জ্বালানি তেল আমদানি
ইয়ামিন সাজিদ
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই অস্থিরতা চলছে দেশের ডলারের বাজারে। বেসরকারি অনেক ব্যাংকই তীব্র ডলার সংকটে ভুগছে। এর প্রভাব পড়েছে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জ্বালানি তেল আমদানিতে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি তেল আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না অনেক ব্যাংক। ফলে জ্বালানি তেলের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) দ্বারস্থ হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। সরাসরি আমদানির পরিবর্তে বিপিসির কাছ থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহ করছে তারা।
দুই বছর আগেও নীতি ও শর্ত পূরণ না করেই নিজস্ব উদ্যোগে জ্বালানি তেল আমদানি শুরু করেছিল বেসরকারি খাতের এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু এলসি খুলতে না পারায় গত ফেব্রুয়ারি থেকে জ্বালানি তেলের জন্য বিপিসির ওপর নির্ভরশীল তারা।
সূত্রমতে, ডলার সংকটের কারণে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকই এখন আমদানির জন্য বড় কোনো এলসি খোলার ঝুঁকি নিচ্ছে না। পুরনো এলসিগুলোর দায় পরিশোধেও হিমশিম খাচ্ছে অনেক ব্যাংক।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনিস এ খান এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, অনেক দিন থেকেই বাজারে ডলারের সংকট চলছে। বাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় প্রতিনিয়ত ডলারের দাম বাড়ছে। ফলে অনেক ব্যাংকই দেখে-শুনে এলসি খুলছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য অনেক জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হয়। এ তেল আমদানির জন্য বড় এলসি খোলার সক্ষমতা অনেক ব্যাংকেরই এখন নেই।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে উৎপাদনে আছে ১০৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর মধ্যে কুইক রেন্টাল ও রেন্টালসহ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ৬৬। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান জ্বালানি প্রাকৃতিক গ্যাস, ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল। এর মধ্যে ৩৫টি ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলভিত্তিক।
এর মধ্যে বিভিন্ন শর্তে সামিট পাওয়ার, ওরিয়ন, ডরিন পাওয়ার, বাংলাক্যাটসহ প্রায় ১৫টি বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ফার্নেস অয়েল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। তবে দু-একটি কোম্পানি ছাড়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বিপিসির সঙ্গে চুক্তি না করেই তেল আমদানি শুরু করে। এতে নিয়ম অনুযায়ী প্রাপ্য রয়্যালটি হারায় বিপিসি। নিজস্ব আমদানির সুবাদে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি লিটারে ২০-২৫ টাকা সাশ্রয় করে। কিন্তু ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় জ্বালানি তেলের জন্য আবার বিপিসির কাছেই ফিরছে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী এসব প্রতিষ্ঠান।
অবশ্য তেল আমদানি বন্ধ করা হয়নি বলে জানান বারাকা পাওয়ারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। শুরু থেকেই তারা প্রতি মাসে ৬০-৭০ হাজার টন তেল আমদানি করে আসছেন বলে তিনি বণিক বার্তাকে জানান তিনি।
ডলার সংকটের আশু সমাধান দেখছেন না ব্যাংকারদের অনেকেই। সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম কামাল হোসেন এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ডলারের পর্যাপ্ত রিজার্ভ সত্ত্বেও এলসির দায় পরিশোধ কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও চাহিদা অনুযায়ী ডলার দিচ্ছে না। বিদ্যমান এ সংকট ভবিষ্যতে আরো বাড়তে পারে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো জ্বালানি তেলের জন্য বিপিসির দ্বারস্থ হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির এলসিও খুলতে পারছে না রূপালী ব্যাংক। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আতাউর রহমান প্রধান এ প্রসঙ্গে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী আমাদের হাতে ডলার নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকও যথাসময়ে পর্যাপ্ত ডলার দিতে পারছে না। এজন্য বাধ্য হয়েই বিপিসির নতুন এলসি নিতে পারছি না। একইভাবে অন্য প্রতিষ্ঠানের এলসিও দেখে-শুনে খুলতে হচ্ছে।
কম দামে জ্বালানি তেল বিক্রি করতে গিয়ে এমনিতেই চাপে আছে বিপিসি। কম দামে জ্বালানি তেল বিক্রির কারণে প্রতিদিন গড়ে ১০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকায় এ চাপ আরো বাড়বে। ২০১৬ সালে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩৩ ডলার থাকলেও এখন তা ৭০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
এর মধ্যেই বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর আমদানি বন্ধের কারণে বাড়তি জ্বালানি তেল আমদানি করতে হচ্ছে বিপিসিকে। বর্ধিত চাহিদা মেটাতে নতুন করে চলতি মাসের শুরুতে অতিরিক্ত দুই লাখ টন তেল আমদানির বিষয়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে বিপিসি।
জানতে চাইলে বিপিসির সদ্য নিযুক্ত চেয়ারম্যান মো. আকরাম আল হোসাইন বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা সব সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে জ্বালানি দিয়ে আসছি। মাঝখানে কিছু প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে জ্বালানি আমদানির অনুমতি নিয়েছে। তবে চাহিদা বেড়ে যাওয়া বিপিসির আমদানি কিছুটা বেড়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪ শতাংশ এবং অকটেন ও পেট্রলের দাম ১০ শতাংশের মতো কমানো হয়। বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের আমদানি ব্যয় ৮৩ টাকা। তবে গ্রাহক পর্যায়ে বিপিসি বিক্রি করছে ৬৫ টাকায়।
- কার্টেসিঃ বনিক বার্তা/ মে ২১,২০১৮
No comments:
Post a Comment