বিএনপি'র জন্মদিনে দেশের প্রায় সব পত্রিকায় উপ-সম্পাদকীয় লিখা হয়েছে। কোনো রচনার লিখিত শব্দের বাইরেও রিড বিটুইন দ্য লাইনস বলে একটা বিষয় আছে যা দ্বারা একজন পাঠক লেখকের দেয়া তথ্যের বাইরেও আরও কিছু বিষয় বুঝতে পারেন। পাঠক বুঝতে পারেন ওই রচনার পেছনে লেখকের উদ্দেশ্য এবং এর মূল সুর। এটাই লিখার ‘প্রেমিস’ যা একজন লেখক সচেতন বা অবচেতনভাবে প্রকাশ করেই ফেলেন; কারণ এটার ওপর ভিত্তি করেই তিনি লিখে থাকেন। গত কয়েক বছরে অদ্ভুতভাবে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আসলেই এক শ্রেনীর বুদ্ধিজীবির লেখার ‘প্রেমিস’ আমাদের দেখিয়ে দেয় যৌক্তিক-অযৌক্তিক সমালোচনার নামে তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেন তাদের লেখা বা বলার মধ্য দিয়ে বিএনপিকে খাটো, অযোগ্য প্রমাণ করে হতোদ্যম করে ফেলতে।
অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সময় বহু বুদ্ধিজীবি শীতনিদ্রায় চলে যান। তখন আর ২৯ ডিসেম্বর রাতের ভোট, নজিরবিহীন দুর্নীতি, সাংবিধানিক এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ঝুরঝুর করে ভেঙ্গে পড়া, বিচার ব্যবস্থার বেহাল দশা, টুঁটিচাপা গণমাধ্যম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড-গুম সহ চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে টু শব্দটিও তারা করে না। অথচ গত ১৩ বছর ধরে ভোটে বা বিনা ভোটে নিরঙ্কুশভাবে ক্ষমতায় দলটি।
অবশ্য একটি দলের সমালোচনা না করলে অন্য কোনো দলের সমালোচনা করা যাবে না বিষয়টি তেমন নয়। তবে পাঠক সব সময়ই আশা করেন সমালোচনা, সেটা যারই হোক না কেন, তা যেন বাস্তবতার নিরিখে যৌক্তিকভাবে করা হয়। না হলে লেখা তার নিরপেক্ষতা হারিয়ে ব্যক্তিগত ক্ষোভ উদগীরনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। সাম্প্রতিক সময়ে প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘বিএনপি কি রাজনীতি করছে?’ শিরোনামের কলামে লেখক জনাব মারুফ মল্লিক এর একটা চমৎকার উদাহরণ হতে পারেন।
কলামটির প্রথম অনুচ্ছেদটি এমন – “প্রতিষ্ঠার ৪২ বছরের মাথায় কেমন আছে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি? সার্বিক বিষয়াদি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, দিশাহীন, এলোমেলো সময় পার করছে দলটি। অগোছালো রাজনীতির ভারে ডুবে গেছে বিএনপি। কখন কী করবে, দলটির কে কী বলবে, বোঝা মুশকিল। বুদ্ধিদীপ্ত, গঠনমূলক রাজনীতি থেকে বিএনপির অবস্থান যোজন যোজন দূরে”।
অথচ বাংলাদেশে এখন মূল প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে এদেশে ‘রাজনীতি’ আদৌ আছে কি নেই? এরকম একটি টালমাটাল সময়ে দাঁড়িয়ে সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলই দিশাহীন, এলোমেলো, অগোছালো সময় পার করবে, সেটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে সেই রাজনৈতিক দলটি যদি হয় সরকারের অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার পথের প্রধান বাধা, এবং গত এক যুগ ধরে দলটিকে সম্পুর্ণভাবে নিঃশেষ করে রাজনীতির মাঠ থেকে হটিয়ে দেবার চেষ্টা হয় তাহলে দলটির কেবলমাত্র টিকে থাকাটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। এই পরিস্থিতিতে বিএনপিকে আলাদা করা কিংবা বিএনপি’র কাছ থেকে ‘পিকচার পারফেক্ট’ রাজনীতি আশা করা ইউটোপিয়ান চিন্তা ছাড়া আর কিছুই নয়।
