Search

Sunday, March 10, 2019

ডাকসু নির্বাচন ২০১৯ — প্রশ্ন করুন, কাকে ভোট দিচ্ছেন?


মোঃ নিজাম উদ্দিন


আবু বকরের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে! ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল সে। অত্যন্ত কষ্ট করে তার দরিদ্র মা-বাবা সন্তানকে মানুষ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছিল। টিউশনি করে চালাত সে তার পড়াশোনার খরচ। অসম্ভব মেধাবী আবু বকর ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট ছিল। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে এখন পর্যন্ত সে ই সর্বোচ্চ ফলাফলের অধিকারী!

বেঁচে থাকলে এখন আবু বকর হয়ত দেশের নাম করা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হত অথবা বড় কোনো অফিসার!

কিন্তু তার স্বপ্ন সফল হয়নি! শিক্ষার জন্য সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও তাকে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল লাশ হয়ে! আবু বকরের মায়ের চোখের জল হয়ত শুকিয়েছে,বাবার হয়ত এখন সন্তানের জন্য দোয়া ছাড়া কিছু ই করার নেই! ভাই বোনেরা হয়ত এখনও কাঁদে!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসাবে আবু বকর আপনারও ভাই। ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১০, কারা মেধাবী আবু বকরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলে তার রুমের সামনে গুলি করে হত্যা করেছিল তা নিশ্চয়ই এদেশ ভুলে যায়নি! হত্যাকারীরা এখন বুক ফুলিয়ে হাঁটে! তারা বেকসুর খালাস!

১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ - ডাকসু নির্বাচন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সচেতন ছাত্র হিসাবে আপনি কোনো ভাবেই ডাকসু নির্বাচনে কোনো আবু বকরের খুনী হত্যাকারীদের প্যানেলে আপনার ভোট দিতে পারেন না।

দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হিসাবে ডাকসু নির্বাচনে ব্যালটে সিল মারার  আগে নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন - কাকে ভোট দিচ্ছেন?


  • লেখক — মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটি। 

ডাকসু নির্বাচন ২০১৯ — ৩০ ডিসেম্বর মার্কা নীলনকশা নির্বাচনের শঙ্কা এবং প্রত্যাশা

মাকসুদুর রহমান 

আগামী কাল সোমবার, মার্চ ১১, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদ  —  ডাকসু নির্বাচন। দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত এবারের নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও সারাদেশের সচেতন মানুষদের উত্তেজনা, আবেগ, আশাঙ্কার শেষ নেই।  তবে ৩০ ডিসেম্বরের ভয়াবহ ভোট জালিয়াতির নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের যে তফসিল ঘোষণা করে তাতেই এ নির্বাচনের পরিণতি সম্পর্কে সবাই আঁচ করতে পারেন। আর সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে বিবেচিত যে ‘ডাকসু’ সেখানেও এবার  ‘সিইসি’ নুরুল হুদার ভুত ভর করেছে! যেখানে প্রধান ক্রীড়াণক হিসেবে ভূমিকা রাখছেন বিতর্কিত ভিসি আখতারুজ্জামান। তিনি যে সিইসি নুরুল হুদার দেখানো পথেই একটি নীলনকশার ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করেছেন তা প্রমাণের জন্য নিন্মোক্ত কারণগুলোই যথেষ্ট  —  

১। ছাত্রলীগ ছাড়া ক্রিয়াশীল সকল  ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের  দাবী উপেক্ষা করে ভোট কেন্দ্র হলে স্থাপন।

২। ব্যালট বক্স স্টিলের তৈরি।  স্বচ্ছ নয়, তাই  বাহির থেকে কিছুই দেখা যায় না।

৩।  ভোট প্রদানের জন্য ব্যবহৃত  ব্যালট পেপারে নামের পাশে খালি ক্রস চিহ্ন দিতে হবে।

৪। ব্যালট পেপার ভাঁজ করা যাবে না (ভাঁজ করলে নাকি ভোট বাতিল বলে গণ্য হবে)। 

৫।  প্রার্থীরা নিজেদের কোনো পোলিং এজেন্ট রাখতে পারবে না। নির্বাচনী পোলিং এজেন্ট থাকবে হাউজ টিউটর স্যাররা ( গত ১০ বছরে যেসব ছাত্রলীগ  ক্যাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছেন,মূলতঃ তারাই নির্বাচনী কাজে দায়িত্ব পালন করবেন)। 

৬।  ভোটকেন্দ্রে বুথ এলাকায় কোন সাংবাদিক ঢুকতে পারবেন না। তারা হলের গেস্টরুম পর্যন্ত যেতে পারবেন বড়জোর (স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রগুলোর প্রকৃত চিত্র জানার সুযোগ আর থাকছে না)! 

৭। ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে সময় মাত্র ৬ ঘন্টা। প্রতি ভোটারকে ৩৮টি ভোট দিতে হবে  (যারা হলের বাইরে থাকে মূলতঃ ভোট দেয়া থেকে বিরত রাখতেই এই সিদ্ধান্ত)। 

প্রশ্ন উঠতে পারে এতসব সন্দেহ, অবিশ্বাস, আশাঙ্কা মাথায় নিয়ে কেন ছাত্রসংগঠন ও সর্বোপরি সাধারণ শিক্ষার্থীরা ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সবাই উৎসাহিত বা পরিস্কার করে বললে উত্তেজিত। এর কারণ একটাই, ‘ডাকসু’ই পারে বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান স্থবির গণতান্ত্রিক অচলাবস্থা দূর করতে আলোর পথ দেখাতে।

সেটা যদি হয়, ৭৩ এর ব্যালট বাক্স ছিনতাই বা ২০১৮ এর নীলনকশার  ধরনের নির্বাচন তবুও। কারণ ‘ডাকসু’ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে যে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের চেতনা জাগ্রত হয়েছে, তা আগামী দিনে বাংলাদেশের বৃহত্তর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রূপ নেয়ার সমূহ সম্ভাবনার পথ সুগম করবে।


  • লেখক —  রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক। 


Friday, March 8, 2019

রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ৯১০ কোটি টাকা অপচয়


ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন



নির্বাচন কমিশন পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে ৯১০ কোটি টাকা বাজেট চূড়ান্ত করেছে। চতুর্থ উপজেলা নির্বাচন ছয় ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবার পাঁচ ধাপে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নির্বাচনের কাজ সম্পন্ন করতে ইসি ব্যয় করবে ৯১০ কোটি টাকা। পাঁচ বছর আগে ২০১৪ সালে ছয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাজেট ছিল ৪০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনের বাজেট থেকে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য বাজেট ৫১০ কোটি টাকা বেশি।

নির্বাচন কমিশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ৯১০ কোটি টাকার বাজেটের বিরাট অংশ, অর্থাৎ ৭৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে নির্বাচন পরিচালনায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য। এই বরাদ্দের বড় অংশ ব্যয় হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাতাবৃদ্ধির পেছনে। উপজেলা নির্বাচনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিকও বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই পারিশ্রমিক বা ভাতা বৃদ্ধির কারণ বুঝতে কারো অসুবিধা বা কষ্ট হওয়ার কথা নয়। জনমনে গুঞ্জন উঠেছে, নির্বাচনের সাথে নিয়োজিত ব্যক্তিরা বিগত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচন কী পরিমাণ উৎসাহ ও চতুরতার সাথে ২৯ ডিসেম্বর রাতেই সম্পন্ন করেছেন, সে কাররেণই তাদের পারিশ্রমিক বা ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাচনে সমালোচিত ও প্রশ্নবিদ্ধ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করার সিদ্ধান্তের কারণেও বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসি সূত্র মতে, শুধু ইভিএম পরিচালনা এবং সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য ১৭০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অথচ সংবাদমাধ্যমে ইসি সচিব উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের তফসিল ঘোষণাকালে বলেছেন, যথাযথ প্রস্তুতি না থাকায় নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। প্রশ্ন উঠেছে, ইভিএম পরিচালনা ও এতদসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ খাতে ১৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার পরেও যথাযথ প্রস্তুতি কেন সম্পন্ন হলো না? দেশের প্রায় সব দলের আপত্তি সত্ত্বেও বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সীমিতভাবে ইভিএম ব্যবহার করে কী ধরনের সুফল হয়েছে, তা জনগণ এখনো অবগত নন।

