— ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া |
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে তথাকথিত দুই কোটি টাকার মিথ্যা দুর্নীতি মামলার সাজানো রায়ে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক হিংসার কারণে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২৫ মাসের বেশি সময় পর দুইটি শর্তে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। সেগুলো হলো, এই সময়ে তাঁর ঢাকায় নিজের বাসায় থাকতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। কিন্তু, বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই বিএনপি ও সমমনা জোট তার মুক্তির দাবিতে রাজপথে নানা কর্মসূচি পালনসহ আদালতে বিচারকি প্রক্রিয়ায় জামিনের চেষ্টা করেছে। জামিন যোগ্য মামলায় বারবার তার জামিনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে আদালতে। এমনকি সুচিকিৎসার জন্য মানবিক কারণেও তাকে মুক্তি দেওয়া হয় নাই।
বেগম খালেদা জিয়াকে, জিয়া পরিবার ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিকে ধ্বংস এবং রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য সুপরিকল্পিত ভাবে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে ২০০৭ সালের এক এগারোর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে-বিদেশে জিয়া পরিবার ও বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানকে টার্গেট করে এগোতে থাকেন। দুর্নীতি ও বিদেশে অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন কল্পকাহিনী তৈরির মাধ্যমে বেগম জিয়া ও তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন এবং চরিত্র হনন করেন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তার ধারাবাহিকতায় বর্তমান ভোটারবিহীন মিডনাইট অবৈধ সরকার ও তার দোসরা জিয়া পরিবার ও বিএনপিকে জনগনের কাছে হেয়প্রতিপন্ন ও ধ্বংস করার জন্য বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রীতিমত যুদ্ধ ঘোষনা করেন। বর্তমান মিডনাইট অবৈধ সরকার বেগম জিয়া ও তারেক রহমান’র বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির নামে এক পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের চরিত্র হননের চেষ্টা করছে। এসবের সাথে সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তি থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন যন্ত্র, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মি এবং বর্তমান দালাল মিডিয়ার কিছু অসৎ লোকজন জড়িত। ২০০৭ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত প্রায় ১১ বছর অনেক চেষ্টা তদবির করেও বর্তমান অবৈধ সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগও প্রমান করতে পারেনি। তারপরও অবৈধ সরকার, আওয়ামী লীগ ও দালাল মিডিয়ার অসৎ লোকজনের বেগম জিয়া ও তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার থামেনি।
অক্টোবর ২০১৭ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশ সফর করে এসে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। বিদেশ সফরের বিষয়বস্তু নিয়ে এরকম সংবাদ সম্মেলন একটি চিরাচরিত বিষয়। কিন্তু তখনকার সংবাদ সম্মেলনে লক্ষণীয় বিষয ছিল বিদেশ সফরের বিষয়বস্তুর বাহিরে সাংবাদিকদের প্রশ্ন উত্তর পর্বে ভোটারবিহীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উম্মা প্রকাশ করে দেশের গণমাধ্যমের প্রতি গুরুতর অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার পরিবার সৌদি আরবসহ বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন এবং সেখানে মার্কেটসহ আরো অনেক কিছুতে বিনিয়োগ করেছেন। এসব সংবাদ বিদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশের পরও দেশের তিনটি পত্রিকা ছাড়া আর কোনো পত্রিকা সেই সংবাদ প্রকাশ করেনি। এই অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণমাধ্যমকে শুধু অভিযুক্তই করেননি, রীতিমতো ভর্ৎসনা করেছেন। কিন্তু এই অভিযোগটি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অসত্য কল্পকাহিনী। এই মিথ্যা কল্পকাহিনী ক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় সংসদে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে বক্তব্যের মাধ্যমে। সেসময় জাতীয় সংসদে তিনি বলেন, জিয়া পরিবারের ১২টি দেশে ১২শ’কোটি টাকা পাচার সংক্রান্ত গ্লোবাল ইন্টিলিজেন্স নেটওয়ার্ক (জিআইএন) রিপোর্ট সরকারের হাতে এসেছে। এ নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে যারা দেশের জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে পাচারকৃত অর্থ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে ফেরত আনা হবে। এত গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ দেশের গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বলার আগে কেনো প্রকাশিত হলো না। এজন্যেও তিনি গণমাধ্যমকে ভর্ৎসনা করেন। এই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অসত্য কল্পকাহিনী প্রচারের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ভূমিকা যে দু’তিনটি গণমাধ্যম পালন করেছে তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী সম্পাদিত দ্য ডেইলি অবজারভার। তারপর থেকে ডেইলি অবজারভার ও সরকারের আজ্ঞাবহ কিছু দালাল মিডিয়া জিয়া পরিবারের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ পাচারের কল্পকাহিনীর বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করছে। জিয়া পরিবারের দুর্নীতির এসব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কল্পকাহিনীর সংবাদের উৎস বলা হয়েছে, আরবভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেল জিআইএনকে (গ্লোবাল ইন্টিলিজেন্স নেটওয়ার্ক) উদ্ধৃত করে এবং কানাডার টিভি চ্যানেল দ্য ন্যাশনাল এই খবর দিয়েছে। রোহিঙ্গা ইসুতে বাংলাদেশের চেতনাধারী দালাল মিডিয়ার যে সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে শান্তিতে নবেল পাইয়ে দিচ্ছিলেন, সে সাংবাদিক জিয়া পরিবারের দুর্নীতির তথ্যসূত্র হিসেবে ‘আরব নিউজ’ পত্রিকার কথা বললেন। তিনি বললেন, ‘আরব নিউজসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরও কিছু পত্রিকায় এই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আরব নিউজের সম্পাদক আল জাজিরার সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিয়েও জিয়া পরিবারের টাকা পাচারের কথা বলেছেন। গত সেপ্টেম্বরে দৈনিক জনকণ্ঠ লিখেছিল জিয়া পরিবারের দুর্নীতির প্রমাণ সরকারের হাতে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী সংসদেও যা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগের পর বিএনপির পক্ষ থেকে দুর্নীতির বিষয়টি কাল্পনিক ও অসত্য বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা না চাইলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর উত্তরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আল জাজিরা এবং গার্ডিয়ান জিয়া পরিবারের দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেই সময় সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজা জিয়া পরিবারের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের উপর বিশ্লেষণধর্মী ও অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেছেন। তিনি জিয়া পরিবারের দুর্নীতির খবরটির কোনো সত্যতা বা অস্তিত্ব খুজে পাননি। ইন্টারনেটে অনেক খুঁজে জিয়া পরিবারের দুর্নীতির খবরতো দুরের কথা গ্লোবাল ইন্টিলিজেন্স নেটওয়ার্ক এবং দ্য ন্যাশনাল নামে কানাডার কোনো টিভি চ্যানেলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আরব নিউজ, আল জাজিরা এবং গার্ডিয়ান বিভিন্ন পত্রিকার ওয়েবসাইটে ঢুকেও অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হাসিনার দাবিকৃত জিয়া পরিবারের দুর্নীতি বিষয়ক কোনো সংবাদের লিংক বা অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায় নাই।
পক্ষান্তরে, দেশিবিদেশি গনমাধ্যমে প্রতিনিয়ত দেশের দুর্নীতি, অর্থ লুটপাট ও বিদেশে অর্থ পাচারের খবর প্রকাশিত হয়। গত দশ বছরে শুধু বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে থেকে ৩০-৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি লুটপাট, চুরি বা আত্নসাৎ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও কুখ্যাত অর্থ কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত রাষ্ট্রীয় সোনালী ব্যাংক। ২০১০ এবং ২০১২ সালে সোনালী ব্যাংকের ঢাকাস্থ এক শাখা অবৈধভাবে ৪৫৪ মিলিয়ন ডলার ঋন প্রদান করে। জনশ্রুতি আছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তৎকালীন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ডা. মোদাসেরের তদবিরে ৩৪৪ মিলিয়ন ডলার ঋণ হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ ও তার স্ত্রী জেসমিন ইসলামকে দেওয়া হয়। এই ঋণ অবৈধভাবে কোম্পানি ক্রেডিটের কল্পিত, মিথ্যা, জাল ও প্রতারণামুলক চিঠির বিপরীতে ইসু করা হয়। শেয়ারবাজার থেকে ২০১০ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৫,০০০ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হয়েছে। ইনভেস্টিগেশনে মুল অভিযুক্তর তালিকায় সালমাল এফ রহমান, ফালু, লুৎফর রহমানের প্রতিষ্ঠানসহ আরও অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসে। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত কারও নামে বা কোন প্রতিষ্ঠানের নামে সরকার মামলা করে নাই। ডেসটিনির মাধ্যমে ২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ৪,১১৯ কোটি টাকা আত্নসাৎ করা হয়েছে। এই অর্থ কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত রফিকুল আমীন। ২০১২-২০১৩ সালে বেসিক ব্যাংক থেকে ৪, ৫০০ হাজার কোটি টাকা আত্নসাৎ বা লুটপাট করা হয়েছে। এই ঘটনার সাথে জড়িত ও মুল অভিযুক্ত ব্যক্তি শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী এবং বর্তমান ক্ষমতাসীনদলের আশীর্বাদপুষ্ট। বিসমিল্লাহর মাধ্যমে ২০১১-২০১২ সালে দেশের সাধারণ মানুষর ১, ১০০ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। খাঁজা সোলায়মান এবং নওরীন হাসিব এই অর্থ কেলেঙ্কারির মুল অভিযুক্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা চুরির হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেশী-বিদেশী