Search

Wednesday, August 26, 2020

চতুর্থ বছরে রোহিঙ্গা সংকট

সম্পাদকীয়



তিন বছর পেরিয়ে চতুর্থ বছরে পদার্পণ করেছে রোহিঙ্গা সংকট। পরিতাপের বিষয় হল, এ দীর্ঘ সময়েও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনোরকম অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। জানা গেছে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতিমূলক সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে মিয়ানমার।

অবশ্য প্রত্যাবাসনের বিষয়ে হাল ছাড়েনি বাংলাদেশ। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যেই ছয় লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে কূটনীতিকরা মনে করেন, বাংলাদেশের একক প্রচেষ্টায় মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে, এ ভাবনা ভুল।

তারা মূলত দুটি বড় আঞ্চলিক প্রতিবেশী দেশ চীন ও ভারতকে সঙ্গে নিয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন। দুঃখজনক হল, এ দুটি দেশ কার্যত কোনো চাপ না দিয়ে কেবল রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলছে মিয়ানমারকে, যা মোটেই যথেষ্ট নয়। কূটনীতিকদের মতে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ফলপ্রসূ করতে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ জরুরি। তা না হলে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো কঠিন হবে।

প্রত্যাবাসন একটি জটিল প্রক্রিয়া, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে মিয়ানমারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এ সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। এক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার পর রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রত্যাবাসনের সুযোগ নেয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে মিয়ানমার সরকারের বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ইতোপূর্বে জানা গিয়েছিল, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সুশাসন ও আইনি পদক্ষেপ। এসব পদক্ষেপের আওতায় উত্তর রাখাইন রাজ্যে যাতে কোনো ধরনের বৈষম্য না হয়, সেজন্য স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা ও পুলিশকে নির্দেশনা প্রদানের কথা জানিয়েছিল দেশটি।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে গৃহীত বাস্তব কোনো পদক্ষেপ আমরা লক্ষ করিনি। এটি সহজেই বোধগম্য যে, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পেলে বিপদ মাথায় নিয়ে রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরতে চাইবে না।

ফিরে গেলেও পুনরায় নিগৃহীত হলে এবং তাদের ওপর হামলা হলে তারা আবারও এ দেশে পালিয়ে আসবে। কাজেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার পাশাপাশি সেদেশে তাদের নিরাপদ বসবাসের পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। এজন্য রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে মিয়ানমার যাতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়, সে লক্ষ্যে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান শুরু হলে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়টির ওপর চালানো হয় নিষ্ঠুর নির্যাতন। নির্বিচারে হত্যা ও ধর্ষণ ছাড়াও বাড়িঘরে আগুন দিয়ে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানো হয়। বর্বরোচিত নির্যাতনের ফলে ওই সময় সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। অতীতে আসা রোহিঙ্গাদের বড় অংশ এখনও মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারেনি। গত কয়েক দশকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা কমপক্ষে ১১ লাখ।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দীর্ঘসূত্রতা ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। মিয়ানমার সরকার যাচাই-বাছাইসহ অন্যান্য অজুহাত তুলে বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে যাতে গড়িমসি করতে না পারে, এ ব্যাপারে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিবেশী দেশগুলো, বিশেষ করে ভারত ও চীন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

  • কার্টসি - যুগান্তর/ আগস্ট ২৬, ২০২০ 

No comments:

Post a Comment