Search

Wednesday, July 4, 2018

অন্ধকার দেখছে রাশেদের পরিবার


আমার মনি একজন নিরপরাধ ছাত্র। সে কোনো অন্যায় করেনি। তারে আপনারা ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। সে ছাড়া আমরা অচল। তারে যেন রিমান্ডে না দেয়। সে তো সকল ছাত্র সমাজের জন্য আন্দোলন করেছে।

সে তো ইচ্ছা করে নেতা হতে যায়নি। সবাই  তারে নেতা বানিয়েছে। মনিতো কোনো অন্যায় করেনি। তাহলে তার হাতে কেন হাতকড়া পরানো হলো। তাকে বিনা দোষে কেন জেলে নেয়া হলো। তাকে নাকি ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হবে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা মোহাম্মাদ রাশেদ খানের মা সালেহা বেগম।

এ সময় রাশেদের বৃদ্ধ বাবা নপাই বিশ্বাস বলেন, বাড়ি বাড়ি রাজমিস্ত্রির কাজ করে এই ছেলেকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেছি। রাজমিস্ত্রি কাজ করে ছেলের খরচ ঠিকভাবে চালাতে না পেরে গ্রামের বাড়িতে নিজের পাঁচ শতক ভিটাবাড়ির জমি ছিল সেটাও কৃষি ব্যাংকে বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছি। অনেক আশা ছিল ছেলে আমার পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটা সরকারি চাকরি করবে। ব্যাংক থেকে ভিটাবাড়িটা উদ্ধার করবে। আমাদের দুঃখের দিন শেষ হবে। একটু সুখের মুখ দেখবো। তা বুঝি আর হলো না। 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাশেদের স্ত্রী রাবেয়া খান বলেন, আমার স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর থেকে পরিবারের সবাই পাগলের মতো হয়ে গেছে। কেউ আমাদের সহযোগিতা করছে না। পুলিশকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, আদালতে খবর নিতে। রাশেদকে ছাড়া আমাদের পরিবার অসহায়। আমাদের একটাই দাবি, আমার স্বামী তো কোনো অন্যায় করেনি। বিনা কারণে তাকে জেলে নিয়ে যে নির্যাতন করা হচ্ছে এটা কেন? কি দোষ করেছে রাশেদ আমরা জানতে চাই। এমনকি রাশেদকে মঙ্গলবার আদালতে উঠানোর পর তাকে কোথায় রাখা হয়েছে সেটা পর্যন্ত আমরা জানি না। গতকাল সারা সকাল শাহবাগ থানার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করেছি। কিন্তু রাশেদের কোনো সন্ধান মিলেনি। শাহবাগ থানায় যেহেতু মামলা হয়েছে তাই সেখানকার কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারদের কাছে বারবার রাশেদের বিষয়ে জানতে চেয়েছি। তাদের একটাই কথা আমরা জানি না। এরপর অনেক সাহস করে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে বসে ছিলাম। এ সময় হঠাৎ করে দেখতে পাই পুলিশের লোকদের পাহারায় রাশেদকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তখন একজন অফিসার রাশেদের মাকে বললো এই দেখেন আপনার ছেলে ভালো আছে।

এ সময় রাশেদকে তারা হাতকড়া পরিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। রাশেদ শুধু এতোটুকু কথাই বলছিল, তোমরা চিন্তা করো না, আমি ভালো আছি। রাশেদের বাবা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। রাশেদ আর আমি দু’জনে টিউশনি করে যে টাকা পাই তা দিয়ে ঢাকাতে দু’জনের থাকা খাওয়ার খরচ চলে কোনোভাবে। ওর বাবা প্রতিমাসে যে টাকা পাঠান সেটা দিয়ে ওর পড়ালেখার খরচ চালায়। আমরা বিয়ে করেছি দেড় বছর হয়েছে। 

দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে রাশেদ মেজো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুরেন্স এ এমবিএ-এর ছাত্র সে। ছোট বোন এ বছর ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ওর সম্পৃক্ততা নেই। কোটা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে ও তো কোনো অন্যায় করেনি। আর রাশেদ তো তার একার জন্য আন্দোলন করেনি। অথচ তাকেই কেন জেলে যেতে হলো।  
  • Courtesy: Manavzamin /July 04, 2018

No comments:

Post a Comment