Search

Monday, March 16, 2020

মতি আবারো তোমার নামে মামলা

মনিরুল হক চৌধুরী


মতি তোমার কি মনে পড়ে? সময়টা ছিল ১৯৬৭ অথবা ’৬৬ সালের কোনো একদিন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক হিসেবে মৌলভীবাজার সাংগঠনিক সফরে গিয়েছিলাম আমি। তৎকালীন মহকুমা ছাত্রলীগ সম্পাদক ওয়াদুদ মৌলভীবাজার কলেজ হোস্টেলে তোমার রুমে আমার থাকার ব্যবস্থা করেছিল। ওইদিন রাতে তোমার সঙ্গে তোমার রুমমেটসহ যখন কথা বললাম তখন মনে হয়েছিল তুমি অনেকটাই পরিপক্ব। ওই সময়ে একটা কলেজ লেভেলের ছাত্রের সঙ্গে আলোচনা করে আমি খুব প্রীত হয়েছিলাম এবং তোমাকে ভালোবেসে ফেললাম। তোমার সঙ্গে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, পূর্ব-পশ্চিমের বৈষম্যের কথা বলতে গিয়ে দেখলাম তুমি অনেক কিছুই জানো। কিছু ক্ষেত্রে আমাকে সেটা শিখাতেও পারো। সেই থেকে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা আজও অব্যাহত রয়েছে।

মনিরুল হক চৌধুরী

হবিগঞ্জের ছেলে মতি। বাবা ছিলেন লন্ডনপ্রবাসী। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে কিছুকাল পড়ার সুবাদে মুক্তিযুদ্ধে মতি ছিল আমাদের অন্যতম রিক্রুট। ২৫শে মার্চ রাতে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়ার সময় স্পট থেকে তোমাকে গ্রেপ্তারের পর তুমি বেঁচে আছো সেটা অনেকেই জানতো না। আল্লাহ কি তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন দেশের এই অবস্থা দেখার জন্য? দেশের এই চিত্র স্বচক্ষে উপলব্ধি করার জন্য? মতি আমরা কি এমনই একটা দেশ চেয়েছিলাম? যেখানে নিয়ম-নীতির, ঈমান-ইনসাফের কোনো তোয়াক্কা নাই। গণতান্ত্রিক রাজনীতির নামে যে রাজনীতি চলছে, এটা কি একটা দেশের গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে? বাদ দাও রাজনীতির কথা। তুমি একজন সব্যসাচী মানুষ। এরশাদের সঙ্গে আপোষ না করার কারণে তুমি নিগ্রহের শিকার হয়েছিলে। ’

৯৬-র আওয়ামী শাসনামলেও তোমার অবস্থা ভালো যায়নি। এমনকি বিএনপি’র সময়ও ভালো যায়নি। তোমার কপাল মন্দ। আমরা জীবন দিয়ে দেশের জন্য যে যুদ্ধ করেছিলাম সেই দেশ হয়নি। আমি খুব মর্মাহত তোমার নামে বিদ্বেষমূলক মামলা হয়েছে শুনে। দেশে কিছু মামলাবাজ সৃষ্টি হয়েছে। যারা দেশের নামে, বঙ্গবন্ধুর পক্ষ হয়ে কারণে- অকারণে মামলা করে দেয়। তোমার বর্তমান মামলার বাদী শিখরকে আমি ছোটকাল থেকেই চিনি। ওর বাবা আসাদুজ্জামান বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। তার ছেলে শিখর একজন সংবেদনশীল মানুষ হিসেবেও আমি তাকে শুনেছি এবং জেনেছি। আমার সঙ্গে ওর সরাসরি পরিচয় নাই, তাহলে টেলিফোন করে বলতাম।

মতি একজন সব্যসাচী মানুষ। সব্যসাচী সাংবাদিক। সাংবাদিকতার নামে সে কোনোদিন ধান্ধায় জড়িত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে তার ত্যাগ আমাদের অনেকের চেয়ে বেশি। ২৫শে মার্চ শেষ রাতে তুমি যখন গ্রেপ্তার হয়েছিলে তখন তোমার পরিবার এবং দলের কর্মীরা সবাই ভেবেছিল তুমি শহীদ হয়ে গেছো। একসময় তোমার খবর পাওয়া গেল। মুক্তিযুদ্ধের পরেই এনা’র সঙ্গে কাজ করেছো, ইত্তেফাক, বাংলার বাণী, পূর্বদেশ, আজকের কাগজের মতো স্বনামধন্য গণমাধ্যমে কাজ করেছো। সর্বশেষ বাংলাবাজার পত্রিকা ছিল তোমার অপূর্ব সৃষ্টি। তখন বাংলাবাজার পত্রিকা ছিল হটকেক। এক সময় দেখলাম ‘মানবজমিন’ নামে একটা ট্যাবলয়েড পত্রিকা বের করেছো, যেটার আমি প্রথম থেকেই পাঠক। নিঃসন্দেহে বলতে পারি তোমার লেখার একজন ভক্ত আমি। শুধু তোমার নয়, তোমার স্ত্রীর বইগুলো আমি পড়েছি। তার অপূর্ব সংবাদ উপস্থাপন আমাকে এখনো মোহিত করে। আমি ছাত্রলীগের সভাপতি থাকার সময় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলে তুমি এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সেলের সদস্যও ছিলে তুমি। মোহামেডান ক্লাবের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও তোমাকে পেয়েছি। সর্বশেষ কারাগারে থাকার সময় আমার স্ত্রী-বাচ্চারা টের পেয়েছে আমি কেন কথায় কথায় মতি মতি করি। আমরা তো নষ্ট লোক। আমাদের নামে মামলা হবেই। হয়। তোমার মতো সব্যসাচী লোকের বিরুদ্ধে এমন মামলা আমাকে ব্যথিত করেছে। আমার মনে হয় আমরা ধ্বংসের শেষপ্রান্তে। আল্লাহ এই দেশটাকে হেফাজত করুক। তোমাকে হেফাজত করুক।

  • লেখক: রাজনীতিবিদ, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি।
  • কার্টসি - মানবজমিন/ মার্চ ১৬, ২০২০ 

No comments:

Post a Comment