেকে গত এগারো বারো বছরে যে ৭ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে সেখানে কমপক্ষে (৭ লাখ কোটি ভাগ ৫০০ কোটি) ১৪০০ জন শাহেদের সাইজের  দানব সৃষ্টি হয়েছে। শেয়ার বাজার থেকে যে ১ লাখ কোটি টাকা লুট করা হয়েছে সেখানে ২০০ জন শাহেদের মত দানব রয়েছে। কুইক রেন্টাল থেকে যে ৫১ হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে সেখানেও ১০০ জনের   মত শাহেদ সাইজের দৈত্য    রয়েছে। এগুলো তো জানার মধ্যে। এই হিসাবের বাইরে রয়েছে আরো অসংখ্য দানব। এই অসংখ্য দানবদের  কখনোই ধরা যাবে না  বা ধরা হবে না। সোনালী ব্যাংক ভক্ষণ করেও এই দানবদের কেউ  টকশোর মূখ্য আলোচক থাকবেন  এবং  জাতিকে অবলীলায় এরিস্টটল, সক্রেটিসের জ্ঞান বিতরণ করবেন। শাহেদের সাথে এই সব জ্ঞানীগুণীদের পার্থক্য শুধুমাত্র এই জায়গায় যে  ভাগ্যের ফেরে  শাহেদ ভুল জায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছিল। 

মিডিয়ার এই সব আব্দুল আলীরা ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কিছু বললেও পালের গোদাকে চিহ্নিত করবে না। কখনোই প্রশ্ন করবে না, এই  সব শত শত বা হাজার হাজার দানব তৈরির মূল দায়টি কার বা কাদের?  পৃথিবীর যে সব সভ্য দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সে সব দেশে কোনো অন্যায় বা দুর্নীতি সংঘটিত হলে সর্বোচ্চ মহলকে পাকড়াও করা হয় বা দায়ী করা হয় কিন্তু আমাদের এখানে যত নিচ দিয়ে কাজটি সারা যায় সেই চেষ্টা করা হয়। তাই অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে  শুদ্ধি অভিযান চালানো হয় কিন্তু জিকে শামীম বা শাহেদদের জন্ম কখনোই বন্ধ হয় না । 

প্রধানমন্ত্রী ঠিকই  বলেছেন, শাহেদদের বিএনপি ধরে নাই, তারাই ধরেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কখন ধরেছেন? ধরেছেন তখনই যখন ইতোমধ্যে সাত মাসের ফোলা  পেটটি দৃষ্টিগোচর হয়ে গেছে। শাহেদ সাবরিনাদের ধরেছেন তখনই  যখন  পৃথিবীর না না দেশে ফেইক কোভিড-১৯ টেস্ট নিয়ে স্বদেশীরা  ধরা খেয়েছেন। ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গেলে  মোড়লের মত বলেন, ‘নেমে পড়েছি । সামনেই কুটুমের বাড়ি’ 

জানি না , এই টেকনিক আর কতদিন কাজে দেবে ?


  • লেখক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। 


Sunday, August 9, 2020

চীন-ভারত ও শহীদ জিয়ার পররাষ্ট্রনীতি

— সৈয়দ ইজাজ কবির 

সৈয়দ ইজাজ কবির 

১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি’ গঠনের ঘোষণা দেন এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীদেরকে এ দলে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে দলকে শক্তিশালী সংঠন হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। এর প্রায় চার সপ্তাহ আগে বিভিন্ন শ্রেণীর নাগরিকদের জন্য বঙ্গভবনে এক নৈশভোজে তিনি জাতীয় ঐক্য, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বিষয়ে তাঁর ধ্যানধারণা তুলে ধরে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ইঙ্গিত দেন। তারই ধারাবাহিকতায় বিএনপি গঠিত হয়। ভিন্ন মতাদর্শের হলেও, যারাই দেশের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, তাদের কে নিয়ে দল গড়াই ছিল তাঁর মূল উদ্দেশ্য।

ফলে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদেও আদর্শিক ভিত্তি রচিত হয় ও বিস্তার লাভ করে এবং এ দেশের জনগন তা খুব সহজেই আপন করে নেয়। জনগন বুঝতে পারে, বাঙালী জাতীয়তাবাদ এ দেশের মানুষের খণ্ডিত পরিচয় তুলে ধরে, যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব পুরোপুরি রক্ষা করে না এবং সার্বিকভাবে বিশ্বের কাছে দেশ হিসেবে নিজের স্বকীয়তা উপস্থাপন করে না। সেই আদর্শকে সম্পূর্ন রূপ দিতেই রচিত হয় উন্নয়নের ম্যাগনাকার্টা ১৯ দফার। ১৯ দফার ১৬ নম্বর দফায় বলা আছে — “সকল বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা এবং মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা।” 

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৫(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, “বিদেশের সহিত সম্পাদিত সকল চুক্তি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হইবে এবং রাষ্ট্রপতি তাহা সংসদে পেশ করিবার ব্যবস্থা করিবেন।”

১৯৭৮ সালে শহীদ জিয়া স্বচ্ছতার স্বার্থে এই অনুচ্ছেদটি সংবিধানে যোগ করেন। আমাদের সংবিধানে আরো একটি শর্ত যোগ করা আছে, আর তা হলো “জাতীয় নিরাপত্তার সহিত সংশ্লিষ্ট অনুরূপ কোন চুক্তি কেবলমাত্র সংসদের গোপন বৈঠকে পেশ করা হইবে।” সারমর্ম এই দাঁড়ায় যে, যা হোক, যেভাবেই হোক, আন্তর্জাতিক চুক্তি সংসদে পেশ করতেই হবে। আর তা না হয়ে থাকলে বাংলাদেশের আইনের চোখে বলবৎ যোগ্য চুক্তি বলে গণ্য করা সম্ভব নয়। সংবিধানের ১৪৫(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের সাথে আন্তর্জাতিক অঙ্গন ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ওতোপ্রতভাবে জড়িয়ে আছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক চুক্তি ভূরাজনীতিতে সামগ্রিকভাবে গুরুত্ব রাখে। বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার চুক্তিগুলো আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।

বাংলাদেশের সাথে বিভিন্ন দেশের সম্পর্কের ধরণ ও গতিপ্রকৃতি, বিশেষ করে প্রতিবেশি বৃহৎ রাষ্ট্র ভারতের সাথে আমাদের অম্লমধুর সম্পর্কটা বুঝতে হলে একটু ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে।

শেখ মুজিবের শাসনামলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ছিল ভারত ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ঘেঁষা। ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ-সোভিয়েত সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয়। সোভিয়েতরা বাংলাদেশে ব্যবহৃত তাদের সামরিক সরঞ্জামের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। জিয়ার সরকার সে দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে, আর সম্ভবত সে কারণেই মুজিব আমলে মস্কোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল হকের নিয়োগ বাতিল করেননি।

স্বাধীনতার পর বিভিন্ন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি, জাতিসংঘ, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন, ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা এবং কমনওয়েলথ-এর সদস্যপদ লাভের ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাধীন ভূমিকা পালন করা সহজ হয়ে ওঠে।

পররাষ্ট্রনীতির বিষয়েও শহীদ জিয়ার নিজস্ব ধ্যান ধারণা ছিল। তা হলো বাংলাদেশ যেন নিজের পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন বলেই তার এমন আকাঙ্খা ছিল। জিয়া পররাষ্ট্রনীতিকে খুব সরলীকরণ করে দেখতে পারতেন। তাঁর কাছে পররাষ্ট্রনীতির সবচেয়ে বড় জিনিস ছিল জাতীয় সত্ত্বা অক্ষুন্ন রেখে জাতীয় স্বার্থরক্ষা ও তা হাসিল করতে পারা। 

জিয়ার পররাষ্ট্রনীতির তিনটি মূল লক্ষ্য ছিল — ১. স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত এবং নিরাপদকরণ ২. দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা এবং ৩. আন্তর্জাতিকভাবে শান্তি, স্বাধীনতা এবং প্রগতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে উন্নত করা। কোন এক রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব রাখা জিয়ার নীতিতে ছিল না। জিয়ার শাসনামলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন মাত্রা ও গতি যুক্ত হয় এবং তা সারা বিশ্বে ব্যাপক সমর্থন লাভ করে। চীন, পাকিস্তান ও সৌদি আরবের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। যার ফলে অন্যান্য দেশের সঙ্গে দরকষাকষি করা বাংলাদেশের জন্য অনেকটা সহজ হয়ে যায়। পশ্চিমা ও মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে উন্নত সম্পর্কের ফলে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ উন্মোচিত হয়। জিয়া বিশ্বাস করতেন, পররাষ্ট্রনীতি সকল সময়ে একটি গতিশীল প্রক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও জাতীয় স্বার্থের ওপর নির্ভরশীল। তিনি এক বিদেশি সাংবাদিককে একবার বলেছিলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বহুমুখী, যার অর্থ বন্ধুত্বের মাধ্যমে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। তিনি আরো বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জাতীয় উন্নয়নের জন্য এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা খুবই জরুরি।