সংসদ নির্বাচনে জনগণ দেখেছে, ‘ভোট ডাকাতি’র মহোৎসবে ব্যালট আর ইভিএমের মধ্যে কোনো তফাৎ হয়নি, বরং ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে এটা আরো সহজ ও দ্রুত করা সম্ভব হয়েছে। যে দেশে বিগত কয়েকটি নির্বাচনে জনগণের নিজ হাতে ভোট দেয়ার প্রয়োজন হয়নি বা ভোটের মাধ্যমে জনমতের প্রতিফলন হওয়ার সুযোগ হয়নি, সে দেশে ভোটিং মেশিন ব্যবহারের বিলাসিতা করে ১৭০ কোটি টাকার অতিরিক্ত বরাদ্দ অপ্রয়োজনীয় ও অপব্যয় ছাড়া আর কিছু নয়। জনগণের কাছে তা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

দশম জাতীয় সংসদের ভোটারবিহীন, প্রার্থীবিহীন ও বয়কটের নির্বাচনের প্রহসনের পর জনগণ ভোটের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। তার পরেও, দুই মাস পর অনুষ্ঠিত চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের কারণে ভোট দিতে পারবে এমন জনপ্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল। জনগণের মধ্যে ভোটের উৎসবমুখর আবহ সৃষ্টি হয় তখন। জনগণের প্রত্যাশা ও প্রবল ইচ্ছার ফলে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে জনগণ বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে অংশগ্রহণ করে। জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের ফলাফলে বিএনপি থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি সব ধাপেই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করবে, এটা ভেবে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল শঙ্কিত ও চিন্তিত হয়ে পড়ে।

এমনিতেই দশম সংসদের ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। উপজেলা নির্বাচনে পরাজয় মেনে নেয়া তাদের জন্য কঠিন ছিল। এমতাবস্থায়, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব পরবর্তী ধাপের নির্বাচনগুলোতে যেভাবেই হোক বিজয় কেড়ে নেয়ার জন্য দলীয় প্রার্থী, কর্মী ও প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। ফলে পরবর্তী ধাপের নির্বাচনগুলোতে প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোটকেন্দ্র দখল, আগের রাতে ভোট ডাকাতি, জালভোট প্রদান, ভোটের দিনে প্রকাশ্যে জোরপূর্বক সরকারদলীয় প্রার্থীর পক্ষে সিল মারা প্রভৃতি হয়েছে। এভাবে নির্বাচনের ফলাফল সরকারি দলের প্রার্থীদের পক্ষে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। ছয়টি ধাপের ফলাফল তুলনামূলক বিচার করলে দেখা যাবে, জনমতকে কিভাবে প্রশাসনের সহযোগিতায় ভূলুণ্ঠিত করে সরকারের পক্ষে নিয়ে যাওয়া যায়।

এই ছক পর্যালোচনায় এটা স্পষ্ট যে, নির্বাচন কমিশন চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দোহাই দিয়েছে ঠিকই, কার্যত ধাপে ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে সরকারের নীলনকশা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে ভোট দেয়ার জনপ্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল। সরকারি দল ও প্রশাসনের এহেন ন্যক্কারজনক আচরণে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। এতে জনগণের ভোটের প্রতি অনীহা, অশ্রদ্ধা ও আস্থাহীনতা আরো বৃদ্ধি পায়।

আসন্ন পঞ্চম উপজেলা নির্বাচন হতে যাচ্ছে ২৯ ডিসেম্বরের রাতের নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত সংসদের নির্বাচনের দুই মাস পর। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক মেরে দিয়েছে। এ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা জনগণের কাছে এতই সাম্প্রতিক যে, তা মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন হয় না। এ নজিরবিহীন ঘটনার প্রেক্ষাপটেই বিএনপি স্বাভাবিকভাবে পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে এই উপজেলা নির্বাচন হবে একতরফা, প্রতিযোগিতাহীন ও নিষ্প্রভ। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করে যে প্রার্থী ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন, তিনিই নিশ্চিতভাবে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে ‘নির্বাচিত’ বলে ঘোষণা পাবেন।

গত ২৮ ফেব্র“য়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনের নাটক মঞ্চস্থ হতে দেখেছে দেশের সবচেয়ে সচেতন নগরবাসীরা। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর আতিকুল ইসলাম ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরবর্তী মেয়র বা নগরপিতা, তা আর কাউকে বলে দিতে হয়নি। জনপ্রিয় দল বিএনপি মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় উপনির্বাচনটি হয়েছে প্রতিযোগিতাহীন ও একতরফা। তাই ভোটারেরা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার তাগিদ অনুভব করেননি। নতুন ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রগুলো ছাড়া অন্য সব কেন্দ্র ছিল প্রায় ফাঁকা। নবনির্বাচিত মেয়র হয়তো বুঝতেই পারেননি যে, তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। ভোটারদের অপেক্ষায় ছিল ভোটকেন্দ্রগুলো।

প্রতিদ্বন্দ্বী পিডিপির মেয়র পদপ্রার্থী শাহীন খান রাতে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘নিজে ৪০টির বেশি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম ছিল। সব মিলিয়ে পাঁচ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে বলে মনে হচ্ছিল না। তবুও এত ভোট কোথা থেকে এসেছে, বুঝলাম না।’ নগরবাসীরও প্রশ্ন- এ ধরনের নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে জনগণের ট্যাক্সের টাকা খরচ বা অপচয় করার কোনো যৌক্তিকতা ছিল কি? টাকার অপচয় ছাড়াও এ উপলক্ষে ঢাকা শহরে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে বিলাসিতা করা হয়েছে এবং রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। যে উপনির্বাচনে ভোটের প্রয়োজন হয়নি, সেই নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার স্বার্থে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে বহিরাগতদের বের করার ঘোষণা জনমনে ব্যাপক হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে।

ঢাকার মেয়রের উপনির্বাচন আসন্ন পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের একটি প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে বিবেচনা করা যায়। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনও একইভাবে একতরফা ও প্রতিদ্বন্দ্বিহীনভাবে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিশ্চিতভাবে বুঝতে পেরেছেন যে, তাকে ‘নির্বাচিত’ বলে ঘোষণা করা হবে। এটা জেনে কোনো প্রার্থী কি ভোট ভিক্ষা করার জন্য জনগণের দুয়ারে দুয়ারে যাবেন? জনগণ কি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার কোনো তাগিদ বা প্রয়োজন অনুভব করবেন? মোটেই না। তাহলে প্রশ্ন, পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বাজেটের চেয়ে ৫১০ কোটি টাকা বৃদ্ধি করে ৯১০ কোটি টাকা বরাদ্দের যুক্তিসঙ্গত কারণ বা প্রয়োজনীয়তা আছে কি?

