ত্রিশে ডিসেম্বর আরেকটি কালো দিবস হয়ে থাকবে। ৫ জানুয়ারি, ১৬ জুন, বাকশাল দিবসের মতই আরেকটি কাল দিবস যোগ হল বাংলাদেশের ইতিহাস। বিএনপি ও ঐক্যফন্ট যেন অংশগ্রহন করতে না পারে বা নির্বাচন বয়কট করে সেজন্যে শাসকদল শুরু থেকে হামলা-মামলা, গ্রেফতার, পুলিশী হয়রানী, আদালত ও জেল-জুলুমের পথ বেছে নিয়েছিল। এসব প্রতিকূলতার পরও বিএনপি ও ঐক্যফন্ট শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থেকে লড়াই করেছে। এজন্যে এবারের সংসদ নির্বাচন নিয়ে মানুষের নূন্যতম হলেও একটা প্রত্যাশা ছিল। মনে করেছিল এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে। কিন্তু মানুষের মধ্যে যে আশা-আকাঙ্ক্ষা ও সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছিল, নির্বাচনের ফলাফলে তা বিন্দুমাত্র প্রতিফলিত হয় নাই। এবারের নির্বাচনে সন্ত্রাস, স্বেচ্ছাচারিতা ও নির্বাচনী অনিয়ম অতীতের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। এজন্যে দেশের বেশির ভাগ মানুষ মনে করে এই নির্বাচনে গনতন্ত্র ও গনতান্ত্রিক মূল্যবোধের কোন প্রতিফলন হয় নাই। তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৮৮টি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শাসকজোট আর বিএনপি ও ঐক্যফন্টের নেতৃত্বাধীন বিরোধীজোট ৭টি পেয়েছে বা তাদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ও এর ফলাফল নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিশ্লেষণ ও মতামতধর্মী নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিপুল ব্যবধানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শাসকদল জয়লাভ করেছে। বিজয়ী ও বিজিত দলের মধ্যে পার্থক্যসূচক এমন চিত্র উত্তর কোরিয়ার মতো দেশে আশা করা যায়, বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক দেশে নয়।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতাকে আরও সংহত করছেন, কিন্তু সেটি হচ্ছে তাঁর নির্বাচনী বৈধতার বিনিময়ে। যদিও নির্বাচনের আগে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞই ধারণা করেছিলেন, শেখ হাসিনাই নির্বাচনে জিতবেন। কিন্তু এত বিপুল ব্যবধানে তিনি জয়ী হবেন—সেই ধারণা ছিল খুবই কম। ভোট গ্রহণের দিন বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্নভাবে অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। কিন্তু পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, গত ৩০শে ডিসেম্বরের অনেক আগেই মাঠ দখলে নিয়ে নেয় আওয়ামী লীগ। অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশের শক্তিশালী হয়ে ওঠার বিষয়টিও বিশ্লেষণে উঠে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, একই সঙ্গে বাড়ছে বিরুদ্ধমতের প্রতি অসহিষ্ণুতা ও নির্যাতন। ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বাংলাদেশ ক্রমে ‘একদলীয় গণতন্ত্রের’ দেশে পরিণত হতে চলেছে।
টাইম ম্যাগাজিনের এক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে গত ৩০শে ডিসেম্বরের ভোট গ্রহণের বিভিন্ন ‘অনিয়মের’ খণ্ডচিত্র। বলা হচ্ছে, নির্বাচন উপলক্ষে ভোটারদের ওপর দমনপীড়ন চলেছে। টাইম-এর মতে, বাংলাদেশের নির্বাচন পৃথিবীর গণতান্ত্রিক ধারার নির্বাচনের মধ্যে অন্যতম। গত ২০ বছরে এখানে রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকেছে কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বিএনপি। শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশ দারিদ্র্য থেকে বের হয়ে এসেছে এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাঁর সরকারকে ‘ধীরগতির নিপীড়ন’ চালানোর দায়ে অভিযুক্ত করে আসছে। নতুন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের সমালোচনা করে এই বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এর ফলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সরকারের সমালোচনা করার বিষয়টি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। টাইম বলছে, এবারের সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের বাধা দেওয়ার প্রমাণাদি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা ক্রমে বিদ্রূপে পরিণত হয়।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতাকে আরও সংহত করছেন, কিন্তু সেটি হচ্ছে তাঁর নির্বাচনী বৈধতার বিনিময়ে। যদিও নির্বাচনের আগে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞই ধারণা করেছিলেন, শেখ হাসিনাই নির্বাচনে জিতবেন। কিন্তু এত বিপুল ব্যবধানে তিনি জয়ী হবেন—সেই ধারণা ছিল খুবই কম। ভোট গ্রহণের দিন বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্নভাবে অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। কিন্তু পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, গত ৩০শে ডিসেম্বরের অনেক আগেই মাঠ দখলে নিয়ে নেয় আওয়ামী লীগ। অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশের শক্তিশালী হয়ে ওঠার বিষয়টিও বিশ্লেষণে উঠে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, একই সঙ্গে বাড়ছে বিরুদ্ধমতের প্রতি অসহিষ্ণুতা ও নির্যাতন। ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বাংলাদেশ ক্রমে ‘একদলীয় গণতন্ত্রের’ দেশে পরিণত হতে চলেছে।
