Search

Thursday, September 13, 2018

গরিব দেশে এত ধনকুবের!

সম্পাদকীয়

মাত্র কিছদিন আগেও বাংলাদেশ ছিল স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায়। উন্নয়নশীল দেশের সারিতে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করতে উন্নয়নের ধারা টেকসই করতে হবে। এমন একটি দেশে অতি ধনী বা ধনকুবের বৃদ্ধির হার মহাসম্পদশালী দেশ আমেরিকা কিংবা বিশ্বে এক নম্বর অর্থনীতির দেশ হতে চলা চীনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার তথ্য বিস্ময়কর বৈকি। এ যে গরিব দেশে ধনকুবেরের ছড়াছড়ি! 

ওয়েলথএক্স নামের একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, তিন কোটি ডলার বা আড়াইশ' কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে, বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে এমন লোকের সংখ্যা বেড়েছে ১৭.৩ শতাংশ, যা চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশের তুলনায় ঢের বেশি। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত ডিসেম্বরে বিভিন্ন ব্যাংকে এক কোটি টাকা বা তার বেশি অর্থ জমা রাখা বেসরকারি অ্যাকাউন্ট ছিল প্রায় ৫৫ হাজার। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, ধনকুবের সংখ্যা কিন্তু উন্নত দেশগুলোতেই অনেক বেশি। চীন ও ভারতের মতো জনবহুল দেশেও আমাদের তুলনায় অনেক বেশি। অর্থনীতির ভিত মজবুত হতে থাকলে, জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বাড়লে ধনকুবের সংখ্যা বাড়তেই পারে। কিন্তু সেটা যদি আয়-বৈষম্য প্রকট করে, তবে উদ্বেগের কারণ হয় বৈকি। বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য এমন একটি ইঙ্গিত আগেই দিয়েছে।

তাদের হিসাবে, ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে ধনী পাঁচ শতাংশ পরিবারের আয় বেড়েছে বিপুল হারে; কিন্তু এর বিপরীতে সবচেয়ে দরিদ্র পাঁচ শতাংশের আয় হ্রাস পেয়েছে উদ্বেগজনক হারে। সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির মাসিক আয় প্রায় ৮৯ হাজার টাকা; সবচেয়ে গরিবের ৭৩৩ টাকা! এ বৈষম্য বাংলাদেশের গৌরবের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা, তাদের নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। কেন এ বৈষম্য? 

গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে হঠাৎ করেই কিছু লোক আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। তারা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করছে। ব্যাংকের ঋণ নিয়ে সময়মতো ফেরত দিচ্ছে না। কেউ কেউ আদৌ ফেরত দিতেও আগ্রহী নয়। এ দলে কয়েকশ', এমনকি দুই-তিন হাজার কোটি আত্মসাতের ঘটনাও রয়েছে। কেউ কেউ বড় বড় নির্মাণ কাজ কিংবা ব্যবসায়িক চুক্তি পায়। মিথ্যা তথ্য দিয়ে রফতানি প্রণোদনা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশের ব্যাংকে তা জমা রাখে। নদী-চর-সরকারি খাস জমি কিংবা দরিদ্রদের ভূখণ্ড দখল করে চলতে পারে আবাসন ব্যবসা। যথাযথ আইনের শাসন না থাকায় তাদের ধনী হওয়ার গতি থাকে বাঁধনহারা। তারা ব্যক্তিগত আয়কর কিংবা করপোরেট কর ফাঁকি দিয়েও পার পেয়ে যায়। ফলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সরকার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অর্থের জোগান পায় না। এ ঘাটতি পূরণে বাড়তে থাকে পরোক্ষ করের বোঝা, যা থেকেও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল এ মধুলোভী চক্রের জানা। অধিকতর সমতাপূর্ণ সমাজ গঠনের অঙ্গীকার নিয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশের এমন পরিণতি তো কাম্য ছিল না।

  • কার্টসিঃ সমকাল/ সেপ্টেম্বর ১৩,২০১৮ 

No comments:

Post a Comment