Search

Saturday, August 15, 2020

ফ্যাসিজম হচ্ছে সাপের মতো যে নিজের লেজ খাওয়া শুরু করেছে

— জিয়া হাসান 

জিয়া হাসান 
ইন্ডিপেনডেন্ট রিসার্চার 

ফ্যাসিজম হচ্ছে একটা সাপের মত যে এখন নিজের লেজ খাওয়া শুরু করেছে। সে সাপ নিজের লেজ খেতে খেতে যখন তার মুখের কাছে চলে আসবে তখন সে নিজেকে নিঃশেষ করবে। আজকে যারা জামাত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জ্বলন্ত কড়াই থেকে ফুটন্ত উনুন, ইত্যাদি তত্ত্বের বিনিময়ে এই স্বাধীনতার পরে তুলনাহীন লুটেরা, মিথ্যাচারী, লজ্জাহীন, ভোটডাকাত সরকারকে নৈতিক বৈধতা দিয়ে গেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে এই রাষ্ট্রের পরিষ্কার একটা কমপ্লিট পতন দেখতে বেঁচে থাকবেন। কারণ ফ্যাসিজম হ্যাজ এ প্রাইস টু বি পেইড এবং সরি টু সে এই মূল্য এই দেশের জনগণকেই দিতে হবে এবং এলিট হিসেবে আপনি নিজেও পার পাবেন না।

অনেকে শুনে অবাক হবেন! আমি মনেকরি বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় আসলে ডিজাসট্রাস হতো। আপনি মনে করতে পারেন আমি নিজেকে বা আপনাদেরকে ভুল বুঝচ্ছি, ‘আঙ্গুর ফল টক’ বলে। না। আমি এটা অনেক বন্ধুকে সামনা সামনি আলাপে বলেছি কিন্ত সোশ্যাল মিডিয়াতে অবভিয়াস কারণেই এতো দিন বলি নাই।

আমি মনেকরি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার একটা সিঙ্কিং শিপ। সিঙ্কিং শিপের ক্যাপ্টেন চেঞ্জ করতে হয় না।

এবং এই সরকার যখন ডুববে তখন যে ক্ষমতায় থাকবে, তাকে সেটার দায় নিতে হবে। একটা সুন্দর কম্পিটিটিভ, পরিশ্রমী, পিছিয়ে পড়া কিন্ত উন্নয়নশীল দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে, সকল প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ধ্বংস করে, শুধুমাত্র এলিটদেরকে ক্ষমতার লেজিটিমেসি ধরে রাখার জন্যে রেন্ট দিয়ে ধ্বংস করার পুরা দায় আওয়ামী লীগের এবং এই ধ্বংসের পুরা সময়টা আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা উচিত।

এ-সরকারের যে সব কর্মচারী আমলা তাদের বেতন বৃদ্ধি এবং সুযোগ সুবিধা দেখে মনে করছেন, এই ফ্যাসিস্টদের সাপোর্ট দিয়ে গেলে আপনার সনই সনই উন্নতি হতে থাকবে, ইউ উইল লিভ টু সি দিস ডে যে সরকার আপনাদের বেতন দিতে পারছেনা।

এবং সেই ফিনান্সিয়াল ক্রাইসিসে যখন সরকারি কর্মচারীদের বেতন দেয়া যাবেনা, ব্যাঙ্কে জমিয়ে রাখা সঞ্চয়, পেনশনের টাকার ভ্যালু, সঞ্চয়পত্রের ভ্যালু যখন হুট করে ২০%-৩০% নেমে যাবে, এক লাখ টাকার সঞ্চয়ের দাম যখন ৭০ হাজার টাকা হয়ে যাবে, হুট করে তাতে যে ক্রাইসিস হবে সেই ক্রাইসিসটার পুরা দায় আওয়ামী লীগরে নিতে হবে। এবং ঐ দিন আওয়ামী লিগেরই ক্ষমতায় থাকা উচিৎ, অন্য কারো নয়।

আমি কখনোই দেশের কোন অবনতিতে খুশী হই না। কিন্ত আমি সত্যি মনেকরি বাংলাদেশের ওই ক্রাইসিসটা যত তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে তার পূর্বে ধ্বংস তত কম হবে। কারণ, ক্রাইসিসটা না হলে এই জাতি উপলব্ধি করতে পারবেনা, যথেষ্ট উৎপাদন না করে বিলালে রাজার ধন ও শেষ হয়ে যায়।


স্বাধীনতার পরে এতো গুলো বছরে আমাদের আসম কিবরিয়া সাহেব, সাইফুর রহমান সাহেবের মত খুবই মিতব্যয়ী কিছু অর্থমন্ত্রীদের কারণে, আমাদের সকলের সম্মিলিত স্যাক্রিফাইসের কারণে  যে সভ্রেন ঋণের সক্ষমতা হয়েছে এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাখো বাংলাদেশির বাবা মা পরিবার থেকে দূরে থেকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে রিজার্ভ হয়েছে — সেই গুলাকে ফু দিয়ে দুই বছরে নাই করে দিয়ে এবং সভ্রেন ঋণের সক্ষমতায় প্রতি বছর ৭/৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে সেই ঋণের টাকায় ঘি খেয়ে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ১৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে, সবাইকে লাখ লাখ টাকার গাড়ি কিনার লোন, বাসা কিনার লোন দিয়ে, এক কোটি টাকার খরচ ১০০ কোটি টাকায় সরকারের ফিনান্সের যে বারোটা বাজানো হয়েছে, ক্রাইসিস নিজের দোরগোড়ায় না আসলে — সেটা এই সিস্টেমের সুবিধাভোগীরা উপলব্ধি  করতে পারবেনা।