টাইম ম্যাগাজিনের এক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে গত ৩০শে ডিসেম্বরের ভোট গ্রহণের বিভিন্ন ‘অনিয়মের’ খণ্ডচিত্র। বলা হচ্ছে, নির্বাচন উপলক্ষে ভোটারদের ওপর দমনপীড়ন চলেছে। টাইম-এর মতে, বাংলাদেশের নির্বাচন পৃথিবীর গণতান্ত্রিক ধারার নির্বাচনের মধ্যে অন্যতম। গত ২০ বছরে এখানে রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকেছে কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বিএনপি। শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশ দারিদ্র্য থেকে বের হয়ে এসেছে এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাঁর সরকারকে ‘ধীরগতির নিপীড়ন’ চালানোর দায়ে অভিযুক্ত করে আসছে। নতুন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের সমালোচনা করে এই বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এর ফলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সরকারের সমালোচনা করার বিষয়টি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। টাইম বলছে, এবারের সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের বাধা দেওয়ার প্রমাণাদি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা ক্রমে বিদ্রূপে পরিণত হয়।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনে প্রকাশিত এক মতামতধর্মী নিবন্ধে ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ‘বিতর্কিত’ অভিহিত করে বলা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে একটি ‘নতুন ও বিপজ্জনক’ যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ।
সিএনএন বলছে, বিরোধীদের ‘ক্রুদ্ধ’ হওয়ার সব কারণই রয়েছে। কয়েক বছর ধরে বিরোধীদের সরিয়ে দেওয়ার একটি ‘পদ্ধতিগত প্রচারের’ সঙ্গে যুক্ত আছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগকে একটি ‘জনপ্রিয় দল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সিএনএনের এই লেখায়। বলা হয়েছে, প্রত্যাশিতভাবেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিরোধীদের নতুন নির্বাচনের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন। বাস্তবে, নির্বাচন কমিশনে গিয়ে অভিযোগ জানানো ছাড়া ক্ষোভ প্রকাশের খুব কম বিকল্পই বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোর হাতে রয়েছে।
সিএনএনের এই মতামতধর্মী লেখায় আরও বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের ‘অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ উপায়ে’ ক্ষমতা লাভের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ‘প্রায় একদলীয় রাষ্ট্রে’ পরিণত হওয়ার পর্যায়ে চলে গেছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখন অস্পষ্ট। দেশটির তরুণ ও যুবসমাজ গণতন্ত্রের ওপর বিশ্বাস হারাতে বসেছে। ব্রিটিশ ম্যাগাজিন ইকোনমিস্টের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এবারের সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। ঢাকায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর হাজার হাজার পোস্টারের ভিড়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি বিএনপির প্রার্থীর কোনো পোস্টার। অন্যদিকে উঠেছে ভোট গ্রহণে নানা অনিয়মের অভিযোগ। ইকোনমিস্ট বলছে, একটি অধিকতর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও সম্ভবত শেখ হাসিনাই জিততেন। বিভিন্ন জনমত জরিপে এগিয়ে ছিল তাঁর দল আওয়ামী লীগ। কিন্তু গত রোববারের জাতীয় নির্বাচনের পর এখন প্রশ্ন উঠেছে—আওয়ামী লীগের এই বিশাল বিজয় কি স্বস্তি আনবে, নাকি দমননিপীড়ন আরও বাড়বে? এএফপির রিপোর্টে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার এই বিজয় কলঙ্কিত হয়ে থাকবে।
নির্বাচনী কারচুপির মাত্রায় বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন জার্মানি পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান নরবার্ট রজেন। এক টুইট বার্তা তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচনী কারচুপির মাত্র দেখে আমি বিষ্মিত। দেশটিতে কার্যকরভাবে একদলীয় সরকার চালু হয়েছে। ইউরোপীয় সরকারগুলোকে এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নিন্দা দৃঢ়ভাবে জানানো উচিত। একইসাথে বাংলাদেশের অবশিষ্ট গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর প্রতি সমর্থন জানানো উচিত। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার পর পৃথিবীর গণতান্ত্রিক ইতিহাসের নিকৃষ্ট নির্বাচন হল বাংলাদেশের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন। আসল কথা হলো ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ‘নির্বাচনের ফলাফল চুরি করেছে’, আর যারা নিজেদের সরকার দাবি করছে তারা ‘অবৈধ’। বাংলাদেশে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন, ভঙ্গুর গণতন্ত্র, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারিতাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে লেখা এক বিশেষ নিবন্ধে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা উইলসন সেন্টারের সিনিয়র স্কলার, রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম।
