বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষককে হত্যার হুমকি দেয়ায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। শিক্ষককে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাকর্তৃক হত্যার হুমকির প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এই হত্যা হুমকির সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস, পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
অন্য দিকে, অভিযুক্ত একজন শিক্ষককে বহিষ্কারের দাবিতে রাজপথে নেমেছেন ছাত্রলীগের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা। ফলে শিক্ষক-কর্মকর্তা আর কর্মচারীদের মুখোমুখি অবস্থানে শিক্ষার্থীরা। এই দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে গোটা ক্যাম্পাসে। সংঘর্ষের আশঙ্কায় ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ দিকে, শিক্ষককে ছাত্রলীগ নেতাকর্তৃক হত্যার হুমকির ঘটনা তদন্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন ভিসি ড. আনোয়ার হোসেন।
গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় কনফারেন্স রুমে এক সাংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আশ্বাস প্রদান করেন। এ সময় যারা যশোর শহরে বসে বিশ্ববিদ্যালয়কে অশান্ত করার হীন চেষ্টা করছে তাদের কঠোর হস্তে দমন করার জন্য সরকার ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২১ লাখ টাকার ফার্নিচার সরবরাহকে কেন্দ্র করে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট ও রিজেন্ড বোর্ডের সদস্য সিনিয়র শিক্ষক ড. ইকবাল কবির জাহিদকে মোবাইল ফোনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
একপর্যায়ে তিনি প্রফেসর ড. জাহিদকে হত্যার হুমকি দেন বলে একটি মোবাইল কল রেকর্ড শুনিয়ে ড. জাহিদ সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিপুল বেনামে বিশ্ববিদ্যালয়ের টেন্ডারে অংশ নিয়ে ২১ লাখ টাকার ফার্নিচার সরবরাহ করে। যা অত্যন্ত নিম্নমানের। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই নিম্নমানের ফার্নিচার বুঝে নিয়ে বিল ছাড় না করার কারণে তিনি ড. ইকবাল কবির জাহিদকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন।
একই সাথে এই ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে তিনি গত সংসদ নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত নৌকা প্রতীক ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে ফেলার ঘটনাকে পুঁজি করে একটি মনগড়া বক্তব্য তৈরি করে একজন সিনিয়র শিক্ষককে হত্যার হুমকি প্রদানসহ তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন।
একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়কে বহিরাগত সন্ত্রাসীমুক্ত করার দাবিতে অনঢ় শিক্ষকসমাজ। এ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. নাজমুল হাসান।
এ দিকে নৌকা প্রতীককে অবমাননা করার অপরাধে শিক্ষক ড. জাহিদ ইকবালের বিচারের দাবিতে ছাত্রলীগের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেছে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। তারা শিক্ষক ড. ইকবাল কবির জাহিদকে রাজাকার পরিবারের সদস্য এবং সাবেক শিবির নেতা বলে অভিহিত করে অবিলম্বে তার অপসারণ দাবি করেন। এসব দাবির পক্ষে-বিপক্ষে গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৃথক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে উভয়পক্ষ। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও ভিসি প্রশাসন পৃথকভাবে এই বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
ভিসি ড. আনোয়ার হেসেন বলেন, আমার জীবন থাকতে কোনো শিক্ষককে অপমানকারী এই ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে পারবে না। শহর থেকে কলকাটি নাড়ার মাধ্যমে একটি মহল এই সম্ভাবনাময় বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করার চক্রান্ত করছে। এটা হতে দেয়া হবে না। যারা নিম্নমানের ফার্নিচার সরবরাহ করে গায়ের জোরে বিল আদায় করে নিতে চায় তারাই এই হত্যার হুমকি প্রদান করে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে শুধু নয়; দেশের গোটা শিক্ষকসমাজকে কলুষিত করেছেন। তিনি এই ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে দোষীদের চিহ্নিতপূর্বক শাস্তি নিশ্চিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সহায়তা কামনা করেন।
- নয়া দিগন্ত/ জানু ১৩, ২০১৯
No comments:
Post a Comment