Search

Thursday, July 5, 2018

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ‘রাজনৈতিক ইন্ধন’ পায়নি পুলিশ


চলতি বছরের এপ্রিলে জোরালো হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনে এখনও কোনো রাজনৈতিক ইন্ধন খুঁজে পায়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আন্দোলনের অন্যতম নেতা মো. রাশেদ খানকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ এবং বিভিন্নভাবে ছায়া তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তবে আন্দোলনের কোনো ধাপে রাজনৈতিক প্রভাব কিংবা কারও ইন্ধন খুঁজে পায়নি তারা। মেলেনি ঢাকা কিংবা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যোগসাজশ। 

ফেসবুক লাইভে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তির অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা এক মামলায় গত রোববার রাশেদ খানকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। রাশেদ সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, রাশেদকে গ্রেফতারের পর তার মোবাইল ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ফরেনসিক পরীক্ষার আওতায় আনা হয়। তবে তদন্তে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। 

দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ‘কোটা সংস্কার চাই (সব ধরনের চাকরির জন্য)’- ফেসবুকে এমন একটি গ্রুপ ছাড়াও রাশেদ আরও তিনটি ক্লোজড গ্রুপে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করেন। তাদের একটির সদস্য (মেম্বার) সংখ্যা ৩০ জন, অপরটিতে ১০ জন। ৩০ জনের ক্লোজড গ্রুপটিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা রয়েছেন। ১০ জনের গ্রুপটিতেও আছেন সিনিয়র নেতারা। ওই দুই গ্রুপের চ্যাটবক্সের তথ্য যাচাই-বাছাই করে পুলিশ কারও উস্কানি কিংবা রাজনৈতিক ইন্ধনের তথ্য পায়নি। চ্যাটে তারা কথা বলেছেন আন্দোলনের ধরন ও কৌশল নিয়ে। নাশকতা কিংবা ধ্বংসাত্মক কোনো নির্দেশনা সেখানে নেই।

তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, কোটা সংস্কার আন্দোলন পরিচালনায় অর্থ তোলার জন্য ১৫টি বিকাশ এবং পাঁচটি রকেট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এ বিষয়ে রিমান্ডে রাশেদ পুলিশকে জানায়, অ্যাকাউন্টগুলো খুলে গ্রুপে নম্বর দেয়া হয়েছে। এটা সবাই জানতো। যে যার মতো করে টাকা দেয়। টাকা সংগ্রহের পর সেই টাকার পরিমাণ গ্রুপে পোস্ট করা হয়। কোনো ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে যাতে না হয় সেজন্য টাকা গণনার ছবিও পোস্ট করা হতো। এখানে লুকোচুরির কিছু ছিল না।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও জানতে পারেন যে, ওই ২০টি অ্যাকাউন্টে অনেকে টাকা পাঠাতো। লেনদেনের পরিমাণ ছিল খুবই অল্প (১০০, ২০০, ৫০০ এবং সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা)। শুধু একবার তারা এক লাখ ১০ হাজার টাকা পেয়েছিল। কেউ একজন তাদের ইফতার পার্টির জন্য এ খরচ দেয়।

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন আহমেদের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়। সেখানে তারেক জিয়া ঢাবি শিক্ষককে কিছু নির্দেশনা দেন।

রাশেদ গ্রেফতার এবং পরবর্তী তদন্ত কার্যক্রমে এ আন্দোলনের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক কিংবা বিএনপির কোনো নেতার ইন্ধন এখনও পাওয়া যায়নি- এমনটি জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে তারা (তদন্ত কর্মকর্তা) বলেন, যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদের ফেসবুক ইনবক্সে একটি ফেসবুক পেজ থেকে কিছু ম্যাসেজ এসেছিল। পেজটি প্রায়ই সরকারবিরোধী বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে থাকে। তবে রাশেদ সেই ম্যাসেজগুলোতে সাড়া দেয়নি। এছাড়া তারা মোবাইলে দেশের বাইরে থেকে কোনো ফোন কিংবা ম্যাসেজ আসেনি।

ফেসবুক লাইভে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে দায়ের করা এক মামলায় রাশেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন পাঁচদিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত। রিমান্ডে রাশেদ জানায়, ফেসবুক লাইভে একটু আবেগপ্রবণ হয়ে এমন বক্তব্য দেন তিনি।

রিমান্ডে তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের সময় সরকারের পক্ষ থেকে যখন যোগাযোগ করা হয়েছিল তখন একজন নীতিনির্ধারক বলেছিলেন, তোমরা আন্দোলন বন্ধ কর। ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন হবে। প্রজ্ঞাপন না হলে তোমরা ফের আন্দোলনে নেমো। কিন্তু দীর্ঘদিন প্রজ্ঞাপন না হওয়ায় আমরা আবারও আন্দোলনের প্রস্তুতি নেই। তবে আমাদের গ্রুপে কোনো উস্কানিমূলক পোস্ট দেয়া হয়নি।’

  • কার্টসিঃ জাগো নিউজ/ জুলাই ৫,২০১৮ 

No comments:

Post a Comment