দুই সিটিতে নির্বাচন
বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনপর্বে দলীয় সরকারের অধীনে কীভাবে একটি স্বাধীন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারে, সেই প্রশ্নটি জ্বলন্ত ছিল। সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে তারা স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো কীভাবে কতটা ভালোভাবে করতে পারছে, সেটা ছিল তাদের জন্য একটি পরীক্ষা। সার্বিক বিচারে এই পরীক্ষায় তারা এখন পর্যন্ত সফল হওয়া থেকে অনেক দূরে রয়েছে। গত ২৯ মার্চ স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচনে যেভাবে পেশিশক্তির নির্ভরতা দেখা গেল, সেই ধারার বাইরে আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠেয় গাজীপুর ও খুলনার সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা ইসির কার্যকর ভূমিকা আশা করি।
গত সাধারণ নির্বাচনের আগে ওই দুটি সিটিতে নির্বাচন হয়েছিল। আবার রমজান মাসের পর বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী সিটি নির্বাচন হবে। আর এসব নির্বাচনে সন্দেহাতীতভাবে দুই প্রধান দলের শক্তি পরীক্ষার লড়াই বিশেষ উপজীব্য হয়ে উঠবে। আগামী সাত মাসের মধ্যে অনুষ্ঠেয় পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সিটি নির্বাচনের ফলাফল সরকারি দল নিজেদের অনুকূলে দেখতে চাইবে। তাই এ দিকটিও ইসির জন্য একটি বড় চাপ।
গত ২৯ মার্চ স্থানীয় সরকারের ১৩৩টি নির্বাচনে উদ্বেগজনক সহিংসতা ফিরে এসেছে এবং তা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান একটা বড় চ্যালেঞ্জ এবং সরকারি দল তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব কাজে লাগিয়ে যেকোনোভাবে ফল নিজের পক্ষে নেওয়ার জন্য মরিয়া। একটি সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে স্থানীয় নির্বাচনে এত বেশি সহিংসতা কোনো ভালো লক্ষণ নয়। কারণ, এই সামাজিক শক্তিই সাধারণ নির্বাচনে বিভিন্ন দলের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। সুতরাং এখনই সাবধান হওয়ার সময়।
২৯ মার্চ সংঘর্ষ-গুলি, ব্যালট পেপার ছিনতাই, এমনকি ভোটের আগেই ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনায় টাঙ্গাইলে যুবদলের একজন নেতা নিহত হয়েছেন। কিন্তু এসব যে ঘটতে পারে, সে জন্য তা প্রতিরোধে আগাম কোনো পদক্ষেপই ইসি নেয়নি। সহিংসতা বা অনিয়ম রোধে কোনো ক্ষেত্রেই নির্বাচন কমিশন বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়নি। বরং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার একটি মন্তব্য আমাদের হতাশ করেছে। তিনি বলেছেন, ‘স্থানীয় নির্বাচন সাধারণত বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়, সে জন্য সব সময় তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।’ এই উক্তি থেকে আমরা কি ধরে নিতে পারি যে যত বেশি প্রতিযোগিতা, তত বেশি সহিংসতার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া? এবং নির্বাচন কমিশন প্রতিযোগিতামূলক কোনো নির্বাচন পরিচালনায় প্রস্তুত নয়!
এর আগে আমরা বিএনপির বয়কট করা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১১৬ ব্যক্তির নিহত হওয়ার নজির সৃষ্টি হতে দেখেছি, যেখানে নিহত ব্যক্তিদের ৭২ জনই ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। নির্বাচন মানেই কি তবে কিছু না কিছু সহিংসতা? পুরোপুরি সহিংসতাহীন কোনো নির্বাচনই করতে পারব না? নাকি আমাদের সবার চোখের সামনে কিংবা অলক্ষ্যে পেশিশক্তিরই জয়জয়কার ঘটে গেছে।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, রংপুরের মেয়র নির্বাচনের মতো কিছু ক্ষেত্রে সাফল্যের পরিচয় দিলেও সাধারণভাবে ইসির প্রতি জনমনে বিরাট কোনো আস্থার জায়গা তৈরি হচ্ছে না। বরং তার মলিন ভূমিকা দিনে দিনে আরও মলিন হচ্ছে। সব থেকে পরিতাপের বিষয় হলো, ইসি নির্বিকার। তারা মনে হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের মন জুগিয়ে চলাকেই কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। জনগণের আস্থা বৃদ্ধি না পাওয়ার কারণে তাদের সামান্য বিচলিত হতেও দেখা যাচ্ছে না। তাদের নিজেদের আরও প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেওয়া উচিত নয়।
- Courtesy: Prothom Alo /Apr 03, 2018 /সম্পাদকীয়
No comments:
Post a Comment