কোন ক্ষমতার ব্লকে যোগদান না করে এ অঞ্চলের সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমেই এটা সম্ভব। এতে বুঝা যায় জিয়া বাংলাদেশের জন্য সকলের সঙ্গে সম্পর্কের পররাষ্ট্রনীতিতে (Inclusive foreign policy) বিশ্বাস করতেন। আর তাঁর প্রমাণ, জিয়ার উদ্যোগে পরবর্তীতে সার্ক (SAARC) প্রতিষ্ঠিত হওয়া। 

জিয়ার স্বাধীন অবস্থান ভারতকে বিচলিত করে রাখতো, সেই  প্রমাণ দেখা যায় জিয়ার দিল্লি সফরের সময়। ১৯৮০ সালের জানুয়ারি মাসে দিল্লি সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জিয়ার কাছে জানতে চান, কেন বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে বস্ত্র শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি করছে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, দিল্লী সফর শেষে জিয়া ঢাকা ফেরার এক মাসের মধ্যেই এখানে ভারতীয় বস্ত্রশিল্পের যন্ত্রপাতির একটা প্রদর্শনী করা হয়। হাস্যকর হলেও সত্য যে এই ২০১৮ সালেও ভারত বস্ত্রশিল্পের যন্ত্রপাতি রপ্তানী করতে কতটুকু সফল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত, তা এখনও নিশ্চিত নয়। অথচ ১৯৮০ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে ইন্দিরা গান্ধীর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় এই বস্ত্রশিল্প যন্ত্রপাতি অন্য দেশ থেকে আমদানি করার জন্য। জিয়া আন্তর্জাতিক মহলে কোন দেশের সাথে বৈরিতা চাননি যার ফলে ভারত সফরের এক মাসের মধ্যেই তিনি ভারতীয় বস্ত্রশিল্পের যন্ত্রপাতির একটি প্রদর্শনী করার বন্দোবস্ত করেন বাংলাদেশে। 

বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে জিয়া তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ১৯৭৬ সালে ইসলামিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সপ্তম সম্মেলনে (আইসিএফএম) যোগ দিয়েছিলেন এবং মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক সংহত করতে সফল হয়েছিলেন। তিনি ফারাক্কা বাঁধ প্রশ্নে মুসলিম দেশগুলোর সমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই সমর্থন আইসিএফএম-এর যৌথ ইশতেহারেও প্রতিফলিত হয়েছে। ৫ম জোটনিরপক্ষ আন্দোলন (ন্যাম)-এ ১২ সদস্যের এক প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে ১৯৭৬ সালে কলম্বো যান তিনি। সে সময় তিনি অনেক বিশ্বনেতাদের সঙ্গে একক বৈঠকে মিলিত হন। কিন্তু বহু কূটনৈতিক চেষ্টা সত্ত্বেও সেই সময় কলম্বোয় ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে জিয়ার আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। জিয়া যখন প্রথম ভারত সফরে যান তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মোরারজী দেশাই। কিন্তু ১৯৮০ সালের আগে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে জিয়ার কোন আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি।

ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে জিয়া পানি বণ্টনের বিষয়টি উত্থাপন করেন, যা ভারতের কাছে অগ্রহনযোগ্য ছিল। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে ভারত যে সিকিম দখল করে নেয়, সেটাও ন্যাম নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন করেননি।

জিয়ার শাসনামলে চীনের সাথে সম্পর্ক ছিল অতি উষ্ণ ও শক্তিশালী। জানুয়ারি ২, ১৯৭৭, জিয়া চীনের রাজধানী বেইজিং পৌঁছলে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। বন্ধুত্ব ও শ্রদ্ধার এক অসাধারণ প্রকাশ হিসেবে রাষ্ট্রাচারের আনুষ্ঠানিকতা উপেক্ষা করে জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে চায়না কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান হুয়া গুয়ো ফেং বিমানবন্দরে উপস্থিত হন। যখনি বাংলাদেশে কোন সংকট উপস্থিত হয়েছে, বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছে। ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি জিয়া অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিচালনা করতেন। বাংলাদেশের বৃহৎ প্রতিবেশি ভারত। আর চীনের সাথে রয়েছে ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত। আর এ কারনেই জিয়ার বুঝতে দেরি হয়নি যে এই উপমহাদেশে চীনের ভূমিকা কতোটা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানও চীনের জন্য কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের সাথে জিয়া রাষ্ট্রপতি থাকাকালেই, দুদেশের সহযোগিতার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলো সংস্কৃতি, অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা ও বিশ্ব রাজনীতি। সেই সময় গংগার পানি ভাগাভাগি ও সীমান্তের ওপার থেকে চালানো সশস্ত্র হামলার ইস্যু দুটি জিয়ার জন্য অতিশয় গুরত্বপূর্ণ ছিলো। বেইজিং বৈঠকগুলোতে তিনি সীমান্ত এলাকায় সশস্ত্র হামলার কথা উত্থাপন করেন এবং দুষ্কৃতকারীদেও দমনে চায়নার নেতারা তাঁকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন। ইরানের সাথেও বাংলাদেশের ছিল একটি শক্তিশালী সম্পর্ক। ১৯৭৭ সাল থেকে জিয়ার ধারাবাহিকভাবে চালানো বিভিন্ন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশের সাথে পৃথিবীর প্রায় সব দেশের সাথেই গড়ে উঠে সুসম্পর্ক।

ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেন জানি সব সময় টক, ঝাল আর মিষ্টি মিশ্রিত। জিয়া নিহত হওয়ার প্রায় তিন সপ্তাহ আগে ভারত কে নিয়ে এক কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। ৯ মে ১৯৮১ সালে ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ তালপট্টিতে সেনা অবতরণ ঘটানো হয়। বাংলাদেশ এতে বিস্ময় প্রকাশ করে নয়া দিল্লিকে অনুরোধ জানায় যাতে তারা ঐ দ্বীপ থেকে অবিলম্বে পতাকাসহ সৈনিক ও মালামাল সরিয়ে নেয়। এই ঘটনায় সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে অকুন্ঠ সমর্থন পেলেও তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামীলীগ ঘটনাটির ব্যপারে অতি সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করে। 

এই ঘটনার আগে, সেপ্টেম্বর ৩, ১৯৮০, সাউথ ব্লকে ইন্দিরা গান্ধীর সাথে জিয়ার আধাঘন্টারও বেশী সময় ধরে একান্ত আলাপ হয়। ইন্দিরা গান্ধীর সাথে আলোচ্যসূচিতে ছিল মূলত গঙ্গার পানি বন্টন, ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি এবং বাংলাদেশে সফরে আসার জন্য ইন্দিরাকে আমন্ত্রণ জানানোর মতো দ্বিপাক্ষিক বিষয়াবলি এবং ছয় জাতি শীর্ষ সম্মেলনের জন্য জিয়ার প্রস্তাব। বৈঠকের আগে ভারতীয় পক্ষ জানিয়েছিল, ইন্দিরা গান্ধী দক্ষিণ তালপট্টি ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী নন।


বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী 

জানুয়ারি ২১, ১৯৮০, বেগম খালেদা জিয়াসহ প্রতিনিধিদল নিয়ে জিয়া ভারতে এক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। জিয়া বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে তিনি বিভিন্ন ইস্যু ও সমস্যা নিয়ে বন্ধুত্বপুর্ণ পরিবেশে বৈঠক করেছেন। কিন্তু ড. আর এ গনির কথায় একটু ভিন্ন সুর পাওয়া যায়। তিনি বলেন, “দিল্লি থেকে ফেরার পর জিয়া মিসেস গান্ধীর সঙ্গে তাঁর আলোচনা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। জিয়া তাঁদের জানান যে মিসেস গান্ধী তাঁকে বলেছেন, ‘আমারা অখণ্ড ভারতের ধারণা বাদ দেইনি, কাজেই আপনারা ওভাবেই চলুন’। একথা মন্ত্রিসভার কার্যবিবরণীতে তোলা হয় নি। কিন্তু তাঁর মন্ত্রীরা এখনো একথা স্মরণ করতে পারবেন।

সার্বিকভাবে যদি জিয়ার রাজনীতি পর্যালোচনা করা যায় তাহলে সন্দেহাতীত ভাবে বলা যাবে, জিয়া ছিলেন একজন খাঁটি বাংলাদেশপন্থি। এরকম উস্কানিমূলক কথা বলার পরেও তিনি ভারত কে চটান নি। আবার তাদের কাছে নিজেকে বিকিয়েও দেননি।

