Search

Monday, September 17, 2018

তালিকা তৈরিতে নয়ছয়

সম্পাদকীয়

ঋণখেলাপিদের উৎসাহিত করারই নামান্তর


দেশে রাঘববোয়াল ঋণখেলাপিরা যে ধরাছোঁয়ার বাইরে, আবারও তার প্রমাণ মিলেছে সংসদে উত্থাপন করা তালিকা থেকে। বুধবার অর্থমন্ত্রী সংসদে ১০০ ঋণখেলাপির যে তালিকা প্রকাশ করেছেন, তাতে শীর্ষ ঋণখেলাপি হিসেবে পরিচিতদের নাম নেই।

শুধু তা-ই নয়, এতে কোন গ্রুপের কত টাকা খেলাপি ঋণ, তা-ও উল্লেখ করা হয়নি। আগেও একবার সংসদে খেলাপি ঋণের পরিমাণসহ শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল; কিন্তু তখনও রাঘববোয়ালরা তালিকার বাইরে থেকে যান। অনেক সমালোচনার পর এবারও একই ঘটনা ঘটল, বরং এবার পরিশোধ না করা অর্থের পরিমাণও গোপন রাখা হয়েছে। এতে করে খেলাপি ঋণের রাঘববোয়ালরা যে উৎসাহিত হবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

উদ্বেগের বিষয় হল, শীর্ষ ঋণখেলাপি হয়েও তালিকায় নাম না আসার জন্য নানা তদবির, আদালতের আশ্রয়, ব্যাংক মালিক-কর্মকর্তাদের যোগসাজশ, সর্বোপরি রাজনৈতিক চাপ ও সুবিধা ব্যবহার ইত্যাদি নিয়মিত হয়ে পড়েছে।

বুধবার সংসদে অর্থমন্ত্রীও বলেছেন, খেলাপি ঋণ আদায় হয় না রাজনৈতিক কারণে। প্রশ্ন হল, মন্ত্রী নিজেও কি রাজনৈতিক ‘কারণে’র কাছে অসহায়, নাকি তার দায় রয়েছে অন্তত সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আদায়ে? বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলা যায়, অর্থসংক্রান্ত বিষয়ের শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে অর্থমন্ত্রী এ সংক্রান্ত দায় এড়াতে পারেন না।

ঋণখেলাপির তালিকায় শুভংকরের ফাঁকির আরেকটি দিক হল খেলাপি ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর সব কোম্পানির নাম উল্লেখ না করা। তালিকায় দেখা গেছে ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি, অথচ গ্রুপের সব কোম্পানির নাম উল্লেখ না করে একটির নাম আনা হয়েছে। সব কোম্পানির নাম এলে ওই গ্রুপের ঋণপ্রাপ্তির পথ সঙ্কুচিত হতো এবং তারা খেলাপি ঋণ পরিশোধে উৎসাহিত হতো।

এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ঋণখেলাপিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশের আগে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছে না ঋণদাতা ব্যাংক। নিজেদের ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ার পরও তা ঋণখেলাপির তালিকায় না তোলার পেছনে যে বড় ধরনের অনিয়ম রয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়।

এসব দিকে মনোযোগ দিয়ে দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হলে এবং রাঘববোয়ালদের ছাড় না দিলে ঋণখেলাপির তালিকা আশার আলো হয়ে আসতে পারে। আগামীতে তালিকা করার সময় এসব ত্রুটি-বিচ্যুতিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না বলে আমাদের বিশ্বাস।

একজন ঋণগ্রহীতার খেলাপি হওয়ার পেছনে ব্যাংক কর্মকর্তা, উদ্যোক্তা ও পরিচালকদেরও যথেষ্ট দায় রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা-পরিচালকরা মিলেমিশে ঋণ ভাগাভাগি করে নেন। অন্যথায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা হওয়ার পরও কঠোর ব্যবস্থা না নিয়ে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বসে থাকার কথা নয়।

খেলাপি ঋণের ৪৩ শতাংশই সরকারি ব্যাংকের। ঋণ জালিয়াতি রোধ এবং খেলাপি ঋণ আদায়ে ঋণখেলাপিসহ দায়ী ব্যাংক কর্মকর্তা-পরিচালকদের আইনের আওতায় আনা, রাঘববোয়ালদের কাছে নতিস্বীকার না করে কঠোর অবস্থান নেয়া গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।
  • কার্টসিঃ যুগান্তর / সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮ 

No comments:

Post a Comment