দেশের রাজনীতি হীনতার এই কালে ক্ষমতাসীন দলটিরও রাজনীতিও যে খুব দেখা যায় তেমনটি নয়। কিভাবে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে জায়গা করে নেয়া যায় আর সেটা ব্যবহার করে কিভাবে লুটপাট করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনা যায় এর বাইরে এই দলটির কর্মী দের আর কোন কাজ আছে বলে তো দেখি না। ক্ষমতায় আছে বলে আপাতদৃষ্টিতে তাদের এলোমেলো অগোছালো মনে হয় না, কিন্তু ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবার সাথে সাথে দলটির কাঠামো হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে এই আশঙ্কা দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতারাই করেন।
লেখক অবশ্য তার লিখায় স্বীকার করেছেন শুরুতে বিএনপি’র রাজনীতি ছিল ‘ক্ষিপ্র, দ্রুতগামী, চমকে ভরপুর’, কিন্তু সযত্নে এড়িয়ে গেছেন সেই সময় এবং অব্যবহিত আগের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট। তিনি বলেছেন যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দীর্ঘ সময় লাগে দলটির, দোনোমনো ভাব স্পষ্ট। অহেতুক পরিস্থিতিকে জটিল করে ফেলে। যে দলের চেয়ারপার্সন ব্যক্তিগতভাবে নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে ৭৪ বছর বয়সে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামালায় জেলে, দ্বিতীয় প্রধান দেশে ফিরতে পারছেন না, সেখানে ক্ষিপ্র গতিতে দল সিদ্ধান্ত নেবে সেটা খুব বাস্তবসন্মত নয়।
লেখক বিএনপি’র সংসদ সদস্যদের সংসদে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু তিনি এড়িয়ে গেছেন এই সত্য যে কেবলমাত্র বিএনপি সংসদে যাবার কারণেই বিএনপি’র নারী সাংসদ সংসদে দাঁড়িয়ে সংসদের বৈধতা নিয়ে তীব্র ভাষায় প্রশ্ন তুলেছেন, সকল সাংবিধানিক এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে নিষ্ক্রিয় করে সব ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছেন।
লেখক বলেছেন বিএনপি’র এক সাংসদ মাদকব্যবসায়ী এবং সন্ত্রাসীদের ক্রসফায়ারে দেয়ার দাবি তুলেছেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে লেখক বলেন নাই বিএনপি’র এক সাংসদ সংসদে দাঁড়িয়ে সাংসদদের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্ররোচনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন যেটা সর্বাধিক পঠিত জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো রিপোর্ট করেছিল ‘বিচার বহির্ভূত হত্যা সম্ভবত বৈধ হতে যাচ্ছে’ শিরোনামে। শুধু তাই নয় বিএনপি সাংসদরা দুর্নীতি, বাজেট, পররাষ্ট্রনীতি, সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, আইনের শাসন সব কিছু নিয়েই কথা বলেছেন। একেবারেই নগণ্য সংখ্যক সদস্য নিয়েও সংসদের 'ডি ফ্যাক্টো' বিরোধী দল যে বিএনপি সেটা সংসদ চলাকালীন সময়ের মিডিয়া একটু খেয়াল করলেই লেখক দেখতে পেতেন।
এর চেয়ে বেশি আর কেমন ধরণের ‘ইতিবাচক ভূমিকা’ রাখার প্রত্যাশা করেছিলেন লেখক? তিনি কি চেয়েছিলেন, বিএনপি কোনো গণবিরোধী আইন প্রণয়ন রোধ করতে পারবে? বাজেটে কোনো অন্যায় বরাদ্দ বন্ধ করতে কিংবা কল্যাণ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে সরকারকে বাধ্য করতে পারবে? কিংবা পারবে বিচার বিভাগ পুরোপুরি স্বাধীন করার লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধন (অনুচ্ছেদ ১১৫-১১৬) নিশ্চিত করতে? লেখকের তো জানা থাকার কথা সংবিধানে এখনও ৭০ বলে একটা অনুচ্ছেদ আছে যার কারণে ৭ তো দূরেই থাকুক এমনকি ১৪৯ জন সংসদ সদস্য নিয়েও কোনো দলের পক্ষে সংসদে কোনো আইন পাশ রোধ করা সম্ভব নয়। আমাদের সংসদ তো জন্ম থেকেই অন্তর্নিহিতিভাবে এই দুর্বলতার শিকার।