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, জনপ্রিয় দল বিএনপি নির্বাচন বয়কট করায় মূলত নৌকা মার্কার প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। ইতোমধ্যে নৌকা মার্কার বহু প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিটি নির্বাচনে কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী নানা কারণে বা পরিচিত হওয়ার উদ্দেশ্যে নামমাত্র অংশগ্রহণ করে থাকেন। ফলাফল প্রকাশের পর ওইসব প্রার্থী কে কত ভোট পেয়েছেন, তার খবর আর কেউ রাখে না। পত্র-পত্রিকায়ও প্রকাশ করার প্রয়োজন মনে করা হয় না। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনেও হয়তো কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী লোক দেখানো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা) পদে নির্বাচন উন্মুক্ত থাকার ফলে ভোটকেন্দ্রে হয়তো কিছু ভোটার উপস্থিত হবেন। কিন্তু দলীয় নির্বাচনে মূল পদে নির্বাচনের নামে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনের মতোই নাটক মঞ্চস্থ করার কোনো বিকল্প নেই। এমতাবস্থায়, ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নৌকা মার্কার প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের সাথে অবশিষ্ট নৌকার প্রার্থীদের নির্বাচিত ঘোষণা করে দিলে অতি সহজে নির্বাচন নামের নাটক সমাপ্ত করা যায়। এভাবে, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা জনগণের ৯১০ কোটি টাকার অপচয় খুব সহজেই পরিহার করা যায়।


  • লেখক — সদস্য, জাতীয় স্থায়ী কমিটি, বিএনপি এবং সাবেক অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ভূতত্ব বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

একজন বিশ্বাসঘাতক সুলতান

আফতাব হোসেইন 

ডাকসু’র একজন সাবেক ঘাঘু নেতা ও দীর্ঘদিন ক্ষমতার খরায় ভোগা অনাহারী সুলতান অবশেষে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন । `গণের’ উদ্ধার রাজনীতিতে আস্থা আর রাখতে পারলেন না সুলতান মোহাম্মদ মনসূর। এমন একটি সময় এ কাজটি করলেন তিনি যখন কথিত কাকাবাবু ও সর্বহারাদের মাংসভুকরা তওবা পড়ার পথে! কোথায় মেনন কোথায় ইনু, বিশ্বস্ততার সাথে বিশ্বাসঘাতকতার বিনিময়ে কি তোফা মিলেছিল এজিদের কাছ থেকে! এরকম লাখ নজির ছড়িয়ে আছে ইতিহাসের পাতায়। তবু শিক্ষালাভ হয়নি। তিনি শিক্ষা না নেওয়াদেরই একজন। তবে একটি কাজ তিনি করেছেন, মেসেজ পাঠিয়েছেন — পরীক্ষিত বিশ্বাসঘাতক চিরকালই বিশ্বাসঘাতক। বাঈজির ফোরামে শামিল হওয়া ছাড়া আর কোনো কাতার সুলতানের জন্য আর রইল না।



দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন গণফোরাম নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর সংসদ সচিবালয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে শপথ নেন তিনি। এ মূহুর্তে ডাকসু-তে যখন তারুণ্যের গণতন্ত্রকে দাফন করার সব আয়োজন চূড়ান্ত তখন আমরা ডাকসুর -র একজন ভবিষ্যৎহীন বুড়ো শকুনের গতি অবশেষে হওয়ার উপাদেয়তায় সেটাকে অভিনন্দন না জানিয়ে পারি কৈ?

  • লেখক   — রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

নতুন ভূত হারকিউলিস


জসিম উদ্দিন




হঠাৎ করে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলায় হারকিউলিস নামে একটি চরিত্রের উদ্ভব হয়েছে। অভিযুক্ত ধর্ষকদের গুলি করে হত্যা করে গলায় ঝুলিয়ে দিচ্ছে সাদা কাগজ। সেই কাগজে বিচার বহির্ভূত এই হত্যার দায় নিচ্ছে হারকিউলিস। হারকিউলিস একজন পৌরণিক রোমান ‘বীর ও দেবতা’। তিনি শারীরিক শক্তি ও দুঃসাহসিক অভিযানের জন্য বিখ্যাত।

বীর শব্দটি ইতিবাচক অর্থে ব্যবহার হয়। কোনো নৈতিক অবস্থানের পক্ষে জীবন পণ করে যারা যুদ্ধে বিজয়ী হন তাদের সাধারণত বীর বলা হয়। এ উপাধি মানুষের জন্য। কিন্তু এ রোমান বীর আবার দেবতা! দেবতাকে বিশেষ ক্ষমতার জন্য বীর উপাধি দেয়া প্রকৃতপক্ষে মানুষের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। দেবতা যে অর্থে আরোপ করা হয় সেটা মূলত মানুষের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ও মানুষের মদদদাতা এক মহাশক্তিকে বোঝায়। বাস্তবে কখনো তার দেখা মেলে না।

দুটো ধর্ষণ মামলায় সন্দেহভাজন তিনজন অভিযুক্ত বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। এর একটি ঘটনা পিরোজপুরের কথিত মাদরাসাছাত্রীকে ধর্ষণ। ওই মামলার দুই বন্ধুকে পৃথকভাবে ধরে হত্যা করা হয়েছে। তাদের দুইজনের গলায় চিরকুট সাঁটানো ছিল। সহযোগী একটি দৈনিক দুটো হত্যা নিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়েছে। অনুসন্ধানের এমন তথ্য পাওয়া গেছে, যাতে রহস্য ঘনীভূত হয়েছে। ধর্ষণের সাথে সম্পর্ক নেই এমন দু’টি প্রাণ কেড়ে নেয়া হয়েছে কি না সে ব্যাপারে সন্দেহ আরো গভীর হয়েছে।

মাদরাসাছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামি ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে সজল জমাদ্দারকে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড থেকে ২২ জানুয়ারি তুলে নেয়া হয়। তিনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন। দুই দিন পর তার লাশটি পাওয়া যায় ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার বেলতলা গ্রামে। ধরে নেয়ার স্থান থেকে এটি ২৪০ কিলোমিটার দূরে। লাশের গলায় ঝোলানো সাদা কাগজে নিজের একটি স্বীকারোক্তি, ‘আমি...রের ধরসক, ইহাই আমার পরিণতি।’ অন্যজন কাবিত ইসলাম ওরফে রাকিব মোল্লাকে সাভার থেকে ২৪ জানুয়ারি তুলে নেয়া হয়। এক সপ্তাহ পর তার লাশ পাওয়া যায় একই জেলা ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার আঙ্গারিয়া গ্রামে। সাভার থেকে ওই জায়গাটির দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার। গলায় ঝোলানো চিরকুটের শেষে হত্যাকারী হিসেবে লেখা ছিল ‘হারকিউলিস’।

এ ধরনের নাম ব্যবহারের উদ্দেশ্য অবৈধ কাজটিকে জনপ্রিয় করে তোলা। সেটা এক শ্রেণীর মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেও। এখানে দুটো বিষয় তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, এর মাধ্যমে বিদ্যমান বিচারব্যবস্থাকে অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়। দ্বিতীয়ত, আদৌ হত্যা করা কথিত ধর্ষকেরা এর জন্য দায়ী কি না, না ধর্ষণের নামে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে তাদের হত্যা করানো হয়েছে। এ ধরনের জনপ্রিয় চরিত্রগুলো কথিত ভালো কাজে ব্যবহার করার অশুভ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