জিয়া মনে করতেন, দেশের পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা নিশ্চিত করাই বিএনপি‘র পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য। জিয়ার শাসনামলে বাংলাদেশ পঞ্চাশটিরও অধিক মুসলিম দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন। চীনের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়। ইউরোপও বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জিয়া যে অবদান রেখে গেছেন সে ব্যাপারে হেনরি কিসিঞ্জরের সেই কথাটি প্রযোজ্য — ‘যে কোন দেশেই, যে সব পররাষ্ট্রনীতিকে ইতিহাস উচ্চ মর্যাদা দিয়েছে তাদের বেশির ভাগ এসেছে সেই সব নেতার কাছ থেকে, বিশেষজ্ঞরা যাঁদের বিরোধিতা করেছিলেন।” জিয়া আমদের দুই প্রতিবেশির সাথেই সুসম্পর্ক রাখার চেষ্টা করেছেন এবং সফল ও হয়েছেন। ভারতের বাঁকা কথাতেও জিয়া বৈরী সম্পর্ক হতে দেননি এবং ন্যায্য দাবী আদায়ও করেছেন।


আবার চীনের সাথেও শক্তিশালী বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়েছেন। সূত্র একটি, স্বাধীনভাবে চলা এবং সবাইকে বন্ধুসুলভ সম্মান দেওয়া। বুদ্ধিমত্তার সাথে সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। বর্তমান পরিস্থতিতে আমাদের আবার সময় এসেছে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে একটু ভেবে দেখবার। দেশ কোন দিকে যাচ্ছে, আর কোন দিকে

যাওয়া উচিৎ, এটা না হয় পাঠকেরাই ভেবে দেখবেন। এটাকেই বলা হচ্ছে, ‘পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি’ যা পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে একটি নতুন ধ্যানধারণা।


  • লেখক  আইনজীবি ও রাজনৈতিক কর্মী 


জেনারেল জিয়া ও গণতন্ত্রের বন্ধ দুয়ার খোলার রাজনীতি

সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া 

সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া 

একটা বিষয় অনেকদিন ধরে ভাবাচ্ছিলো। সামরিক শাসকদের রাজনীতি তো তাদের মৃত্যুর পর টিকে থাকার কথা না। পৃথিবীর তাবৎ ইতিহাস তাই বলে। কিন্তু বাংলাদেশে জেনারেল জিয়াউর রহমানের রাজনীতি তার মৃত্যুর পরও এতদিন টিকলো কেন?! 

চলুন দেখা যাক —

১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেন। বাকশাল এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হয়। চারটি সংবাদপত্র বাদে সবগুলো সংবাদ পত্রের সার্কুলেশন বাতিল করা হয়। অর্থাৎ গণতন্ত্রের বিচারে একটি চরম স্বৈরাচারি ব্যবস্থা! অবিশ্বাস্য সব গণবিরোধী সিদ্ধান্ত! ট্রাজেডি হচ্ছে সারাজীবন গণতন্ত্রের সংগ্রাম করা বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩-এর নির্বাচনে নিজ দলের ভোট ডাকাতি বন্ধ করতে পারলেন না, উল্টো ১৯৭৪ সালে গণতন্ত্রেরই কবর রচনা করলেন! যুক্তি দেওয়া হতো যে সেগুলো ‘প্রয়োজনীয়’ ছিলো। হয়তো প্রয়োজনীয়ই ছিলো, কিন্তু গণতন্ত্র হত্যার অভিযোগ তো ঠিকই! মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের অভিযোগটি তো শতভাগ সত্য! বঙ্গবন্ধুর এই চরম হঠকারি সিদ্ধান্তগুলোর মাঝেই জেনারেল জিয়াউর রহমানের রাজনীতি টিকে থাকার মন্ত্র লুকিয়ে আছে।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম 

জেনারেল জিয়াউর রহমান যে দেশ পেয়েছিলেন, যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন সেটি সম্পূর্ণ গণতন্ত্রহীন, নিরঙ্কুশ স্বৈরাচারি এক ব্যবস্থা। জনগণের দমবন্ধ করা এক পরিবেশ। সেখানে উর্দি পরা জেনারেল জিয়ার হাত ধরে বাংলাদেশে পুনরায় গণতান্ত্রিক রাজনীতি শুরু করতে হয়েছিলো! সংবাদপত্রগুলো পুনরায় মুক্তভাবে লিখার স্বাধীনতা পেলো। সত্যিকার স্বাধীনতা কতটুকু পেলো সে বিতর্ক করাই যাবে কিন্তু ‘স্বাধীনতা’ তো পেয়েছিলো! জিয়াউর রহমানের গণতন্ত্র কতটুকু নিয়ন্ত্রিত ছিলো সেটিও নিশ্চয়ই বিচার্য বিষয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নিরঙ্কুশ স্বৈরতন্ত্র বাকশাল থেকে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রও ছিলো মানুষের অধিকারের এক উল্লম্পন, একটুখানি অগ্রগতি। এটি কি অস্বীকার করা যাবে?! দুনিয়া জুড়ে জেনারেলরা ক্ষমতা দখল করে গণতন্ত্রের টুটি চেপে ধরে, রাজনীতি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু বাংলাদেশে সামরিক জেনারেল জিয়াই কী বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বন্ধ দুয়ার খুলে দেয়নি? হ্যাঁ গণতন্ত্রের ফাঁক গলে মুসলিম লীগ, জামায়াত রাজনীতিতে পুনরায় সক্রিয় হয়েছিলো, কিন্তু ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর যে আওয়ামী লীগ বাকশালে বিলুপ্ত হলো সে আওয়ামী লীগও আবার জিয়াউর রহমানের গণতন্ত্রে পুনরায় রাজনীতি করার সুযোগ পায়নি? নিয়তির নির্মম পরিহাস!

জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত সততা কিংবা প্রশাসক হিসেবে অনেক যোগ্যতার কথা বলা হয়, কিন্তু আমার বিবেচনায় জিয়াউর রহমানের রাজনীতি টিকে যাওয়ার মূলমন্ত্র মানুষকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং শেখ হাসিনার রাজনীতির শেষটাও একই কারণে হবে: ‘মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া’।

পুনশ্চ: যে পারিবারিক আবহে বড় হয়েছি তাতে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ভিলেন হিসেবে দেখা হতো। পারিবারিক আলোচনায় জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের সকল অপকর্মের ‘হোতা’। ‍দুর্ভাগ্য যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাও সে ‘চেতনার’ পক্ষপাত থেকে চিন্তাকে মুক্ত করতে পারেননি। অবশেষে আমেরিকার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে নিজের বায়াসকে প্রশ্ন করা শিখতে হলো! মানুষের চিন্তার নৈর্বক্তিকতা ও নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনে যে কয়টা বিষয় আদিপাপ হিসেবে কাজ করে তার মধ্যে পরিবার একটা। বাকীগুলো সমাজ, বলয়, বন্ধুত্ব, ধর্ম, সংস্কৃতি উদ্ভূত। একটি আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থা মানুষের এসব পক্ষপাত (বায়াস) দূর করে তাঁকে একটি নির্মোহ, নৈর্বক্তিক মন গড়ে দেওয়ার কথা যেখানে সে সবকিছুকে প্রশ্ন করতে শিখবে। এভাবেই সে সত্য খুঁজে নিবে। প্রশ্ন করা না শিখলে সত্য মিলবে কী করে?!


