Search

Sunday, September 16, 2018

ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়ার অভিযোগ, চার দিন ধরে নিখোঁজ ৫ জন


রাজধানীর বিমানবন্দর ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে তুলে নেয়ার চার দিন পরও নিখোঁজ রয়েছেন দুই শিক্ষার্থীসহ পাঁচজন। রাজধানীর বিভিন্ন  থানা ও ডিবি কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। এমনকি চার দিন পার হলেও তাদের আদালতে হাজির করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন নিখোঁজ ওই ব্যক্তিদের স্বজনরা। গতকাল বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বজনরা এমন অভিযোগ করেছেন। স্বজনরা বলেছেন, চোখের সামনে সন্তানদের তুলে নেয়ার ঘটনায় তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। 

অবিলম্বে যেন তাদের সন্তানদের আদালতে হাজির করা হয়। নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন, টাঙ্গাইলের গোপালপুরের বাধাই এলাকার বাসিন্দা ও ঢাকা বারের শিক্ষানবিশ আইনজীবী শাফিউল আলম ও তার ছোট ভাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মনিরুল আলম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মো. আবুল হায়াত। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার পশুরিয়া এলাকার বাসিন্দা ও ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী শফিউল্লাহ এবং ঢাকার ডেমরার সারুলিয়া এলাকার ডগাইর ফাজিল মাদরাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোশারফ হোসাইন মায়াজ। 

সংবাদ সম্মেলনে স্বজনদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শাফিউল আলম ও মনিরুল ইসলামের মা রমিছা খানম। তিনি বলেন, ১২ই সেপ্টেম্বর রাতে আমাদের পাঁচ সন্তানকে ডিবি পরিচয়ে সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে গেছে। ওই দিন পবিত্র হজ পালন শেষে আমি ঢাকা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছাই। সন্ধ্যা সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ি ফেরার জন্য একটি মাইক্রোবাসে উঠি। ঠিক তখনই একদল অপরিচিত লোক আমার দুই ছেলেকে গাড়ি থেকে নামানোর জন্য টানা-হেঁচড়া শুরু করে। তখন আমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ওরা তাদের পরিচয়পত্র ও অস্ত্র দেখিয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ দাবি করে। আমি তখন আমার ছেলেদের কী অপরাধ জিজ্ঞাসা করি। কিন্তু তারা কিছু না বলে আমার চোখের সামনে থেকে আমার দুই ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় গাড়িতে থাকা আমার ছেলের বন্ধু মো. আবুল হায়াতকেও তারা তুলে নিয়ে যায়। পরে ওই রাতেই ডিবি পরিচয়দানকারীরা আমার ছেলে শাফিউলকে নিয়ে গভীর রাতে তার বাসায় যায়। সেখান থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা শাফিউলের বন্ধু অপর দুই রুমমেট শাফিউল্লাহ ও মোশারফ হোসাইন মায়াজকে তুলে নিয়ে যায়। 

রমিছা খানম বলেন, গত চারদিন ধরে দুই সন্তানের খোঁজ না পেয়ে আমার চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। শুধু আমার না নিখোঁজ অন্যান্য সন্তানদের মায়েদেরও একই অবস্থা। সন্তানকে না পেয়ে তারা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। দুজন মা তাদের সন্তানদের খোঁজ না পেয়ে অসুস্থ হয়ে গেছেন। তাই দয়া করে আমাদের সন্তানদের সন্ধান দেন। তারা যদি কোনো অপরাধ করে থাকে তবে তার জন্য আইন আছে। তাদের আদালতে হাজির করে আইনের আওতায় আনুন। 

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আটক করলে আইন অনুযায়ী স্বজনদের দেখা করার সুযোগ থাকে। কিন্তু আমরা সেই সুযোগও পাচ্ছি না। চার দিন পরও তাদের আটক না দেখানো দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থি। এমনকি উচ্চ আদালতের আদেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন; যা অস্বাভাবিক বিষয়। আমরা এখন আমাদের সন্তানদের নিয়ে শঙ্কিত। আমাদের আকুল আবেদন সন্তানদের যেন আমাদের কাছে নিরাপদে হস্তান্তর করা হয়। তাদের নিয়ে যেন কোনো নাটক সাজানো না হয়। তারা যদি সত্যিই কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তাদের আদালতের মাধ্যমে বিচারের সম্মুখীন করা হোক। আমরা দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনের কাছে আমাদের সন্তানদের আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ করছি।

রমিছা খানম ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শফিউল্লাহর ছোট ভাই মো. নাসিরুউল্লাহ, মোশারফ হোসাইন মায়াজের বাবা সাইদুল ইসলাম, তার মা রোকেয়া বেগম ও বোন কামরুন নাহার। তবে মো. আবুল হায়াতের কোনো স্বজন উপস্থিত ছিলেন না। মোশারফ হোসাইন মায়াজের বড় বোন কামরুন নাহার মানবজমিনকে বলেন, আমরা চার বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে মায়াজ সবার ছোট। মাদরাসায় পড়ালেখার পাশাপাশি সে প্রাইভেট পড়ায়। ওই দিন বিকাল সাড়ে ৫টায় সে তার এক বন্ধুর সঙ্গে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। অন্যান্য দিন ১০টার দিকে বাসায় ফিরলেও ওই দিন সাড়ে ১১টায় বাসায় ফেরেনি। এজন্য বাবা-মা সবাই চিন্তায় পড়ে যান। আমার মা আমার শোবার রুমে এসে কান্নাকাটি শুরু করে দেন। তার বন্ধুদের ফোন দিলেও কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। কামরুন নাহার বলেন, এভাবে সারা রাত ও পরের দিন যাত্রাবাড়ী থানাসহ সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করি। পরে বিকালবেলা আমার এক মামার মাধ্যমে জানতে পারি তাকে ডিবি ধরে নিয়ে গেছে। শফিউল্লাহর ভাই নাসিরউল্লাহ বলেন, আমার ভাই যাত্রাবাড়ীর মীর হাজারীবাগে একটি মেসে থেকে লেখাপড়া করে। সে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ সেপ্টেম্বর ১৬,২০১৮ 

No comments:

Post a Comment