বিচারবহির্ভূত হত্যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রধানত অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা সন্ত্রাসী ও খুনিদের বিরুদ্ধে এমন তাৎক্ষণিক অ্যাকশন দেখলে সাধারণ মানুষ খুশি হয়। এখন নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ করে অনেকে পার পেয়ে যাচ্ছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে হারকিউলিসের আবির্ভাব ঘটছে। তারাও সাধারণ মানুষের কাছে হিরো বনতে চাচ্ছেন। তবে এর একটা ক্ষেত্র তৈরি রয়েছে বাংলাদেশে। নারীদের ওপর পুরুষদের করা সন্ত্রাস নিয়ে জাতিসঙ্ঘ ২০১৩ সালে কয়েকটি দেশে একটি জরিপ চালায়। বাংলাদেশও সেই জরিপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বাংলাদেশে বয়স্ক নারী ও বালিকাদের শতকরা যথাক্রমে ৯৫ ও ৮৮ শতাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষণের জন্য আইনি কোনো প্রতিকার পায়নি। সম্প্রতি একটি পত্রিকার পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, আরো করুণ অবস্থা। ২০০২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে করা পাঁচ হাজার মামলার মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ মামলার সুরাহা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ কেন বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা হারাচ্ছে পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট জানা যাচ্ছে।

প্রচলিত বিচারব্যবস্থায় একটি কথা রয়েছে- একজন মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত নির্দোষ যতক্ষণ না প্রমাণিত হচ্ছে সে অপরাধটি করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি বিচারবহির্ভূত হত্যা মানে, একজন নির্দোষ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। এ ধরনের একটি হত্যাকে পুরো মানবতাকে হত্যার সাথেও তুলনা করা হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা আসলে একটি চোরাগলি তৈরি করছে। পৌরাণিক চরিত্র হারকিউলিসের কর্ম বিবেচনা করে দেখা যায় অনেক অন্যায় সীমালঙ্ঘন তিনি করেছেন। এই জনপ্রিয় চরিত্র নিজেই তার স্ত্রী সন্তানকে হত্যা করেন। তবে বলা হচ্ছে সুস্থ জ্ঞানে তিনি এই কাজটি করেননি। তিনি হত্যা করেছিলেন নিজের শিক্ষককেও। আর যেসব দুঃসাহসিক কাজ তিনি করেছেন এগুলো সব সত্য ন্যায়ের পক্ষে ছিল না। তার পরেও এই চরিত্রটি শৌর্য-বীর্য্যরে প্রতীক হয়ে উঠেছিল কাব্য, গল্প, উপন্যাসে। পরবর্তীতে নাটক সিনেমায়। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের কোনো চরিত্র পৃথিবীর ইতিহাসে এসেছিল কিনা, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

এ ধরনের আরেকটি চরিত্র রবিনহুড। গরিবের বন্ধু হিসেবে পরিচিত হুডের প্রথম জীবনে জমিদারি ছিল। তৎকালীন সরকারি কর্তৃপক্ষ তাকে জমি থেকে বঞ্চিত করেন। এরপর তিনি ডাকাতে পরিণত হন। ধনীদের সম্পদ লুট করে তিনি দরিদ্রদের বিলিয়ে দিতেন। এ ধরনের আরেকটি চরিত্র তৈরি করেন বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক রোমেনা আফাজ। ছোটবেলায় এক নৌদুর্ঘটনায় চৌধুরী বাড়ির ছেলে মনির হারিয়ে যায়। পরে এক দস্যু সর্দার তাকে দস্যু বনহুররূপে গড়ে তোলেন। তিনি এক দস্যুর হাতে গড়ে উঠলেও সন্ত্রাস চোরাকারবারিদের কাছে যমদূতের মতো ছিলেন। একসময় এ সিরিজটি কিশোর ও তরুণদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল।

এ ধরনের চরিত্র কিশোর ও নব্য যুবকদের খুব আকর্ষণ করে। কাল্পনিক চরিত্রের অনুরূপ তারা নিজেদের গড়ে তুলতে চায়। কিন্তু এর বাস্তব কোনো ভিত্তি না থাকায় এই কাহিনীগুলো আদতে কোনো কাজে আসে না। গল্প উপন্যাসের রসালো উপস্থাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কোনোটি জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিয়াল হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে। হচ্ছে এগুলোর ওপর ভিত্তি করে ছায়াছবি। প্রকৃতপক্ষে এই চরিত্রগুলোর দিকে যদি নির্মোহ দৃষ্টি ফেলা যায় তাহলে সারবস্তু কিছু পাওয়া যায় না। এগুলোর মধ্যে অসংখ্য বৈপরিত্য। তাই এই চরিত্রগুলো আদর্শ হতে পারে না। অনুসরণীয় হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

হারকিউলিস রবিনহুড কিংবা দস্যু বনহুর আধুনিক মানুষের বিনোদনের উপাদান। স্রেফ মানুষকে আনন্দ দেয়ার জন্য মাত্রাতিরিক্ত হিরোইজম এদের ওপর চাপানো হয়েছে। রবিনহুড ও হারকিউলিস নামে টিভি সিরিয়ালে এমন অস্বাভাবিক ও অসম্ভব বিষয় চিত্রিত করে দেখানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিনোদনের জন্য ‘মিথ্যা ভালো’ তৈরি করা হচ্ছে। কিছু চরিত্রকে বানানো হয়েছে পণ্য। সত্য মিথ্যার মিশ্রণ করে আজগুবি অদ্ভুত ককটেল বানানো হয়েছে। এর একটি প্রভাব পড়ছে জনসমাজে। সাধারণ মানুষের মনে এই চরিত্রগুলোর প্রতি ভালো লাগা তৈরি হয়ে গেছে। আর অন্যায়কারীরা মানুষের এমন অনুভূতিকে আঘাত করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে।

পিরোজপুরে মাদরাসাছাত্রীকে ধর্ষণের মামলা করা হয় ১৭ জানুয়ারি। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১২ জানুয়ারি ওই ছাত্রীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। ইতোমধ্যে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। পিরোজপুর সদর হাসপাতালে দুই নারী চিকিৎসক তা করেছেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক সময়ে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’ এ ব্যাপারে সহযোগী দৈনিক পত্রিকাটিকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালের দুই নারী চিকিৎসকের একজন জান্নাতুল মাওয়া বলেন, ‘ধর্ষণ হলে অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক কোনো না কোনো ইনজুরি পাওয়া যাওয়ার কথা। সেগুলোই আমরা দেখি। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আমরা যা পেয়েছি, তা-ই আদালতের কাছে দিয়েছি।’

ছাত্রীর বাবা পত্রিকাটিকে বলেন, ধর্ষণের ঘটনার কয়েক দিন পর মামলা হয়েছে। এতদিন পর ধর্ষণের আলামত পাওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি। ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটার পর মামলাটি করতে পাঁচ দিন দেরি করা হলো কেন, এ ব্যাপারে মেয়েটির বাবাকে প্রশ্ন রাখা হয়নি। ধর্ষণের অভিযোগে হত্যার শিকার হওয়া এ দুইজনের পরিচয় এবং তাদের ধরার যে ফিল্মি স্টাইল তাতে ঘটনাটি ব্যাপক অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ইশতিয়াক একটি মোবাইল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। বিয়ে করেছেন এক বছরও হয়নি। আগামী এপ্রিলে বউ তুলে আনার কথা। আর কাবিত ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র। কাবিতের নানাবাড়ি আর ওই ছাত্রীর বাড়ি একই সীমানায়। ইশতিয়াকের বাড়ি মেয়েটির পাশের বাড়িতে। হত্যার শিকার হওয়া দুইজনের বাবা জানিয়েছেন, কাবিতের মামার সাথে ওই ছাত্রীর বাবার জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছিল।

