দেশের ছয়জন বিশিষ্ট আইনজীবী বলেছেন, দীর্ঘ কালক্ষেপণের পর অধস্তন আদালতে বিচারক নিয়োগ ও বদলির বিধিমালা এমন একটি সময়ে করা হয়েছে, যখন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির পদটি শূন্য। সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগের সঙ্গে প্রয়োজনীয় অর্থবহ পরামর্শ ছাড়া এটি প্রণয়ন করা হয়েছে। তাঁরা মনে করেন, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অধস্তন আদালতকে ১৯৯৯ সালের আগের যুগে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট দিবস উপলক্ষে সোমবার, জানুয়ারি ১, গণমাধ্যমে দেওয়া এক বাণীতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা এসব কথা বলেন। ছয় আইনজীবী হলেন ড. কামাল হোসেন, রফিক-উল হক, আমীর-উল ইসলাম, মইনুল হোসেন, এ এফ হাসান আরিফ ও ফিদা এম কামাল।
বাণীতে আইনজীবীরা বলেন, ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট উদ্বোধন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এবার প্রথম সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালিত হতে যাচ্ছে মঙ্গলবার, জানুয়ারি ২। এমন এক সময়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে, যখন এ দেশের বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ অভিভাবক প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য।
বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের আধিপত্য ও হস্তক্ষেপমুক্ত একটি পরিবেশ তৈরি করার আহ্বান জানান এই ছয় আইনজীবী। তাঁরা আশা করেন, মাসদার হোসেন মামলার রায়ের মাধ্যমে অধস্তন আদালতকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক্করণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগ সংবিধান ও সর্বোচ্চ আদালতে রায়ের প্রতি সম্মান দেখাবে।
বিভিন্ন মামলার রায় ও সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহ্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই আইনজীবীরা বলেন, সম্প্রতি মাসদার হোসেন মামলার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি পুনরায় স্মরণ করতে গিয়ে দেখা যায়, অধস্তন আদালতের ক্ষেত্রে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিধি প্রণয়নে সংবিধানের মূলধারার বিচ্যুতি হয়েছে। এটা গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। কারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্বকীয় অবস্থানের জন্য সংবিধান যে সুরক্ষা দিয়েছে, তা সংরক্ষণ/বাস্তবায়ন করা সর্বোচ্চ আদালতের দায়িত্ব। দীর্ঘ ৪৬ বছর কালক্ষেপণের পর এই বিধিগুলো বর্তমানে অধস্তন বিচার বিভাগের জন্য সরকার সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৩৩ অনুযায়ী করেছে। অথচ ওই ১৩৩ অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের জন্য প্রণীত হওয়ার বিষয়টি সংবিধানের কর্ম বিভাগের জন্য প্রযোজ্য।
বাণীতে বলা হয়, অধস্তন আদালতে বিচার বিভাগীয় পদে নিয়োগ, নিয়ন্ত্রণ, পদোন্নতি প্রদান, ছুটি মঞ্জুরিসহ শৃঙ্খলা বিধানসংক্রান্ত বিষয় সংবিধানে দুটি অনুচ্ছেদ ১১৫ ও ১১৬-তে পৃথক ভাগে বিচার বিভাগের অংশে প্রণীত আছে। তবু এই আইন প্রণয়নের মাধ্যমে অধস্তন বিচার বিভাগের বিচারকদের নির্বাহী বিভাগের অধস্তন হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, যা ক্ষমতার পৃথক্করণ নীতির লঙ্ঘন, মাসদার হোসেন মামলার রায়ের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এই আইনগুলো সংবিধানের অধীনে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের দুটি বিভাগের (আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ) সঙ্গে যথাযথ পরামর্শ ছাড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।
বাণীতে তাঁরা আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে জনগণ ও সুশীল সমাজকে সচেতন করার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের ঐকমত্যের মাধ্যমে একত্র হয়ে দেশের সাংবিধানিক ভারসাম্য রক্ষা করার প্রচেষ্টাকে একত্র করে দৃঢ় ও সংকল্পিতভাবে জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধার করা এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর ভিত্তিতে একটি উপযুক্ত স্বাধীন ও পৃথক বিচার বিভাগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ব্যতীত অন্য কোনো বিকল্প নেই।’
- সৌজন্যে - prothomalo.com
No comments:
Post a Comment