Search

Saturday, March 3, 2018

গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক নির্বাচন বিধিমালা আবার সংশোধন


নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

 গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক নির্বাচনের জন্য আবার বিধিমালা সংশোধন করেছে সরকার। লম্বা সময় বিরতি দিয়ে এবারেরটি গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক নির্বাচন করার জন্য তৃতীয় দফা উদ্যোগ। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে গত বৃহস্পতিবার।
 

নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক নির্বাচনের জন্য একটা কমিশন হবে তিন সদস্যের। একজন হবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অন্য দুজন নির্বাচন কমিশনার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবেন রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি)। আর দুই নির্বাচন কমিশনার হবেন গ্রামীণ ব্যাংকেরই মহাব্যবস্থাপক। গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান বেছে নেবেন এই মহাব্যবস্থাপকদের।

 নতুন প্রজ্ঞাপনে ভোটারদের পরিচয়পত্র তৈরির একটি নমুনা ফরমের ছক করে দেওয়া হয়েছে। এতে তাঁদের নাম-ঠিকানা, ক্রমিক নম্বর ও নির্বাচনী স্তরের নাম উল্লেখ থাকতে হবে। তবে কত সময়ের মধ্যে পরিচালক নির্বাচন করতে হবে, তা নিয়ে প্রজ্ঞাপনে কিছু বলা হয়নি। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় সংখ্যক রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করবেন। রিটার্নিং অফিসারের পরামর্শে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে নিয়োগ পাবেন আরও সহকারী রিটার্নিং অফিসার।

 
সরকার গ্রামীণ ব্যাংক (পরিচালক নির্বাচন) বিধিমালাটি প্রথম প্রণয়ন করেছিল ২০১৪ সালের এপ্রিলে। তখন বাংলাদেশ ব্যাংককে ছয় মাসের মধ্যে পরিচালক নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ছয় মাস পার হওয়ার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান পরিচালক নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে জানিয়েছিলেন।

 
একই বছরের নভেম্বরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবর্তে একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজের নেতৃত্বাধীন কমিশন নির্বাচন করে দেবে বলে বিধিমালা সংশোধন করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ সময় কিছুটা কৌশল অবলম্বন করে। কৌশলটা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন গঠনের এক বছরের মধ্যে পরিচালক নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।

 
মাঝখানে তিন বছর পার হলেও কমিশন আর গঠিত হয়নি, নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়নি। এই ফাঁকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রামীণ ব্যাংকের পর্ষদ সদস্যদের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। সেই থেকে সরকারের নিয়োগ করা চেয়ারম্যানসহ তিন পরিচালক দিয়েই চলছে গ্রামীণ ব্যাংক। গ্রামীণ ব্যাংকের ১২ সদস্যের পর্ষদের বাকি ৯ জন ঋণগ্রহীতা সদস্য।

 
গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান খন্দকার মোজাম্মেল হক গত বছরের জুলাইয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে বিধিমালা সংশোধনের দাবি জানিয়ে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। তারই আলোকে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

 
খন্দকার মোজাম্মেল হক চিঠিতে বলেছিলেন, ‘বিধিমালা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠিত না হওয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের মতো সংবিধিবদ্ধ একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে না, যা আমরা কেউই কামনা করি না। একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময় পূর্ণাঙ্গ পর্ষদ না থাকলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ আটকে থাকে এবং সার্বিক কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।’

গ্রামীণ ব্যাংক (পরিচালক নির্বাচন) বিধিমালার ৫(১) ধারা অনুযায়ী নির্বাচিত পরিচালকদের পদ বহাল রয়েছে দাবি করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ঋণগ্রহীতা পরিচালকেরা, যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

২০১১ সালের ১১ মে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে সরে দাঁড়ান নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিয়েই চলছে ব্যাংকটি। অর্থাৎ ব্যাংকটিতে পূর্ণাঙ্গ পরিচালনা পর্ষদ নেই ছয় বছরের বেশি সময় ধরে।

 গ্রামীণ ব্যাংকে বর্তমানে ৯০ লাখ সদস্য রয়েছে। আর কর্মচারীর সংখ্যা ২১ হাজার। কর্মচারীরা গ্রামীণ ব্যাংকের বেতনকাঠামো অনুযায়ী বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। সরকারি বেতনকাঠামো অনুসরণ করেই তৈরি করা হয় গ্রামীণ ব্যাংকের বেতনকাঠামো।

 Courtesy: Prothom Alo Mar 02, 2018

No comments:

Post a Comment