আব্বাস উদ্দিন নয়ন
রাজস্ব ফাঁকি দিতে ছয় বছরে প্রায় ৪৭১ কোটি টাকার পণ্য বিক্রির তথ্য লুকিয়েছে গ্রেট ওয়াল সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৮২৬ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করলেও ১ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা বিক্রির তথ্য প্রদর্শন করে সরকারকে বড় অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে বলে অভিযোগ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সম্প্রতি গ্রেট ওয়াল সিরামিকের প্রধান কার্যালয় ও কারখানায় অভিযান চালিয়ে তথ্য গোপন করার প্রমাণ পায় এনবিআর। গোপনকৃত এ বিক্রয়মূল্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও সুদসহ ১৮৩ কোটি টাকা দাবিনামা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি।
জানা গেছে, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা উত্তরের আওতাধীন গ্রেট ওয়াল সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এ অনিয়ম তদন্ত করেছে এনবিআরের মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। মূসক চালান না দিয়েই গ্রেট ওয়াল সিরামিক পণ্য বিক্রি করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে এনবিআরের নির্দেশে কোম্পানিটিতে অভিযান চালায় অধিদপ্তরের প্রিভেন্টিভ টিম।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেট ওয়াল সিরামিকের বিরুদ্ধে মূসক চালান না দিয়ে পণ্য সরবরাহ গোপন করার অভিযোগের ভিত্তিতে বিশেষ তদন্ত পরিচালনার জন্য মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত দল গঠন করে অভিযান পরিচালনা করে অধিদপ্তর। অভিযানকালে প্রতিষ্ঠানটির গাজীপুরের কারখানা ও রাজধানীর হাতিরপুলে প্রধান কার্যালয় থেকে মূসক দাখিলপত্র, প্রকৃত বিক্রয় তথ্য ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র সংগ্রহ করে অধিদপ্তরের প্রিভেন্টিভ টিম। পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রদানকৃত মূসক চালানপত্র ও প্রকৃত বিক্রয় তথ্য যাচাই করে ছয় বছরে ৪৭১ কোটি টাকার বিক্রয় তথ্য গোপন করার প্রমাণ মেলে। গোপনকৃত বিক্রয়মূল্যের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সম্পূরক শুল্ক ও মূসক বাবদ ১১৪ কোটি ৮২ লাখ এবং সুদ বাবদ ৬৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা মিলে মোট ১৮২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা দাবিনামা জারি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এনবিআরের নির্দেশনা পেলেই কোম্পানিটিকে কারণ দর্শানোর নোটিসসহ দাবিনামা জারি করবে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা উত্তর।
গ্রেট ওয়ালের এ অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আ ফ ম আব্দুল্লাহ খান বণিক বার্তাকে বলেন, গোয়েন্দারা প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে গিয়ে বিক্রয় ও ভ্যাট পরিশোধের সব তথ্য-প্রমাণ দেখতে চান। প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা গোয়েন্দাদের কাছে যেসব তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন, সেগুলোর সঙ্গে আগে সংগৃহীত তথ্যের গরমিল পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে তাদের সার্ভার ও কম্পিউটার থেকে প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বড় ধরনের অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কারণ দর্শানোর নোটিসের পর বকেয়া রাজস্ব আদায়ে তাদের বিরুদ্ধে কাস্টমস ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়েছে। এখন মূসক আইন অনুযায়ী তাদের রাজস্ব পরিশোধ করতে হবে।
এনবিআর বলছে, গোপনকৃত মূসকযোগ্য বিক্রয়মূল্যের ওপর মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১-এর ৩, ৬, ৭, ৩১, ৩২ ও একই আইনের বিধি ১৬, ২৬ ও ২৩ এবং এনবিআরের প্রজ্ঞাপন ১৭৭/২০১০ অনুযায়ী কোম্পানিটির কাছে ১১৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা দাবি করেছে এনবিআর। এর মধ্যে সম্পূরক শুল্ক বাবদ ৫৩ কোটি ৪০ লাখ ও মূসক বাবদ ৬১ কোটি ৪২ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। একই আইনের ৩৭(৩)-এর বিধান অনুযায়ী বকেয়া রাজস্বে মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ বাবদ আরো ৬৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা দাবি করেছে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে জানতে গ্রেট ওয়াল সিরামিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুল হুদার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, এনবিআরের গোয়েন্দা দল হঠাৎ করেই কারখানা ও প্রধান কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে গোয়েন্দারা কোম্পানির দেয়া তথ্য গ্রহণ না করে নিজেদের তথ্য ব্যবহার করেছে। এখন আইন অনুযায়ীই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে কোম্পানি।
- কার্টেসিঃ বনিক বার্তা/ মে ১৭, ২০১৮
No comments:
Post a Comment