আওয়ামী লীগের সাংসদ পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির বিরুদ্ধে গুলি চালিয়ে দুজনকে হত্যা মামলার রায় বিচারক অধিকতর যুক্তিতর্কের প্রয়োজন বলে মনে করায় আটকে গেছে। মঙ্গলবার ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আল মামুনের আদালতে তিন বছর আগের এই আলোচিত হত্যা মামলার রায় ঘোষণার কথা ছিল।
কিন্তু রনি দোষী কি না সে সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে অধিকতর যুক্তিতর্কের প্রয়োজন মনে করছেন বিচারক। যদিও বিচারক মো. আল মামুনই গত ১০ এপ্রিল রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আজ ৮ মে দিন ঠিক করে দিয়েছিলেন রায় ঘোষণার জন্য।
এ বিষয়ে আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. শাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, অধিকতর যুক্তিতর্ক কবে শুরু হবে, তা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এর আগে ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ মামলার শুনানি চললেও ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে মামলাটি প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসে। ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে নিউ ইস্কাটনে গাড়ি থেকে ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে আবদুল হাকিম নামের এক রিকশাচালক এবং ইয়াকুব আলী নামের এক অটোরিকশাচালক আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ এপ্রিল হাকিম এবং ২৩ এপ্রিল ইয়াকুব মারা যান।
এ ঘটনায় নিহত হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম ১৫ এপ্রিল রমনা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ওই বছর ৩১ মে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের এমপি পিনু খানের বাসা থেকে তার ছেলে রনিকে আটক করে। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই রয়েছেন।
তদন্ত শেষে ওই বছরের ২১ জুলাই রনিকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের এসআই দীপক কুমার দাস। ‘খুনের উদ্দেশ্য না থাকলেও’ আসামি জানতেন যে তার গুলিতে কেউ হতাহত হতে পারে- এই যুক্তিতে হত্যার অভিযোগ এনে এ মামলায় ৩০২ ধারায় অভিযোগপত্র দেন তিনি।
নিহতদের শরীরে পাওয়া গুলির ব্যালাস্টিক রিপোর্ট, রনির অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের প্রতিবেদনসহ মোট ১৫টি আলামত অভিযোগপত্রের সঙ্গে যুক্ত করার পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৩৭ জনকে সাক্ষী করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
গত বছর ৬ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে জোড়া খুনের এ মামলায় রনির বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার দ্বিতীয় মহানগর দায়রা জজ সামছুন নাহার। একইসঙ্গে রনির গাড়িচালক ইমরান ফকির এবং ঘটনার সময় গাড়িতে থাকা তার দুই বন্ধু ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দিও দেন।
সেসময় ঘটনার দিন কালো রঙের যে প্রাডো গাড়ি থেকে রনি গুলি চালিয়েছিলেন সেটি সংসদ সদস্য পিনু খানের বলে গণমাধ্যমে খবর আসে।
রনির বন্ধু কামাল মাহমুদ ঢাকার হাকিম আদালতে জবানবন্দিতে বলেছিলেন, লাইসেন্স করা পিস্তল থেকে সাংসদপুত্রই সেদিন গুলি ছুড়েছিলেন।
অন্যদিকে রনির পিস্তলের গুলিতেই ইয়াকুব ও হাকিমের মৃত্যু হয় বলে পরে ব্যালাস্টিক পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়ার কথা জানায় পুলিশ।
তবে সাংসদপুত্র রনি ৩০ অক্টোবর আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
- Courtesy: BanikBarta/ May 8, 2018
No comments:
Post a Comment