Saturday, August 8, 2020

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করুন

ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম 

ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম

উনপঞ্চাশ বছর পরও স্বাধীনতাত্তোর সরকারের মত বর্তমান শাসকগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এক নতুন সংস্করণের চর্চা শুরু করেছে। যেখানে অপশাসন-দুঃশাসন, বন্ধুকযুদ্ধ-ক্রসফায়ার, গুম-খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও ব্যাংক ডাকাতিসহ জনগণের নাগরিক স্বাধীনতা, ভোটাধিকার, মৌলিক ও মানবাধিকার খর্ব হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি, সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে কক্সবাজারের টেকনাফ থানা পুলিশ কর্তৃক হত্যার পর কথিত বন্ধুকযুদ্ধ-ক্রসফায়ারের কল্পকাহিনী তৈরি করা হয়েছে। গত ২২ মাসে কক্সবাজারে পুলিশের সঙ্গে তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে ১৭৪ জন। পুরো সময়টাতেই টেকনাফ থানার অফিসার্স ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন প্রদীপ কুমার দাশ। 










এখন টেকনাফ থানা ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধের’ জন্য দেশে আলোচিত। ক্রসফায়ারের বেশির ভাগই ঘটেছে মেরিন ড্রাইভ এলাকায়। স্থানীয়দের কাছে জায়গাটি ‘ডেথজোন’ হিসেবে পরিচিত। ইয়াবা চোরাচালান বন্ধের নামে এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করা হয়েছে। আর এসব ক্রসফায়ারে নিহতদের ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে প্রচার করে ওসি প্রদীপ নিজে কৃতিত্ব নিতেন। কিন্তু ইয়াবা চোরাচালান থেমে নেই। তবে টেকনাফের মানুষ বলছেন, তিনি মূলত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষার জন্য এসব ক্রসফায়ার দিতেন। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছিল তার ঘনিষ্ঠতা। ইয়াবা ব্যবসায়ী সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির সঙ্গেও ছিল তার দারুণ সখ্য। বদির সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের বিভিন্ন ছবি ঘুরছে সামাজিক মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, এসব ক্রসফায়ার দিয়ে একাধিকবার অর্জন করেছেন পুলিশ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদক। কথিত এই ক্রসফায়ারের জন্য ২০১৯ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ পদক ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক’ বা বিপিএম পেয়েছিলেন প্রদীপ। পদক পাওয়ার জন্য তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে ছয়টি কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করেন। সব ক’টিতেই ক্রসফায়ারের ঘটনা ছিল। মানবাধিকার সংস্থা ও পুলিশের তথ্য মতে, ২০১৮ সালের মে থেকে গত ৩০শে জুলাই পর্যন্ত শুধু কক্সবাজারে পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি’র সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২৮৭ জন নিহত হয়। এর মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১৭৪, র‍্যাবের সঙ্গে ৫১, বিজিবি’র সঙ্গে ৬২ জন নিহত হয়। শুধু টেকনাফেই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে ১৬১ জন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য মতে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে ১৬৭৭ জন। ২০১৯ ছয় (জানুয়ারি থেকে জুন) মাসে দেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ২০৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র। বন্ধুকযুদ্ধ-ক্রসফায়ার, মিডনাইট নির্বাচন, করোনাভাইরাস, ক্যাসিনো, দুর্নীতিবাজ, প্রতারক, লুটেরা, বাটপার, দেহব্যবসায়ী, সিন্ডিকেট, গডফাদার, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, সন্ত্রাস ও গুম-খুনের কারনে রাষ্ট্র ব্যবস্থা একেবারেই ধ্বংস হয়ে গেছে। রাষ্ট্রের কোন প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা এখন আর নাই। এরপরও যদি বলা হয় দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাহলে বর্তমানে যে তথাকথিত সুশাসন ও আইনের শাসন চলছে, এটা কতটা নিম্নমুখী হলে মানুষ জাগ্রত হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল লক্ষ্য ছিল —  সুশাসন, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ, এক উদারচেতা, পরমতসহিষ্ণু, সংস্কৃতিমনা সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং সুখী-সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়া। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দেশ গড়তে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্তমান নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে, তানাহলে এসব থেকে কারও পরিত্রাণ নেই। এটা শুধু বিরোধী দলের একার কাজ নয়। 

  •  লেখক সিনিয়র সায়েন্টিস্ট, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র । 


Wednesday, August 5, 2020

কর্মিষ্ঠ পুরুষ রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খান

আতিকুর রহমান রুমন

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম করমর্দন করছেন রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান'র সাথে


‘এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ, মরণে তাই তুমি করে গেলে দান।’ কর্মিষ্ঠ পুরুষ রিয়ার এডমিরাল এম এ খানের ক্ষেত্রে এ কথা যথার্থভাবেই খাটে। বাংলাদেশ সরকারের সাবেক যোগাযোগ উপদেষ্টা, কৃষিমন্ত্রী ও নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খান কর্মগুণে ও চারিত্রিক মাধুর্যে আমাদের রাজনীতিতে নক্ষত্র সদৃশ। তার অস্তিত্বজুড়ে ছিল যেমন অখ- কর্মপ্রেরণা, তেমনি ছিল সততা ও দেশপ্রেমের বিরলদৃষ্ট চেতনা। তিনি বলতেন, ‘সততা ছাড়া দেশপ্রেম মূল্যহীন, সততা নিয়েই দেশের জন্য কাজ করে যেতে হবে।” বাস্তবিকই স্বল্পপরিসর জীবনের সর্বস্তরে তিনি তার এই চেতনারই বাস্তবায়ন করে গেছেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে। আর এই কর্মগুণেই তিনি দেশের মানুষের অতি প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন জীবনের শেষ দিনগুলোতে। নিজ জীবনে যেমন সততাকে সঙ্গী করেছিলেন, তেমনি অন্যদেরও সৎ থাকার উপদেশ দিতেন। কঠোর শৃঙ্খলাবোধ ও সময়ানুবর্তিতা ছিল তার চরিত্রের বিশেষ ভূষণ। কর্তব্যকর্ম যথাসময়ে সম্পাদনে নিজে যেমন ছিলেন নিষ্ঠাশীল, সহকর্মীদেরও তেমনটি করার প্রেরণাও পরামর্শ দিতেন। এভাবেই তিনি সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছে অতি সম্মানিত ও আপন মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। আর দেশের উন্নয়নে রেখেছিলেন অমূল্য অবদান।

বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী ও গৌরবময় পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারক রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খানের জন্ম ১৯৩৪ সালের ৩ নভেম্বর সিলেটের বিরাহীমপুরের সম্ভ্রান্ত ও বিখ্যাত মুসলিম পরিবারে। তৎকালীন ভারতের (১৯০১ সালে) প্রথম মুসলিম ব্যারিস্টার আহমেদ আলী খান তার পিতা। আহমেদ আলী খান ছিলেন নিখিল ভারতের আইন পরিষদের সদস্য-এমএলএ ও আসাম কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আহমেদ আলী খান তিনটি বিষয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। তিনি ছিলেন হায়দরাবাদ নিজামের প্রধান আইন উপদেষ্টা।

অন্যদিকে অবিভক্ত বিহার, আসাম ও উড়িষ্যার জমিদার পরিবার খান বাহাদুর ওয়াসিউদ্দিন আহমেদের কন্যা যুবাইদা খাতুন ছিলেন মাহবুব আলী খানের মা। আর যুবাইদা খাতুনের দাদা ব্রিটিশদের থেকে অর্ডার অব এমপায়ার খেতাব পান। ১৮৯৭ সালে ভারতে চতুর্থ মুসলিম হিসেবে আইসিএস লাভ করেছিলেন চাচা গজনফর আলী খান। গজনফর আলী খান ১৯৩০ সালে অর্ডার অব এমপায়ার খেতাব পান।

এম এ খানের দাদা ছিলেন ভারতের বিশিষ্ট চিকিৎসক খান বাহাদুর আজদার আলী খান। তিনি বিহার ও আসামের দারভাঙ্গা মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও পাটনা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক। ১৯২৪ সালে তিনি সিলেটে নাফিজাবানু চ্যারিটেবল হাসপাতাল ও ১৯৩০ সালে ম্যাটার্নিটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন।

এম এ খানের পিতা আহমেদ আলীর মামা জাস্টিস আমীর আলী কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। দাদা খান বাহাদুর আজদার আলী ছিলেন সৈয়দ আমীর আলীর জামাতা। স্যার সৈয়দ আমীর আলী ছিলেন ইংল্যান্ডের রয়্যাল প্রিভিকাউন্সিল সদস্য ও ইন্ডিয়ান ভাইসরয় এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল সদস্য। স্যার সৈয়দ আমীর আলীর বিখ্যাত দুটি গ্রন্থ ‘হিস্ট্রি অব সারাসেন’ ও ‘স্পিরিট অব ইসলাম’। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী ছিলেন এম এ খানের চাচাতো ভাই। শের-ই-সিলেট ও অবিভক্ত পাকিস্তানের মন্ত্রী মরহুম আজমল আলী চৌধুরী ছিলেন তার চাচাতো ভাই।

দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে এমএ খান ছোট। বড়বোন সাজেদা বেগম। মেজভাই চিকিৎসক সেকেন্দার আলী খান। সেকেন্দার আলী খানের মেয়ে আইরিন খান অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল।
রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান
 নভেম্বর ৩, ১৯৩৪ – আগস্ট ৬, ১৯৮৪ 

