Search

Wednesday, September 12, 2018

‘ভূতুড়ে’ মামলা, নানা প্রশ্ন!


লুৎফুল হক গত ৪ আগস্ট থেকে পরবর্তী সাতদিন ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৮২ বছর বয়সে একই সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কিডনি জটিলতায় অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিল যে, তাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) ও হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) এ রাখা হয়।

তার পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১১ আগস্ট হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও এখনো অন্য কারো সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারছেন না।

কিন্তু পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার ওয়ারীতে বাংলাদেশ বয়েজ ক্লাব মাঠে জমায়েত হওয়া বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে লুৎফুল ছিলেন। তারা সেখানে জড়ো হয়ে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছিলেন। ষড়যন্ত্রকারী ৯৬ ব্যক্তির একজন হিসেবে লুৎফুলকেও আসামি করেছে পুলিশ।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে লুৎফুলের ছেলে রেজাউল হক বলেন, ‘আমার বাবা একা চলাফেরা করতে পারেন না। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর থেকেই তিনি শয্যাশায়ী। নিজের হাতে খাবার পর্যন্ত তুলে খেতে পারেন না। মা তাকে খাইয়ে দিচ্ছেন। পুলিশ যেদিন মামলা দিয়েছে, তিনি সেদিন বাড়িতেই ছিলেন।’

ওয়ারী থানায় হওয়া এই মামলার দুইদিন পর গত ৫ সেপ্টেম্বর হুইল চেয়ারে করে লুৎফুলকে হাইকোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। চার্জশিট দাখিল না পর্যন্ত আদালত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।

রেজাউল জানান, তার বাবা একসময় বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত ৬-৭ বছর ধরে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রয়েছেন।

গতকাল ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল থেকে লুৎফুলের ছাড়পত্রের একটি কপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে আসে। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, গত ৪ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত তিনি ৫৬০ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসা খরচ হিসেবে হাসপাতালকে ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৬৫ টাকা পরিশোধ করেছেন তিনি।

বিদেশ থেকেও খেলেন মামলা!

‘সরকারবিরোধী’ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা সাব্বির আহমেদ আরিফকেও আসামি করেছে পুলিশ। তবে যে ঘটনায় মামলাটি হয়েছে তিনি সেসময় দেশেই ছিলেন না বলে জানা গেছে।

ভিসা, ইমিগ্রেশন, হোটেলের কাগজপত্র এবং কলকাতা থেকে তার ফ্লাইটের বোর্ডিং পাসের তথ্য বলছে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ভারতে অবস্থান করেছেন। দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসব কাগজপত্র এসেছে।

সম্প্রতি সাব্বির বলেন, ‘আমি বাড়িতে থাকতে পারছি না। পুলিশ সারাক্ষণ আমার পিছনে লেগে আছে। ভারতে থাকাকালীন আমি এ ধরনের কাজে জড়িত ছিলাম না। আমাকে হয়রানির জন্যই এসব করা হচ্ছে।

সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের ওই মামলার সাব্বিরকে ১৩ এবং লুৎফুল হককে ৫১ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ফোনে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না। আমার অফিসে আসেন, চা খেয়ে যান।’

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া ও পিআর) সোহেল রানাকে এই দুজন আসামি হওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ ঘটনায় তারা জড়িত কি না সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে।

মরে গিয়েও হলেন আসামি!

গত রোববার বাংলা দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর চকবাজার থানা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল আজিজুল্লাহ মারা গেছেন ২০১৬ সালের মে মাসে। মৃত্যুর প্রায় ২৮ মাস পর তাকে একটি মামলায় আসামি বানিয়েছে পুলিশ।

চকবাজার থানায় গত ৫ সেপ্টেম্বর দায়ের করা ওই মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়েছেন তিনি। এমনকি অন্য নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ককটেলের বিস্ফোরণও ঘটিয়েছেন।

মামলার অভিযোগকারী এসআই কামাল উদ্দিন গতকাল বলেন, ঘটনা ঘটনার পর সাক্ষীদের বক্তব্য অনুযায়ী তিনি অভিযুক্তদের নাম উল্লেখ করেছেন। যাচাই করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাননি। কোনো মৃত ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হলে, তদন্তকারী কর্মকর্তারা এটি ঠিক করে দেবে বলেও জানান তিনি।

ঘটনাই ঘটেনি, মামলা করে রেখেছে পুলিশ!

হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় গত ১২ আগস্ট অজ্ঞাত ৭০ থেকে ৮০ জন আসামির বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল ইসলাম।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ৩০ জুলাই হবিগঞ্জ শহরের জে কে অ্যান্ড হাইস্কুলের সামনে আসামিরা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, যানবাহন ও সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন এবং সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩০ জুলাই হবিগঞ্জ শহরে এ রকম কিছুই ঘটেনি। মামলায় যে সময়ের কথা উল্লেখ রয়েছে তখন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলেও হবিগঞ্জে কেউ পথে নামেনি। তারপরও হবিগঞ্জ শহর ও জেলায় চারটি থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১০টি মামলা করে রেখেছে পুলিশ।

হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের সুপারিন্টেনডেন্ট বিধান ত্রিপুরা বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় কিছু ঘটনা ঘটেছে বলে নিশ্চিত হওয়ার পরই মামলা করা হয়েছে। যদিও ঘটনা ঘটার পরপরই মামলা দায়ের বাধ্যতামূলক নয়, তারপরও পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের পর এই মামলা করেছে, জানান বিধান।

বিশেষ কাউকে পাওয়া যায়নি বলেই অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে, তবে কাউকে হয়রানির উদ্দেশে নয়। এসব মামলার তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি।

  • কার্টসিঃ দ্য ডেইলি স্টার/ সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮

No comments:

Post a Comment