Search

Thursday, January 10, 2019

চট্টগ্রামে ৮ দিনে ৮ খুন

নির্বাচন পরবর্তী আট দিনে চট্টগ্রামে ৮টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরে তিনটি আর জেলার চার উপজেলায় ঘটেছে ৫ খুনের ঘটনা।  এসব ঘটনাকে নির্বাচনী সহিংসতা নয় উল্লেখ করলেও ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই ঘটেছে বলে জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (অপরাধ ও অভিযান) অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম। 

তিনি বলেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কারণে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষ ও খুনোখুনির মতো ঘটনা ঘটছে চট্টগ্রামে। তবে নির্বাচন পরবর্তী আট দিনে ৮টি খুনের ঘটনা পুলিশের উদ্বেগের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।

৭ই জানুয়ারি সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর ডবলমুরিং থানার পাহাড়তলী বাজার এলাকায় রেললাইনের পাশ থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক মহিউদ্দিন সোহেলের (৩৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। 

চাঁদাবাজির ঘটনায় বাজারের ব্যবসায়ীদের গণপিটুনিতে সোহেল খুন হন, প্রথমে এমন খবর প্রচার পায়। ডবলমুরিং থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিমও একই ভাষ্য দেন চট্টগ্রামে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের। এমনকি সোহেলকে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী বলেও আখ্যা দেন।

কিন্তু সোহেলের ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বেরিয়ে আসে অন্যরকম তথ্য। রিপোর্টে সোহেলের শরীরে তিনটি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তাতে প্রকাশ পায় সোহেল খুনের আসল রহস্য। সরজমিন অনুসন্ধানে মেলে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারের নতুন কাহিনী। 

এলাকাবাসী জানান, সোহেল চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী ছিল ঠিকই। পাহাড়তলী বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সে নিয়মিত চাঁদা আদায় করত। একইভাবে চাঁদাবাজি করত তার প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী ওসমান খান। চাঁদাবাজির আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল দ্বন্দ্ব। আর ঘটনার দিন ওসমান গ্রুপের সন্ত্রাসীরা ছুরিকাঘাতে সোহেলকে হত্যা করে। 

সোহেলের পরিবার জানায়, ওসমান গ্রুপের লোকজন ওইদিন সোহেলের ওপর হামলা চালায়। সোহেল নিজেকে বাঁচাতে নিজ বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এ সময় তারা বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। পুড়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে সোহেল বাজারের দিকে ছুটে গেলে ওসমান গ্রুপের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ছুরি মেরে তাকে হত্যা করে। আর তা ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। 

ওই দিনগত গভীর রাতে ডবলমুরিং থানার মোল্লাপাড়া এলাকায় ইউসুফ মিয়ার বাড়ির সীমানা দেয়ালের ভেতরে একটি আমগাছের নিচে প্লাস্টিকের বস্তাবন্দি অবস্থায় আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। 

ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহির হোসেন জানান, ওই নারীর শরীরের আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। ধারণা করা হচ্ছে, শ্বাসরোধ করেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। অজ্ঞাত ওই নারীর পরনে সালোয়ার কামিজ ছিল। স্থানীয়রা কেউ তাকে চিনতে পারেনি। বিছানার চাদরে মুড়িয়ে লাশটি বস্তায় ভরে এর চারপাশ রশি দিয়ে সেলাই করে ফেলে দেয়া হয় বলে জানান তিনি।

একই দিনে নগরীর পতেঙ্গা থানার মাইজপাড়া এলাকায় মো. ফারুক (২৮) নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ফারুক পতেঙ্গা থানার মাইজপাড়া এলাকার মৃত খাজা আহমেদের ছেলে। 

এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান পতেঙ্গা থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া। তিনি জানান, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে ফারুককে পিটিয়ে হত্যা করে গ্রেপ্তারকৃত রাশেদ (৩৫), মামুনুর রশিদ (৩০), সজীব (২০) ও ইলিয়াছ (৩২)সহ আরও কয়েকজন সহযোগী। 

এদিকে একইদিনে জেলার সন্দ্বীপ উপজেলায় ইয়াবা বিক্রির টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে খুন হন এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইউসুফ মনির ওরফে কালা মনির (৩২)। মনির সন্দ্বীপ উপজেলা যুবলীগের কর্মী বলে জানিয়েছেন পুলিশ। 

৬ই জানুয়ারি হাটহাজারী উপজেলার শ্রীকারপুর ইউনিয়নের সালাম সাহেবের বাড়ির পাশের ধানক্ষেত থেকে নুরুল আলম নামে (৫৫) এক ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। 

আগের দিন রাউজান উপজেলার উরকিরচর ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে নুরুল আলমকে কুপিয়ে আহত করার পর দুর্বৃত্তরা তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় বলে জানান রাউজান থানার ওসি মো. কেফায়েত উল্লাহ। 

একই সময়ে চট্টগ্রাম থেকে অপহৃত এক ব্যবসায়ীর লাশ বাঁশখালী উপজেলার কালীপুর থেকে উদ্ধার করে বাঁশখালী থানার পুলিশ। 

৩১শে ডিসেম্বর রাতে সীতাকুণ্ড উপজেলার কলেজ মোড় এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে দাউদ সম্রাট (৩৫) নামে এক যুবককে খুন করে প্রতিপক্ষ। দাউদ সম্রাট ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে জানান সীতাকুণ্ড থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন। 

সর্বশেষ ৮ই জানুয়ারি মঙ্গলবার ভোর রাতে সীতাকুণ্ডু উপজেলার বাড়বকুণ্ডু রেলওয়ে কলোনির নিজ বাসার ভেতরে খুন হন এমরান হোসেন রিয়াদ (২৮) নামের এক মাদরাসা শিক্ষক। 

পুলিশের ধারণা, এলাকায় মাদকদ্রব্য বিস্তার রোধ করতে গিয়ে খুন হন রিয়াদ। তিনি সীতাকুণ্ডু আলিয়া মাদরাসার ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক বলে জানান ওসি দেলোয়ার হোসেন। 

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা এ প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেন, খুনের ঘটনাগুলো বিছিন্ন ঘটনা। এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা অবনতিরও কিছু নেই। তবে পুলিশ সর্তক রয়েছে। প্রত্যেক ঘটনায় মামলা হয়েছে থানায়। পুলিশ তদন্ত করছে। 

  • Courtesy: Manabzamin/ Jan 10, 2019

No comments:

Post a Comment