পত্রিকাটি দুইজনের হত্যার ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান চালায়। এতে দেখা যায়, দুইজনকে ধরার জন্য মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়েছে। যারা তাদের ধরতে চাইছিলেন, তারা সরকারি স্থাপনার সুবিধা নিয়েছেন। মোবাইল নেটওয়ার্ক ট্রেস করার প্রযুক্তি তারা ব্যবহার করেছেন। আটকের আগে ইশতিয়াক ও কাবিতের মোবাইলে এসএমএস এসেছে। এই খুদেবার্তা অনবরত পাঠানোর মাধ্যমে মোবাইল মালিকের অবস্থান শনাক্ত করা যায়। পত্রিকাটির পক্ষ থেকে পুলিশ সদর দফতরের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তার সাথে কথা হয়। এভাবে কারও অবস্থান শনাক্ত করার সামর্থ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া আর কারো আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকারের নির্দিষ্ট সংস্থা থেকে এটা করা হয়। সেখান থেকে সাহায্য নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এটা ব্যবহার করে। তাহলে স্পষ্ট বোঝা গেল এমন প্রযুক্তি ব্যবহারের সামর্থ্য সাধারণ মানুষের নেই।

কাবিতের বন্ধু থেকে জানা যায়, ২৫ জানুয়ারি তিনি ও কাবিত সাভারে একটি দোকানে চা পান করছিলেন। এ সময় দুটো মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ায়। সামনের গাড়ি থেকে চারজন নেমে তাদের দুইজনকে আটক করেন। এরপর তাদের পেছনের গাড়ির পাশে নিয়ে গিয়ে একজন জানতে চান ‘এ, না ও?’। গাড়ির ভেতর থেকে একজন কাবিতকে দেখিয়ে দেন। তখন কাবিতকে নিয়ে গাড়ি দু’টি চলে যায়।

গাড়ির সন্ধানে গিয়ে পত্রিকাটির প্রতিবেদক জানতে পারেন ইশতিয়াককে যে গাড়িতে তুলে নেয়া হয় সে গাড়ি শনাক্ত করা গেছে। সাদা রঙের ওই গাড়ি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একটি বাহিনীর সদর দফতরের নামে নিবন্ধিত। উভয় ঘটনায় যারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বলে পরিচয় দিয়েছেন। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনী পরে এ দুইজনকে তুলে নেয়ার কথা স্বীকার করেনি। বিচারবহির্ভূত হত্যা সংঘটন ও মানুষ হাওয়া হয়ে যাওয়ার প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনায় একই ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে বিচারব্যবস্থার আরেকটি প্রহসন হচ্ছে সালিশি ব্যবস্থা। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের সালিশিতে নারীদের ওপর অবর্ণনীয় নিপীড়ন ও লাঞ্ছনা নেমে আসে। বিয়েবহির্ভূত যৌনতার জন্য এককভাবে তাদের দায়ী করা হয়। এ ক্ষেত্রে অসাধু সমাজপতিরা ধর্মের দোহাই দিয়ে থাকে। বাস্তবে কোনো ধর্ম এমন একপাক্ষিক একচোখা বিচারের অনুমতি দিয়েছে বলে জানা যায় না। ইসলাম মূলত এ ধরনের অপরাধীদের জন্য সাক্ষী উপস্থাপনের ওপর জোর দিয়েছে। এতে করে ঘটনাটি নিশ্চিতভাবে ঘটেছে সেটা প্রমাণিত হতে হবে। গ্রাম্যসালিশিতে নারীদের ঘায়েল করার জন্যও এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়। হারকিউলিস চরিত্র আবিভূত হওয়ার জন্য বিচারব্যবস্থার এমন দুর্বলতাও দায়ী।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিশেষত রাজনৈতিক নেতাকর্মী হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এমন কিছু অভিযোগও এসেছে যেখানে সরকারি দলের লোকেরাই হত্যার শিকার হয়েছেন। এই ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ নিজ দলের লোকেরা এমন হত্যাকাণ্ড সম্ভব করে তুলছে কি না, সেই বিষয়ে তদন্ত হয়নি। বিচারবহির্ভূত হত্যা ব্যাপকভাবে দেখা যায় মাদকবিরোধী অভিযানে। শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে দ্রুত বিচার পাওয়ার জন্য হারকিউলিস সেজে যাচ্ছেন বিচারবহির্ভূত হত্যার কর্তারা। এখন সন্দেহ হচ্ছে বিচারবহির্ভূত হত্যা প্রতিপক্ষ ঘায়েল করার অস্ত্র হিসেবে না, ব্যবহার হতে শুরু করেছে।

  • কার্টসি — নয়াদিগন্ত/ মার্চ ৬, ২০১৯। লিঙ্ক — http://bit.ly/2TARfjJ



Wednesday, March 6, 2019

এরশাদের ছাত্রসংগঠনের অংশগ্রহণ ডাকসু’র ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করছে



মাকসুদুর রহমান 


১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির দীর্ঘদিনের বন্ধ্যাত্ব দূর করবে।  এটা নিঃসন্দেহে ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত সকল সংগঠনের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক । এমনকি সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছেও ‘ডাকসু নির্বাচন’ ব্যাপক উদ্দীপনার সৃষ্টি  করেছে। কিন্তু এত উদ্দীপনা ও উৎসাহের মাঝে  বেশকিছু বিষয় ডাকসু নির্বাচনের   ডামাডোলের সুযোগে উদ্দেশ্যমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে, যা অত্যন্ত হতাশার। প্রথমত, বয়সের বেড়াজালে বন্দী করে এটাকে নিয়ন্ত্রিত ডাকসু করার পাঁয়তারা চলছে, সেটাতো আমরা সবাই জানি। ডাকসু নির্বাচনের পুরো উদ্দেশ্যই এতে  প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ‘ভোটকেন্দ্র হলে না একাডেমিক ভবনে’ হবে তা নিয়েও ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়েছে । তবে যথারীতি ডাকসু নির্বাচন আয়োজকদের (ভিসি’র নির্দেশিত পথেই নির্বাচন কমিশন চলছে)  ওপরও হুদা কমিশনের ভুত ভর করেছে তা পরিস্কার হয় যখন দেখা যায় বেশিরভাগ ছাত্রসংগঠনের যৌক্তিক দাবি থোড়াই কেয়ার  না করে শুধুমাত্র ছাত্রলীগের নির্দেশিত পথেই ডাকসু নির্বাচনের সকল কার্যক্রম পরিচালনা হতে দেখে। 