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সিলেটের বিরাহীমপুর, কলকাতা ও পুরান ঢাকার ৬৭ পুরানা পল্টন লাইনের বাড়িতে এমএ খানের শৈশব ও কৈশোর কাটে। কলকাতা ও ঢাকায় তার প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ হয়। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন শান্ত, ধীর আর চিন্তাশীল। সুদর্শন, উন্নত শারীরিক গঠন ও ব্যক্তিত্বপূর্ণ অভিব্যক্তির কারণে সবার প্রিয় ছিলেন তিনি। খেলাধুলাও করতেন। ব্যাডমিন্টনে ছিলেন পারদর্শী। প্রতিদিন সকালে নামাজ আদায় করে পবিত্র কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করতেন। যেকোনো কাজের আগে স্মরণ করতেন আল্লাহকে। ছিলেন খাদ্যরসিকও। গলদা চিংড়ি, ইলিশ মাছ পছন্দ করতেন খুব।

১৯৫৫ সালে ২১ বছর বয়সে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন সৈয়দা ইকবালমান্দ বানুর সাথে। তাদের দুই কন্যা শাহিনা খান জামান (বিন্দু) এবং ডা. যুবাইদা রহমান (ঝুনু)। শাহিনা খান জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে পড়াশোনা করেন। ছোট কন্যা যুবাইদা রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন। যুক্তরাজ্য থেকে তিনি প্রিভেনটিভ কার্ডিওলজি থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। এতে ৫২টি দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অর্জন করেন প্রথম স্থান। বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমডোর সৈয়দ শফিউজ্জামান এমএ খানের জ্যেষ্ঠ জামাতা। তিনি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ সরকারের সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন। আর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড়পুত্র বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার কনিষ্ঠ জামাতা। বাংলাদেশে ১/১১ সরকার আমলে আটক অবস্থায় নির্যাতনের শিকার তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের কন্যা জাইমা রহমান এমএ খানের একমাত্র নাতনি।

১৯৫২ সালে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দেন এমএ খান। ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণ লাভ করেন কোয়েটার সম্মিলিত বাহিনীর স্কুল থেকে। যুক্তরাজ্যের ডার্মউইথ রয়্যাল নেভাল কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেন। ১৯৫৪ সালে ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর রণতরী ট্রাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৫৬ সালের পহেলা মে স্থায়ী কমিশন লাভ করেন। রয়্যাল কলেজ, গ্রিনিচসহ ইংল্যান্ডের রয়্যাল নেভাল ইনস্টিটিউশনে বিভিন্ন কোর্স সমাপ্ত করেন। ১৯৬৩ সালে কৃতী অফিসার হিসেবে যুক্তরাজ্যে রানী এলিজাবেথ কর্তৃক পুরস্কৃত হন। একই বছর যুক্তরাজ্যে ভূমি থেকে টর্পেডো ও অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার অফিসার হিসেবে উত্তীর্ণ হন এবং পাকিস্তান নেভাল স্টাফ কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেন। করাচিতে পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট থেকে সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট কোর্স সম্পন্ন করেন। এরআগে ১৯৬০ সালে পিএনএস তুগ্রিলের গানারি অফিসার হন। পরে ১৯৬৪ সালে পিএনএস টিপু সুলতানের টর্পেডো ও অ্যান্টি-সাবমেরিন অফিসার হন। ১৯৬৭-৬৮ সালে তিনি রাওয়ালপিন্ডিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে জয়েন্ট চিফ অফ সেক্রেটারিয়েট স্টাফ অফিসার (ট্রেনিং এবং মিলিটারি অ্যাসিস্ট্যান্স) হিসেবে দায়িত্ব পালন। ১৯৭০ সালে পিএনএস হিমালয়ে টর্পেডো ও অ্যান্টি-সাবমেরিন স্কুলের অফিসার ইন চার্জ ও করাচিতে সি-ওয়ার্ড ডিফেন্স অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে স্ত্রী ও দুই কন্যাসহ এমএ খান পশ্চিম পাকিস্তানে চাকরিরত ছিলেন। যুদ্ধকালীন সময়ে পরিবারসহ তিনি গৃহবন্দী হন। তিন বছর বন্দী থাকার পর ১৯৭৩ সালে স্ত্রী ও দুই কন্যাসহ আফগানিস্তান ও ভারত হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেন।

এরপর ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম মার্কেন্টাইল একাডেমির প্রথম বাঙালি কমান্ড্যান্ট নিযুক্ত হন। ১৯৭৪ সালে নৌ-সদর দপ্তরে পারসোনেল বিভাগের পরিচালক পদে নিয়োগ পান। ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি নৌবাহিনীর সহকারি স্টাফ প্রধান (অপারেশন ও পারসোনেল) নিযুক্ত হন। ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বরে রয়্যাল নেভি কর্তৃক হস্তান্তরিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রথম রণতরী বিএনএস ওমর ফারুক (সাবেক এইচএমএম ন্যাভডক) এর অধিনায়ক হন। রণতরীটি নিয়ে আলজেরিয়া, যুগোস্লোভিয়া, মিসর, সৌদি আরব এবং শ্রীলঙ্কার বন্দরগুলোতে শুভেচ্ছা সফর করেন। ১৯৭৯ সালের ৪ নভেম্বর তিনি নৌবাহিনীর স্টাফ প্রধান নিযুক্ত হন এবং ১৯৮০ সালের পহেলা জানুয়ারি রিয়ার এডমিরাল হন।

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে বিশ্বমানের আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে তিনি কঠোর পরিশ্রম করেন। নৌবাহিনীর আইন প্রণয়ন করেছেন তিনি। দেশের সমুদ্রসীমা রক্ষা, সমুদ্রে জেগে ওঠা দ্বীপসহ দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের দখল রক্ষা, জলদস্যু দমন, সুন্দরবনের নিরাপত্তায় নৌবাহিনীকে সচেষ্ট করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তিনি সরকারের সশস্ত্র বাহিনীর বেতন ও পেনশন কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া দেশের প্রশাসনিক পুনর্গঠনে জাতীয় বাস্তবায়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন। বাংলাদেশে উপজেলা পদ্ধতির প্রবক্তাও তিনি।

১৯৮২ সালে দেশে সামরিক আইন জারি হলে, এডমিরাল এমএ খান উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হন। এ সময় তাকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা হয়। ১৯৮২ সালের ১০ জুলাই থেকে ১৯৮৪ সালের ১ জুন পর্যন্ত তিনি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় শাহজালাল সেতু, লামাকারী সেতু, শেওলা সেতুসহ বড় বড় উন্নয়নকাজের সূচনা হয়।

১৯৮২ সালের এপ্রিল মাসে তিনি নৌ, রেল ও সড়ক প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে চীন সফর করেন এবং চীনের নৌঘাঁটিগুলো পরিদর্শন করেন। জুন মাসে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে তিনি খান বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন। নভেম্বরে তিনি রাশিয়া যান এবং প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ডিসেম্বরে জ্যামাইকায় অনুষ্ঠিত সমুদ্র আইনবিষয়ক সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন ও কনভেনশন অন অফ-সি কনফারেন্সে স্বাক্ষর দেন। ১৯৮৩ সালের মার্চে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত রেলওয়ে মন্ত্রীদের সভায় তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। জুলাই মাসে তিনি কোরিয়া সফরে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৪ সালের ৩০ মার্চ তিনি গিনির প্রেসিডেন্ট আহমদ সেকুতুরের শেষকৃত্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধি করেন।

জিয়াউর রহমানের বড়ভাই রেজাউর রহমান নৌবাহিনীতে এমএ খানের সহকর্মী ছিলেন। সেই সুবাদে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে এমএ খানের স¤পর্ক ছিল নিবিড়। এমএ খানকে বিশেষ সম্মান করতেন জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালের পরে, জিয়াউর রহমান সরকারের সময় নৌবাহিনী প্রধানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি তৎকালীন সরকারের যোগাযোগ উপদেষ্টা ছিলেন। সৎ ও অভিজ্ঞ এমএ খানকে এরশাদ সরকার বাংলাদেশের যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রী করে। তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়ার সবুজ বিপ্লব ও কৃষি আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে যথেষ্ঠ পরিশ্রম করেন। যোগাযোগমন্ত্রী থাকায় তিনি পূর্বাঞ্চলের রাস্তাঘাট-ব্রিজসহ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করেন।

এমএ খানের কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ছিল না। তার লক্ষ্য ছিল স্থায়ী ও জনকল্যাণমূলক কাজ করা। তিনি সফলও হয়েছিলেন। শুধু সিলেটের নয়, সারাদেশের জন্যই তিনি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষিমন্ত্রী। এমএ খান গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পছন্দ করতেন। কিন্তু নিজে রাজিৈনতক দল করার স্বপ্ন দেখতেন না। তিনি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাসহ মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, কৃষিবিপ্লব, অবকাঠামো উন্নয়নে মনোযোগী ছিলেন।

