Search

Monday, September 17, 2018

বগুড়ায় ছাত্রছাত্রী আটকের ঘটনা নিন্দনীয়

সম্পাদকীয়

জেলা প্রশাসনের কাজ কী?


ক্লাস ফাঁকি দিয়ে রেস্তোরাঁয় বসে আড্ডা দেওয়া অনুচিত—স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের এটা বোঝানোর দায়িত্ব কোনো জেলা প্রশাসনের নয়। কিন্তু বগুড়ার জেলা প্রশাসন গত বৃহস্পতিবার সেটা করতেই ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে এক অভিযানে নেমেছিল। একজন নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে আর্মড পুলিশের একটি দল বগুড়া শহরের কিছু খাবারের দোকান ও রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে ৪০ জন ছাত্রছাত্রীকে আটক করে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে নিয়ে আটকে রেখেছিল। এ ঘটনা বগুড়া শহরে বেশ বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। এ খবর সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর সারা দেশে, এমনকি দেশের বাইরে থেকেও ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এসব ক্ষোভ-প্রতিবাদ যথাযথ। বগুড়ার জেলা প্রশাসন প্রতিবাদযোগ্য কাজই করেছে।

স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের এমনভাবে আটক করা ও আটকে রাখা হয়েছিল, যেন তারা গুরুতর কোনো অপরাধ করেছে। কিন্তু ছেলেমেয়েতে বন্ধুত্ব কোনো অপরাধ নয়, রেস্তোরাঁয় বসে গল্প করা নিয়েও আপত্তি করার কিছু নেই। তবে যেহেতু ক্লাস ফাঁকি দিয়ে গল্পগুজব করে সময় কাটানো শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর, তাই স্কুল-কলেজ চলার সময়ে তা অভিপ্রেত নয়। কিন্তু এ বিষয়ে ছেলেমেয়েদের বোঝানোর দায়িত্ব জেলা প্রশাসনকে কে দিয়েছে? আর সেই বোঝানোর উপযুক্ত পদ্ধতি কি সশস্ত্র পুলিশের অভিযান চালিয়ে অপরাধীর মতো আটক করে নিয়ে যাওয়া এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা? সাংবাদিক ও ফটোসাংবাদিকদের ডেকে আনা? তাঁদের ছবি তোলার ও প্রচার করার সুযোগ করে দেওয়া?

না। জেলা প্রশাসনের দায়িত্বের আওতায় এসব নেই। তাদের আরও অনেক বড় বড় দায়িত্ব আছে। দৃষ্টান্ত হিসেবে, বগুড়া শহরে চাঁদাবাজদের রাজত্ব কায়েম হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে বগুড়াবাসী উপকৃত হতো; মাদকদ্রব্যের ব্যবসা ও মাদকসেবন স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য নিয়মিতভাবে অভিযান চালিয়ে গেলে কাজের কাজ হতো; স্থানীয় সরকারি দপ্তরগুলোতে ব্যাপক ঘুষ-দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধ করতে তৎপর হলে জেলা প্রশাসনের ‘নৈতিকতা’ প্রতিষ্ঠার প্রয়াস দৃশ্যমান হতো।

বগুড়ায় এ রকম ঘটনা এবারই প্রথম ঘটল তা নয়। ২০১৩ সালেও একটি পার্কে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে ৭২ জন তরুণ-তরুণীকে আটক করেছিল; তাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সম্মানের বিবেচনায় জেলা প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ অন্যায়। সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে যাঁরা এ ধরনের পদক্ষেপ নেন, নারী-পুরুষ সম্পর্কের বিষয়ে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি সমস্যাপূর্ণ বলে মনে হয়। তাঁদের শিক্ষা-দীক্ষা, মনস্তাত্ত্বিক গড়ন ও সাংস্কৃতিক বোধ সমাজের সাধারণ সাংস্কৃতিক স্তর ও নৈতিকতার বোধের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। এ বিষয়ের প্রতি প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

ছেলেমেয়েদের ‘চরিত্র রক্ষা’ কিংবা ‘নৈতিকতা’ শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানোর মতো নিষ্প্রয়োজনীয়, উদ্ভট তৎপরতা থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া উচিত।
কার্টসিঃ প্রথম আলো/ সেপ্টেম্বর ১৭,২০১৮ 

No comments:

Post a Comment