Search

Sunday, October 27, 2019

শিক্ষার্থীদের কাছে সংগঠনের আদর্শ তুলে ধরব

ইকবাল হোসেন শ্যামল
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে চলতি বছর কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব পেয়েছে ছাত্রদল। বর্তমানে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিপক্ষের হামলা-মামলায় পর্যুদস্ত ছাত্রদলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড অনেকটা সংকুচিত। নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে ছাত্রদল কতটা সক্রিয় হবে, সাংগঠনিক গতিশীলতা ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় কতটা তৎপর হবে—এসব বিষয় নিয়ে সম্প্রতি কালের কণ্ঠ’র পক্ষ থেকে কথা হয় ইকবাল হোসেন শ্যামলের সঙ্গে। কথা বলেছেন রফিকুল ইসলাম ও হাসান মেহেদী।

কালের কণ্ঠ : কেমন চলছে ছাত্রদল?


ইকবাল হোসেন শ্যামল : হামলা-মামলা, রোষানলের মধ্যে টিকে আছি। দেশে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিরোধীপক্ষের রোষানলের শিকার। শিক্ষার্থীর স্বার্থ ও অধিকার সম্পর্কিত কোনো দাবি আদায়ে কর্মসূচিতে গেলেই পড়তে হয় রোষানলে। রাজনৈতিক সহনশীলতা, শিষ্টাচার বলে এখন আর কিছু নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদলের সম্পৃক্ততাও অনেক কমে গেছে। তবে আমরা তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।

কালের কণ্ঠ : সারা দেশে ছাত্রদলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাই।


ইকবাল হোসেন শ্যামল : সারা দেশে ছাত্রদলের ১১৭টি ইউনিটের কার্যক্রম চলছে। বেশির ভাগ ইউনিটের মেয়াদ রয়েছে। কিছু ইউনিটে মেয়াদ পার হয়েছে। সরকারের রোষানলের কারণে সংগঠনের প্রতিটি ইউনিটের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই রাজনৈতিক সহাবস্থান নেই। প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় একটি বিশেষ সংগঠনের আধিপত্য সর্বত্র। ছাত্রদলের ১ নম্বর ইউনিটকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেয়নি ৯ বছর। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আমরা ঢুকতে পারলেও প্রকাশ্যে হামলা করা হচ্ছে। ছাত্ররাজনীতির আঁতুড়ঘর মধুর ক্যান্টিনে গেলে চেয়ার সরিয়ে নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেহারা একই।

কালের কণ্ঠ : ২৭ বছর পর কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্বে এসেছেন। দায়িত্ব পালনে ছাত্রদলের সামনে চ্যালেঞ্জ কী?


ইকবাল হোসেন শ্যামল : দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। ছাত্রলীগ ও সরকার অনুগত প্রশাসনের নির্যাতনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে চলে গেছে ছাত্রদল, যা সংগঠনের ভিত্তিকে নাজুক করেছে। শিক্ষার্থীদের কাছে যেতে না পারলে সংগঠন আরো দুর্বল হয়ে পড়বে। বিরূপ পরিবেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে সংগঠনের আদর্শ তুলে ধরা এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলা ইউনিটকে সে রকম নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

কালের কণ্ঠ : ছাত্র অধিকার আদায়ে ছাত্রদলের অগ্রাধিকার বিষয় কী কী?


ইকবাল হোসেন শ্যামল : একটি ছাত্রসংগঠনের প্রাণ সাধারণ কর্মী। কর্মী বাড়াতে শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা শিক্ষার্থী অধিকার আদায়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। বিরূপ পরিস্থিতি ও হামলা-মামলার মধ্যেও ছাত্রদের অধিকার আদায়ে লড়ব। অনেকে বলেন ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে না। দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীদের কাছে যেতে পারিনি, তাহলে আমরা কিভাবে কাজ করব? সারা দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার দাবিতে শিগগিরই কর্মসূচি দেওয়া হবে।

কালের কণ্ঠ : দীর্ঘ সময় বিএনপি ক্ষমতার বাইরে থাকায় ছাত্রদলের প্রকাশ্যে খুব একটা কর্মসূচি নেই। জেলা পর্যায়ে কর্মকাণ্ড অনেকটাই সংকুচিত। এই অবস্থায় সাংগঠনিক গতিশীলতা আনতে কী করবে ছাত্রদল?


ইকবাল হোসেন শ্যামল : দেখুন, সংগঠনে কমিটি না থাকলে ও দলে কর্মীর পরিচয় না পেলে সংগঠন গতিশীল হয় না। তাদের কাছে প্রত্যাশিত কাজও আশা করা যায় না। সংগঠনকে গতিশীল করতে ও নবীনদের রাজনীতির সুযোগ করে দিতে নিয়মিত কমিটি গঠন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরেই সারা দেশের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির কার্যক্রম শুরু হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনূর্ধ্ব ৪৫ দিনের জন্য ৩১ থেকে ৪১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করা হবে শিগগিরই। পরে গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত নেতাদের কাছে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে।

কালের কণ্ঠ : ছাত্রলীগ বুয়েটের আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে মেরেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে বুয়েট প্রশাসন। এ বিষয়ে কী ভাবছে ছাত্রদল?


ইকবাল হোসেন শ্যামল : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) পরিচালিত হয় ১৯৬১ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী। ওই সময় ক্ষমতায় ছিলেন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান। ইতিহাস বলে স্বৈরশাসকরা দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ চান না। মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে চান না। তাঁরা মনে করেন, তাঁদের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ছাত্ররাজনীতি বড় হুমকি। আর সেটা অনুসরণ করে বর্তমান সময়ে বুয়েটের মতো একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সচেতন ছাত্র ও ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে এটা মেনে নিতে পারি না। আমরা মনে করি, ছাত্রলীগের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায়ভার সব ছাত্রসংগঠন নেবে না। এর দায়ভার শুধুই ছাত্রলীগের। নিষিদ্ধ যদি করতে হয়, তাহলে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হোক।

  • সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
  • কার্টসিঃ কালের কণ্ঠ

No comments:

Post a Comment