  • লেখক সাংবাদিক। 

স্মরণ — ক্ষণজন্মা একজন মাহবুব আলী খান


মুশফিকুল ফজল আনসারী


মানুষের হৃদয় রাজ্যে বাস করার অভিলাষেই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক। কোনো তকমা কিংবা প্রশংসার ফুলঝুরি নয়, সকলের একজন হয়েই বেঁচে থাকতেই হয়তো এমন পণ করেছিলেন রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খান। এরকম মানুষ হাতে গুনা। নিরবে নিভৃতে মানুষের তরে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিল এই ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব। যশ, খ্যাতি, প্রতিপত্তি তাঁকে তাড়া কারলেও তিনি ফিরেও তাকাননি।
 
মাটি-আর মানুষকে আপন করার ইচ্ছে লালন করার তাগিদেই স্বাধীন ভুখন্ড প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বুনেন আপনমনে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সহ্য করেছেন পাকিস্তান সরকারের গৃহবন্দিত্বের খড়গ। ভাতা ভোগ বা আয়েশি জীবনকে তুচ্ছ করে অটল থেকেছেন স্বাধীন স্বদেশে নি:শ্বাস নেয়ার দীপ্ত শপথে। মাহবুব আলী খানের দেশপ্রেম ছিলো প্রশ্নাতীত।

দেশের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ইঞ্চি পর্যন্ত ছাড় দেননি তিনি। দেশেরসমুদ্রসীমা রক্ষা, সমুদ্রে জেগে ওঠা দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপকে বাংলাদেশের সম্পদ হিসেবে আগলে রাখা তার নিখাঁদ দেশপ্রেমের জ্বলন্ত উদাহরণ। মানুষের দোরগড়ায় প্রশাসনকে নিয়ে যেতে তিনিই প্রথম উপজেলা পদ্ধতির প্রবক্তা ছিলেন। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ গঠনে মাহবুব আলী খানের শ্রম-ঘামের স্বাক্ষী এই জনপদ।
 
রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান
 নভেম্বর ৩, ১৯৩৪ – আগস্ট ৬, ১৯৮৪ 

মাহবুব আলী খানের রয়েছে অবাক করার মতো পারিবারিক ঐতিহ্য। বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী রিয়ার এডমিরাল মাহবুবআলী খানের জন্ম ১৯৩৪ সালের ৩ নভেম্বর সিলেটের বিরাহীমপুরের সম্ভ্রান্ত ও বিখ্যাত মুসলিম পরিবারে। তৎকালীন ভারতের প্রথম মুসলিম ব্যারিস্টার আহমেদ আলী খান তার পিতা। ১৯০১ সালে বার এ্যাট ‘ল ডিগ্রিধারী আহমেদ আলী খান ছিলেন নিখিল ভারত আইনপরিষদের সদস্য (এম এল এ) ও আসাম কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট । মাহবুব আলী খানের মায়ের নাম জোবায়দা খাতুন দু’ভাই ও এক বোনের মধ্যে মাহবুব আলী খান ছিলেন ছোট। সিলেটের বিরাহীমপুর, কলকাতা ও ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার পর পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকার ৬৭ পুরানা পল্টন লাইনের বাড়িতে মাহবুব আলী খানের শৈশবও কৈশোর অতিবাহিত হয়। তিনি কলকাতা ও ঢাকাতে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। পড়াশোনায় তিনি ছিলেন কৃতীছাত্র। তার কলেজ জীবনের শিক্ষা ঢাকা কলেজে। মায়ের দিক থেকেও মাহবুব আলী খান ছিলেন বর্ণাঢ্য পারিবারিক ঐতিহ্যের এক গর্বিত উত্তরাধিকার। জোবায়দা খাতুনের দাদা সমাজহীতকর কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ তৎকালীন ব্রিটিশদের রাজকীয় খেতাবে ভূষিত হন । মাহবুব আলী খানের চাচা গজনফর আলী খান ১৮৯৭ সালে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আই.সি.এস) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ছিলেন বাংলা ও আসামের প্রথম মুসলিম আই.সি.এস। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের পর ১৯৩২ সালে গজনফর আলী খান নাগপুর ডিভিশনের কমিশনার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর কর্মদক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘অফিসার অব দি ব্রিটিশ এম্পায়ার’ এবং সি.আই.ই উপাধিতে ভূষিত করে। মাহবুব আলী খানের দাদা ছিলেন ভারতের বিশিষ্ট চিকিৎসক খানবাহাদুর আজদার আলী খান। তিনি বিহার ও আসামের দারভাঙ্গা মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও পাটনা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক। ১৯২৪ সালে তিনি সিলেটে নাফিজাবানু চ্যারিটেবল হাসপাতাল ও ১৯৩০ আরেকটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। মাহবুব আলী খানের পিতা আহমেদ আলীর মামা বিচারপতি আমীর আলী ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। দ্য স্পিরিট অব ইসলাম ও অ্যা শর্ট হিস্ট্রি অব সারাসেন’ এ দু’টি বই রচনা করে আজও তিনি খ্যাতির শীর্ষে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী ছিলেন এম এ খানের চাচাতো ভাই। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে মাহবুব আলী খান ছোট। বড়বোন সাজেদা বেগম। মেজভাই চিকিৎসক সেকেন্দার আলী খান। সেকেন্দার আলী খানের মেয়ে আইরিন খান কাজ করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব হিসেবে। সম্প্রতি জাতিসংঘের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মতামত সংক্রান্ত বিশেষ রেপুটিয়ারের দায়িত্ব লাভ করেছেন আইরিন খান।
 
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সিলেটের বিরাহীমপুর, কলকাতা ও পুরান ঢাকার ৬৭ পুরানা পল্টন লেনের বাড়িতে মাহবুব আলী খানের শৈশব ও কৈশোর কাটে। কলকাতা ও ঢাকায় তার প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ হয়। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন শান্ত অথচ চৌকস। অজানাকে জানা আর অসাধ্যকে সাধন করার ব্রত তাঁর বাল্যকাল থেকেই।

১৯৫৫ সালে ২১ বছর বয়সে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর সাথে। দুই কন্যা সন্তানের জনক মাহবুব আলী খান । শাহিনা খান জামান (বিন্দু) এবং ডা. জোবায়দা রহমান (ঝুনু)। শাহিনা খান জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেছেন। কনিষ্ঠা কন্যা জোবায়দা রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন। যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত সোয়াস থেকে তিনি প্রিভেনটিভ কার্ডিওলজি থেকেএমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। এতে ৫২টি দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অর্জন করেন প্রথম স্থান। বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমডোর সৈয়দ শফিউজ্জামান এম এ খানের জ্যেষ্ঠ জামাতা। আর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় পুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মাহবুব আলী খানের কনিষ্ঠ জামাতা। মাহবুব আলী খানের একমাত্র নাতনী ব্যারিস্টার জায়মা রহমান।
 