তবে ডাকসু নির্বাচনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হচ্ছে , এই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে  পতিত স্বৈরাচার এরশাদের    ছাত্রসংগঠন ঢাবি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষিত ‘জাতীয় ছাত্রসমাজকে’ নির্বাচনের সুযোগ করে দিয়ে ‘৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদ ছাত্রদের রক্তের সাথে বেঈমানী করেছে। তারা বেঈমানী করেছে শহীদ ডাঃ মিলন, দিপালি সাহা,  রউফুন বসুনিয়া, বাবলু, জয়নাল, মাইনুদ্দিনের আত্মত্যাগের সাথে। অথচ,  ১৯৯০ সাথে স্বৈরচারের সহযোগী সংগঠন হিসেবে ‘জাতীয় ছাত্রসমাজ’কে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদ কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।  যদিও সেদিন আরো নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ধর্মভিত্তিক সকল ছাত্রসংগঠনকে । আর এজন্যই জামায়াতের আদর্শিক ছাত্রসংগঠন ইসলামি ছাত্রশিবির কখনোই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্য ছাত্ররাজনীতি করার সুযোগ পায়নি। ক্যাম্পাসের বৃহত্তম ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের নানা ইস্যুতে মতভিন্নতা থাকলেও পরিবেশ পরিষদের এই সিদ্ধান্ত মেনে চলায় কখনোই তাদের মাঝে অনীহা পরিলক্ষিত হয়নি। বিশেষ করে, স্বৈরাচার এরশাদের ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে প্রকাশ্য রাজনীতি করবে এটা বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় সকল সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে রীতিমতো দুঃস্বপ্নের শামিল। 


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববেহায়া স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী মিছিল। 

অথচ বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে ভয়ঙ্কর সেই দুঃস্বপ্নটিই এদেশের মানুষকে দেখতে হচ্ছে আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠেয় ‘ডাকসু’ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। অর্থ্যাৎ, ২৮ বছর বিরতির পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক , প্রকারান্তরে বাংলাদেশের রাজনীতির পরিবর্তনের ‘বাতিঘর’ হিসেবে বিবেচিত ‘ডাকসু’ নির্বাচনে আজ আমাদের উত্তরসুরীদের রক্ত ঝরিয়েছে যে ছাত্রসংগঠন সেই নিষিদ্ধ ও প্রত্যাখাত জাতীয়  ছাত্র সমাজ প্রকাশ্য জানান দিয়ে অংশ নিচ্ছে।   বলতে দ্বিধা নেই   তা সম্ভব হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্লজ্জ নির্লিপ্ততায়, পরিস্কার করে বললে সহযোগিতায়। যদিও  বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর একেএম গোলাম রব্বানী পুরো বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টে ঠেলে দিয়েছেন ।   

শেষ করব মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েনের বিখ্যাত উক্তি দিয়ে,  ‘’জনগণকে বোকা বানানো সহজ। বোঝানো কঠিন যে তাদের বোকা বানানো হয়েছে।” স্বৈরাচার এরশাদের দোসর জাতীয় ছাত্র সমাজকে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন  জনগণকে বোকা বানানোর কাজটাই করছেন।

  • লেখক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক।  


বেগম জিয়ার সুচিকিৎসা — উদাসীনতার আড়ালে রাষ্ট্রের বর্বরতা

অরুন রহমান 


বেগম জিয়া একজন মা, দেশের সিনিয়র সিটিজেন। চল্লিশ বছরধরে বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান চরিত্র, উন্নয়নের কর্মসূচী প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রোল মডেল, বিশ্বে গণতন্ত্রের অন্যতম আইকন। 

জীবনের এই পর্যায়ে এই বয়সের একজন ব্যক্তির, পরিবার-পরিজনের সার্বক্ষণিক সেবা নিয়ে নিয়মমত প্রতিদিন খাবার, ঔষধ গ্রহণ এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিত্যদিন জীবন যাপন করতে হয়। একবেলা খাবার বা ঔষধ গ্রহণে দেরি হলে মুহুর্তেই ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের শারীরিক বিপর্যয়। হঠাৎ পড়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক, ব্রেইনস্ট্রোক আর কিডনি ফেওলিয়ার ঘটে যেতে পারে যেকোন মুহুর্তে। 

বেগম জিয়া গত ৩০ বছর ধরে গেঁটে বাতে আক্রান্ত। তাছাড়া ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিসে, ১০ বছর যাবত উচ্চ রক্তচাপ ও আয়রন স্বল্পতায় ভুগছেন।

১৯৯৭ সালে তার বাম হাঁটু এবং ২০০২ সালে ডান হাঁটু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। যে কারণে তার গিটে ব্যথা হয়, যা প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক।

সুচিকিৎসার অভাবে এইরোগ গুলো খারাপ অবস্থায় উপনীত হয়েছে এবং অন্য নতুন রোগ আক্রমন করেছে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন, চোখে সমস্যা তৈরি হয়েছে। হাত-পা অকার্যকর হয়ে পড়ছে। হুইল চেয়ারই এখন একমাত্র ভরসা । ওজন কমে শরীর ভেঙ্গে পড়েছে।  

বেগম জিয়া যেদিন কারাবন্দি হন সেইদিন পর্যন্ত তিনি নিজে হেঁটে আদালতে নিয়মিত গিয়েছিলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছিলেন। 

এই পরিস্থিতিতে জনমনে দুটি প্রশ্ন —

প্রথমত, বেগম জিয়ার নিম্ন আদালতের রায় কিংবা চলমান সব মামলায়ই তিনি জামিন যোগ্য। বাংলাদেশের যেকোন নাগরিক এই ধরনের পরিস্থিতিতে জামিন পেয়ে থাকেন। একমাত্র বেগম জিয়াই জামিন পাচ্ছেন না! কেন ব্যতিক্রম শুধু বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে?  

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের অন্য রাজনীতিবিদরা জেলে থাকা অবস্থায়ই দেশের শীর্ষ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন। এমনকি বিদেশে গিয়েও চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। কেন ব্যতিক্রম শুধু বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে?  

সাজানো মিথ্যা মামলায় এক বছর পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে তাঁকে। খালেদা জিয়ার বয়স ৭৩ বছর। প্রচন্ড ঝুঁকিপূর্ণ অসুস্থ শরীর। একা চলতে পারেন না। আদালতে বা হাসপাতালে আনতে গেলে হুইল চেয়ারই ভরসা। তারপরও টেনে হিঁচড়ে জবরদস্তি করে আনা হচ্ছে নির্দেশিত ক্যাংগারু কোর্টে। 

সর্বশেষ, রোববার, মার্চ ৩, ২০১৯, বেগম জিয়া আদালতে দলের মহাসচিব মির্জা আলমগীরকে বলেছেন, তাঁর শরীর ভালো যাচ্ছে না। থেরাপি দেয়া হচ্ছে না। 

বেগম জিয়ার প্রতি রাষ্ট্রের এই বর্বরতার পরিণামের দায়িত্ব এই সরকারকেই গ্রহণ করতে হবে।  


  • লেখক — ইন্টারনেট এক্টিভিস্ট। 

Tuesday, March 5, 2019

সবার জন্য চাই সমান চিকিৎসাসেবা

মাকসুদুর রহমান 


আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গুরুতর অসুস্থ ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে বিমানবন্দরে নেওয়া হচ্ছে। সোমবার বিকেলে তাঁকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ/প্রথম আলো ।

১। কাদেরের জন্য সিঙ্গাপুরের চিকিৎসক দল ঢাকায় (প্রথম আলো) ২। কাদেরকে দেখতে দেবী শেঠি আসছেন: হানিফ (প্রথম আলো)৩। কাদেরকে সিঙ্গাপুর নেয়া হচ্ছে (প্রথম আলো)  


গুরুতর অসুস্থ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে ঢাকায় এসেছেন ভারতের শীর্ষ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি। গতকাল বিকেলেই তার শারীরীক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে সিঙ্গাপুর থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উড়িয়ে আনা হয়। যেকোনো অসুস্থ মানুষের শারীরীক অসুস্থতা দূর করতে সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই তার আপনজন-স্বজন-বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীরা চাইবে্‌ এটাই স্বাভাবিক। 



