রাজনৈতিক দলগুলো জনসাধারণের সমর্থন কামনা করে, নির্বাচনে ভোট চায়। সে জন্য জনসাধারণের দৃষ্টিতে তাদের ভাবমূর্তি হওয়া প্রয়োজন উজ্জ্বল; সততা, জনমুখিতা ও ন্যায়ের পক্ষে; সন্ত্রাস, দুর্নীতি, অপরাধবৃত্তিসহ সব ধরনের অশুভর বিরুদ্ধে। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এর উল্টো প্রবণতাই লক্ষ করা যায়। বিশেষত, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও তার সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠনের একশ্রেণির নেতা দল ও সংগঠনের ভেতরের নেতিবাচক ও ক্ষতিকর উপাদানগুলোরই পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এটা জাতির জন্য বিরাট দুর্ভাগ্যের বিষয়।
কিন্তু এই দুর্ভাগ্য কখনোই মেনে নেওয়ার নয়। আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে এসব প্রবণতার বিরোধিতা করি। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়ায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সদলবলে মধ্যাহ্নভোজনের ঘটনাকে আমরা নিন্দনীয় বলি। কারণ, তিনি যে ব্যক্তির অতিথি হয়ে তাঁর বাড়িতে গিয়ে মধ্যাহ্নভোজ করেছেন, সেই মতিন সরকার সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, খুনসহ বহু অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হিসেবে অভিযুক্ত। তিনি চারটি হত্যা মামলাসহ মোট নয়টি মামলার আসামি এবং র্যাবের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। মাদক ব্যবসাসংক্রান্ত একটি মামলায় তাঁর ২৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে, যদিও উচ্চ আদালতে সে দণ্ড স্থগিত আছে। বগুড়া শহর যুবলীগ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এই মতিন সরকার বগুড়ার আরেক কুখ্যাত সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ-ধর্ষক তুফান সরকারের বড় ভাই। তুফান সরকার হচ্ছেন বগুড়া শ্রমিক লীগের সেই বহিষ্কৃত নেতা, গত বছরের আগস্ট মাসে যাঁর বিরুদ্ধে কলেজছাত্রী ধর্ষণ ও মা-মেয়ের মাথা মুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তুফান সরকার তাঁর বড় ভাই মতিন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় থেকেই চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসসহ নানা রকমের অপরাধে বগুড়াবাসীকে অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। এঁদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে বগুড়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মতিন সরকার ও তুফান সরকারের মতো ব্যক্তিরা শুধু কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকেই কলুষিত করেন না, তাঁরা পুরো রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্যই ভীষণভাবে ক্ষতিকর। এ ধরনের ব্যক্তিকে কোনো রাজনৈতিক দলে স্থান দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু মতিন সরকারের বাড়িতে নৌপরিবহনমন্ত্রীর সদলবলে আতিথ্য গ্রহণের ঘটনায় সমাজকে উল্টো বার্তাই দেওয়া হয়েছে। মতিন সরকার এখনো বগুড়া জেলা ট্রাক মালিক সমিতি ও চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রয়ে গেছেন। যুবলীগের মতো এসব সংগঠন থেকেও তাঁকে বহিষ্কার করা উচিত।
- Courtesy: Prothom Alo/Feb 4, 2018
No comments:
Post a Comment