Search

Thursday, May 3, 2018

তফসিলের হাঁকডাক ‘একতরফা’ নির্বাচনের ইঙ্গিত

মাহমুদুল হাসান


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে সংশয় ততই তীব্র হচ্ছে। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজেদের অবস্থানে অনড়। এরই মধ্যে পরিবেশ তৈরি ছাড়াই অক্টোবরে তফসিল ঘোষণার হাঁকডাক একতরফা নির্বাচনের ইঙ্গিত বলেই মনে করছে বিএনপি।

বিএনপি আপাতত নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। আগে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে চাইছে তারা। অক্টোবরে তফসিল ঘোষণার হাঁকডাক ক্ষমতাসীনদের ‘কৌশল’ হিসেবেও দেখছেন দলটির নেতারা।

বিএনপি নেতাদের দাবি, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশের ওপর নির্ভর করছে তফসিল। তাই পরিবেশ তৈরি না হলে তফসিল কোন মাসে ঘোষণা করা হলো তাতে কিছু যায় আসে না। একতরফা নির্বাচনের তফসিলের কোনো গুরুত্ব নেই।

তাদের মতে, আগে থেকে এ ধরনের কথা বলে বিভিন্ন দলের মনোভাব জানার চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীনরা। কারণ, মুখে যাই বলুক আরেকটি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিয়ে আওয়ামী লীগে ভীতি কাজ করছে।

চলতি বছরের অক্টোবরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম। সোমবার সংসদীয় আসনের সীমানা পুনির্নির্ধারণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। তবে তিনি অক্টোবরের কত তারিখে তফসিল ঘোষণা করা হবে সে সম্পর্কে কিছু বলেননি।

এদিকে নির্বাচন কমিশনারের ওই ঘোষণার এক দিন পরই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, অক্টোবরে নির্বাচনের ট্রেন চলতে শুরু করবে।

মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত শোভাযাত্রাপূর্বক সমাবেশে তিনি বলেন, বিএনপি এখন হুঙ্কার দিচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। উনার (খালেদা) মুক্তি আদালতের বিষয়। অক্টোবরে নির্বাচনের ট্রেন চলতে শুরু করবে। তা বিএনপির জন্য অপেক্ষা করবে না।

প্রসঙ্গত, সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সে হিসেবে ডিসেম্বরের শেষ দিকে কিংবা জানুয়ারির শুরুর দিকে ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য দিন রেখে তফসিল ঘোষণা হতে পারে।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে বিএনপি আগে পরিষ্কার হবে। ক্ষমতাসীনরা কী চাইছেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া কেমন হবে। নির্বাচনে কারচুপি বা ভিন্ন কিছু করে ক্ষমতায় থাকতে কোন কৌশলে তারা এগোচ্ছেন বিএনপি সেসব পর্যবেক্ষণ করবে।’

তিনি বলেন, ‘এখন এনিয়ে কিছু বলতে পারব না। তারা সরকারে আছেন, যেমন খুশি বলতে পারেন। আমাদেরকে প্রত্যেকটা কথা মেপে বলতে হয়।’

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘এটা নির্ধারণ করবে দেশের জনগণ। দেশের মানুষ কী চায়, তাদের কী চিন্তা-ভাবনা আছে। এটা বিএনপির একার বিষয় নয়। অধিকারহীন মানুষের জাতীয় সিদ্ধান্তে হবে এটা। জাতি সেই দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের দলের অবস্থান আমরা বলে দিয়েছি। এখানে ব্যক্তিগত কোনো কথা নেই। সময় আসুক, তারপর আবার বলা যাবে। রাজনীতিতে কখনো দীর্ঘ সময়, কখনো অল্প সময়ে সিদ্ধান্ত আসে। রাজনীতি এমনই।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রশ্নই আসে না। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য দেশনেত্রীর মুক্তি। তারপর নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা না করার সিদ্ধান্ত হবে।’

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল পরিবর্তন ডটকম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন মনের মাধুরী মিশিয়ে তৎপরটা দেখাচ্ছে। কারণ এখন তো তারা হালকা চাপে আছে। চাপটা যখন আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আসবে, তখন চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাবে। তখন এই তফসিল জানুয়ারিতে যাবে না অক্টোবরে হবে এটা হলফ করে কেউ বলতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বৈষম্য দূর করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কোনো মাসে তৈরি করতে পারবেন, এটা উনারাই ভালো জানেন। এটাই শেষ কথা হিসেবে ধরছি না।’

বিএনপির এই যুগ্ম-মহাসচিব আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ চাচ্ছে আমরা নির্বাচনের বাইরে থাকি। আমরা তো নির্বাচনের ভেতরে থাকার চেষ্টা করছি।’  

  • সূত্র : পরির্বতন/ মে ২, ২০১৮ 

No comments:

Post a Comment