প্রভাবশালী কর্মকর্তা, পর্দার আড়ালের রাঘববোয়াল ও একটি সংঘবদ্ধ চক্র এই অর্থ লুটপাট এবং চুরির সাথে জড়িত। এসবের জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি এবং বিদেশে অর্থ পাচারের সাথে জড়িত সরকারি ও বিরোধী দলের রাঘববোয়ালসহ প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম পানামা পেপারস এবং প্যারাডাইস পেপারসে আছে। সরকার ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব সকল দুর্নীতি, অর্থ লুটপাট ও অর্থ পাচারের তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা। কিন্তু, বর্তমান সরকার দুর্নীতি ও অর্থ কেলেঙ্কারির মূল নায়ক এবং অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় না নিয়ে উল্টো রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এইসব লুটেরাদের ছাড় দিচ্ছে। বিপরীতে, অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও তাদের দালাল মিডিয়া জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের কাল্পনিক ও অসত্য কাহিনী প্রচার করাচ্ছে। বর্তমান সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে জিয়া পরিবার ও বিএনপিকে ধ্বংস এবং রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দুর রাখার জন্য সুপরিকল্পিত বেগম জিয়া ও তারেক রহমান বিরুদ্ধে এক পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের চরিত্র হননের চেষ্টা করছে। এত কিছুর পরও ব্যর্থ হয়ে, ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারি ৮ বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে তথাকথিত মিথ্যা দুর্নীতি মামলার সাজানো রায়ে ৫ বছরের জেল এবং দুই কোটি টাকা জরিমানা করে কারাগারা বন্দি করে। গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের কোনো সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও ১০ অক্টোবর ২০১৮ তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার মাধ্যমে পুনরায় প্রমাণিত করলো যে, এদেশে কোনো নাগরিকেরই আর সুবিচার পাওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়াও, গত ১৩ বছরে বিএনপির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ, আর তাতে আসামী করা হয়েছে ১৮-২০ লক্ষ নেতাকর্মীকে। বিগত বছরগুলোতে বিএনপির ১২-১৪ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার এবং ৩০০ - ৩৫০ নেতাকর্মী গুম হয়ে এখনো ফিরে আসে নাই। এসব জিয়া পরিবার ও বিএনপির বিরুদ্ধে সম্প্রতি সময়ে দেশে চলমান বিদ্বেষপূর্ণ, ঘৃণ্য, প্রতিহিংসামূলক ও অসুস্থ রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। তাই, বিএনপি ছাড়াও দেশের সাধারণ জনগন, অরাজনৈতিক সুশীলসমাজ, জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী রাষ্ট্র বেগম জিয়ার বিচারের বিশ্বাসযোগ্যতা ও ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং বেগম জিয়া ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে তা তারা বিশ্বাস করে। খালেদা জিয়াকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দুরে রাখার জন্য বর্তমান অবৈধ সরকার পরিকল্পিত ভাবে এসব করছে। সরকার মনে করেছিল দলের চেয়ারপার্সনকে কারাগারে নিলে তার মুক্তির জন্য বিএনপির নেতাকর্মিরা জ্বালাও, পোড়াও এবং ধ্বংসাত্মক আন্দোলন করবে এবং দলের ঐক্য বিনষ্ট হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের নির্দেশ মত বিএনপি দলীয় নেতাকর্মিসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে নিয়ে ক্ষমতাসীনদের বৈরী আচারণ সত্ত্বেও ঐক্যবদ্ধ ভাবে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে। বর্তমান অবৈধ সরকার ও সরকারি দল শত চেষ্টা করেও বিএনপিতে ভাঙ্গন ধরাতে পারেনি। এটা বিএনপির এক বিষ্ময়কর সাফল্য। বিএনপি এখন সারা দেশ অনেক বেশি সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ। তাই অবৈধ সরকারের চক্রান্ত সফল হয় নাই। পক্ষান্তরে, কারাবন্দি পর বেগম জিয়া আগের চেয়ে এখন আরও বেশি জনপ্রিয় ও শক্তিশালী। ৮ই ফেব্রুয়ারি মিথ্যা মামলার সাজানো রায়ের পর বেগম জিয়া দেশনেত্রী থেকে দেশমাতাতে পরিণত হয়েছেন। তিনি দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মহান স্বাধীনতার ঘোষক ও রনাঙ্গনের যোদ্ধা এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মীনি এবং দেশের জনগণ দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করেন তিনি জিয়ার আদর্শ স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গনতন্ত্রের প্রতীক। শত বাধা-বিপত্তি, জেল-জুলুম, নিপীড়ন ও নির্যাতনের মধ্যে থেকেও তিনি যেটা অন্যায় মনে করেন তার বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবেন। তিনি কখনোই অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি এবং করবেনও না — এটা মানুষের বিশ্বাস। দেশের মানুষ মনেপ্রাণে এটাও বিশ্বাস ও কামনা করে যে, বিএনপির চেয়ারপারসন দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী আদর্শকে সমুন্নিত রাখবে এবং মানষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জয়ী হবে।
- লেখক সিনিয়র সায়েন্টিস্ট, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র