অথচ এই সত্যিটাই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ তার দলের নেতৃবৃন্দরা এতদিনযাবৎ কিছুতেই বুঝে উঠতে পারেননি বা না বোঝার ভাণ করেছেন অথবা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বুঝতে চাননি। যখন দেশের একজন সিনিয়র সিটিজেন কারাবন্দী অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভোটে নির্বাচিত সাবেক তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার জন্য তিনি ও তাঁর দলের নেতৃবৃন্দরা লাগাতারভাবে তাঁর পছন্দের চিকিৎসক ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য দাবী জানিয়েছ আসছেন। তখন আওয়ামী লীগের এই নেতৃবৃন্দরা সারাক্ষণ একই টেপরেকর্ডার বাজিয়েছেন এমনকি এখনো বাজাচ্ছেন (বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে) যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়েই সর্বোচ্চ চিকিৎসা হয়, কিছুতেই অন্য হাসপাতাল বা পছন্দের চিকিৎসকের নিকট চিকিৎসা নেয়া যাবে না, হেনোতেনো , আরো কতো কি!

চিকিৎসা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। তাই ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ি চিকিৎসাসেবা নেয়া দেশের প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে। এই সহজ সত্যিটা দেশের সর্বোচ্চ  দায়িত্বপ্রাপ্ত মানুষদের বুঝতে হবে ।


  • লেখক — রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক। 

Monday, March 4, 2019

Gowher Rizvi criticised for doubting disappearance

Muktadir Rashid 


Families of the victims of enforced disappearance and rights activists criticised prime minister’s international affairs adviser Gowher Rizvi for doubting reported cases of disappearance in Bangladesh.

In reaction to Gowher Rizvi’s remark, Sanjida Islam Tulee, one of the spokespersons of Mayer Daak campaigning for return of their relatives gone missing before 2014 general elections, told New Age on Saturday that they approached all the government corners to find out their relatives
.
She said the advisor gave a wrong message by doubting over the incidents of enforce disappearances.

In Al Jazeera’s headtohead programme aired on Friday, Gowher Rizvi said that the Awami League government did not need to make people subjected to disappearances as it had the authority to arrest people.

Replying to a question on enforced disappearance, Gowher Rizvi did accept that it was ‘deplorable’ if it was taking place and that the government ‘will investigate’.

‘Using “if”, the adviser tried to bypass the truth,’ said rights activist Nur Khan Liton, adding, ‘that is why we have been calling the government to set up an independent and credible commission to investigate each of the cases in which the families have pointed fingers toward the law enforcers.’

European Parliament in its resolution on November 15, 2018 called on the Bangladesh government to conduct independent investigations into reports of extrajudicial killings and enforced disappearances.

Rights organisation Ain o Salish Kendra executive director Sheepa Hafiza also contradicted Gowher Rizvi and said the enforced disappearance continued to go unabated with the government continuing to deny the allegations over the years.

According to rights organisation Odhikar, at least 507 people were subjected to enforced disappearance between January 2009 and December 2018. Of them, 62 were found dead, 286 returned alive or were showed arrested or produced before courts. But, whereabouts of the 159 others are still unknown.

Odhikar secretary Adilur Rahman Khan said it was Gowher Rizvi’s political stance to hide the reality.

‘The fact is none of the families have got justice over the disappearance of their relative over the years,’ he said.

On August 8, 2018, dismissed but decorated army officer Hasinur Rahman was reportedly picked up by a group of people wearing ‘DB’ jackets on a microbus at Mirpur Defence Officers Housing Society on his way home.

His wife Shamima Akhter approached different authorities and filed a general diary with Pallabi police station. Both Rapid Action Battalion and police denied to have arrested Hasinur. ‘We do not know where else to go,’ said Shamima.

North South University faculty Mubashar Hasan, who went missing on November 7, 2018, returned home after 44 days in December and left the country.

National Human Rights Commission chairman Kazi Reazul Hoque said that bin many cases, victims, including Mubashar, returned home after the commission wrote to the government, but the whereabouts of some others, including former ambassador M Maroof Zaman, were still unknown.

He said that the commission would feel relieved if the perpetrators were identified.

The commission sent a letter to the home ministry on February 26, 2017 along with a list of 156 complaints against cops pending with the ministry for long.

On the allegations, 27 were of enforced disappearance, 24 of torture, 20 of police harassment, 12 of extrajudicial killings or ‘crossfire’, 4 of negligence in investigations, 4 of land grabbing, 4 of extortion and the rest were of bribery and other unlawful activities.

No response has been found so far, said one of the members of the commission.

Rehana Banu Munni, sister of Sutrapur unit Jatiyatabadi Chhatra Dal president Selim Reza Pintu who was picked up on December 11, 2013, approached the commission in 2015.

As of November 27, 2018, the commission sent 18 letters to the home ministry for investigation but no result came up.

Geneva-based rights group International Commission of Jurists in its reports in 2017 said following the Awami League government’s assuming power in 2009 there had been a surge in enforced disappearances, with reports of opposition political activists and human rights defenders going ‘missing’.

As of July 2017, the UN Working Group on Enforced and Involuntary Disappearances received at least 40 allegations from Bangladesh.

On October 18, 2018, UN General Assembly stood firm in denouncing enforced disappearances while Bangladesh ambassador Masud Bin Momen announced his country’s ‘firmed commitment to safeguarding the human rights’.

Bangladesh is a party to the Rome Statute of the International Criminal Court, which defines the widespread or systematic practice of enforced disappearance as a crime against humanity.

The Human Rights Watch reported in 2017 that Bangladesh law minister Anisul Huq in March 2017 acknowledged the UN Human Rights Committee that disappearances had taken place, but claimed that the number had been brought down to ‘a very low level’.

In its concluding observations following the initial review of Bangladesh’s implementation of the International Covenant on Civil and Political Rights in 2017, the UN Human Rights Committee expressed concern that ‘domestic law does not effectively criminalise enforced disappearances’ and recommended that Bangladesh ‘effectively criminalise enforced disappearance’.

  • Source — The New Age/ March 4, 2019
  • Link —   https://bit.ly/2TtLB2X


আল জাজিরার হেড টু হেড নিয়ে কিছু কথা


তাসনিম খলিল 



আল জাজিরার হেড টু হেডে আমার একটা চমৎকার অভিজ্ঞতা হলো। মেহেদী হাসান এই শো’টির পাবলিক ফেইস হলেও এর পিছনে যে টীমটি কাজ করে তাদের কর্মনিষ্ঠা ঈর্ষণীয়। বাংলাদেশ বিষয়ে তারা একটি এপিসোড করবে জানিয়ে তারা যখন প্রথম আমার সাথে যোগাযোগ করে তখন আমি আসলে বেশ স্কেপ্টিক্যাল ছিলাম কারণ শো’টির প্রযোজকদের বাংলাদেশের রাজনীতি বিষয়ক ধারণা ছিলো একেবারেই ভাসাভাসা। অনুষ্ঠানের রেকর্ডিংয়ে যখন দেখলাম মাত্র কয়েক মাসের প্রস্তুতি দিয়ে তারা মেহেদী হাসানের হাতে এমন একটা ওয়েল-রিসার্চড স্ক্রীপ্ট তুলে দিয়েছে তখন অবাক আর মুগ্ধ হয়েছি অবশ্যই।

