Search

Monday, July 9, 2018

চলে যা ভাই…


ইসরাফিল খসরু


গত বেশ কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেদম প্রহার, নিষ্ঠুর নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হচেছ আমাদের তরুণ ‘কোটা-সংস্কার-আন্দোলন’ এর নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। এদের অধিকাংশই দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থী ছেলেমেয়ে। বলা হচ্ছে, এঁদের বিরুদ্ধে মারমুখী অবস্থান নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। যদি ধরেও নিই এতে ছাত্রলীগের কোন ভূমিকা নেই, তাহলে প্রকাশ্য দিবালোকে জনস্মুখে সংবাদকর্মীদের সামনে এমন সন্ত্রাসী কাজ করার সাহস কোথা থেকে পেল তারা? সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল এই ঘটনাগুলোতে আইন-শৃংখলা বাহিনীর দৃশ্যমান অনুপস্থিতি। 

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কয়েকটি প্রশ্নের উদ্রেক ঘটে।    এক — তাহলে কি আমরা ধরে নিতে পারি, আইনশৃংখলার দায়িত্ব পুলিশ কতিপয় যুবকদের হাতে তুলে দিয়েছে? যদি তা হয় তাহলে জনগণের কাছে কি বার্তা পৌঁছায়? দুই —  সরকার কি আন্দোলনটিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে না ন্যায্য অধিকারের অবস্থান থেকে দেখছে। তিন — দেশের সাধারণ জনগণের ভাবনা কি? তারা কি এটিকে শুধুমাত্র ছাত্রদের আন্দোলন হিসেবে দেখছে? 

এই প্রশ্নমালার উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের কাছে কিছু জিনিস পরিস্কার হয়। 

প্রথমে —   আইনশৃংখলা বাহিনীর নির্লিপ্ততা যা একটি অশনি বার্তাই দেয়। বার্তাটি হচ্ছে একটি যৌক্তিক আন্দোলনেও জনগণের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয় না। এই ছাত্ররা বাংলাদেশেরই জনগণ এবং রাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা পাওয়া তাদের অধিকার। প্রথমে মানুষ বুঝে নিচ্ছে সরকারের নির্দেশেই তারা নিস্ক্রিয় থাকছে। কাজেই, ধরে নেয়া যায়, এই আইন-শৃংখলা বাহিনী সরকারের সেবার জন্য, জনগণের নয়।

সরকারের আচরণ থেকে এটি পরিস্কার, সরকার এই আন্দোলনকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে। এটি যে অধিকারের আন্দোলন সেটিকে সরকার মেনে নিচ্ছে না। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বারবার এই আন্দোলনে  জামাত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা ও পৃষ্ঠপোষকতার কথা বলে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। অথচ সরকার যদি এই আন্দোলনকে অধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখত, তাহলে এর সমাধান দেখতে পেতাম। 

যেখানে এপ্রিল ১১, ২০১৮, প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন সাধারন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা-সংস্কার’ দাবি তিনি মেনে নিয়েছেন এবং আন্দোলনকারীরা সেই আশ্বাসের বিশ্বাসের নিরিখে আন্দোলন স্থগিত রাখে, সেইখানে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও তা বাস্তবায়ন হয়নি। বিলম্বিত হচ্ছে এর বাস্তবায়ন। ইতোমধ্যে কোটা পদ্ধতিতে ৩৭তম বিসিএসের ফলাফলও দিয়ে দেয়া হয়েছে, যদিও ৩৭তম থেকেই কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবি ছিল।  তার উপর আন্দোলনকে বিতর্কিত করে ভিন্নাখাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে। এসবকে সরকারের সদিচ্ছার অভাবের আলামত হিসেবেই দেখা স্বাভাবিক। এখন সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, এই বিষয়ে তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট করা। 

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, ‘কোটা-সংস্কার-আন্দোলন’ বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণের ভূমিকা কি হতে পারে? তারা যদি এই আন্দোলনকে শুধু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হিসেবে দেখে, তাহলে এই আন্দোলন খুব বেশি গতি পাবে না। এইক্ষেত্রে এই বার্তাটিও সর্বমহলে পৌঁছাবে যে দেশে কোন যৌক্তিক আন্দোলন হলে তাতে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে না, সেইখানে শুধু যে শ্রেণির আন্দোলন তারাই শুধু অংশ নেবে। অথচ চলমান  ‘কোটা-সংস্কার-আন্দোলন’  যা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মেধাভিত্তিক উজ্জ্বল এক বাংলাদেশ গড়ার, সেই আন্দোলনে যদি জনগণ সম্পৃক্ত না হয়, তাহলে আন্দোলনকারীদের আমরা এখনি বলে দিতে পারি —    "চলে যা ভাই, এই দেশে তোদের কোন ভবিষ্যত নাই।" মেধার মূল্যায়ন ও বিকাশের জন্য আমাদের ছেলেরা রাস্তায় মার খাবে কিন্তু আমরা তাদের পক্ষে অবস্থান না নিয়ে একটি উজ্জ্বল বাংলাদেশের আশা করব, সেই ধারণাটিই ভুল। সেইক্ষেত্রে বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে তাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কোন পথ নেই। 

  • লেখক বাংলাদেশের একজন হতভাগা নাগরিক। 

No comments:

Post a Comment