প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের সঞ্চালন লাইন স্থাপন প্রকল্প বন্ধ করে দেয়া হয় কয়েক বছর আগে। এ প্রকল্পের নামে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবির) কাছ থেকে নেয়া ২৫০ কোটি টাকার ঋণ ৫ শতাংশ সুদহারে পরিশোধ করতে হচ্ছে পেট্রোবাংলাকে। প্রকল্প বন্ধের পর অযত্ন-অবহেলায় খোলা আকাশের নিচে রয়েছে গ্যাস বিতরণের ১৪৮ কোটি টাকার পাইপ। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি সরকারের নির্দেশে নেয়া হলেও গ্যাসস্বল্পতায় সরকারের নির্দেশেই এটি বন্ধ করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, ২০০৯ সালে যখন প্রকল্প নেয়া হলো, তখনো সবাই জানত, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পাইপে সরবরাহের মতো গ্যাস দেশে অবশিষ্ট নেই। তার পরও কার পরামর্শে এমন একটি শ্বেত হস্তীমার্কা প্রকল্প নেয়া হলো, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। অদূরদর্শিতার কারণে পেট্রোবাংলাকে প্রতি বছর সুদের ঘানি টানতে হচ্ছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির পাশাপাশি জ্বালানি বিষয়ে সরকারের নীতির পরিবর্তনের কারণেই প্রকল্পটি থেকে সরে আসা হয়েছে। বর্তমানে ক্যাপটিভ পাওয়ার, সিএনজিসহ আবাসিকে গ্যাস ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ক্যাপটিভ পাওয়ার, সিএনজি ও আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে ব্যাপারে সরকারের নীতির পরিবর্তনের কারণেই প্রকল্পটি অসমাপ্ত রাখার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রকল্পের জন্য কেনা সামগ্রী সরকারের অন্য কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়, সরকার ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে আর আগ্রহী নয়। বলা যায়, সরকার এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। এর অর্থ হলো, ওই অঞ্চলের মানুষ গ্যাস পাবে না, গ্যাসভিত্তিক কোনো শিল্প-কারখানা সেখানে গড়ে উঠবে না। আমরা যে সুষম উন্নয়ন বা আঞ্চলিক উন্নয়নের গুরুত্বের কথা সবসময় উচ্চারণ করি, এ সিদ্ধান্তে তা ব্যাহত হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পিছিয়ে থাকবে একটি বিরাট এলাকা।
জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রকল্প কোনো অজুহাতেই বন্ধ করে দেয়া সঠিক সিদ্ধান্ত বলে বিবেচিত হতে পারে না। সরকারের বা মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল, কেন প্রকল্পের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক হয়নি, কেন বারবার সময় বাড়িয়েও কাজ সম্পন্ন করা যায়নি, তা খুঁজে বের করা। এজন্য যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে, তা দূর করা। এই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কোম্পানিকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা। এ শ্লথতা, সময়ক্ষেপণ ইত্যাদির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বর্তমানে যেসব এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে, সেখানেই প্রয়োজন মেটানো যাচ্ছে না। গ্যাস সংকট নিয়েই চলছে শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন। সমুদ্র এলাকায় গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। স্থলভাগেও নতুন বড় গ্যাসের আধার সাম্প্রতিক সময়ে পাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।
চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাস সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সংকট মোকাবেলায় শিল্প-কারখানায় ধীরে চলো নীতিতে গ্যাস দেয়া হচ্ছে। কোনোভাবে জোড়াতালি দিয়ে, রেশনিং করে গ্যাসের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন পাইপলাইনে গ্যাস দেয়া একেবারেই অনিশ্চিত হয়ে আছে। অথচ সংকটের তথ্য জেনেই নেয়া হয়েছিল ওই প্রকল্প। এক্ষেত্রে প্রকল্প গ্রহণের আগে আরো তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা উচিত। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নেয়া বা নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প গ্রহণ করা হোক না কেন, সবক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও যথাযথ জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। নইলে অর্থের এমন অপচয় বন্ধ হবে না। এতে জনগুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নও বাধাগ্রস্ত হয়।
কার্টসি: বণিকবার্তা / ০২ অক্টোবর ২০১৮
No comments:
Post a Comment