Search

Wednesday, August 5, 2020

শুধু মাধবীর জন্য — ৪

মো: আসাদুজ্জামান



মাধবী,
‘তুমি আমার কোমল প্রাণ, মৌমাছি চোখ তোমার মধুর চেয়েও মিষ্টি, কেন তোমাকে লিখতে গেলাম... ?”
 
প্রেম ও দ্রোহের তুর্কি কবি, কবি নাজিম হিকমতের জেলখানার চিঠির অনুবাদ করে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় এভাবেই প্রেম নিবেদনের উপাখ্যান তৈরী করেছিলেন! আজ আমি তোমাকে লিখছি কোন কারাগার থেকে নয়, লিখছি কবি নবারুন ভট্রাচার্যের মৃত্যু উপত্যকার দেশ থেকে, জল্লাদের রঙ্গমঞ্চ থেকে! এখন আমার মাঝে প্রচণ্ড রাগ, ক্ষোভ আর দ্রোহ কাজ করছে। লজ্জা করছে, নিজেকে হেলাল হাফিজের উত্তর পুরুষের ভীরু কাপুরুষের উপমা মনে হচ্ছে। একজন স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া সেনা কর্মকর্তাকে কক্সবাজারে পুলিশ যেভাবে গুলি করে হত্যা করেছে সে বিষয়ে প্রতিবাদ, ঘৃণা, ক্ষোভ, ধিক্কার জানানোর ভাষা কোন বাংলা অভিধানে পেলাম না। সে আমার স্বজন, বন্ধু, পরিচিত কেউ নয়, সে আমার মানব সভ্যতার অংশ, সে একজন মানুষ । বহুবার তোমাকে বলেছি মাধবী, এদেশে বিনাবিচারে হত্যা মানুষের জীবনকে বিভীষিকাময় করবে, কেউ এখানে নিরাপদ নয়! আমার ভবিষ্যতবাণী আজ দেখলে তো? একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, একজন টগবগে যুবক, একজন সৃষ্টিশীল মানুষ মেজর সিনহাকে কিভাবে গুলি করে হত্যা করলো পুলিশের এক সাব ইন্সপেক্টর! থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশ ছিলো বলেও তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। কি বর্বর, কি অসভ্যতার উদাহরণ, কতটা নরপশু এরা। খুনীদের ডিফেন্স এ বহুল প্রচলিত ইয়াবাজাতীয় গল্প সাজানো হয়েছে যে গল্প আমার তোমার মত দেশের কেউ বিশ্বাস করছে না। খুনীদের এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। পরিবার-স্বজনের অভিযোগ মেজর সিনহা নির্দোষ, তাকে হত্যা করা হয়েছে। অভিযোগ সত্য না মিথ্যা তা প্রমানের জন্য পুলিশের প্রথম এবং প্রধান আইনী দায়িত্ব হলো নিয়মিত মামলা রুজু করে ওসিসহ সংশ্লিষ্ট আসামীদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা, তদন্ত করা। যদি তারা নির্দোষ প্রমাণিত হয় তাহলে তারা খালাস পাবে। এটাই নিয়ম, এটাই আইন, এটাই ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসনের বাণী। কিন্ত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় ফৌজদারী কার্যবিধির আওতায় গৃহীতব্য পদক্ষেপকে পাশ কাটিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন যার কোন আইনী সংযোগ ফৌজদারী কার্যবিধিতে আমি পেলাম না। এধরনের কমিটি গঠন করা যায় The Commission of Inquiry Act, 1956 এর আওতায়। এই আইনের অধীন কমিশন সিভিল কোর্ট এর ন্যায় ক্ষমতা প্রয়োগ করে সাক্ষি হিসাবে যে কাউকে ডাকতে পারবে। তবে, কমিশনের সামনে প্রদত্ত বক্তব্য সংশ্লিষ্ট স্বাক্ষির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য মূল্যহীন ।


মাধবী, সরকার বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আমি মনেকরি, মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় সরকারের এই মনে করা,  এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ভুল, per in curium!
 
তবে হ্যাঁ, এই ধরনের সিদ্ধান্ত যদি সরকারের পলিসি হয় যার মাধ্যমে বিনা বিচারে এভাবে হত্যা করার সংস্কৃতি তারা চালু রাখতে চায় তাহলে আমার বলার কিছু নেই। সরকার যদি মনেকরে একজন সেনা কর্মকর্তার এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হলে প্যান্ডোরার বক্স ওপেন হয়ে যাবে, অতীত এবং ভবিষ্যতের সব ক্রসফায়ারের ঘটনায় মামলা হতে পারে যা তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য চ্যালেন্জ, তাহলে তদন্ত কমিটি গঠন করে সময় ক্ষেপন করা কোন ভুল নয়, নিজেদের ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদী করার কৌশল মাত্র! সেক্ষেত্রে আমার বলার কিছু নেই।
 
মাধবী, তোমাকে নিয়ে, তোমার প্রতি প্রণত হয়ে, হ্বদয়ের ভালোবাসা ব্যক্ত করার কোন emotion আজ কাজ করছে না! মেজর সিনহাকে এভাবে হত্যা করার যন্ত্রণা আমার ভালো লাগা, ভালোবাসার সব ইমোশনকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে, আমার আমিকে বিমর্ষ করে তুলছে। কি যে যন্ত্রনাময় যাপিত জীবন এটা তোমাকে বোঝানো যাবেনা, তোমার উপেক্ষার থেকেও যন্ত্রনাময়, তোমার জন্য অপেক্ষার থেকেও হৃদয়গ্রাহী কষ্ট এটা, তুমি বুঝবে না। ভালো থেকো মাধবী। 

  • আইনজীবি ও রাজনৈতিক কর্মী

No comments:

Post a Comment