Search

Thursday, September 13, 2018

খেলাপি ঋণে শীর্ষ ১০ - কীর্তিমান দুই সহোদর


অর্থমন্ত্রী গতকাল সংসদে যে ১০০ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করেছেন, তার শীর্ষ দশের বেশির ভাগই পুরনো। নতুন করে ঢুকেছে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারী দুই প্রতিষ্ঠান রিমেক্স ফুটওয়্যার ও ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্টস লিমিটেড। এর কর্ণধার দুই সহোদর এমএ আজিজ ও এমএ কাদের। ঋণের নামে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক থেকে তারা বের করে নিয়েছেন প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। এ দুই সহদর এখন জনতা ব্যাংকেরও শীর্ষ ঋণখেলাপি।

রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান এমএ আজিজ। চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ারও চেয়ারম্যান তিনি। কয়েক বছর ধরে দেশের ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র আসছে তার প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারেই। সংসদে প্রকাশ করা শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকায় এমএ আজিজের রিমেক্স ফুটওয়্যার রয়েছে তৃতীয় স্থানে। শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকায় ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্টস লিমিটেড রয়েছে দশম স্থানে। এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এমএ আজিজের বড় ভাই এমএ কাদের।

চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসায় দুই সহোদরকে উদার হাতে ঋণ দিয়েছে জনতা ব্যাংক। ২০১৩ সাল-পরবর্তী পাঁচ বছরেই জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন এমএ কাদের ও এমএ আজিজ। এর মধ্যে পণ্য রফতানির বিপরীতে নগদ সহায়তা তহবিল থেকে তুলে নেয়া হয়েছে ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। দুই সহোদরকে দেয়া জনতা ব্যাংকের এ ঋণের বড় অংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে। এর মধ্য দিয়ে দুই ভাই-ই নাম লিখিয়েছেন শীর্ষ ১০ ঋণখেলাপির তালিকায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) ডাটাবেজে রক্ষিত তথ্যের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদে গতকাল শীর্ষ ১০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সংসদ টেবিলে এ তালিকা তুলে ধরেন তিনি। তালিকাটি করা হয়েছে ২০১৮ সালের জুনভিত্তিক পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে। তবে শীর্ষ খেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে কী পরিমাণ ঋণ রয়েছে, সে তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশের সবক’টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের তালিকাও সংসদে তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।

শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকায় এবারো প্রথম স্থানে আছে চট্টগ্রামের মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডের নাম। ২০১৭ সালের ১০ জুলাই সংসদে প্রকাশ করা শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির তালিকায়ও শীর্ষে ছিল প্রতিষ্ঠানটি। দ্বিতীয় শীর্ষ ঋণখেলাপি হিসেবে নাম এসেছে বিদ্যুত্ খাতের প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস লিমিটেডের। জনতা ব্যাংক থেকে ১ হাজার ২৬ কোটি টাকা বের করে নিয়ে তৃতীয় শীর্ষ ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছে এমএ আজিজের রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড।

সংসদে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে দেশে কার্যরত ৫৭টি তফসিলি ব্যাংক  ও ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৫৮। এসব খেলাপির কাছে অনাদায়ী অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৬৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

ঋণখেলাপিদের তালিকায় চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম স্থানে আছে যথাক্রমে ম্যাক্স স্পিনিং মিলস, রুবাইয়া ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লি., রাইজিং স্টিল লিমিটেড, ঢাকা ট্রেডিং হাউজ, বেনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও আনোয়ারা স্পিনিং মিলস। দশম স্থানটি ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্টসের।

তালিকায় শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির মধ্যে এর পরই আছে যথাক্রমে ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরী নিটওয়্যারস, সিদ্দিক ট্রেডার্স, রূপালী কম্পোজিট লেদার ওয়্যার, আলফা কম্পোজিট টাওয়েলস, হলমার্ক ফ্যাশন লিমিটেড, মুন্নু ফেব্রিকস, ফেয়ার ইয়ার্ন প্রসেসিং লিমিটেড, ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিকস ও শাহরিজ কম্পোজিট টাওয়েল লিমিটেড।

শীর্ষ ঋণখেলাপিদের তালিকায় পরের ২০টি প্রতিষ্ঠান হলো— ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল, সুরুজ মিয়া জুট স্পিনিং মিলস, প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড, সালেহ কার্পেট মিলস লিমিটেড, পদ্মা পলি কটন নিট ফেব্রিকস, এসকে স্টিল, হেল্পলাইন রিসোর্সেস লিমিটেড, এইচ স্টিল রি-রোলিং মিলস, অটবি লিমিটেড, বিসমিল্লাহ টাওয়েলস লিমিটেড, তাইপে বাংলা ফেব্রিকস, ঢাকা নর্থ পাওয়ার ইউটিলিটি কোম্পানি লিমিটেড, টি অ্যান্ড ব্রাদার নিট কম্পোজিট, তানিয়া এন্টারপ্রাইজ ইউনিট-২, সিক্স সিজনস অ্যাপার্টমেন্ট লিমিটেড, ইসলাম ট্রেডিং কনসোর্টিয়াম লিমিটেড, রহমান স্পিনিং মিলস লিমিটেড, জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপার্স লিমিটেড, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) লিমিটেড ও সিমেট সিটি জেনারেল ট্রেডিং এলএলসি।