তাদের নিজের চোখে যখন দেখবে, এই সরকার তার বেতন পেনশনের টাকা দিতে পারছেনা তখন সে বুঝবে — নিজের হাতে তৈরি করা ফ্যাসিবাদ কিভাবে তার গলায় ফাঁস হয়েছে।

এই ক্রাইসিস আওয়ামী লীগের তৈরি এবং আওয়ামী লীগের হাতেই সেই পতন হওয়া উচিত। সিঙ্কিং শিপের ক্যাপ্টেন চেঞ্জ করতে নাই।

তাই এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা পরিবর্তন কোন মতেই কাম্য ছিল না।

এখন এটা ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপির প্রতি কোন ভালোবাসা থেকে বলছিনা।

তাদের সাথে অল্প কিছু মেশার ফলে এবং তাদের ইশতেহার দেখে আমার মনে হয়েছে এই ক্রাইসিস সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতনতা তাদের নাই এবং তাদের মধ্যেও এই সিস্টেমের বেনেফিসিয়ারিদের পেট মোটা করে যাওয়ার একটা মেন্টালিটি আছে।

এবং এই সিস্টেমের বেনেফিসিয়ারিরাও তাদের উপরে চাপ দিত — শেখ হাসিনা আমাদের খুশি রাখছে এতো দিন, তুমি পারতেছোনা তাই তুমি ব্যর্থ। আমার ধারণা ক্ষমতায় আসলে, তারা ক্রাইসিসটা মিস-ম্যানেজমেন্ট করে আরো তরান্বিত করতো। ক্ষমতা না পেয়ে তারা বেচে গেছে।

সেকেন্ড আরেকটা জিনিস হলো, ‘বর্তমান ক্ষমতা কাঠামো’। এলাকায় এলাকায় আওয়ামী মাস্তান। পুলিশের নীচের স্তরে পুরো ছাত্রলীগ যারা একেকটা থানায় কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প বানিয়ে মানুষকে নির্যাতন করছে এবং অত্যাচার অনাচার করে দেশের আনাচে কানাচে মানুষের সম্পদ লুট করে নিচ্ছে এবং ক্ষমতার সকল লেয়ারে আওয়ামী লীগের খাই খাই লোক জন, মিডিয়াতে তাদের লোক জন এবং ফ্যাসিজমের নৈতিক বৈধতা দিতে কালচারাল এস্টাব্লিশমেন্ট এর সব কিছুকে ন্যাচারলি আপ-রুট করা যাবেনা। এই টাকে আপ-রুট করতে বড় কোন ক্রাইসিস লাগবে।

যারপরে সকলে উপলব্ধি করতে পারবেন, সিস্টেমের একটা হোলসেল সংস্কার লাগবে। সেই শকটা না খাইলে এই সিস্টেমের কোন সংস্কার করা যাবেনা।

ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপির নিজ থেকে লিডারশিপ দিয়ে ভিশন দেখিয়ে সেই সংস্কার করে সিস্টেমকে লাইনে আনার কোন ক্যাপাসিটি নাই। মরালিও নাই, ফাংশানালিও নাই, ইন্টেলেকচুয়ালিও নাই।

তো ক্ষমতায় না গিয়ে তারা রীতিমত বেচে গেছে। নইলে, এক দিনও শান্তিতে থাকতে দিবোনার নীতিতে, তাদের জীবন আওয়ামী লীগ, সলিমুল্লাহ খান, শাহরিয়ার কবির,  সুলতানা কামাল এবং তাদের অস্ত্রধারী পোষা পাণ্ডারা ফানা ফানা করে দিত।

সো ক্ষমতায় যেতে না পারাটা তাদের জন্যে বিশাল মঙ্গল হয়েছে।

কিন্ত যারা এই ফ্যাসিস্ট রেজিমের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের রেন্ট নিয়ে তাকে টিকিয়ে রাখছেন,  ইউ উইল লিভ টু সি দিস ডে।

সেই সাপ তার লেজ খেতে খেতে মুখে এসে পৌঁছাবে।

রোহিঙ্গাদেরকে দেখেন। লিবিয়া দেখেন। আপনি সেই স্টেজে যাবেন না তার কোন প্রফেসর নাই।

রাদার - আপনি যেটা সৃষ্টি করবেন, সেটার দায় আপনাকে নিতে হবে। নেচারস ল। প্রকৃতির শাস্তি।

এটা আজকে বোঝা যাচ্ছেনা।

শেয়ার মার্কেটের আগেও আমি বহু বন্ধুকে যখন ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম তারা বলছিল — তুমি তো অনেক কিছু বলছ কিন্ত আমি তো টাকা কামাচ্ছি।

সরি বন্ধু দুনিয়াতে টাকা কামানো অনেক কঠিন কাজ।

সোনার ডিম পাড়া হাঁসকে ধীরে ধীরে মেরে ফেললে একদিন সেই হাসের ডিম পাড়া বন্ধ হবে।

তখন আপনি মনে করে দেখবেন, কিভাবে লোভ করতে গিয়ে নিজের আম ছালা দুইটাই হারিয়েছেন।

আর ঐক্যফ্রন্ট আর বিএনপির লোক জন, শোকরানা নামাজ পড়েন আল্লাহ আপনাদের বাঁচিয়ে দিয়েছেন।

  • লেখক ইন্ডিপেনডেন্ট রিসার্চার 


No comments:

Post a Comment