Search

Wednesday, October 10, 2018

গায়েবি মামলা হাইকোর্টের বিভক্ত আদেশ


রাজধানীসহ সারা দেশে বিএনপি’র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও দলটির আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ ও ‘কাল্পনিক’ মামলা বন্ধ চেয়ে করা রিটের শুনানিতে বিভক্ত আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এ বিষয়ে রুল জারি করলেও কনিষ্ঠ বিচারপতি তাতে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, রিট আবেদনটি সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয়নি মর্মে তা খারিজ করা হলো। গতকাল এ সংক্রান্তে শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিভক্তি আদেশ দেন। এর মধ্যে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী কথিত এসব ফৌজদারি মামলা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করা হবে না, এসব মামলা দায়েরকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। 

পাশাপাশি ঢাকা মহানগর এলাকায় রিট আবেদনকারীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা দায়ের করা হয়েছে সেই মামলাগুলো তদারকি করতে ও অনুসন্ধানের পদক্ষেপ নিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে পুলিশ মহাপরিদর্শককে আদেশ পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে হলফনামা আকারে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকার পুলিশ কমিশনার, গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (নর্থ জোন), রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয় আদেশে। 

অন্যদিকে বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল আদেশে বলেন, রিট আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে যেহেতু ফৌজদারি মামলা হয়েছে তাই জনস্বার্থে বা সংক্ষুব্ধ হয়ে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এভাবে রিট আবেদন করতে পারেন না।

দরখাস্তকারীরা ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যথাযথভাবে এই আবেদনটি করেননি।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, বিষয়টি এখন প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে এবং প্রধান বিচারপতি শুনানির জন্য একটি একক বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেবেন। এর আগে সোমবার এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। ওইদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। গতকাল রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও রিটের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানি করেন। গত ২৩শে সেপ্টেম্বর এ রিট আবেদনটি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ তিন আইনজীবী। 

গতকাল শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ফৌজদারি আইনের যে বিধান তাতে এইসব মামলায় প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা আছে। তাই এই মামলাগুলোর ব্যাপারে রিট আবেদন করা চলে না। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক নেতা বা আইনজীবীরা যে অপরাধ করেন না তা তো নয়। এখন তদন্তে যদি দেখা যায় যে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই তাহলে তারা এমনিতেই অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। অন্যদিকে শুনানিতে রিটকারী আইনজীবী খন্দকার মাহবুব সংবাদপত্রের প্রতিবেদন উল্লেখ করে রিটের পক্ষে যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, এসব মামলা বন্ধে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু তারপরও তা বন্ধ হয়নি। শুনানিতে এসব মামলার বিষয়ে তদন্ত করার জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের আর্জি জানান তিনি। 

আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, শুনানি নিয়ে দু’জন বিচারক দু’রকম মতামত দেয়ায় বিষয়টি এখন প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে তৃতীয় কোনো বিচারকের কাছে পাঠানো হবে। রিটকারী আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নাগরিকের মৌলিক অধিকার বলবৎ থাকা এবং পুলিশের মিথ্যা মামলা ও হয়রানি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই রিট আবেদনটি করেছিলাম। হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ শুনানি নিয়ে বিভক্ত আদেশ দিয়েছেন। তাতেও আমরা খুশি। একজন বিচারপতি রুল দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিভক্ত আদেশ হওয়ায় বিষয়টি এখন প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে এবং প্রধান বিচারপতি অন্য একটি বেঞ্চ গঠন করে দেবেন। 

এর আগে গত ২৩শে সেপ্টেম্বর এই রিট আবেদন করেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী ও দলটির আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া। রিটে ইতিমধ্যে দায়ের হওয়া মামলাগুলো তদন্তে জাতিসংঘের মানবাধিকার শাখা, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের প্রতিনিধি এবং পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নয় এমন একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে সাত সদস্যের একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের আবেদন করা হয়। একই সঙ্গে যে সব মামলা দেয়া হয়েছে সেগুলোর তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রম যাতে আর অগ্রসর না হয়, কাউকে যাতে হয়রানি করা না হয় এবং যারা মামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয় রিটে। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ১০ অক্টোবর ২০১৮

No comments:

Post a Comment