১৯৫২ সালে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দেন মাহবুব আলী খান। ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণ লাভ করেন কোয়েটার সম্মিলিতবাহিনীর স্কুল থেকে। যুক্তরাজ্যের ডার্মউইথ রয়্যাল নেভালকলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেন। ১৯৫৪ সালে ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর রণতরী ট্রাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৫৬ সালের পহেলা মে স্থায়ী কমিশন লাভ করেন। রয়্যাল কলেজ, গ্রিনিচসহ ইংল্যান্ডের রয়্যাল নেভাল ইনস্টিটিউশনে বিভিন্নকোর্স সমাপ্ত করেন। ১৯৬৩ সালে কৃতী অফিসার হিসেবে যুক্তরাজ্যে রানী এলিজাবেথ কর্তৃক পুরস্কৃত হন। একই বছর যুক্তরাজ্যে ভূমি থেকে টর্পেডো ও অ্যান্টি-সাবমেরিনওয়ারফেয়ার অফিসার হিসেবে উত্তীর্ণ হন এবং পাকিস্তাননেভাল স্টাফ কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেন। করাচিতে পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট থেকে সিনিয়রম্যানেজমেন্ট কোর্স সম্পন্ন করেন। এরআগে ১৯৬০ সালে পিএনএস তুগ্রিলের গানারি অফিসার হন। পরে ১৯৬৪সালে পিএনএস টিপু সুলতানের টর্পেডো ও অ্যান্টি-সাবমেরিন অফিসার হন। ১৯৬৭-৬৮ সালে তিনি রাওয়াল পিন্ডিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে জয়েন্ট চিফ অফসে ক্রেটারিয়েট স্টাফ অফিসার (ট্রেনিং এবং মিলিটারিঅ্যাসিস্ট্যান্স) হিসেবে দায়িত্ব পালন। ১৯৭০ সালে পিএনএস হিমালয়ে টর্পেডো ও অ্যান্টি-সাবমেরিন স্কুলের অফিসার ইনচার্জ ও করাচিতে সি-ওয়ার্ড ডিফেন্স অফিসারের দায়িত্বপালন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে স্ত্রী ও দুই কন্যাসহ মাহবুব আলী খান পশ্চিম পাকিস্তানে চাকরিরত ছিলেন। যুদ্ধকালীন সময়ে পরিবারসহ তিনি গৃহবন্দী হন। তিন বছর বন্দী থাকার পর ১৯৭৩ সালে স্ত্রী ও কন্যাসহ আফগানিস্তান ও ভারত হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেন। এরপর ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম মার্কেন্টাইলএকাডেমির প্রথম বাংলাদেশী কমান্ড্যান্ট নিযুক্ত হন। ১৯৭৪ সালে নৌ-সদর দপ্তরে পারসোনেল বিভাগের পরিচালক পদে নিয়োগ পান। ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি নৌবাহিনীর সহকারি স্টাফ প্রধান (অপারেশন ওপারসোনেল) নিযুক্ত হন। ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বরে রয়্যালনেভি কর্তৃক হস্তান্তরিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রথম রণতরী বিএনএস ওমর ফারুক (সাবেক এইচএমএম ন্যাভডক) এরঅধিনায়ক হন। রণতরীটি নিয়ে আলজেরিয়া,।। যুগোস্লাভিয়া, মিসর, সৌদি আরব এবং শ্রীলঙ্কার বন্দরগুলোতে শুভেচ্ছা সফর করেন। ১৯৭৯ সালের ৪ঠা নভেম্বর তিনি নৌ-বাহিনীর স্টাফ প্রধান নিযুক্ত হন এবং১৯৮০ সালের পহেলা জানুয়ারি রিয়ার এডমিরাল হন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে বিশ্বমানের আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে তিনি কঠোর পরিশ্রম করেন। নৌবাহিনীর আইন প্রণয়ন করেছেন তিনি। দেশের সমুদ্রসীমা রক্ষা, সমুদ্রে জেগে ওঠা দ্বীপসহ দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের দখল রক্ষা, জলদস্যু দমন, সুন্দরবনের নিরাপত্তায় নৌবাহিনীকে সচেষ্ট করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তিনি সরকারের তিনিসরকারের সশস্ত্র বাহিনীর বেতন ও পেনশন কমিটিরচেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া দেশের প্রশাসনিক পুনর্গঠনেজাতীয় বাস্তবায়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন। বাংলাদেশে উপজেলা পদ্ধতির প্রবক্তাও তিনি। ১৯৮২ সালে দেশে সামরিক আইন জারি হলে, এডমিরালএমএ খান উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হন। এ সময় তাকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা হয়। ১৯৮২ সালের ১০ জুলাই থেকে ১৯৮৪ সালের ১ জুন পর্যন্ততিনি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় শাহজালাল সেতু, লামাকারী সেতু, শেওলা সেতুসহ বড় বড় উন্নয়নকাজের সূচনা হয়।
 
১৯৮২ সালে দেশে সামরিক আইন জারি হলে, এডমিরাল এমএ খান উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হন। এ সময় তাকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা হয়। ১৯৮২ সালের ১০ জুলাই থেকে ১৯৮৪ সালের ১ জুন পর্যন্ততিনি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় শাহজালাল সেতু, লামাকারী সেতু, শেওলা সেতুসহ বড় বড় উন্নয়নকাজের সূচনা হয়।
 
১৯৮২ সালের এপ্রিল মাসে তিনি নৌ, রেল ও সড়কপ্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে চীন সফর করেন এবং চীনের নৌঘাঁটিগুলো পরিদর্শন করেন। জুন মাসে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে তিনি খান বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন। নভেম্বরে তিনি রাশিয়া যান এবং প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ডিসেম্বরে জ্যামাইকায় অনুষ্ঠিত সমুদ্র আইনবিষয়ক সম্মেলনে তিনিবাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন ও কনভেনশন অন অফ-সিকনফারেন্সে স্বাক্ষর দেন। ১৯৮৩ সালের মার্চে ব্যাংককেঅনুষ্ঠিত রেলওয়ে মন্ত্রীদের সভায় তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। জুলাই মাসে তিনি কোরিয়া সফরে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৪ সালের ৩০মার্চ তিনি গিনির প্রেসিডেন্ট আহমদ সেকুতুরের শেষকৃত্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধি করেন।
 
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে মাহবুব আলী খানের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ট। ১৯৭৫ সালের পরে, জিয়াউর রহমান সরকারের সময় নৌ-বাহিনী প্রধানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি তৎকালীন সরকারের যোগাযোগ উপদেষ্টা ছিলেন। সৎ ও অভিজ্ঞ মাহবুব আলী খানকে পরবর্তী সরকার বাংলাদেশের যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রী দায়িত্ব প্রদান করে। মাহবুব আলী খান শহীদ জিয়া সূচিত সবুজ বিপ্লব ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম সহযোগি হিসাবে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভের পর তিনি দেশের রাস্তাঘাট, সেতু নির্মানসহ অবকাঠামো উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখেন । ১৯৮৪ সালের ৬ আগস্ট সকালে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে একটি প্রশিক্ষণ বিমান ভূপাতিত হলে রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খান ছুটে যান দূর্ঘটনা স্থলে। সেখানে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে স্থানান্তর করা হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। এরপরই মাত্র ৪৯ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন নিভৃতচারী এই ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব। রেখে যান কর্ম, উদ্যোম, সততা, সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের অনন্য নজির ।
 
  • লেখক সাংবাদিক

চামড়াশিল্পের উত্থানের সুযোগ ফের বেহাত হবে?


আহাদ আহমেদ

করোনা-পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক চামড়াবাজার নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে। সুযোগের সেই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশও। চীনের বাজার এই খারাপ সময়েও চালু ছিল। দুনিয়ার ট্যানারি শিল্প যখন উৎপাদন প্রায় বন্ধ রেখেছে, তখন ইউরোপের এই কেমিক্যাল কোম্পানিগুলোকে বাঁচিয়ে রেখেছে চীন। ইতালি-ভারত ইত্যাদি দেশের চামড়াশিল্প সংকটে। তখন বিশ্ববাজারে আমাদের চামড়া পণ্যের বিরাট সুযোগ উপস্থিত হয়েছে করোনা এবং আনুষঙ্গিক আরও কিছু কারণে। সুযোগের সেই ফল হাতে তুলে নেওয়ার আয়োজন তো দেখা যাচ্ছেই না, বরং দেখা যাচ্ছে উল্টো গতি।

২০২০ সালের কোরবানি ঈদের পর আগের বারের মতোই আবহাওয়া চরম গরম। কাঁচা চামড়ার জন্য এটা অত্যন্ত বৈরী পরিবেশ। অতি উচ্চ তাপমাত্রা ও কাঁচা চামড়ার মূল্যপতনের ফলে লবণ লাগানোর খরচ উটকো বলে গণ্য হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে লবণের চেয়ে চামড়ার মূল্য কম। ছাগলের চামড়ার প্রায় শূন্য মূল্যের কারণে লবণ দেওয়া বন্ধ করেছে আড়তদারেরা। সরকারের উচিত ছিল সাভারে জরুরি ভিত্তিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা করা।

কাঁচা চামড়ার বড় আন্তর্জাতিক উৎস উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ইউরোপ প্রায় ধরাশায়ী। এসব দেশের পশুসম্পদ ব্যাপক হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। কোভিড-১৯-মুক্ত ‘কাঁচা চামড়া’ সনদ নিয়েও বিতর্ক আছে। ভারতে রাজনৈতিক কারণে চামড়ার বাজার স্থায়ী হুমকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। অন্য কারণেও ভারতের চামড়াশিল্প অভাবনীয় অবস্থার মধ্যে পতিত। গো-সুরক্ষা ও রাজনৈতিক বাগাড়ম্বিতা এই খাতে স্থায়ী ক্ষতের সৃষ্টি করে ফেলেছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে রাসায়নিক কাঁচামাল আমদানির বেলায় ‘নন-পেমেন্ট’ প্রথার ফলে এরা অবিশ্বস্ততার অলিখিত ‘সনদপ্রাপ্ত’ হয়েছে। কিছু ভারতীয় কোম্পানি নিম্নমানের দেশীয় রাসায়নিক ব্যবহার করছে। ফলে ,কমপ্লায়েন্স নিয়েও ভারতের সংকট স্থায়ী হতে পারে। চীনের সঙ্গে বিরোধ ভারতীয় বাজারে মন্দা ভাবের সৃষ্টি হবে। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো তাদের জন্য কঠিন। দুনিয়াব্যাপী চামড়াজাত কার সিট, আপহোলস্ট্রি (সাজসজ্জার উপকরণ) বাজারের উঠে দাঁড়ানো এখন প্রায় অসম্ভব। কারণ, গাড়ির বিক্রি প্রায় ৫০ ভাগ কমে এসেছে।

