Search

Sunday, August 9, 2020

জেনারেল জিয়া ও গণতন্ত্রের বন্ধ দুয়ার খোলার রাজনীতি

সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া 

সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া 

একটা বিষয় অনেকদিন ধরে ভাবাচ্ছিলো। সামরিক শাসকদের রাজনীতি তো তাদের মৃত্যুর পর টিকে থাকার কথা না। পৃথিবীর তাবৎ ইতিহাস তাই বলে। কিন্তু বাংলাদেশে জেনারেল জিয়াউর রহমানের রাজনীতি তার মৃত্যুর পরও এতদিন টিকলো কেন?! 

চলুন দেখা যাক —

১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেন। বাকশাল এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হয়। চারটি সংবাদপত্র বাদে সবগুলো সংবাদ পত্রের সার্কুলেশন বাতিল করা হয়। অর্থাৎ গণতন্ত্রের বিচারে একটি চরম স্বৈরাচারি ব্যবস্থা! অবিশ্বাস্য সব গণবিরোধী সিদ্ধান্ত! ট্রাজেডি হচ্ছে সারাজীবন গণতন্ত্রের সংগ্রাম করা বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩-এর নির্বাচনে নিজ দলের ভোট ডাকাতি বন্ধ করতে পারলেন না, উল্টো ১৯৭৪ সালে গণতন্ত্রেরই কবর রচনা করলেন! যুক্তি দেওয়া হতো যে সেগুলো ‘প্রয়োজনীয়’ ছিলো। হয়তো প্রয়োজনীয়ই ছিলো, কিন্তু গণতন্ত্র হত্যার অভিযোগ তো ঠিকই! মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের অভিযোগটি তো শতভাগ সত্য! বঙ্গবন্ধুর এই চরম হঠকারি সিদ্ধান্তগুলোর মাঝেই জেনারেল জিয়াউর রহমানের রাজনীতি টিকে থাকার মন্ত্র লুকিয়ে আছে।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম 

জেনারেল জিয়াউর রহমান যে দেশ পেয়েছিলেন, যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন সেটি সম্পূর্ণ গণতন্ত্রহীন, নিরঙ্কুশ স্বৈরাচারি এক ব্যবস্থা। জনগণের দমবন্ধ করা এক পরিবেশ। সেখানে উর্দি পরা জেনারেল জিয়ার হাত ধরে বাংলাদেশে পুনরায় গণতান্ত্রিক রাজনীতি শুরু করতে হয়েছিলো! সংবাদপত্রগুলো পুনরায় মুক্তভাবে লিখার স্বাধীনতা পেলো। সত্যিকার স্বাধীনতা কতটুকু পেলো সে বিতর্ক করাই যাবে কিন্তু ‘স্বাধীনতা’ তো পেয়েছিলো! জিয়াউর রহমানের গণতন্ত্র কতটুকু নিয়ন্ত্রিত ছিলো সেটিও নিশ্চয়ই বিচার্য বিষয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নিরঙ্কুশ স্বৈরতন্ত্র বাকশাল থেকে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রও ছিলো মানুষের অধিকারের এক উল্লম্পন, একটুখানি অগ্রগতি। এটি কি অস্বীকার করা যাবে?! দুনিয়া জুড়ে জেনারেলরা ক্ষমতা দখল করে গণতন্ত্রের টুটি চেপে ধরে, রাজনীতি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু বাংলাদেশে সামরিক জেনারেল জিয়াই কী বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বন্ধ দুয়ার খুলে দেয়নি? হ্যাঁ গণতন্ত্রের ফাঁক গলে মুসলিম লীগ, জামায়াত রাজনীতিতে পুনরায় সক্রিয় হয়েছিলো, কিন্তু ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর যে আওয়ামী লীগ বাকশালে বিলুপ্ত হলো সে আওয়ামী লীগও আবার জিয়াউর রহমানের গণতন্ত্রে পুনরায় রাজনীতি করার সুযোগ পায়নি? নিয়তির নির্মম পরিহাস!

জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত সততা কিংবা প্রশাসক হিসেবে অনেক যোগ্যতার কথা বলা হয়, কিন্তু আমার বিবেচনায় জিয়াউর রহমানের রাজনীতি টিকে যাওয়ার মূলমন্ত্র মানুষকে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং শেখ হাসিনার রাজনীতির শেষটাও একই কারণে হবে: ‘মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া’।

পুনশ্চ: যে পারিবারিক আবহে বড় হয়েছি তাতে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ভিলেন হিসেবে দেখা হতো। পারিবারিক আলোচনায় জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের সকল অপকর্মের ‘হোতা’। ‍দুর্ভাগ্য যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাও সে ‘চেতনার’ পক্ষপাত থেকে চিন্তাকে মুক্ত করতে পারেননি। অবশেষে আমেরিকার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে নিজের বায়াসকে প্রশ্ন করা শিখতে হলো! মানুষের চিন্তার নৈর্বক্তিকতা ও নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনে যে কয়টা বিষয় আদিপাপ হিসেবে কাজ করে তার মধ্যে পরিবার একটা। বাকীগুলো সমাজ, বলয়, বন্ধুত্ব, ধর্ম, সংস্কৃতি উদ্ভূত। একটি আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থা মানুষের এসব পক্ষপাত (বায়াস) দূর করে তাঁকে একটি নির্মোহ, নৈর্বক্তিক মন গড়ে দেওয়ার কথা যেখানে সে সবকিছুকে প্রশ্ন করতে শিখবে। এভাবেই সে সত্য খুঁজে নিবে। প্রশ্ন করা না শিখলে সত্য মিলবে কী করে?!


No comments:

Post a Comment