এখন প্রশ্ন আসতেই পারে ৭০ অনুচ্ছেদ বর্তমান অবস্থায় রেখে বিরোধী দলের সংসদে যাবার দরকার কী? সংসদের বিতর্ক জনগণের সামনে অন্তত সরকারের ভুল এবং দুর্বলতা প্রকাশ করে। এটা জনগণকে সচেতন করার মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। অনেক সময়েই সেই চাপে সরকারকে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়। তবে স্বপ্ন দেখি কোনদিন সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিমার্জিত হবে, যা সাংসদদের শৃঙ্খলমুক্ত করে সংসদকে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক চর্চার স্থানে পরিণত করবে।
লেখক বলেছেন বিএনপি গণতান্ত্রিক সংগ্রামে থাকছে না। শুধু আজ না, ২০১৪ সালের পর থেকে এই দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কোন আন্দোলন সংগ্রামের কথা বাদই দেই, রাজপথে আন্দোলনের ক্ষেত্রে সামাজিক সংগঠনগুলোর কী অবস্থা সেটা কি লেখক জানেন না? বাংলাদেশে আজ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে সেটা বোঝার জন্য খুব সাম্প্রতিক একটা ঘটনার দিকে তাকানো যাক।
অতি আলোচিত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে যাওয়া সিফাত এর বাড়ি বরগুনার বামনায় তার মুক্তির পক্ষে একটি মানববন্ধন আয়োজিত হয়েছিল। সেই মানববন্ধনে বামনা থানার ওসি তার এক অধীনস্থ অফিসারকে চড় দিয়ে ভীষণ সমালোচিত হন এবং শেষে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু ওই চড়ের ঘটনার পরপরই মানববন্ধনে আসা বহু মানুষকে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত করে মানববন্ধনটি ছত্রভঙ্গ করার কারণ হিসেবে স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছিলেন নীচের কথাগুলো, যা বিবিসি বাংলা প্রকাশ করে -
"আমাদের কারও অনুমতি না নিয়ে তারা হুট করে মানববন্ধন করেছে, আমাদের কাছে কোনো ইনফরমেশন দেয়নি। আমাদের কাউকে এ ব্যাপারে আগে জানায়নি। এটি সরকারের পক্ষে নাকি বিপক্ষে, সেটিও তো আমাদের বোঝার ব্যাপার আছে। কিছু কুচক্রী মহল আছে, যারা বর্তমান সরকারের বিপক্ষে কাজ করছে। তারা কি চোর, ডাকাত, নাকি ছিনতাইকারী, সেটি তো আমরা জানি না"।
এটা শুধুমাত্র একজন ওসি না, এই দেশের প্রায় সব জায়গায় অবস্থা কমবেশি একই। সম্প্রতি আলোচিত হওয়া আরেকজন ওসি, সিনহা রাশেদের ঘটনায় পদচ্যুত হওয়া টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপের গত বছরের বক্তব্যের ভিডিও পাওয়া যায়, যেখানে তিনি প্রকাশ্যে অবলীলায় বিনা বিচারে মানুষ হত্যার কথা বলছেন। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ৬ টি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি পুলিশের সর্বোচ্চ পদক পান।
বিগত বছরগুলোতে কয়েকটি স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন যেমন কোটা সংস্কার এবং বিশেষ করে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিশুদের ওপরে সরকারের গুন্ডাবাহিনী হেলমেট পরে কী বীভৎস তাণ্ডব চালিয়ে আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করেছিল সেগুলো আমাদের স্মৃতিতে অন্তত মিলিয়ে যায়নি। তারও আগে রামপাল বিরোধী আন্দোলনে খুব অল্প কিছু মানুষের রাজপথে থাকাও এই সরকার মেনে নিতে পারেনি - পিটিয়ে এবং টিয়ার গ্যাসে আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।
আলোচ্য কলামটির লেখক গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপি'র ব্যর্থতা দেখানোর জন্য হালে ঘটতে থাকা আরেক আন্দোলনকে সামনে এনে বলেন, 'বেলারুশে আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে লাখো মানুষ পথে নেমেছে'। তিনি কি আদৌ কোনো খোঁজখবর নিয়েছেন 'ইউরোপ'স লাস্ট ডিক্টেটর' বলে পরিচিত লুকাশেঙ্কোর মতো একজন সর্বস্বীকৃত একনায়ক, যিনি তার সাঙ্গোপাঙ্গসহ ২০০৬ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার মুখে আছেন, তিনি তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে আদৌ কতটা বাধা দিচ্ছেন? এই আন্দোলনের মধ্যেই তিনি শ্রমিক অসন্তোষ কবলিত বিভিন্ন কারখানা সফরে গেছেন এবং সেখানে তাকে প্রকাশ্যে সরাসরি দুয়ো এবং গালি দেয়া হয়েছে, কিন্তু কারো বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বাংলাদেশের পরিস্থিতির সাথে তুলনা করলে এই লোককে আমার কাছে মহান গণতন্ত্রী মনে হয়। লাখো মানুষের এই সরকার পতনের আন্দোলনে কিছু দিন আগে মাত্র দ্বিতীয় মানুষটি মারা যায়। এবার লেখক নিরাপদ সড়কের মত আন্দোলন, যেটা আদৌ সরকার পতনের জন্য ছিল না তার কিছু ভিডিও, ছবি এবং সংবাদ দেখে নিন। আশা করি বুঝে যাবেন কেন বাংলাদেশ বেলারুশ হয়ে উঠেনি এখনও।
সনাতন মাঠ এবং রাজপথের যখন এই অবস্থা তখন রাজনৈতিক দলের কর্মী এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা রাজনীতির নতুন মাঠ ডিজিটাল মাঠে কিছু কথা বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেখানেও আছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের বীভৎস নিপীড়ন। এই করোনাকালীন সময়েও শুধুমাত্র সরকারের সমালোচনা করার কারণে নির্দলীয় অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, সাংবাদিক এমনকি কার্টুনিস্টকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের যত মামলা আমিসহ বিএনপি নেতাকর্মীর উপরে ঝুলে আছে সেই সংখ্যা অকল্পনীয়।
বিএনপি'র সর্বশেষ সরকারের সময়েও যে প্রথম আলো বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বড় সব নেতা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে নিয়মিত ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশ করত, সেই প্রথম আলো আজ কার্টুনশুণ্য। জনাব মল্লিক খেয়াল করেছেন তো এটা?
কোন ব্যক্তি বা দলের আচরণ অথবা অবস্থাকে কেউ যদি নৈর্ব্যক্তিকভাবে মূল্যায়ন করতে চায় তাহলে কন্টেক্সট বিবেচনা না নেয়াটা হয় অজ্ঞানতা নয়তো অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কোন প্রেক্ষাপটে বিএনপিকে রাজনীতি করতে হচ্ছে সেটা এই দেশের মানুষ জানে। সেটা যদি বিবেচনায় নেয়া হয় তাহলে বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে যথেষ্ট ভাল করছে। এর মানে এই না, দলটির কোন উন্নতির জায়গা নেই। এক দশকের বেশি সময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, মিথ্যা-মামলার মতো নানাবিধ নিপীড়ণের মুখে থাকার পরও লেখক যখন বলেন, 'বিএনপি একটি বড় দল। জনসমর্থন আছে, ভোটারও আছে', তখন তিনি তার অজান্তেই বিএনপিকে একটি বড় সার্টিফিকেট দিয়ে দেন।
এই দেশের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দল বিএনপি। ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখার এবং প্রয়োজনে সেটা গ্রহণ করার মানসিকতা রাখে দলটি। তাই দলটির আরো শক্তিশালী দল হয়ে গড়ে ওঠার জন্য যে কোনো রকম পরামর্শকে দলটি স্বাগত জানায়। তবে শুরুর দিকে যেমন বলেছিলাম ইদানিংকার অনেক লেখার 'প্রেমিস' আমাদের বলে সমালোচনার ছলে বিএনপিকে হতোদ্যম এবং ধ্বংস করার একটা চেষ্টা আছে। বিএনপি দূর্বলতর হতে থাকলে বর্তমান বিশ্বের আইডেন্টিটি পলিটিক্সের চরম ডামাডোলে দেশে কোন রাজনীতির উত্থান হতে পারে এবং তাতে দেশের ভবিষ্যৎ কোন পথে যেতে পারে সেটা বোঝার মত বুদ্ধি এবং প্রজ্ঞা লেখকদের আছে বলে বিশ্বাস করি। সেই বিশ্বাস থেকেই আশা করি ভবিষ্যতে তাদের সমালোচনার উদ্দেশ্য থাকবে বিএনপিকে আরও শক্তিশালী দল হয়ে উঠতে সাহায্য করা, যাতে দলটি বাংলাদেশকে একটি সত্যিকার উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে উঠতে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।