মূল ইভেন্টটি কিন্তু ছিলো তিন ঘন্টার মতো, সেখান থেকে এডিট করে ৪৫ মিনিটের মতো নিয়ে এই এপিসোডটি ব্রডকাস্ট করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের রেকর্ডিংয়ের সময় অক্সফোর্ড ইউনিয়নে যারা ছিলেন তারা পুরোটাই দেখেছেন, শুনেছেন।

আল জাজিরার শো’টি ইন্টারন্যাশনাল অডিয়েন্সের জন্য, তারা সেটা মাথায় রেখে এডিট করবে তাই স্বাভাবিক। তবে আমার মনে হয়েছে তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গাই কেটে বাদ দিয়েছে। গওহর রিজভীর সাথে আমার কিছু আলাপ তারা ব্রডকাস্ট করেনি। সেটা তাদের বিবেচনা। তবে আমি এখানে এই রেকর্ডটি রাখতে চাই — সেদিন যারা অক্সফোর্ড ইউনিয়নে ছিলেন তারা এর স্বাক্ষী।

১. বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তাঁর স্মৃতিকথায় গওহর রিজভীর কথা লিখেছেন যে রিজভী জানতেন কিভাবে শেখ হাসিনা ডিজিএফআই লেলিয়ে দিয়ে বিচারপতি সিনহাকে দেশছাড়া করেছিলেন। আবার বিচারপতি সিনহা আমাকে ইন্টারভিউ দিয়ে বলেছেন যে বাংলাদেশে প্রায় সকল এনফোর্সড ডিজএপিয়ারয়েন্সের জন্য ডিজিএফআই দায়ী। আমি সরাসরি গওহর রিজভীকে এই রেফারেন্স দিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম, তিনি কোনও সন্তোষ জনক উত্তর (স্বীকার বা অস্বীকার) দেননি — তবে বলেছেন যে বিচারপতি সিনহার স্মৃতিকথা এবং সিনহার সাথে আমার ইন্টারভিউ দুটিই তিনি পড়েছেন।

২. বিচারপতি সিনহা আমাকে ইন্টারভিউ দিয়ে দাবী করেছিলেন যে শেখ হাসিনা হেফাজতে ইসলামকে টাকা দিয়ে ঠান্ডা রাখেন। হেফাজতের আমীর আহমদ শফী নিজেও বলেছেন যে আওয়ামী লীগের লোকজন তাদের মোটা অংকের সাহায্য দেয়। আমি এই দুটি রেফারেন্স দিয়ে কমেন্ট করেছিলাম। আমার কমেন্টের একটা অংশ (“কওমী জননী”) রেখে বাকিটা কেটে দেওয়া হয়েছে। আমার এই কমেন্টের সূত্র ধরে মেহেদী হাসান গওহর রিজভীকে প্রশ্ন করেন যে “শেখ হাসিনা কি হেফাজতে ইসলামকে টাকা দেন”? রিজভী এই প্রশ্নটির উত্তরও নিজের প্রশ্ন দিয়ে দেন — মেহেদী হাসানকে বলেন “আপনাকে কেউ এরকম প্রশ্ন করলে কি করতেন?” মেহেদী তখন উত্তর দেন “ওহ! এটাতো খুবই সোজা। আমি বলবো: না আমি দেই না…” বলাই বাহুল্য, এই পর্বেও দর্শকরা উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করেন। এই অংশটিও ব্রডকাস্টে বাদ গেছে। 

আল জাজিরার হেড টু হেডে এই এপিসোডের টাইটেল ছিল: “বাংলাদেশ কি একটি এক-দলীয় রাষ্ট্র হয়ে যাচ্ছে?” এর উত্তরটাওতো আমরা সবাই জানি। বাংলাদেশে এখন দল (আওয়ামী লীগ) কোথায় শেষ হয় আর রাষ্ট্র (বাংলাদেশ) কোথায় শুরু হয় তারতো আসলে কোনও ঠিক নেই। এর নমুনা বা প্রমাণতো আমরা দেখলাম চাক্ষুষ। হেড টু হেডে শেখ হাসিনার উপদেষ্টা গওহর রিজভী কোথায় শেষ হয়েছেন আর “বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত” সৈয়দা মুনা তাসনিম কোথায় শুরু হয়েছেন তারতো কোনও লাইন ছিলোনা — দুইজনই লকলকিয়ে শেখ হাসিনার বন্দনা করেছেন।

সৈয়দা মুনা যে আমাকে ব্যাক্তিগতভাবে আক্রমণ করেছেন তাতে আমি একটুও অবাক হইনি। আমি কেন, কবে দেশ ছেড়েছিলাম সেটা তিনি খুব ভালো করেই জানেন, তারপরও নির্লজ্জভাবে মিথ্যাচার করেছেন অন ক্যামেরা। আমি তার কাছ থেকে ঠিক এই আচরণটিই এক্সপেক্ট করছিলাম। সেদিন যারা অক্সফোর্ড ইউনিয়নে ছিলেন তারা স্বাক্ষী যে এরপরেও আমি তাঁকে পূর্ণ সম্মান দেখিয়ে কথা বলেছি, এক্সেলেন্সি বলেই সম্বোধন করেছি পুরোটা সময়। সৈয়দা মুনা রাষ্ট্রদূত হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের প্রতিনিধি, তাঁর সাথে অক্সফোর্ড ইউনিয়নের মতো জায়গায় নোংরা বাদানুবাদে লিপ্ত হওয়াটা আমার সমীচীন মনে হয়নি।

আওয়ামী সাংবাদিক শ্রদ্ধেয় আব্দুল গাফফার চৌধুরী সারাজীবন লন্ডনে বসে যদি ঢাকায় কলাম লিখতে পারেন বা আওয়ামী মুখপাত্র সজীব ওয়াজেদ জয় যদি ডিসি/ভার্জিনিয়াতে বসে বাংলাদেশ নিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দিতে পারেন, টুইট করতে পারেন বা দশকের পর দশক ব্রিটেনে থেকে ব্রিটিশ নাগরিক শেখ রেহানা যদি আওয়ামী লীগের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হতে পারেন তাইলে আমি কেন সুইডেন থেকে বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলতে পারবোনা?

বাংলাদেশের মানুষেরতো দুর্ভাগ্য আর লজ্জা যে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে খোলামেলা আলাপ করতে যেতে হয় কাতারী আমীরের স্পন্সরড চ্যানেলে। এই যে এখন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ব্রিটিশ সাংবাদিক মেহেদী হাসানের প্রশংসা করছে আর বাংলাদেশের সাংবাদিকদের গালাগালি করছে এই লজ্জাটা কার আসলে?

শেষ করি ড. গওহর রিজভীকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে। অক্সফোর্ড ইউনিয়নে তিনি যেভাবে প্রায় তিন ঘন্টা হাসির পাত্র হয়েছেন তাতে আমার আসলে খারাপই লেগেছে। এমনটি হবে তাতো জানাই ছিলো। তারপরও তিনি যে অক্সফোর্ডে গিয়ে মেহেদী হাসানের মুখোমুখি হয়েছেন সেটা তাঁর সাহসিকতারই পরিচয়। শেখ হাসিনাতো কখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে লাইভ ইন্টারভিউ দেবেননা — সেই সাহসতো শেখ হাসিনার নাই।


  • লেখক ব্লগার ও  সম্পাদক-প্রকাশক,  ইন্ডিপেন্ডেন্ট ওয়ার্ল্ড রিপোর্টার। 
  • লিঙ্ক —  https://bit.ly/2UdbLUJ