Search

Monday, January 14, 2019

ছাত্রলীগ–শিক্ষক সমিতি মুখোমুখি অবস্থানে


বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঝোলানো হয়েছিল নৌকা প্রতীকের ফেস্টুন। সম্প্রতি তার পাশেই ক্যাম্পাসে র‌্যাগিংবিরোধী ফেস্টুন টাঙায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যা সরিয়ে দেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। এ নিয়ে মুঠোফোনে এক শিক্ষকের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার। এর জেরে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থেকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে শিক্ষক সমিতি ও ছাত্রলীগ। গতকাল শনিবার উভয় পক্ষ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

শিক্ষকদের অভিযোগ, গত মঙ্গলবার যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল কবির জাহিদকে মুঠোফোনে ‘রাজাকার’ বলে অকথ্য ভাষায় গালি ও হুমকি দেন। পাল্টা অভিযোগ করে ছাত্রলীগ বলেছে, ওই শিক্ষক ছাত্রলীগ নিয়ে ‘কটূক্তি’ ও গালিগালাজ করেছেন।

গতকাল বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনের সামনে রাস্তায় মানববন্ধন শুরু করে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে মানববন্ধন পণ্ড করে দেন। মানববন্ধনে ব্যবহৃত মাইক ও মাইক্রোফোনও ভাঙচুর করা হয়। পরে শিক্ষকেরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে আবার মানববন্ধন শুরু করেন। এ সময় কর্মসূচির পাশে পুলিশ মোতায়েন ছিল। তারপরও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা ওই মানববন্ধনের পাশে মাইক নিয়ে পাল্টা অবস্থান নেন। শিক্ষকদের বক্তব্যের সময়ে তাঁরা মাইকে উচ্চ স্বরে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ এবং ‘শিক্ষক ইকবাল কবিরের অপসারণ চাই’ স্লোগান দিতে থাকেন। যে কারণে শিক্ষকেরা সেখানেও ঠিকভাবে কর্মসূচি পালন করতে পারেননি।

কর্মসূচি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, শিক্ষক ইকবাল কবিরকে হুমকির বিচার ও শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকেরা পাঠদান করবেন না। কোনো ধরনের পরীক্ষায় অংশ নেবে না শিক্ষকেরা।

এ সময় ছাত্রলীগের পক্ষে নেতৃত্ব দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ারা আজমিরা বলেন, ‘ওই শিক্ষককে অপসারণ না করা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করছি। কাল রোববার (আজ) থেকে অনশন কর্মসূচি শুরু হবে।’

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল দুপুরে উপাচার্যের সম্মেলনকক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বছর ক্যাম্পাসে র‌্যাগিংবিরোধী পোস্টার টাঙানোর সিদ্ধান্ত হয়। সম্প্রতি ক্যাম্পাসের পাঁচটি স্থানে ওই পোস্টার ও ফেস্টুন ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। একটি ফেস্টুন নির্বাচনের জন্যে ঝোলানো নৌকা প্রতীকের পাশে রাখা হয়। ছাত্রলীগের কয়েকজন ওই ফেস্টুন ছিঁড়ে দিয়েছেন। পরে আনোয়ার হোসেন (ছাত্রলীগ নেতা) নামে বহিরাগত এক যুবক শিক্ষক ইকবাল কবির জাহিদকে মুঠোফোনে হুমকি দেন। শিক্ষকেরা নিরাপত্তার দাবিতে মানববন্ধন করতে গেলে হুমায়ারা আজমিরার নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি অংশ শিক্ষকদের কর্মসূচিতে বাধা দেয়। তারা শিক্ষকদের কর্মসূচির মাইক ভেঙে দিয়েছে। কয়েকজন শিক্ষককে তারা ধাক্কাও দিয়েছে, যা শিক্ষকদের জন্য চরম অপমান ও লজ্জাজনক।

উপাচার্য বলেন, এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় চালবে।

উপাচার্য আরও বলেন, র‌্যাগিংয়ের নামে গত বছর নতুন ভর্তি হওয়া কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে অত্যাচার-নির্যাতন করেন জ্যেষ্ঠ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এক ছাত্রী ভর্তি বাতিল করে চলে যান। র‌্যাগিংয়ের অপরাধে এক ছাত্রের বিরুদ্ধে গত বছর শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। আর যাতে কেউ র‌্যাগিংয়ের শিকার না হন, সে জন্য সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে র‌্যাগিংবিরোধী পোস্টার লাগানো হয়।

ছাত্রলীগের নেত্রী হুমায়ারা আজমিরা বলেন, ‘আমরাও র‌্যাগিংয়ের বিরোধী। ওই পোস্টারটি নৌকা প্রতীকের পোস্টার সরিয়ে সেখানে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে পোস্টারটি পরে আমরা সরিয়ে দিয়েছি। শিক্ষক ইকবাল কবির এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে অকথ্য ভাষায় কথা বলেন।’

শিক্ষক ইকবাল কবির বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। অথচ আমাকে রাজাকার বলে ফোনে হুমকি দিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। আমি এতে ভীষণভাবে অপমান বোধ করছি। আমি এর বিচার চাই।’

জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি কোনো শিক্ষককে হুমকি দিইনি। তিনি (ওই শিক্ষক) ছাত্রলীগ সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন। তাই তাঁর কাছে কৈফিয়ত চেয়েছিলাম মাত্র।’
যশোরের পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছে। কিন্তু লিখিত কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে, সে বিষয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ রয়েছে।’ 
  • Courtesy: Prothom Alo/ Jan 13, 2019

No comments:

Post a Comment