- ফখরুল, মওদুদ, মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর আসামি
- আমীর খসরু বিদেশে ভ্রমণরত থাকলেও সমাবেশে সরকারবিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে
- জনসভায় অংশ না নিলেও অভিযুক্তের তালিকায় নাম এসেছে রুহুল কবীর রিজভীর
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় দলীয় কর্মীদের আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতির আহ্বান জানিয়ে সরকারবিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে গতকাল মামলা দিয়েছে পুলিশ।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, রোববার রাত সোয়া ৮টার দিকে মগবাজার এলাকায় বিএনপি সমর্থকরা হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়, হত্যার উদ্দেশে পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়, যানবাহন ভাঙচুর করে এবং পুলিশের কাজে বাধা দেয়। বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশেই এই অপরাধ সংগঠিত হয়েছে বলে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তারকৃত কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে পুলিশ।
গতকাল সন্ধ্যায় ডেইলি স্টারের একজন প্রতিবেদক মামলায় উল্লেখিত ঘটনাস্থল মগবাজার রেলগেট এলাকার দোকানদার, বাসিন্দা ও পথচারী মিলিয়ে অন্তত ১০০ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা সবাই জানিয়েছেন, রোববার ওই এলাকায় ভাঙচুর, হাতবোমার বিস্ফোরণের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
তবে কয়েকজন ফেরিওয়ালা বলেছেন, মগবাজার ফ্লাইওভারের কাছ থেকে ওইদিন বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে বেশ কয়েকজন লোককে ধরে নিয়ে যায় সাদা পোশাকের একদল লোক।
মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মওদুদ আহমেদ, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং মঈন খানকেও আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগে পুলিশ বলছে, রোববারের সমাবেশে বিএনপির নেতারা সরকারবিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার পর ফেরার পথে দলের সমর্থকরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়।
যদিও মজার বিষয় হচ্ছে, আমীর খসরু গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। আর রিজভী সমাবেশে যোগই দেননি।
হাতিরঝিল থানায় দায়ের করা এই মামলায় বিএনপি নেতা রুহুল কবীর রিজভী, আমান উল্লাহ আমান এবং রুহুল কুদ্দুস তালুকদারসহ দলটির আরও ৪৫ জন নেতা-কর্মীর নাম দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে রমনা, শাহবাগ, মতিঝিল, পল্টন, যাত্রাবাড়ী, কদমতলি, লালবাগ এবং ধানমন্ডি থানাতেও রোববার বিকেল ও সোমবার সকালের মধ্যে বিএনপির নামি-বেনামি আরও কয়েকশো নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অন্তত ৯টি মামলা করেছে পুলিশ।
তাদের সবার বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড, ভাঙচুর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বিবরণীতে পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পুলিশ বলছে, ফখরুল এবং বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়েই তারা অপরাধে জড়িত হয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- কুমিল্লা জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও এমপি প্রার্থী মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরফুদ্দিন, ঢাকা ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রাশেদ বিন সোলায়মান, ভালুকা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন এবং ঢাকার ৪১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি সামছুল হক।
পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থল থেকেই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আলামত হিসেবে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি বাঁশের লাঠি, দেড় লিটার পেট্রল, বিস্ফোরিত ককটেলের অংশবিশেষ জব্দ করেছে।
বিএনপির একজন আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেছেন, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার এড়িয়ে আগাম জামিনের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।
তিনি আরও বলেছেন, এই ১০টি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপির তিন শতাধিক নেতা-কর্মীকে গতকাল ঢাকার অপর একটি আদালতে হাজির করা হয়। এর মধ্যে, কয়েকজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয় এবং বাকিদের জেল-হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে ৮৭টি মামলার আসামি মির্জা ফখরুল গতরাতে ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘সবগুলো মামলাই মিথ্যা। আমাদের হয়রানির জন্যই এসব মামলা সাজানো হয়েছে।’
- ডেইলি স্টার/ ০২ অক্টোবর ২০১৮
No comments:
Post a Comment