অর্থমন্ত্রীর প্রকাশ করা শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকায় ৪১তম স্থানে আছে এমকে শিপ বিল্ডার্স অ্যান্ড স্টিলস লিমিটেড। ৬০তম শীর্ষ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানটি ওয়ান ডেনিম মিলস লিমিটেড। ঋণখেলাপির তালিকায় ৪২ থেকে ৫৯তম স্থানে আছে যথাক্রমে কটন করপোরেশন, ন্যাশনাল স্টিল, এমবিএ গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড, সোনালী জুট মিলস লিমিটেড, এক্সপার টেক লিমিটেড, ওয়াল-মার্ট ফ্যাশন লিমিটেড, সাদ মুসা ফেব্রিকস লিমিটেড, চিটাগং ইস্পাত, এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড, হিমালয়া পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড, আমাদের বাড়ি লিমিটেড, এমদাদুল হক ভুইঞা, চৌধুরী টাওয়েল ইন্ডা. (প্রা.) লিমিটেড, চৌধুরী লেদার অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড, আর্থ এগ্রো ফার্মস লিমিটেড, নর্দান পাওয়ার সলিউশন লিমিটেড, ম্যাক শিপ বিল্ডার্স ও দি আরাব কন্ট্রাক্টরস বাংলাদেশ লিমিটেড।

শীর্ষ ঋণখেলাপির এ তালিকায় ৬১ থেকে ৮০তম স্থানে আছে যথাক্রমে লিবার্টি ফ্যাশন ওয়্যারস লিমিটেড, বিশ্বাস গার্মেন্টস লিমিটেড, মাস্টার্ড ট্রেডিং, হিন্দোল ওয়ালী টেক্সটাইল লিমিটেড, সগির অ্যান্ড ব্রাদার্স, গ্লোব মেটাল কমপ্লেক্স লিমিটেড, অরনেট সার্ভিসেস লিমিটেড, জালাল অ্যান্ড সন্স, করোল্লা করপোরেশন বিডি লিমিটেড, সাইদ ফুডস লিমিটেড, এপেক্স নিট কম্পোজিট লিমিটেড, এসএ অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড, আলী পেপার মিলস লিমিটেড, ড্রেজ বাংলা প্রাইভেট লিমিটেড, গ্যালাক্সি সোয়েটার অ্যান্ড ইয়ার্ন ডায়িং লিমিটেড, আরজান কার্পেট অ্যান্ড জুট উইভিং মিলস লিমিটেড, ইন্ট্রাকো সিএনজি লিমিটেড, ফরচুন স্টিল, ফাইবার শাইন লিমিটেড ও দোয়েল অ্যাপারেলস লিমিটেড।

অর্থমন্ত্রীর প্রকাশ করা শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির তালিকায় শেষ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হলো— জাহিদ এন্টারপ্রাইজ, মজিবর রহমান খান, কেয়ার স্পেশালাইজড হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, জয়নব ট্রেডিং কোম্পানি, তাবাসসুম এন্টারপ্রাইজ, এপেক্স উইভিংস অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস, রিসোর্স ডেভেলপমেন্টে ফাউন্ডেশন, দ্য ওয়েল টেক্স, ডেল্টা সিস্টেমস, টেলিবার্তা, এমআর সোয়েটার কম্পোজিট, রেফকো ফার্মাসিউটিক্যালস, মাবিয়া শিপ ব্রেকার্স, ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, নর্দান ডিস্টিলারিজ, নিউ রাখি টেক্সটাইলস, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, শফিক স্টিল, জারজিস কম্পোজিট নিট ইন্ডাস্ট্রিজ ও হিলফুল ফুজুল সমাজকল্যাণ সংস্থা।

অর্থমন্ত্রী এদিন খেলাপি ঋণের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও প্রকাশ করেন। তালিকা অনুযায়ী সংখ্যাটি ৮৮। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬১ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। দেশের সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে ১৮ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে জনতা ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৪ হাজার ৮৪০ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকে ৯ হাজার ২৮৪ কোটি, রূপালী ব্যাংকে ৪ হাজার ৯০১ কোটি, বেসিক ব্যাংকে ৮ হাজার ৫৭৬ কোটি, কৃষি ব্যাংকে ২ হাজার ১৭৮ কোটি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে ২ হাজার ৩৩২ কোটি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ৬৯৬ কোটি টাকা।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংকের। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ৫ হাজার ৭৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বেসরকারি অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে সাউথইস্ট ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৯৯৮ কোটি, প্রাইম ব্যাংকে ৩ হাজার ৪৫৮ কোটি, ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে ৩ হাজার ৫২০ কোটি, এবি ব্যাংকে ২ হাজার ৯৪৭ কোটি, দ্য সিটি ব্যাংকে ২ হাজার ৬৭১ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংকে ২ হাজার ৭২ কোটি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে (ইউসিবি) ২ হাজার ৫১৮ কোটি, পূবালী ব্যাংকে ২ হাজার ১১৬ কোটি, উত্তরা ব্যাংকে ১ হাজার ৪৫৭ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংকে ১ হাজার ৬২৬ কোটি, ঢাকা ব্যাংকে ২ হাজার ৫৩১ কোটি. আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে ২ হাজার ১৮০ কোটি ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে ২ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। এছাড়া বেসরকারি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে খেলাপি ঋণ রয়েছে ১ হাজার ১৫৭ কোটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ১ হাজার ১৯২ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে ১ হাজার ৮২ কোটি, ওয়ান ব্যাংকে ১ হাজার ৩২৬ কোটি, এক্সিম ব্যাংকে ১ হাজার ৬৮৩ কোটি, ব্যাংক এশিয়ায় ১ হাজার ৬৭৩ কোটি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে ১ হাজার ৪৪৩ কোটি, ব্র্যাক ব্যাংকে ১ হাজার ৭৬০ কোটি, ফারমার্স ব্যাংকে ১ হাজার ৩৯৪ কোটি ও ট্রাস্ট ব্যাংকে ১ হাজার ৩১ কোটি টাকা। 

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা / সেপ্টেম্বর ১৩,২০১৮ 

No comments:

Post a Comment