Search

Monday, May 14, 2018

পছন্দের কাজ পাচ্ছেন না ৬৬ লাখ নারী-পুরুষ

  • বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপ
  • কর্মক্ষম বিশাল জনগোষ্ঠীর ২৭ লাখ এখনো পুরোপুরি বেকার
  • পছন্দের কাজ না পেয়ে নানা ধরনের খণ্ডকালীন কাজ খুঁজে নিয়েছেন অনেকে



দেশের প্রায় ৬৬ লাখ মানুষকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। অথচ তাঁরা স্থায়ী চাকরি বা কাজের জন্য উপযোগী। কিন্তু নিজেদের পছন্দমতো কাজ পাচ্ছেন না কিংবা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে কাজ করতে পারছেন না। তবে ভালো কাজ পেলে করবেন। তাই পরোক্ষভাবে তাঁদের বেকার বলা চলে।

এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কেউ এখন পুরোপুরি বেকার, কেউবা টিউশনি কিংবা খণ্ডকালীন কাজ করেন। আবার অনেক শিক্ষিত নারী-পুরুষ আছেন, যাঁরা কাজের উপযোগী হলেও কোনো কাজ করেন না। তাঁদের মধ্যে শিক্ষিত গৃহিণীই বেশি। সংসারের নানা চাপে কিংবা অন্য কোনো কারণে তাঁরা হয়তো আপাতত কাজ করছেন না।

অর্থনীতির ভাষায়, এই বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে কর্ম–উপযোগী সম্ভাবনাময় শ্রমশক্তি বলা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭ প্রতিবেদনে এই চিত্র পাওয়া গেছে। সম্প্রতি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থনীতিতে উপযুক্ত কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা যাচ্ছে না। ফলে সম্ভাবনাময় জনশক্তির অপচয় হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমশক্তির বিশাল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তারা কাজের বাইরে থাকছে। এটি জনসম্পদ অপচয়ের মতো। তাঁর মতে, শিক্ষিত ব্যক্তিরা যেনতেন কাজ করতে চান না। একদম মেশিন চালানোর মতো কাজে তাঁদের অনীহা আছে।

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, এ দেশে কাজের চাহিদা আছে, কিন্তু দক্ষ লোক নেই। চাহিদা ও জোগানের মধ্যে একধরনের ফারাক আছে। যেসব কাজের চাহিদা আছে, সেসব ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে হবে।

বিবিএস সূত্রে জানা গেছে, দেশে ৬৫ লাখ ৭৫ হাজার কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী আছে, যারা স্থায়ী কোনো কাজ করে না। তাদের মধ্যে নারীই বেশি। কর্মক্ষম নারীর সংখ্যা ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার। আর পুরুষের সংখ্যা ৩২ লাখ ১৯ হাজার। এ জনগোষ্ঠীর দুই-তৃতীয়াংশের বয়স আবার ১৫ থেকে ২৯ বছর, অর্থাৎ বয়সে তরুণ-তরুণী।

বিবিএসের জরিপ তথ্য অনুযায়ী, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর প্রতি তিনজনের দুজনই কমপক্ষে মাধ্যমিক ডিগ্রিধারী। শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনা করলে দেখা যায়, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৬ লাখ ৬৫ হাজার নারী-পুরুষ আছেন, যাঁরা কমপক্ষে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েও পছন্দমতো কাজ পাচ্ছেন না। আর মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পাস এমন নারী-পুরুষের সংখ্যা সাড়ে ৩৭ লাখ।

বিবিএসের জরিপে, কর্মক্ষম বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে বেকার, খণ্ডকালীন কর্মজীবী এবং সম্ভাবনাময় জনগোষ্ঠী—এ তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে।

সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার কম কাজ করেন, এমন ব্যক্তিদের খণ্ডকালীন কর্মজীবী হিসেবে ধরা হয়েছে। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, খণ্ডকালীন কাজ করেন ১৪ লাখ ৬৫ হাজার জন। মূলত টিউশনি, খণ্ডকালীন বিক্রয় প্রতিনিধি, ফাস্ট ফুডের দোকানের বিক্রয়কর্মী, কল সেন্টারের কর্মী হিসেবে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন তাঁরা। পছন্দের কাজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে তাঁরা এসব খণ্ডকালীন কাজের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন। তাই নিজেদের এ কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট নন তাঁরা।

অন্যদিকে কোনো ধরনের কাজ খুঁজেও না পেয়ে পুরোপুরি বেকার রয়েছেন এমন নারী-পুরুষের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। তাঁরা সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করারও সুযোগ পাননি। এ বেকার শ্রেণিতে নারী ও পুরুষ প্রায় সমান সমান।

সম্ভাবনাময় কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বলতে বোঝানো হয়েছে, যখন বিবিএস জরিপটি করেছে, তখন কোনো কারণে কাজের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না, কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কাজ খোঁজা শুরু করবেন। আবার অনেকে বিশেষ কারণে কাজ করতে চান না, কিন্তু যেকোনো কাজ দিলে করতে পারবেন, এমন ব্যক্তি আছেন ২৪ লাখ ৩৪ হাজার। এই শ্রেণিতে প্রায় ১৭ লাখই নারী। সংসারের ঝুট-ঝামেলায় তাঁদের অনেকেই চাকরি করেন না। কিন্তু ভবিষ্যতে সময় ও ভালো সুযোগ পেলে কাজ করার ইচ্ছা আছে তাঁদের।

  • Courtesy: Prothom Alo/ May 12, 2018

No comments:

Post a Comment