Search

Monday, May 7, 2018

নির্বাচন ও ভোটমুখী প্রকল্প

নির্বাচন কমিশনের সচেতন হওয়া উচিত

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল ও তার সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে ভোটার আকর্ষণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করা শুধু অশোভন ও অন্যায্যই নয়, সুস্থ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য ক্ষতিকরও বটে। কারণ, এর ফলে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সব প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য সমান সুযোগ ব্যাহত হয়, যা নির্বাচনের ফলাফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারকে সে পথেই এগোতে দেখা যাচ্ছে।

এই নির্বাচনী বছরে সাংসদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির ইত্যাদি নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে তিনটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এসবের পেছনে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ১৬ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। জানা গেছে, এ রকমের আরও তিনটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সাংসদদের কাজ মূলত আইন প্রণয়ন করা এবং সরকারি কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি নিশ্চিত করা; স্কুল-কলেজ ইত্যাদি নির্মাণ করা নয়। নির্বাচনী বছরে এসব প্রকল্প হাতে নেওয়ায় এটা খুবই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য।

এবং উদ্দেশ্যটা বেশি স্পষ্ট হচ্ছে আরও দুটি খবর থেকে।

প্রথমটি হলো, সড়ক ও নালা নির্মাণের জন্য ২৮১টি পৌরসভাকে দেওয়া হচ্ছে মোট ৩ হাজার ৪৬৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতিটি পৌরসভাকে ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে গিয়েও একটা অস্বাভাবিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প নামে চলমান একটি প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার আট মাস আগেই দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করা হয়েছে প্রায় তিন গুণ ব্যয় বাড়িয়ে। কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন, পৌরসভাগুলোর উন্নয়নকাজের সঙ্গে রাজনীতি বা জাতীয় নির্বাচনে ভোটার আকর্ষণের সম্পর্ক কী। এর সরল উত্তর হলো, পৌরসভার মেয়রদের ওপর স্থানীয় সাংসদদের প্রভাব থাকে এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে এ ধরনের প্রকল্প তাঁদের জন্য সুবিধার কারণ হয়। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার আগেই তাড়াহুড়ো করে দ্বিতীয় পর্যায় শুরু করার যুক্তি নির্বাচনের আগে ভোটারদের খুশি করা ছাড়া আর কী হতে পারে?

দ্বিতীয় খবরটি রীতিমতো তুঘলকি কাণ্ড: প্রায় ৬০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে জনগণের সামনে ক্ষমতাসীনদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সাফল্যগাথা প্রচার করার উদ্দেশ্যে! সরকারের সাফল্য প্রচারের জন্য রাষ্ট্রীয় বেতার-টেলিভিশনের নিরন্তর প্রচারণা ক্ষমতাসীনদের কাছে যথেষ্ট মনে হচ্ছে না। তাই এবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ অধিদপ্তরকে বিশেষ প্রকল্প হাতে নিতে হলো: দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী, সংগীতানুষ্ঠান, নারী সমাবেশ ইত্যাদি নানা কর্মসূচি চালানো হবে; সেসব কর্মসূচি যাঁরা উপভোগ করতে যাবেন, তাঁদের আপ্যায়নও করা হবে। এসব প্রচারণা অভিযানের পেছনে ব্যয় করা হবে সরকারি তহবিল, অর্থাৎ জনগণের টাকা।

নির্বাচনের বছরে ক্ষমতাসীনেরা ভোটারদের মন জয় করার উদ্দেশ্যে তাঁদের ইচ্ছেমতো প্রচারাভিযান চালাতেই পারেন। তবে তা করা উচিত ক্ষমতাসীন দলের তহবিল খরচ করে; এ ধরনের কাজে ব্যয় করার জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ প্রদানের নৈতিক অধিকার সরকারের নেই। কারণ, এভাবে নির্বাচনী প্রচারণা পরিবেশে অসমতার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের মতো হাতিয়ার থাকার পরও সরকারের সাফল্যের প্রচারণায় যোগাযোগ অধিদপ্তরের ৬০ কোটি টাকার প্রকল্প জনস্বার্থের বিবেচনায় আপত্তিকর।

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। উল্লিখিত সরকারি উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে তা ক্ষুণ্ন হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের এদিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।  
  • প্রথম আলো/সম্পাদকীয়/মে ৭,২০১৮

No comments:

Post a Comment