ইয়ামিন সাজিদ
ঢাকার গাবতলীতে ১০৮ মেগাওয়াটের ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২০১১ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে চুক্তি করে সংসদ সদস্য (এমপি) আসলামুল হকের ঢাকা নর্থ ইউটিলিটি কোম্পানি লিমিটেড। চুক্তি অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা। যদিও সাত বছরেও সম্পন্ন হয়নি প্রকল্পটি।
কেরানীগঞ্জের বছিলায় একই সক্ষমতার আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বিপিডিবির সঙ্গে ২০১১ সালে চুক্তি করে এমপি আসলামের আরেক কোম্পানি ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ার লিমিটেড। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও ২০১২ সালের অক্টোবরে নির্মাণ শেষে চালু করার কথা ছিল। সেই সময় পেরোনোর ছয় বছর পরও বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অগ্রগতি শূন্য। গত জুলাই পর্যন্ত কোনো আর্থিক অগ্রগতিই হয়নি প্রকল্পটির।
আদৌ অগ্রগতি না হওয়ায় আসলামুল হকের এ দুই প্রকল্প নিয়ে বিরক্ত ও হতাশ বিপিডিবি। সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা প্রকল্পটি বাতিলের পরামর্শ দিয়েছেন। গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত বিদ্যুৎ বিভাগের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হয়। বিপিডিবির পরবর্তী বোর্ডসভায় প্রকল্প বাতিলের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে মাসিক পর্যালোচনা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।
বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সর্বশেষ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত জুলাই পর্যন্ত ঢাকার গাবতলীতে ১০৮ মেগাওয়াটের ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আর্থিক অগ্রগতি শূন্য। গত আট বছরে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ।
প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, ফিন্যান্সিয়াল ক্লোজারের কারণেই বিদ্যুৎ প্রকল্পটির এ দুরবস্থা। ব্যাংক গ্যারান্টির মেয়াদও শেষ হয়েছে প্রকল্পটির। গত ১৮ জুলাই ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়নের জন্য ব্যাংক বরাবর নোটিস দেয়া হয়।
কেরানীগঞ্জের বছিলায় ১০৮ মেগাওয়াটের ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ার লিমিটেডের বিদ্যুৎ প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতিও শূন্য। ভৌত অগ্রগতি কিছু হলেও তা ৫ শতাংশ। জমি ভরাট ছাড়া আর কোনো ভৌত অগ্রগতি নেই প্রকল্পটির। ব্যাংক গ্যারান্টি বাতিল হওয়ায় প্রকল্পটি বাতিল করা হবে মর্মে বিদ্যুৎ প্রকল্পটির মূল প্রতিষ্ঠান মাইশা গ্রুপকে গত জুলাইয়ে চিঠিও দেয় বিপিডিবি। এছাড়া বিপিডিবির বোর্ডসভায় প্রকল্পটি বাতিলের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে বিপিডিবির সদস্য (উৎপাদন) সাঈদ আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, এ বিষয়ে বোর্ডসভায় আলোচনা হয়েছে। প্রকল্পটি বাতিলের বিষয়েও আলোচনা হয়। তবে স্পন্সর কোম্পানি তাদের ব্যাংক গ্যারান্টি নবায়ন করার কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আবারো সময় দেয়া হয়। কয়েকটি শর্তের ভিত্তিতে কোনো কোম্পানির সঙ্গে প্রকল্প চালু রাখা বা বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়। ব্যাংক গ্যারান্টি এসব শর্তের একটি।
বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা নর্থ ইউটিলিটি কোম্পানি লিমিটেড ও ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ার লিমিটেড মাইশা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আসলামুল হক। প্রকল্পের দুরবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। সেটা বিপিডিবি ও আমাদের বিষয়।’ এ নিয়ে আর কিছু বলতে চাননি তিনি।
জানা যায়, আসলামুল হকের প্রতিষ্ঠান মাইশা গ্রুপের আবাসন থেকে শুরু করে বিদ্যুৎকেন্দ্র, এগ্রো ও টেলিকম খাতে ব্যবসা রয়েছে। তার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বর্তমানে চালু আছে। ১০৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কেরানীগঞ্জে অবস্থিত। ২০১১ সালে সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড নামে কেন্দ্রটি নির্মাণে বিপিডিবির সঙ্গে চুক্তি করে মাইশা গ্রুপ। বর্তমানে এ কেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ১০ টাকা ২৭ পয়সা দরে কিনছে বিপিডিবি। ২০১৭ সাল শেষে ন্যাশনাল ব্যাংকে সিএলসির মূল প্রতিষ্ঠান মাইশা গ্রুপের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা।
এক বছরের প্রকল্প সাত বছরে বাস্তবায়ন করতে না পারলেও নানা খাতে ব্যবসা বাড়াচ্ছেন এমপি আসলামুল হক। নতুন করে যোগাযোগ খাতে ব্যবসা বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে তার। এজন্য আকাশপথ ও সড়ক যোগাযোগে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন তিনি। সড়কপথে যোগাযোগের জন্য নিজ খরচে গাবতলী ও আমিনবাজার থেকে আজিমপুর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করার পরিকল্পনা নিয়েছে মাইশা গ্রুপ। মোট ১০ কিলোমিটারের এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ছয় লেনের রাস্তা হবে। বিআরটি স্টেশন হবে মোট আটটি। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর টোল ও বিআরটি বাস ভাড়ার মাধ্যমে আয়ের লক্ষ্য রয়েছে আসলামুল হকের।
- কার্টসিঃ বনিক বার্তা/১৪ অক্টোবর ২০১৮
No comments:
Post a Comment