ইতালি করোনায় যেভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে, তাতে ফ্যাশন হাউসের কাজ ছাড়া জুতা ও চামড়াজাত পণ্যের উৎপাদনে তাদের অংশগ্রহণ কমে যাবে। এদিকে ইউরোপ ও আমেরিকার জুতা ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার বড় মাপে চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। পশ্চিমা উৎপাদকেরা চীনে বিনিয়োগ নিয়ে হাজির হচ্ছে। ফলে, ইউরোপ-আমেরিকার ফ্যাশন শিল্প আর চীনের সমন্বয়ে চীনভিত্তিক এক বিশাল চামড়া, ফুটওয়্যার, চামড়াজাত পণ্যের বাজার বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। বাংলাদেশ হতে পারে সেই বিশ্ববাজারের অন্যতম শরিক। উল্লেখ্য, চীনের বাজার বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। আট হাজারের ওপর পণ্যের ওপর থেকে ৯৭ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।


এসব বিষয় মাথায় রেখে বাংলাদেশকে কিছু কাজ করতে হবে। যেমন ১. কাঁচা চামড়ার চোরাচালান বন্ধ করা, ২. চামড়ায় মুল্য সংযোজন করা ও বাজারজাত করার নীতি নেওয়া। এ দুটি কাজ করা গেলে আগামী চার থেকে পাঁচ বছর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমপক্ষে ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে পারবে বাংলাদেশ। অর্থাৎ বর্তমানের প্রায় ১০ গুণ! এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চামড়া পণ্য উৎপাদকদের ‘রপ্তানি গিল্ড’ গঠন করা অত্যন্ত জরুরি। এরা নিম্নতম মূল্য নির্ধারণ করে দেবে। যেনতেন মূল্যে চামড়া বিক্রয়ের রাস্তা থেকে সরে আসাই হবে এই খাতের মূল লক্ষ্য। কস্ট ম্যানেজমেন্ট করে ৬০ থেকে ৭০ সেন্টে চামড়া বিক্রি করাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

গৌরবের সঙ্গে বলা হয়ে থাকে, চামড়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত। কিন্তু বাস্তবে এক দশক ধরেই এই খাত পতনশীল; শুধু সিদ্ধান্তহীনতায় আর দুর্নীতির শিকার হয়ে। ইপিবির তথ্যানুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রায় ১৬ শতাংশ বাজার পতন হয়েছে। ২০১৩-১৪ সাল থেকে এ খাতের আয় ১ দশমিক শূন্য ৮ থেকে ১ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করেছে। অন্যদিকে, ভারতের ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের বিপরীতে চীনের আয় ১০ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তান করছে ৯৪৮ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। বাংলাদেশে ২০১৬-১৭ সালকে চামড়া বর্ষ হিসেবে সরকারিভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চামড়াশিল্পের পতন সেই সময় থেকেই শুরু। শিল্পমন্ত্রীর নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠনের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে প্রতি সপ্তাহে বৈঠকের কথা! কিন্তু যাঁরা ট্যানারি চালাবেন, তাঁদের এত সময় নেই। আর যাঁরা প্রতি সপ্তাহে মিটিং চালাবেন, তাঁদের শিল্প চালানোর সময় নেই—এটাই বাস্তবতা।

বাংলাদেশ ১৮০ থেকে ২০০ মিলিয়ন বর্গফুট চামড়া উৎপাদন করে। প্রক্রিয়াজাত চামড়া, জুতা, চামড়াজাত পণ্য হিসেবে রপ্তানি হয় ১৪০ থেকে ১৫০ মিলিয়ন বর্গফুট। শুধু নতুন এলাকা সাভারের সামগ্রিক উৎপাদন ৪০০ থেকে ৪৫০ মিলিয়ন বর্গফুট ধরা হয়েছে। ১৫৫টি ট্যানারির অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেখানে, যাদের অধিকাংশের এক প্রজন্মের তো দূরের কথা কস্মিনকালেও চামড়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না। শুধু হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্পের নিবন্ধন থাকার সুবাদে এখানে জমি বরাদ্দ পেয়েছে অনেকে। তাদের অনেকেই সুযোগটাকে শুধু রিয়েল স্টেট ব্যবসা হিসেবে দেখছে। সাভারে শিল্প স্থানান্তর সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী ছিল। কিন্তু অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো, ইটিপি স্থাপনা নিয়ে যে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা, তা পিছিয়ে দিয়েছে বাজারকে। বেশ কিছু ক্রেতা ভিয়েতনাম ও এশিয়ার অন্যত্র উৎপাদকের খোঁজ করছে।

তারপরও বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ ভিয়েতনামের সমান দক্ষতা অর্জন করতে পারে। তার জন্য পুরো ট্যানারি খাতকে ৫০ থেকে ৬০টি শিল্পে নামিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি। প্রতিযোগিতামূলক দরপতন কমানো সম্ভব এভাবেই। একইভাবে জুতা ও চামড়াজাত পণ্যের জন্য শিল্পের সংখ্যাও ৬০ থেকে ৭০-এ নামিয়ে আনা দরকার। বিশ্ববাজারের ধারা পরিবর্তিত হবে এবং প্রাকৃতিক পণ্যের বাজার বিকশিত হবে। এর আগাম প্রস্তুতি কি আমাদের আছে? কোনো একটি খাতের উন্নতি সেই খাতের পরিচালকদের যৌক্তিক সততার ওপরও নির্ভরশীল। এই খাতের নামে ঋণ নিয়ে লুটে নেওয়াদের তাই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

মনে রাখা দরকার, কাঁচা চামড়া সংগ্রহ থেকে ট্যানারিজাত হয়ে জুতা, জ্যাকেট, ব্যাগ তৈরি পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এই খাতের সঙ্গে জড়িত। এই খাতে যে অভিজ্ঞতা, দক্ষ শ্রমিক ও কর্মী তৈরি হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে শক্তির জায়গা। বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্প মাত্র ৫ বছরেই ১০ বিলিয়ন ডলার আয়ের স্তরে উঠতে পারে, যদি:

১. আধুনিক ও টেকসই প্রযুক্তিনির্ভর খাত হিসেবে একে গড়ে তোলা হয়। টেকসই প্রযুক্তি মানে পানি ও রাসায়নিক ব্যবহারে সচেতন হওয়া। পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা চালু রাখা।
২. ট্যানারি শিল্পের মালিকদের সমন্বয়ে রপ্তানি গিল্ডের ‘প্রাইস সেন্টার’ গঠন করা। তাঁদের প্রধান কাজ হবে চামড়ার ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করা। কোনো ট্যানারি এই মূল্যের নিচে চামড়া বিক্রি করলে তার রপ্তানি ৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা। রপ্তানির ক্ষেত্রে এই ‘রপ্তানি গিল্ডের’ সনদ বাধ্যতামূলক করা।
৩. ক্রমান্বয়ে সব রপ্তানিমুখী ট্যানারির জন্য এলডব্লিউজি (লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ নামে আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থার সনদ) কমপ্লায়েন্স বাধ্যতামূলক করা।
৪. ট্যানারি শিল্পের শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য ন্যূনতম মজুরি, নিরাপত্তা ও মানবিক ব্যবস্থা সৃষ্টি করা।
৫. ‘বায়ারস ইনসেনটিভ’ হিসেবে আমদানি মূল্যের ওপর ভিত্তি করে ফ্লাইট কস্ট ও হোটেল ভাড়ার ওপর ১০ থেকে ২৫ শতাংশ ক্যাশব্যাকের ঘোষণা দেওয়া।
৬. কাঁচা চামড়া ও কেমিক্যাল আমদানি ক্ষেত্রে বন্ডেড ওয়্যার হাউসের পাশাপাশি সব বাণিজ্যিক ও শিল্প আমদানিকারকের জন্য কনসলিডেটেড ১০ শতাংশ মোট ট্যাক্স নির্ধারণ করা—যাতে সব ধরনের শিল্প প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে রাসায়নিক কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারে।
৭. ব্যাংকঋণের মধ্যে স্বচ্ছতা আনা।

সর্বোপরি ট্যানারি খাত ও সরকারের যৌথ নীতি গ্রহণ করতে হবে, যার স্লোগান হবে ‘লক্ষ্যমাত্রা ১০ বিলিয়ন’।

  • লেখক চামড়াশিল্পের সঙ্গে যুক্ত উদ্যোক্তা।