Search

Tuesday, September 4, 2018

গ্রেপ্তার, মামলা-হামলা বন্ধ করুন

সম্পাদকীয় 

অস্বীকার করা যাবে না যে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ অপরিহার্য। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বিরোধী দল বিএনপিকে নির্বাচনে আসার জন্য হরহামেশা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু নির্বাচন করার জন্য যে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকা দরকার, সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে সরকারি দল কিংবা সহযোগী দলের নেতা-কর্মীরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার সহায়ক ভূমিকা পালন না করে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো বিএনপিরও শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকার আছে। ১ সেপ্টেম্বর ছিল দলটির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিল। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সে আবেদন নাকচ না করে দলীয় অফিসের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। অন্যান্য দল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে পারলে বিএনপি কেন পারবে না? তারপরও ডিএমপির সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।

কিন্তু ঢাকার সমাবেশকে কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন প্রবেশমুখে যাত্রীদের হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে আরও লক্ষ করলাম, ঢাকার বাইরে সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, গৌরীপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় পুলিশি বাধার কারণে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালিত হতে পারেনি। কোনো কোনো স্থানে কর্মসূচি পালনের আগেই বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে।

পুলিশ প্রশাসনের কিছু অতি উৎসাহী কর্মকর্তা সরকারকে খুশি করতে এ ধরনের হঠকারী কাজ করলেও শেষ পর্যন্ত যে মামলা টেকে না, তার ভূরি ভূরি প্রমাণ আছে। বর্তমান সরকারের সময় বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করলেও পুলিশ অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। বরং এসব রাজনৈতিক মামলাকে কেন্দ্র করে পুলিশের উৎকোচ–বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। বিএনপির যেকোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি বা সভা-সমাবেশের মধ্যে ষড়যন্ত্র খোঁজা হাস্যকরও বটে।

বিএনপি নেতা-কর্মীদের ষড়যন্ত্র আবিষ্কারে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী–ই নয়, ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীদেরও তৎপর দেখা যায়। শরীয়তপুরে বিএনপির এক নেতার বাড়িতে আয়োজিত বৈঠকে হামলা হয়েছে ও বগুড়ায় ছাত্রলীগের হামলায় যুবদলের তিন কর্মী আহত হয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিষ্ক্রিয় থাকে। তাদের যেখানে সক্রিয় হওয়ার কথা, সেখানে নিষ্ক্রিয় থাকা, আর যেখানে নিষ্ক্রিয় থাকার কথা, সেখানে অতি সক্রিয় হওয়া আইনের শাসন কিংবা গণতন্ত্রের সহায়ক নয়।

নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসছে। এমন অবস্থায় সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিশ্চিত করার স্বার্থে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি ও সভা-সমাবেশ যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে যে সুযোগ-সুবিধা পায়, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এটা সংবিধান স্বীকৃত অধিকার। কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আর কোনো অহেতুক মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার নয়।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি শনিবার ঢাকায় সমাবেশ করেছে। শান্তিপূর্ণভাবে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা আশা করব বিএনপিসহ যেকোনো বিরোধী দল কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেবে। তবে শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মূল দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারকেই নিতে হবে। সামনের দিনগুলোতে দেশে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের পরিস্থিতি ও পরিবেশ বজায় থাকবে এবং সরকার এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না, এটাই প্রত্যাশিত।  

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৮ 

No comments:

Post a Comment