Search

Wednesday, August 12, 2020

আওয়ামী লীগের পতন

—  আহাদ আহমেদ


আহাদ আহমেদ
রাজনৈতিক বিশ্লেষক 

আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীন রাজনৈতিক দল। ইহা সত্য তবে অতিপ্রাচীন হইবার কারণে ইহার শেকড় পচিয়া গিয়াছে। মুসলিম লীগের জমিতেই আওয়ামী লীগের জন্ম। ১৯৭১ পূর্ব বামপন্থীদের ভোট বর্জন-বিসর্জনের  রাজনীতির ফলে একটি তৈরি ভোটব্যাংক গড়িয়া উঠিয়াছিল আওয়ামী লীগের জন্য। পাকিস্তান অর্জনের সাথে সাথে যেমন মুসলিম লীগের মৃত্যু ঘটিয়াছে তেমনি বাংলাদেশ স্বাধীন হইবার সাথে সাথেই আওয়ামী লীগেরও মৃত্যু ঘটিয়াছে। তাই শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব ইহাকে কবরস্থ করিয়া বাকশাল নামক এক কিম্ভুতকিমাকার দল সৃষ্টি  করিয়াছিলেন। কিন্তু স্বাধীনদেশে ইহাদের নিজস্ব কোন ভোটব্যাংক তৈরি  হইল না। তাই ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ ও ডাকসু নির্বাচনে তাহারা ব্যালটবাক্স ছিনতাই ও ‘সিলমারার’ সংস্কৃতি চালু করিলেন। বাকশালের এক  বছরের শাসন এমনই চরম হিংসাত্মক হইয়া উঠিল যে এই নামে দল করা তাহাদের জন্য কঠিন হইয়া উঠিল। শেখ হাসিনা দায়িত্ব লইয়া নতুন করিয়া বাকশালকে কবরস্থ করিয়া আওয়ামী লীগকে জিন্দা করিলেন। বাকশাল লইয়া দীর্ঘদিন আব্দুর রাজ্জাক সাহেব ভিন্নপথে হাটিয়া উপায়ন্তর না দেখিয়া আবারো আওয়ামী লীগে ফিরিয়া আসিলেন। ততদিনে আওয়ামী লীগ স্বৈরশাসক এরশাদের প্রচ্ছন্ন মদদ লইয়া একটি ‘অফিসিয়াল বিরোধীদলের’ মর্যাদা লইয়া আসন গাড়িয়াছে। স্বৈরশাসকের সাথে আপস না করার পুরস্কার হিসেবে এরশাদ পতনের পর বাংলাদেশের জনগণ স্বচ্ছ ভোটে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসায়। আওয়ামী লীগের বুঝিতে বাকী রহিলনা যে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফেরা তাহাদের জন্য প্রায় অসম্ভব। ভারতের অন্যতম দীর্ঘ  সময়ের ক্রীড়নক এরশাদের পতনের পর বিএনপির ক্ষমতায়  আরোহন ভারতের জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখাদিল। ঘাতক,দালাল ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি জামায়াত নিয়ে তাহারা বেশ শোরগোল তুলিতে সমর্থ হইল। কিন্তু ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ  জামায়াতের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীর সাথে মিলে যুগপৎভাবে বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়িয়া তুলিল। সংসদ বর্জন করিয়া বিএনপিকে একটি ‘একদলীয়’ সরকারে পরিণত করা হইল। সংসদীয় ধারাবাহিকতার নামে বিএনপিকে ১৯৯৬ সালে একটি বিরোধীদল ছাড়া নির্বাচন করতে বাধ্য করা হইল। কিন্তু সংসদে বেগম খালেদা জিয়া সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান এনে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক  সরকারের অধীনে নির্বাচন করেন। তিনি চরম বৈরি পরিবেশেও ১১৭ আসনে বিএনপিকে বিজয়ী করে সংসদীয় বিরোধী দলে অবস্থান নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি অব্যাহত রাখেন।

এখানে উল্লেখ্য যে আওয়ামী লীগই প্রথম  জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনের  পরিসংখ্যান তত্ত্ব ( Psephocracy) চর্চা শুরু করেন। জামায়াতও সেই খেলায় আওয়ামী লীগের পক্ষে খেলে। কিন্তু এই সময়ে ক্রমান্বয়ে  আওয়ামী লীগের মধ্যে বাকশাল ফিরিতে শুরু করিয়াছে। তাহারা বেপরোয়া হইয়া উঠিতে শুরু করিল। সারাদেশে হাজারীদের অত্যাচার আহাজারীতে পরিণত হইতে শুরু করিল।

‘জাতির পিতার পরিবার নিরাপত্তা বিল’ ও ‘গণভবন বরাদ্দ’  বিল সংসদে উত্থাপিত হইল। জাতি আবার ধাক্কা খাইল। আওয়ামী লীগ অজনপ্রিয় দলে পরিণত হইয়া উঠিল। ১৯৯৬-২০০১ সালের জুন অবধি তাহাদের দুই তৃতীয়াংশ আসনহীনতার কারণে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করিতে সক্ষম হয় নাই। ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি দুই তৃতীয়াংশ আসন পাইলেও তাহারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করে নাই। ইহার সুবিধা লইয়া আওয়ামী লীগের  নেতৃত্বাধীন মহাজোট  এক পাতানো ছকের নির্বাচন করিয়া লইল। এইবার এই জোটে খেলাফত মজলিশ  ‘আলেম ওলেমা’ নামধারীরাও আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত হইল। ইহারা ২০০৬ সালের ২২ ডিসেম্বর ৫ দফা চুক্তিবদ্ধ হয় খেলাফত মজলিসের সহিত।


ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীনের সেনাসমর্থিত উদ্ভট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর এক মহা তামাশার নির্বাচন হয়। মুলতঃ তালিবানপন্থীদের নিয়েই আওয়ামীলীগ ‘তালিবান’ বিরোধী  লড়াইয়ের ডাক দিয়ে ভারত-মার্কিন সমর্থন  আদায় করিয়া নেয়। যেহেতু আওয়ামী লীগ  জানে যে দেশে ইহাদের কোন ভোটব্যাংক তৈরি  হয় নাই তাই ভারতীয়দের পরামর্শ ও সমর্থন লইয়া দুই তৃতীয়াংশ আসনের জোরে তাহারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করিয়া দেয়। এমনকি এব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করা হইয়াছিল যাহাদের মতকে উপেক্ষা করিয়া প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক বিধান বাতিল করিয়া রায় প্রদান করা হয়। সংসদে ব্যারিস্টার  শফিক আহমেদ ৩০জুন ২০১১ বিল উত্থাপন করেন এবং একই দিনে সংসদ অনুমোদন প্রদান করেন। রাষ্ট্রপতি ৩ জুলাই ২০১১ অনুমোদন দান করেন। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী গৃহীত হইয়া নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান বিলুপ্ত হয়। শুরু হয় ভারতীয়দের প্রত্যক্ষ মদদে ৫ জানুয়ারি ২০১৪ ও ৩০ ডিসেম্বর  ২০১৮ সালের মহা তামাশার নির্বাচন। এতসব করিয়াও আওয়ামীলীগ নামক প্রাচীন দলটি এখন প্রধান দুইটি ধারায় বিভক্ত হইয়া পড়িয়াছে।

 

এক.পরিবার ভিত্তিক লর্ড সভার ধারা।

দুই.পরিবারের বাহিরের কমন্সসভার ধারা।

এই দুই বিবাদমান ধারাই আওয়ামীলীগের পতনের অন্যতম কারণ হইয়া উঠিবে। এই কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

No comments:

Post a Comment