ফারমার্স ব্যাংককে নতুনভাবে দাঁড় করাতে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার মূলধন জোগান দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। এর মধ্যে আইসিবি একাই জোগান দেবে ৪৫০ কোটি টাকা। বাকি টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি ব্যাংক বিভিন্ন পরিমাণে মূলধন হিসেবে জোগান দেবে। এ অর্থ যোগ হলে ফারমার্স ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এছাড়া আর্থিক ভিত শক্তিশালী করতে ৫০০ কোটি টাকার বন্ডও ছাড়বে ব্যাংকটি। ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে গৃহীত এ সিদ্ধান্ত এখন বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগান দেয়ার বিষয়টি নিয়ে গতকাল (Tuesday)পরিচালনা পর্ষদের সভা আহ্বান করে আইসিবি। বেলা ৩টায় আহ্বান করা ওই সভায় ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগান দেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। তবে আইসিবির কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) মিছিল ও হট্টগোলের কারণে পর্ষদ সভাটি স্থগিত হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে আজ অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবারো বৈঠক হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আইসিবির পর্ষদ সভায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শামস-উল-ইসলাম। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, আইসিবির পর্ষদ সভায় ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগান দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল। তবে সভা শুরুর অল্প সময়ের মধ্যেই তা স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে আবারো বৈঠক হবে। ইকুইটি হিসেবে ফারমার্স ব্যাংকের মূলধন জোগান দিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে।
ফারমার্স ব্যাংকে কী পরিমাণ মূলধন জোগান দেবেন? জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি বলেন, সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যা চাওয়া হবে, আমরা তা-ই দিতে প্রস্তুত। কারণ আমাদের হাতে বিনিয়োগ করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারল্য সংকট কাটিয়ে ওঠা ও মূলধনের জোগান বাড়ানোর শর্তে ফারমার্স ব্যাংকের নতুন পর্ষদ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগে বিনিয়োগ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য ব্যাংকগুলোও এখন ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগান দেবে। সোনালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক ছাড়াও আইসিবিকে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
আইসিবির পর্ষদ সভায় অংশ নিয়েছিলেন জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আব্দুছ ছালাম আজাদও। তিনি বলেন, আইসিবির সভায় ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগান দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। তবে পরিচালক হিসেবে এর কোনো মেমো আমি পাইনি। সভা শুরু হওয়ার অল্প সময় পরই তা স্থগিত করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে আমরাও ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগান দিতে প্রস্তুত আছি।
আইসিবির পর্ষদ সভা স্থগিত হওয়া প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ একজন সিবিএ নেতা বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এ বিনিয়োগকে আমরা নিরাপদ মনে করছি না। এজন্যই সিবিএর পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফারমার্স ব্যাংকের পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকলে গত বছরের শেষ দিকে ব্যাংকটির পর্ষদে হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২৭ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংক থেকে পদত্যাগ করেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তিনি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। একই দিন পদত্যাগ করেন ব্যাংকটির অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক চিশতীও। আরেক পরিচালক ড. মোহাম্মদ আতাহার উদ্দিন ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদকে চেয়ারম্যান ও মারুফ আলমকে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। পুনর্গঠন করা হয় ব্যাংকটির সব কমিটিও। এরপর ১৯ ডিসেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে একেএম শামীমকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটিকে দাঁড় করাতে পুনর্গঠিত পর্ষদকে তিন মাস সময় দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার পরও ফারমার্স ব্যাংকের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় গত মাসের মাঝামাঝি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে আরেক দফা পরিবর্তন আসে।
ব্যাংকটির পর্ষদের সদস্য ও নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সারাফাত। দেড় মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় এ পরিবর্তনের পর ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়।
২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া নয়টি ব্যাংকের একটি দ্য ফারমার্স ব্যাংক। মোট ৩৯ জন ব্যক্তি উদ্যোক্তা ও ১২টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগে ৪০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে যাত্রা করে ব্যাংকটি। ফারমার্স ব্যাংকের মোট ৪০ কোটি ১৬ লাখ ১০ হাজার শেয়ারের মধ্যে ৩৯ জন ব্যক্তি উদ্যোক্তার শেয়ার ২৯ কোটি ৩৬ লাখ ১০ হাজার। প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা হিসাবে ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ রয়েছে ২৯৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যা ব্যাংকটির মোট শেয়ারের ৭৩ দশমিক ১১ শতাংশ। বাকি ১২টি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর মূলধন ১০৮ কোটি টাকা।
ফারমার্স ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আইসিবি ছাড়াও রয়েছে ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড, ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড, পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, পিএইচপি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ইবিএল এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড, এবি ব্যাংক ফার্স্ব মিউচুয়াল ফান্ড, আইসিবি ইউনিট ফান্ড ও তামাম ডিজাইন লিমিটেড।
- Courtesy: Banik Barta/Feb 7, 2018
No comments:
Post a Comment