দ্য ফ্রাইডে টাইমস শুক্রবার তাঁর এ লেখাটি প্রকাশ করেছে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী তার নিরপেক্ষ এবং কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে বলে নিবন্ধে কড়া সমালোচনা করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইলাম। স্বৈরশাসনের বিপক্ষে এমন নিশ্চুপ থাকা এবং সদ্য সমাপ্ত ভোটে নূন্যতম কার্যকর ভূমিকা পালনে সেনাবাহিনীর যে ব্যর্থতা দেখা গেছে তাতে বিশ্ব শান্তি রক্ষা মিশনে বাহিনীর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং প্রশ্নের তৈরি হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে সন্ত্রাস ও ভোটকারচুপির যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। একই আহ্বান জানিয়েছেন নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যারিয়েন হেগেন। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ বলেছে, আমরা চাই , নির্বাচনে সন্ত্রাস ও মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগগুলোর দ্রুত স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্ত করা হোক। আমরা আশা করছি,নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধীদল যেসব অভিযোগ করেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেগুলোর তদন্ত করে দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর সরকার সমর্থকদের শারীরিক আক্রমণ, দুর্ব্যবহার, হয়রানি এবং পুলিশের অকারণ গ্রেপ্তার এখনো চলছে। কিন্তু সন্ত্রাসী ঘটনাগুলোর জন্য কোন মামলা হচ্ছে না। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতিপক্ষ এবং সংখ্যালঘুদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের হামলা ও ভীতিপ্রদর্শনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মদদ ছিলো। কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও নির্যাতনে অংশ নিয়েছে।
নির্বাচনী কারচুপির মাত্রায় বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন জার্মানি পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান নরবার্ট রজেন। এক টুইট বার্তা তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচনী কারচুপির মাত্র দেখে আমি বিষ্মিত। দেশটিতে কার্যকরভাবে একদলীয় সরকার চালু হয়েছে। ইউরোপীয় সরকারগুলোকে এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নিন্দা দৃঢ়ভাবে জানানো উচিত। একইসাথে বাংলাদেশের অবশিষ্ট গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর প্রতি সমর্থন জানানো উচিত। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার পর পৃথিবীর গণতান্ত্রিক ইতিহাসের নিকৃষ্ট নির্বাচন হল বাংলাদেশের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন। আসল কথা হলো ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ‘নির্বাচনের ফলাফল চুরি করেছে’, আর যারা নিজেদের সরকার দাবি করছে তারা ‘অবৈধ’। বাংলাদেশে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন, ভঙ্গুর গণতন্ত্র, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারিতাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে লেখা এক বিশেষ নিবন্ধে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা উইলসন সেন্টারের সিনিয়র স্কলার, রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম।
দ্য ফ্রাইডে টাইমস শুক্রবার তাঁর এ লেখাটি প্রকাশ করেছে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী তার নিরপেক্ষ এবং কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে বলে নিবন্ধে কড়া সমালোচনা করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইলাম। স্বৈরশাসনের বিপক্ষে এমন নিশ্চুপ থাকা এবং সদ্য সমাপ্ত ভোটে নূন্যতম কার্যকর ভূমিকা পালনে সেনাবাহিনীর যে ব্যর্থতা দেখা গেছে তাতে বিশ্ব শান্তি রক্ষা মিশনে বাহিনীর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং প্রশ্নের তৈরি হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে সন্ত্রাস ও ভোটকারচুপির যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। একই আহ্বান জানিয়েছেন নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যারিয়েন হেগেন। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ বলেছে, আমরা চাই , নির্বাচনে সন্ত্রাস ও মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগগুলোর দ্রুত স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্ত করা হোক। আমরা আশা করছি,নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধীদল যেসব অভিযোগ করেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেগুলোর তদন্ত করে দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর সরকার সমর্থকদের শারীরিক আক্রমণ, দুর্ব্যবহার, হয়রানি এবং পুলিশের অকারণ গ্রেপ্তার এখনো চলছে। কিন্তু সন্ত্রাসী ঘটনাগুলোর জন্য কোন মামলা হচ্ছে না। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতিপক্ষ এবং সংখ্যালঘুদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের হামলা ও ভীতিপ্রদর্শনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মদদ ছিলো। কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও নির্যাতনে অংশ নিয়েছে।
বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনকে ‘কলুষিত’ বলে কড়া সমালোচনা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। একিসঙ্গে নির্বাচনে সংগঠিত কারচুপি অভিযোগগুলোর স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি তাগাদা জানিয়েছে সংস্থাটি। বাংলাদেশে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ভোট কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া সহিংসতা পরিহারের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক বিবৃতিতে ৩০ ডিসেম্বর সরকার নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের প্রতিক্রিয়ায় এ আহ্বান জানানো হয়।নির্বাচনে সংগঠিত কারচুপির ঘটনাসমূহ ভোট অনুষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে বিবৃতিতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিরোধী প্রার্থী এবং সমর্থকদের নির্বাচনে বাধা দেবার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, “হয়রানি, ভীতিকর পরিস্থিতি এবং সহিংস কর্মকান্ডের জন্যই নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থী এবং সমর্থকেরা স্বাধীনভাবে তাদের সভা-সমাবেশ করতে পারেনি, কোনো প্রচারণা চালাতে পারেনি। এসব ঘটনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।”
কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘দ্য টেলিগ্রাফ’-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২৮৮ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট জয়লাভ করলেও বিরোধীরা ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে, মহাজোটের সমর্থকদের বাধার মুখে লোকজন ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেনি বলে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রধান বিরোধী জোটের নেতা এই নির্বাচনকে প্রহসনরূপে উল্লেখ করে তা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন। অনেক পোলিং এজেন্ট জানিয়েছেন, তারা ভয়ে কেন্দ্র থেকে দূরে ছিলেন। আবার অনেকে অভিযোগ করেন, তাদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ব্যালটে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরাট করেছেন। একজন নারী ভোটার দাবি করেছেন, পুলিশ তাদের স্বাধীনভাবে ভোট দিতে দেয়নি। পুলিশ বলেছে, ‘যদি নৌকায় ভোট দেয় তাহলেই কেবল ভোট দিতে পারবে।’ প্র
তিবেদনে আরো বলা হয়, শেখ হাসিনার ক্ষমতা দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং দেশটির শাসনব্যবস্থা একদলীয় শাসনে পরিণত হতে চলেছে।
কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘দ্য টেলিগ্রাফ’-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২৮৮ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট জয়লাভ করলেও বিরোধীরা ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে, মহাজোটের সমর্থকদের বাধার মুখে লোকজন ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেনি বলে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রধান বিরোধী জোটের নেতা এই নির্বাচনকে প্রহসনরূপে উল্লেখ করে তা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন। অনেক পোলিং এজেন্ট জানিয়েছেন, তারা ভয়ে কেন্দ্র থেকে দূরে ছিলেন। আবার অনেকে অভিযোগ করেন, তাদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ব্যালটে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরাট করেছেন। একজন নারী ভোটার দাবি করেছেন, পুলিশ তাদের স্বাধীনভাবে ভোট দিতে দেয়নি। পুলিশ বলেছে, ‘যদি নৌকায় ভোট দেয় তাহলেই কেবল ভোট দিতে পারবে।’ প্র
তিবেদনে আরো বলা হয়, শেখ হাসিনার ক্ষমতা দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং দেশটির শাসনব্যবস্থা একদলীয় শাসনে পরিণত হতে চলেছে।
সাংবিধানিক ভাবে বহুদলীয় গণতন্ত্র স্বীকৃত একটি দেশ বাংলাদেশ। সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র। যেখানে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে এবং প্রশাসনের সবপর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। তাছাড়া পুলিশসহ সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত করা হয়েছে। গণমুখী অনুচ্ছেদগুলো শুধু সংবিধানেই লিপিবদ্ধ রয়েছে; কিন্তু বাস্তবে এসবের প্রয়োগ নাই বললেই চলে। তাই গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পারদ দিন দিন নিম্নগামী। শাসকদলের ক্ষমতালিপ্সার কারনে দেশের আজ এই বেহাল অবস্থান এবং বহুমুখী ষড়যন্ত্রে দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ত হুমকির সম্মুখীন। এজন্যে বাষ্ট্রের অস্তিত্ব হয়তো বিলীন হবে না। রাষ্ট্রের অপরিহার্য বা মৌলিক উপাদান চারটির (নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনসমষ্টি, সরকার ও সার্বভৌমত্ত) মধ্যে তিনটি থাকবে, কিন্তু থাকবে না সার্বভৌমত্ব।
- কার্টসিঃ দিনকাল/ জানু ১৫,২০১৯
No comments:
Post a Comment